ভালোবাসার গল্প অপেক্ষা আমি তোমাকে ভালোবাসি বা I love you বলতে সবাই পারে, কিন্তু অপেক্ষা নামক শব্দের আড়ালে কয় জনে বা সেই মানুষটাকে পাবার আশায় পথে চেয়ে বসে থাকতে পারে! আর আজকের গল্পটি ভালোবাসার ক্ষেত্রে ধৈর্যের পরীক্ষা গ্রহণকারী এই অপেক্ষা নামক শব্দ কে নিয়েই।

ভালোবাসার গল্প অপেক্ষাঃ-

আজ একরাশ মনের জমা কথা গুলো আপনাদের কাছে উজাড় করে বলতে এসেছি। জানেন তো বর্তমানে বক্তার অভাব নেই , শ্রোতারই অভাব , তবে কথায় আছে ” শ্রেষ্ঠ বক্তা হওয়ার আগে শ্রেষ্ঠ শ্রোতা হও”। আমিও সেই শ্রোতার ভূমিকা পালন করতে করতে আজ বড্ডো ক্লান্ত তাই বক্তা রূপে ভাগ করে নিতে এসেছি , জীবনের কিছু কঠিন সত্যি। কি শুনবেন তো!!

রায়গঞ্জ টাউন অঞ্চলের , মৈনাক রায় আর সুশীলা রায়ের একমাত্র কন্যা আমি , নাম নীলা রায়। মধ্যবিত্ত পরিবারের একমাত্র মেয়ে, পাশাপাশি আপনজন দের খুব প্রিয় একটা মানুষ । হাসিখুশি মেজাজে জীবনটাকে বিন্দাস ভাবে বাঁচাই ছিল আমার জীবনের মূল লক্ষ্য , তবে সেই লক্ষ্যে মাঝে একদিন ভাটা পড়ে, আত্মপ্রেমি এই নীলা অন্যকারুর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। সেখানেই শুরু হয় জীবনের গহীন অন্ধকার।

রূপে অপ্সরাদের মতো দেখতে না হলেও , সেই ক্লাস এইট থেকে থার্ড ইয়ার অব্দি কম প্রেম প্রস্তাব আসেনি আমার জীবনে । সে ক্লাসের প্রথম হওয়া ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট এরই হোক বা পাড়ার মোড়ের রোমিও , সব ধরনের প্রস্তাবের এই অভিজ্ঞতা আছে। তবে শেষমেশ কাউকেই নিজের জীবনে জায়গা দিতে পারিনি , হয়তো একটাই কারণে সেটা তো জানেনই , আমি ছিলাম আত্মপ্রেমি।

ভালোবাসার গল্প অপেক্ষা
ভালোবাসার গল্প অপেক্ষা

থার্ড ইয়ার এর প্রায় শেষ আর একটা এক্সাম হলেই গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট হয়ে যাবে ঠিক সেই সময় সোশ্যাল মিডিয়াতে পরিচয় হয় , স্বপ্নের রাজকুমার , উমমম না না সেটা অবাস্তব কল্পনা , একটি সিনিয়র ছেলের সাথে। সে ছিল বেশ আত্ম অহংকারী , শিক্ষিত , মেজাজি চরিত্র বিশিষ্ট। আর ওর চরিত্রের এই গুন গুলোই আমাকে ওর প্রতি আসক্ত করেছিল । প্রথম প্রথম আগের থেকেই কথা বলার চেষ্টা চালিয়ে গেছিলাম তাই কিছু সময় পর সেও কোনো কারণ বসত এই চেষ্টায় সায় দিয়েছিল। সকালের গুড মর্নিং থেকে রাত্রের গুড নাইট অব্দি জীবনের একটা অভ্যেস এ পরিনত হয়েছিল ছেলেটা।

দিনের শেষে শুধু আমি নয় সেও আমায় সময় দিতে পছন্দ করত। ধীরে ধীরে বুঝতে পারছিলাম কোথাও যেন একটা মায়া জালে বাঁধা পড়ছি। তবে সেই জালের সীমানাটা যখন বুঝলাম তখন বেশ অনেকটা দেরি হয়ে গেছিলো । দেখা করার কোনো সুযোগ ছিল না আমাদের , শুধু মাত্র ফোনের ম্যাসেজ টুকুই ছিল একে অপরের খোঁজ রাখার ভরসা।

পড়ুনঃ- কলেজ লাইফের স্যাড লাভ স্টোরি- ডায়েরী টা 

সবে তখন এক্সাম শুরু হয়েছে , নিজের পড়া নিয়ে একটু ব্যস্ত ছিলাম , কদিন ঠিকঠাক মত কথা বলতে পারিনি। হঠাৎ একদিন মাঝ রাত্রে ফোন খুলে ওকে টেক্সট করতে গিয়ে , ওর স্ট্যাটাস টা চেক করলাম। বেশ সুন্দর করে একটা মেয়েকে জড়িয়ে ছবি তুলে, ক্যাপশনে লিখেছে “Happy 3 years anniversary dear partner” । বারেবারে দেখলাম , কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না বিষয়টা। এতদিনের এত গল্পের মাঝে সে কোনোদিনও এই মেয়েটির কথা উল্লেখ করেনি। হয়তো এড়িয়ে গেছে আমার থেকে। কিন্তু এই এড়িয়ে যাওয়ার কারণ টা কি ? তার কাছে জানতে চাইবো ভেবেছিলাম । কিন্তু সেই জানতে চাওয়ার মাঝে ছিল চীনের পাঁচিল সম উচ্চতা । সে কোনোদিনও আমায় হয়তো সেই চোখে দেখেইনি তাই , অহেতুক জানতে চাওয়ার কোনো কারণ খুঁজে পাইনি সেদিন।

এরপর সে মাঝে মধ্যে ম্যাসেজ করতো , আমিও সংযত হয়েই উত্তর দিতাম । প্রথম প্রথম বিষয়টা মেনে নেওয়া সম্ভব না হলেও পরে যখন বুঝলাম , আত্মপ্রেমের চেয়ে বড় ভালোবাসা কিছু নেই তখন সহজেই তাকে মুক্তি দিলাম । আর আগের থেকে ম্যাসেজ করা বা কথা বলার চেষ্টা কোনোটাই করতাম না । সেও সবটা বুঝে না বুঝার ভান করে এড়িয়ে গিয়েছিল। কারণ ওর জীবনে আমি ক্ষণিক সময়ের সুখের পাখি ছিলাম। এরপর ধীরে ধীরে নিজেকে সরিয়ে ফেললাম ওর জীবন থেকে। ও নিজেও হাসি মুখে বিদায় দিলো আমায় ওর জীবন থেকে।

ভালোবাসার অপেক্ষা গল্প
ভালোবাসার অপেক্ষা গল্প

পরিবার পরিজনের থেকে ক্রমশই দূরে সরে যেতে লাগলাম। অদ্ভুত একটা পরিবর্তন ঘটে গেলো জীবনে , প্রাণোচ্ছল সেই আমি টা , চুপচাপ শান্ত নদীর মত হয়ে গেলাম । কেউ টের ও পেলো না, এত বড় পরিবর্তনের পেছনের কারণটা আসলে কি ?

গোটা একটা বছর কেটে গেলো , সেও খোঁজ নেওয়া ছেড়েই দিয়েছিল। আমিও চাতক পাখির মতো আর তার অপেক্ষায় বসে না থেকে , নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম । এমনকি নিজের ফোন সমেত নাম্বারটাও বদলে নিয়েছিলাম । চাইতাম না আর কোনো পিছুটান এর ভাগীদার হতে। এভাবে দেখতে দেখতে আরো দুটো বছর কেটে গেলো। অন্য মেয়েদের মত, আমার বাড়ি থেকেও বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করলো পরিবারের সদস্যরা। অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাজি হয়ে গেলাম , তাদের আর্জিতে।

পাত্রপক্ষ দেখতে এল, সবার ছেলেকে পছন্দও হলো। তবে একবারের জন্যও কেউ আমার মতামতের কথা জানতে চাইলো না। ওদের মুখে হাসী ফোটাতে বিয়েটা করেও নিলাম। অবশ্য বিয়ের পর ধীরে ধীরে ছেলেটাকে যত জানলাম ততই বুঝলাম , বোধয় সত্যি ভাগ্য করেই এরকম জীবনসঙ্গী পাওয়া যায়। বেশ ভালই কাটছিল আমাদের দাম্পত্য জীবন।

পড়ুনঃ- বন্ধুত্ব থেকে প্রেমের গল্প- অবহেলিত গোলাপ 

কিন্তু হঠাৎ একদিন চোখের সামনে সবটা ছারখার হয়ে গেলো । যার জন্য নতুন করে ভালোবাসতে শিখছিলাম সেই মানুষটা সবার অগোচরে না ফেরার দেশে পাড়ি দিল । বারেবারে চেষ্টা করলাম নিজেকে সেই মুহূর্তে শেষ করে ফেলার, কিন্তু না ! পারলাম না নিজেকে শেষ করতে। কারণ সেই অ্যাকসিডেন্টে আমার নিজের পা দুটো আর ছিল না। তাই শেষ করা তো দূরের কথা সবকিছুর জন্য অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠতে হলো । বয়স্ক বাবা মায়ের পক্ষে , আমার দেখাশোনা করা ছিল বেশ চিন্তার বিষয় । তাই নিজেই একটি আশ্রমের সাথে কন্টাক্ট করে সেখানে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করলাম ।

তবে জীবন নামের নদী আমায় আবার সেই কিনারায় টেনে নিয়ে গেল। জানতে পারলাম আশ্রমের প্রধান হলো আমার সেই প্রথম ভালোবাসা যাকে চাইলেও কিছু বলতে পারিনি। তবে এটা জেনে আরো অবাক হলাম সে বিয়ে সংসার কিছুই করেনি, আমৃত্যু সন্ন্যাস ধর্ম গ্রহণ করেছে।

অনেকগুলো প্রশ্ন মনের মধ্যে নাড়া দিয়ে উঠলো ” তাহলে সেদিন দেওয়া স্ট্যাটাসের মেয়েটা কে ছিল ?” , ও কেন আমায় এড়িয়ে যেতে শুরু করেছিল ? কেন একবারও আমায় বলেনি ওর জীবনে কেউ নেই আমি ছাড়া …? এই এত গুলো কেন এর মাঝে ঘিরে থাকা ওই মানুষটা , কোনোদিন আমার মুখোমুখি হয়নি। আশ্রমে দীর্ঘ ২০ বছর কাটিয়ে দিলাম , আজ অব্দি সে আমার সামনে আসেনি।

bengali true love story
bengali true love story
<

প্রথম প্রথম খারাপ লাগলেও , এটা বুঝতে পেরেছি , হয়তো নিজের ধর্ম খোয়াবার ভয়েই ওর এই সিদ্ধান্ত। আর আমিও সন্মান করি ওর এই সিদ্ধান্ত কে।

নাইবা হলো এ জন্মে দেখা , পরের জন্মে আবার না হয় একসাথে দেখা হবে। ভালোবাসাটা এক তরফা ছিল না দুই তরফা তার উত্তর ও আমি সেই জন্মেই তার কাছ থেকে জেনে নেব। ভালো যখন বেসেইছি তখন অপেক্ষা টুকুই না হয় করে যাবো।

জীবনের ডাইরি এর পাতা প্রায় শেষের দিকে , তাই জানিয়ে রাখলাম আপনাদের। ভালোবাসা মানেই শুধুমাত্র কাছে করে পাওয়া নয়, ভালোবাসার আরেকটা নাম হলো অপেক্ষা , যাতে হারানোর ভয় কম পাবার আশাটাই বেশি থাকে। কি ঠিক বললাম তো ? আসলে কি বলুন তো ” অপেক্ষাই ভালোবাসার অপর নাম “।

আলোরানি মিশ্র

ডায়েরির পৃষ্ঠায়-
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে। 

সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।

পড়ুনঃ- 

ব্যর্থ প্রেমের গল্প- মনে পাখি 

হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসার গল্প

ছেড়ে চলে যাওয়ার গল্প 
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

ভালোবাসার গল্প অপেক্ষা। ভালোবাসার অপেক্ষা গল্প। bengali true love story

Spread the love

Leave a Reply