আজকের ব্লগটি একটু অন্য রকম।। আজ আমরা পৃথিবীর সবথেকে ভাগ্যবান মানুষদের নিয়ে কথা বলব। ভাগ্য খুবই মারাত্মক একটি জিনিস। এটি যার সাথ দেবে তার সাথে ঘটে যাবে অভাবনীয় ঘটনা। মানুষের ভাগ্য কখন কিভাবে কীরূপে উপস্থিত হয়, তার জ্বলন্ত উদাহরণ নিম্নোক্ত ঘটনাগুলি।
পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান মানুষ।। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য ঘটনা
বিল মর্গান-এর ভাগ্যঃ-
গাড়ি নিয়ে যখন রাস্তায় নেমেছেন তখন কখন কি হয় বলা যায় না। ঈশ্বর না করেন যেন আপনার সাথে যেন এরকম কিছু না ঘটে।
অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা বিল মর্গান গাড়ি নিয়ে রাস্তায় তার গন্তব্যে যাচ্ছিলেন। উল্টোদিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সঙ্গে তার গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে বিল এর গাড়ি দুমড়ে মুচরে যায়।ডাক্তার দেখে যে, তার হৃদস্পন্দন থেমে গেছে। তাই ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। কিন্তু ১৪ মিনিট পর ডাক্তার বুঝে যে সে আবার বেঁচে গেছে। তার পরিবার ধরে নেয় যে, বিল আর বাঁচবে না। ১২ দিন পর বিল কোমা থেকে বেড়িয়ে আসেন। বিলের এভাবে মারা যাওয়া, তারপর আবার সুস্থ হওয়াতে তার পরিবার অবাক হয়ে যায়।
![পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান মানুষ আজব ঘটনা](http://charpatra.com/wp-content/plugins/a3-lazy-load/assets/images/lazy_placeholder.gif)
এই ভাবে নতুন জীবন ফিরে পাওয়ার খুশিতে তিনি একটি scratch card লটারি কাটেন এবং ২৭০০০ ডলারের একটি গাড়ি জিতেন। স্থানীয় একটি খবরের চ্যানেল তার সাথে ঘটে যাওয়া এই অলৌকিক ঘটনাগুলি প্রচার করার জন্য, সিন তৈরি করার চেষ্টা করে।
লটারির দৃশ্যটি নেওয়ার জন্য, বিল ও সেই চ্যানেলটি আবার সেই দোকানটিতে যান এবং এবার তিনি আরেকটি scratch card বেঁছে নেন, শুধুমাত্র ভিডিও নেওয়ার জন্য। কিন্তু এবার তাজ্জবভাবে সেই scratch card-এ তিনি ২৫০০০০ ডলার জিতে নেন।
ঘটনা এখানেই শেষ নয়, এরপর তিনি আবার তার ক্রাশ-কেও বিয়ে করেন। একবারেই এত কিছু, ইসস।
Tsutomu Yamaguchi পারমানবিক বোমার আক্রমণ থেকেও ২ বার বেঁচেছিলেন যিনিঃ-
এবারে যে ভাগ্যবান ব্যাক্তির কথা বলব তিনি একবার নয় দুইবার বোমা হামলার হাত থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন। ভাবছেন এ আবার এমন কি যে কেউ তো বাঁচতেই পারে। কিন্তু না বন্ধু এ যেমন-তেমন বোমা নয়। এ যে পারমানবিক বোমা। হ্যাঁ ঠিকই পড়েছেন। পারমানবিক বোমার আক্রমণ থেকেও দুইবার বেঁচে গিয়েছিলেন Tsutomu Yamaguchi.
ঘটনাটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার। ইয়ামাগুচি একটি একটি হেভি ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তিনি হিরোশিমাতে ৩ মাসের জন্য একটি কাজে ছিলেন। ৬ আগস্ট তিনি তার দুই সহকর্মীকে নিয়ে হিরোশিমা ছেড়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন। তারা ট্রেন ষ্টেশনের দিকে এগোচ্ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ ইয়ামাগুচির মনে হয় সে স্ট্যাম্প নিয়ে আসেনি। এরপর সে পুনরায় হিরোশিমাতে যায়। ঘড়িতে সময় তখন সকাল ৮.১৫। তিনি বন্দরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এমন সময় তিনি দেখলেন আমেরিকান বোমারু বিমান B-29 একটি পরমাণু বোমা হিরোশিমাতে ফেলে দিয়েছে। তিনি দেখেন প্যারাসুটের মত কিছু একটা নিচে নামছে। চোখের পলক পড়ার সাথে সাথেই তিনি দেখলেন, আকাশে ফুলকোর মত কিছু একটা উঠে গেল। বোমাটি যে স্থানে ফেলা হয়েছিল, সেখান থেকে তিনি মাত্র ৩ কিমি দূরে ছিলেন।
প্রচণ্ড তীব্র ঝলকানো আলোতে তিনি সাময়িক ভাবে অন্ধ হয়ে যান, এবং তার কান পুরো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এবং সেই বোমার র্যাডিয়েশনে তার শরীরের উপরের বাম অংশ খুবই খারাপ ভাবে পুড়ে যায়। তার কানে একটি বিকট শব্দ হতে থাকে। তাকে উদ্ধার করার পর নিরাপদ আশ্রয়ে তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তিনি খোঁজ নিয়ে দেখেন যে তার সহকর্মীরাও বেঁচে গেছেন। এরপর চলতে থাকে তার চিকিৎসা।
![অবিশ্বাস্য হলেও সত্য ঘটনা](http://charpatra.com/wp-content/plugins/a3-lazy-load/assets/images/lazy_placeholder.gif)
এরপরের দিনই তিনি নাগাসাকিতে চলে আসেন এবং সেখানে চিকিৎসা নিতে থাকেন। তিনি ৯ তারিখ কাজে যোগ দেন।
এরপর ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ৯ আগস্ট সময় সকাল ১১ টা। ইয়ামাগুচি তার সুপারভাইজার-কে হিরোশিমাতে এই ভয়াবহ ঘটনার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছিলেন। এমন সময় আমেরিকান বোমারু বিমান ফ্যাট ম্যান নামে আরেকটি পারমানবিক বোমা নাগাসাকি শহরের মূল কেন্দ্র-বিন্দুতে ফেলে দেয়। কেপে উঠে গোটা শহর। এবারেও ইয়ামাগুচির অফিস বোমা বর্ষণের স্থান থেকে প্রায় ৩ কিমি দূরে অবস্থান করছিল। এবারে যদিও তিনি বিশেষ খুব একটা আঘাত পাননি, কিন্তু এই তেজস্ক্রিয় বিকিরন তার শরীরে খুবই ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছিল। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে অনবরত তিনি বমি করেই যাচ্ছিলেন। এদিকে এই তেজস্ক্রিয় বিকিরনের ফলে তার শরীরে ধীরে ধীরে দানা বাঁধছিল, অনেক কঠিন রোগ।
তিনি একটি সাক্ষাৎকারে জানান- পারমানবিক বোমার ভয়ংকর অভিজ্ঞতা।
পরবর্তীতে ২০১০ সালে তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
মিলিয়ন ডলারের লটারি অনেক বার জেতার ভাগ্য :-
বর্তমানে লটারির নেশায় বুদ হয়ে আছি আমাদের মধ্যে অনেকেই। আমাদের চোখের সামনেই অনেকে লটারিতে বেশ ভাল পরিমাণ টাকা পেয়ে যান। ঘুরে যায় তাদের ভাগ্যের চাকা। তবে সেটা সিন্ধুতে বিন্দুর মতনই। একবার লটারি পাওয়া মানে ভাগ্যের ব্যাপার। তবে একবার নয় এখন যার কথা শোনাতে যাচ্ছি, সেই ভদ্র মহিলা চার বার লটারি পেয়েছেন। হুম ভাবছেন এটা আবার এমন কি হল। আসলে ব্যাপারটা হল টাকার অঙ্কটা ১০ টাকা বা ১০০০০ নয়। সেটা মিলিয়ন দিয়ে। কি এবার অবাক হলেন তো? চার বারই লটারি পেয়েছেন মিলিয়ন এর ঘরে, তাও আবার এক-দুই মিলিয়ন নয়, কয়েক মিলিয়ন।
মহিলাটির নাম John R. Ginther. তিনি আমেরিকার বাসিন্দা। ১৯৯৩ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে তিনি চার বার কয়েক মিলিয়ন ডলার লটারি পেয়েছেন। তিনি প্রথমে একটি রাজ্য লটারি পান, যেখানে তিনি ৫.৪ মিলিয়ন ডলার। এর ১০ বছর পর তিনি ২ মিলিয়ন ডলার জেতেন। এর ২ বছর পর ৩ মিলিয়ন ডলার সবশেষে তিনি আশ্চর্যজনক ভাবে ২০০৮ সালে তিনি আবার ১০ মিলিয়ন ডলার লটারি জেতেন। তিনি সর্বমোট ২০.৪ মিলয়ন ডলার লটারি জেতেন অর্থাৎ ভারতীয় টাকায় প্রায় ১,৫২,০৯,৪৮,৫২০ টাকা জেতেন। এতগুলি টাকা জেতার পর তিনি লস ভেগাস-এ বসবাস শুরু করেন।
![আজব মানুষ আজব ঘটনা](http://charpatra.com/wp-content/plugins/a3-lazy-load/assets/images/lazy_placeholder.gif)
আরও পড়ুনঃ-
আজব ও অদ্ভুত ১০ টি গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড
সাতবার মৃত্যুকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়েছিলেন যিনিঃ-
এবারে এখন পর্যন্ত পৃথিবীর সবথেকে ভাগ্যবান মানুষকে নিয়ে জানব। যিনি একবার-দুইবার নয় বরং সাতবার মৃত্যুকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়েছেন। এনার নাম Frank Selak.
তিনি ১৯৬২ সালে একটি ট্রেনে ঘুরতে যাচ্ছিলেন। সেসময় ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয় এবং হিমশীতল ক্যানিয়ন নদীতে ট্রেনটি পড়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা তাকে কিনারায় টেনে তোলেন কিন্তু তিনি বাদে বাকি যাত্রীরা মারা যান। ফ্রান-এর শুধুমাত্র একটি হাত ভেঙ্গে গিয়েছিল এবং সে কিছুদিন হাইপোথেমিয়াতে ভুগেছিল।
একবছর পর ফ্রান তার জীবনের প্রথম বিমান ভ্রমণ করার সময় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ল্যান্ডিং করার সময় বিমানটি ভেঙ্গে যায়, তার আসন ছিল দরজার কাছেই এবং এমন সময় দরজাটিও খুলে যায়। প্রচণ্ড বাতাসের টানে তিনি এবং ফ্লাইট অ্যাটেন্ডডেন্ট বিমান থেকে ছিটকে বেড়িয়ে যান। কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিমানটি ভেঙ্গে পড়ে মাটিতে। আশ্চর্যজনক ভাবে বেঁচে যান ফ্রান, তিনি মাঠের মধ্যে থাকা একটি বিশাল খড়ের গাদার উপর এসে পড়েন, কিন্তু বিমানটির পাইলট সহ ১৭ জন যাত্রী বিমানটির সাথেই মাটিতে আছার খেয়ে মারা যান। কিন্তু ফ্রানের সঙ্গে থাকা ফ্লাইট অ্যাটেন্ডডেন্ট বাঁচতে পারেননি, কারণ তিনি দূরে খালি জায়গায় পড়েছিলেন।
এই ঘটনার প্রায় ৩ বছর পর তিনি একটি বাসে ঘুরতে যাচ্ছিলেন, কিন্তু বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি নদীতে পড়ে যায়, বাস থেকে কোনোক্রমে বাইরে বেড়িয়ে এসে সাঁতরে তীরে চলে আসেন, এবং বেঁচে যান। যদিও তার শরীরের অনেক স্থানেই কেটে গিয়েছিল।
এই ঘটনাটির প্রায় ২ বছর পর ফ্রান তার ছোট ছেলেকে কিভাবে বন্দুক চালাতে হয় সেটি শেখাচ্ছিলেন। কিন্তু তিনি জানতেন না যে বন্দুকটির সেফটি ট্রিগারটি খুলে গেছে, তিনি দ্রুত বন্দুকটি নীচের দিকে করেন এবং বন্দুকের গুলি তার পুংজননাঙ্গে লাগে। এরপর দীর্ঘ চিকিৎসার পর ভাগ্যক্রমে তিনি আবার সুস্থ হয়ে যান।
এরপর ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে তার গাড়িতে তিনি তার গন্তব্যে যাচ্ছিলেন, কিন্তু রাস্তাতেই তার গাড়ির ফিউয়েল ট্যাঙ্ক লিক করে আগুন লেগে যায়। এই পরিস্থিতিতেও তিনি নিজেকে বাঁচিয়ে নিয়েছিলেন।
১৯৯৫ সালে একটি বাস তাকে সজোরে ধাক্কা মারে, গুরুতরভাবে আহত হওয়ার পরও তিনি বেঁচে যান।
এই ঘটনাটির প্রায় এক বছর পর পাহাড়ের একটি বাঁকে তার গাড়ির সাথে একটি রাষ্ট্রসংঘের ট্রাক ধাক্কা লাগে। ফ্রানের গাড়ি এতে পাহাড় থেকে নীচের দিকে পড়তে যেহেতু ফ্রান তার সিট বেল্টটি খুলে রেখেছিলেন, নিচে পড়ার সময় গাড়িটির দরজা নিজে থেকেই খুলে যায়, তিনি দ্রুত তার গাড়ি থেকে ঝাঁপ দিয়ে দেন এবং তিনি দেখেন যে তার গাড়িটি প্রায় ৩০০ ফুট গভীর গর্তে পড়ে গেছে। ফ্রান ঝাঁপ দিয়ে পাহাড়ের ধারের একটি গাছের ডাল ধরে ফেলেন। প্রায় ঘণ্টাখানেক পর পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে, ততক্ষণ তিনি এভাবেই গাছের ডাল ধরে ঝুলে ছিলেন। এবারেও তিনি প্রানে বেঁচে যান।
কিন্তু এতদিনে তার উপর মানুষের বক্র-দৃষ্টি এসে পড়েছে। তার সাথে দেখা করা মানেই অশুভ কাজে পা বাড়ানো, এমনটাই ভাবতে থাকে মানুষজন। কেউই তার মুখ দেখতে চাইতেন না। সবার চোখে তিনি অশুভ। বিয়েও করেছিলেন তিন বার, স্থায়ী হয়নি একটি বিয়েও, কারণ একটাই, তিনি অশুভ। তার সাথে থাকলে মৃত্যু অনিবার্য। কয়েকজন বন্ধু ছাড়া সবাই তার কাছে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। এমনকি তিনি যে গাড়িতে উঠতেন, সেই গাড়িতে অন্য কোনো মানুষ উঠতে চাইতেন না, মানুষদের মধ্যে একটা ভাবনা গেঁথে গিয়েছিল যে, ফ্রান যে গাড়িতে উঠবেন সেই গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়বেই।
![পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান মানুষ](http://charpatra.com/wp-content/plugins/a3-lazy-load/assets/images/lazy_placeholder.gif)
মৃত্যুকে এতবার বোকা বানানোর পরও এখানেই শেষ নয়। ২০০৩ সালে ফ্রান তার ৭৩ তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে একটি লটারি কাটেন ভাগ্যক্রমে তিনি ১.১ মিলিয়ন ডলার জিতেন।
এবার বলুন এতবার ভাগ্য কার সাথ দেয়?
পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান মানুষদের সম্পর্কে জেনে আপনার কেমন লাগল তা আমাদের জানাতে ভুলবেন না যেন। আর প্রতিদিনের আপডেটের জন্য আমাদের ফেসবুক পেজ এবং ফেসবুক গ্রুপ-তো রয়েছেই। এই অবিশ্বাস্য হলেও সত্য ঘটনা-গুলি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
![charpatra.com ছাড়পত্র](http://charpatra.com/wp-content/plugins/a3-lazy-load/assets/images/lazy_placeholder.gif)
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।