আজকের ভয়ানক ভূতের গল্প টির মূল কেন্দ্রে রয়েছে একটি ভুতুড়ে ফ্ল্যাট। কি এই ফ্ল্যাটের রহস্য সেটি রইল গল্পটিতে।

ভয়ানক ভূতের গল্পঃ- “ভুতুড়ে ফ্ল্যাট”

রাত দুটো বাজলেই আওয়াজটা ভেসে আসে। সারাদিনের ক্লান্তিতে যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকি ঠিক তখনই অদ্ভুত শব্দটা ভেসে আসে। আমি কথা বলছি আমার ফ্ল্যাট নিয়ে। এত বড় ফ্ল্যাটের বাসিন্দা শুধু আমি একা। মাঝে মাঝে মা বাবা আসেন, তাই তাদের থাকা নিয়ে যাতে কোন সমস্যা না হয় সেদিকটা বিবেচনা করেই এই বড় ফ্ল্যাট টা নেওয়া।

যেটা বলছিলাম, প্রায় প্রতিদিন রাতে ফ্ল্যাটের দক্ষিণ পাশের রুম অর্থাৎ আমি যেই ঘরে ঘুমাই সেই ঘরের ঠিক পাশের রুম থেকে অদ্ভুত এক শব্দ ভেসে আসে। আর যত দিন যাচ্ছে সেই শব্দ বেড়েই চলছে।

পরের দিন অফিসে গিয়ে আমার এক বন্ধুকে বিষয়টা জানালাম, সে বলল সেই রুমের টেবিলে হনুমান চল্লিশা রেখে দিতে। ফিরে এসে সেটাই করলাম। প্রথম কয়েকদিন সবকিছু ঠিক ছিল, কিন্তু পঞ্চম দিন থেকে সেই অদ্ভুত আওয়াজের সাথে যুক্ত হল, বিড়ালের মরা কান্নার মত একটা শব্দ। প্রথমে আমিও সেই বিড়ালের কান্নার মত শব্দকে বিড়ালের কান্নাই ভেবেছিলাম। কিন্তু আমার এই ফ্ল্যাটে বিড়াল আসার কোন সুযোগ নেই, কেননা বারান্দা গুলিতেও গ্রিল দেওয়া আছে।

ভয়ানক ভূতের গল্প
ভয়ানক ভূতের গল্প

এই অদ্ভুত শব্দগুলি আমার রাতের ঘুম কেড়ে নিল। এরপর আবার সেই বন্ধুকে বিষয়টা জানালাম। সে বলল সেই রুমে একটা ক্যামেরা লাগিয়ে রুমে অস্বাভাবিক কিছু হচ্ছে কি না সেটার প্রতি নজর রাখতে। আমিও সেটা করলাম। একটা ক্যামেরা লাগিয়ে দিলাম।

পরের দিন অফিস থেকে ফিরে সেই রুম থেকে ক্যামেরা টি খুলে নিয়ে এসে ল্যাপটপ এ লাগিয়ে দেখতে লাগলাম অস্বাভাবিক কিছু ঘটছে কি না! আমি কি দেখলাম জানেন!

আমি দেখলাম সেই রুমের দেওয়ালে যে সুন্দর গ্রামের সিনারি টি রয়েছে, সেটি ধীরে ধীরে নিচে নামছে। এরপর সেটি হাওয়ায় উড়ে টেবিলের কাছে গেল। কিছুক্ষণ পর আবার সেটি নিজের জায়গায় এসে গেল।

অদ্ভুত! এরকম ভয়ানক দৃশ্য আমার এই ফ্ল্যাটে ঘটছে দেখে নিজেকে আর স্থির রাখতে পারলাম না। এবার বিষয়টিকে নিয়ে ভাবতেই হবে।

পড়ুনঃ- এক ভয়ানক রাতের গল্প 

পরের দিন সকালে আমি সাহস করে ধীরে ধীরে সেই রুমে গিয়ে সিনারি টি হাতে নিয়ে দেখতে লাগলাম, এই সিনারির মধ্যে কি এমন আছে যে এটা হাওয়ায় উড়ছে! এতে কি কোন গুপ্ত ডানা লাগানো আছে ড্রোন এর মত! কেউ হয়ত এটাকে কোথাও থেকে রিমোট দিয়ে কন্ট্রোল করছে।

আমি দেখতে লাগলাম এই সিনারি তে হয়ত স্পিকার লাগানো আছে, যার ফলে অদ্ভুত অদ্ভুত শব্দ আসে।
কিন্তু আমার সাথে কে এরকম করবে! হতেও পারে এই মহল্লার কোন ছোকরা আমাকে ভয় দেখানোর জন্য এরকম করছে।
ছবিটিকে অনেকক্ষণ দেখার পরেও যখন কিছু খুঁজে পেলাম না তখন ছবিটিকে তার স্থানে রেখে দিয়ে খাবার রেডি করতে চলে গেলাম।

কিন্তু এ কি! আমার হাত এত ভারী হল কীভাবে! আমি সামান্য জলের গ্লাস তুলতে পারছি না। মনে হচ্ছে আঙ্গুলগুলো বাঁকা হয়ে যাচ্ছে আর অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে। আর পায়ের ঊরু তে মনে হচ্ছে যেন কেউ কামড় বসাচ্ছে। আমার মনে পড়ে গেল, দুই হাতে পায়ের উরুর উপরেই সেই ছবিটিকে নিয়ে দেখছিলাম।

ভুতুড়ে মেয়ে
ভুতুড়ে মেয়ে

না এটি মোটেও কোনো সাধারণ ছবি নয়। ছবিটি আমি কিনি নি। এই ফ্ল্যাট টি যখন কিনেছি সেই ছবিকে ওখানেই দেখেছি। আর ছবিটি বেশ সুন্দর বলে সেটাকে আমি সরাই নি।

আমি তাড়াতাড়ি ফ্ল্যাট ছেড়ে বাইরে গেলাম। তাড়াতাড়ি বাবা মা কে ফোন করে বিষয়টা জানাতেই, তারা দুই ঘণ্টার মধ্যে একজন সাধুকে নিয়ে হাজির হলেন। এদিকে ততক্ষণে আমার হাতের ভার আর পায়ের সেই অস্বাভাবিক কামড়ানো টা কমে গেছে।

সেই সাধুটির সঙ্গে মা বাবা ও আমি ফ্ল্যাটে প্রবেশ করলাম। ধীরে ধীরে সেই রুমে চলে গেলাম। আমি সেই সাধুকে সিনারি টি দেখিয়ে আমার সাথে ঘটে যাওয়া যাবতীয় ঘটনা পুরো জানিয়ে দিলাম।

সেই সাধুটি সিনারি টিকে নিয়ে এসে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন। অনেকক্ষণ ভাব গম্ভীর ভাবে থাকার পর তিনি বললেন, এটি সাধারণ চিত্র নয়, এটি একটি অভিশপ্ত চিত্র। এটিকে আমি নিয়ে যাচ্ছি আর গঙ্গা জল ঘরের চারিদিকে ছিটিয়ে দাও।
আমি অনেক জানার চেষ্টা করলাম যে সেই ছবিটি অভিশপ্ত কেন। কিন্তু সাধুটি আর মুখ খুলেন নি। সেদিন বাবা মা আর সাধুটি আমার সঙ্গেই থাকলেন। কিন্তু অবাক করা ব্যাপার কি জানেন! সেই রাতে ওরকম অদ্ভুত শব্দ আর আমার কানে আসে নি।

পরের দিন সকালে মা বাবা ও সাধুটি বিদায় নেওয়ার পর আমিও বেড়িয়ে পড়লাম। আমি যাচ্ছি সেই লোকটির বাড়ি যার কাছে আমি এই ফ্ল্যাটটি নিয়েছি। এই ছবির রহস্য না জানলে আমি শান্তি পাব না।

পড়ুনঃ- রহস্যময়য় গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন

লোকটির বাড়ি গিয়ে তাকে সেই ছবিটির ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতেই তিনি ইতস্তত বোধ করতে লাগলেন আর আমার প্রশ্ন এড়িয়ে যেতে চাইলেন।

আমি অনেক চাপাচাপি করার পর অবশেষে লোকটি মুখ খুললেন। তার কথা অনুসারে-
এই ছবিটি সত্যিই অভিশপ্ত। আমি সেই ফ্ল্যাটটি ক্রয় করার আগে সেখানে এক দম্পতি বাস করতেন। ব্যবসায়ী সেই দম্পতির একজন কন্যা সন্তান ছিল। প্রতিদিন সেই মেয়েটিকে স্কুলে দিয়ে আসতেন মহিলাটি।

কিন্তু ঘটনার দিন মহিলা বাড়িতেই ছিলেন। মেয়েটি পাবলিক গাড়িতে ঘরে ফেরার কথা ছিল কিন্তু সেই মেয়ে আর ঘরে ফেরেনি।
সেই মেয়েটিকে তুলে নিয়ে যায় সেই ব্যবসায়ীর এক শত্রু। এরপর মুক্তিপণ হিসেবে দাবি করে ১০ কোটি টাকা। ব্যবসায়ী দম্পতি মেয়েকে বাঁচানোর জন্য যে কোন ভাবে সেই টাকা জোগাড় করে।

ভুতুড়ে ফ্ল্যাট
ভুতুড়ে ফ্ল্যাট
<

কিন্তু যখন তারা মেয়েকে সেই শত্রুর হাত থেকে আনতে যায় তাদের মেয়েকে না দিয়ে দেওয়া হয়েছিল সেই সিনারি টি।
মেয়েটিকে ইতিমধ্যে মেরে টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়েছিল। আর জানো, সেই যে লালচে কালো সিনারি টি, যেটি রুমে ছিল সেটি রং দিয়ে নয় বরং সেই মেয়েটির রক্ত দিয়ে রাঙানো।

আর যে রুমে ছবিটি টাঙানো ছিল সেটি হল মেয়েটির রুম। ওই রুমেই সে সারাটা দিন কাটাত। এরপর মেয়েটির স্মৃতি হিসেবে সেই ছবি ওখানেই রেখে ফ্ল্যাট ছেড়ে অন্যত্র চলে যায় সে দম্পতি। তাদের আর খোঁজ পাওয়া যায় নি।

মেয়েটির আত্মা সেই সিনারিতে বন্দী রয়েছে। আর তার অতৃপ্ত আত্মা মুক্তির খোঁজে রাতে কান্না করে। তার আত্মা শুধু মুক্তি চায় শুধুই মুক্তি।

ব্ল্যাক শ্যাডো

গল্পের ভাবনায়-

গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।

সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
পড়ুনঃ-
 রহস্য রোমাঞ্চে ভরপুর সব গল্প 

মজার মজার সব হাসির গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র () 

ভয়ানক ভূতের গল্প ভুতুড়ে ফ্ল্যাট ভুতুড়ে মেয়ে new bengali horror story. bangla bhuter golpo

Spread the love

Leave a Reply