আচ্ছা আমাদের জীবনে ব্যর্থতার কারণগুলি যদি জানতে পারতাম কত ভালই না হত! জীবনে একের পর এক অসফলতা। যে কাজেই যাই সেই কাজেই ব্যর্থ হয়ে যাই। এর পেছনে কারণ টা কি? কর্ম করছি ঠিকই কিন্তু তার আশানুরূপ কোনো ফল পাচ্ছি না। আপনি হয়ত ভাবেন, আপনার ভাগ্যটাই খারাপ। আপনি আপনার ভাগ্যের শিকার। হুম এমনটাই মনে হয়, যখন আমরা ব্যর্থ হই। আসলে আমাদের ব্যর্থতার কারণ কিন্তু আমরাই। আজ এই ব্লগটির মাধ্যমে মানুষ ব্যর্থ কেন হয় সেই প্রশ্নটির উত্তর খোঁজার চেষ্টা করব।
জীবনে কোনো কিছু পাওয়ার জন্য চেষ্টা কিন্তু কেউই কম করে না। কিন্তু দিনশেষে আবার সেই অসফলতার হাতছানি। কোনো কোনো সময় মানুষ তার লক্ষ্য পূরণের জন্য সামান্য চেষ্টা করেই হাল ছেড়ে দেয়, কিন্তু তার সেই লক্ষ্য পূরণের জন্য যে পরিমাণ নিষ্ঠা ও কর্ম দরকার তা সে করতে চায় না।
জীবনে সবসময় মনে রাখবেন- “Obstruction are the pillar of Success” অর্থাৎ কঠিন পরিস্থিতিই সফলতার মূল স্তম্ভ।
ব্যর্থতার কারণ কি? মোটিভেশনাল উক্তি
জীবনে ব্যর্থতার কারণঃ-
লক্ষ্যঃ-
জীবনে ব্যর্থ হওয়ার সবথেকে বড় কারণ হল লক্ষ্য। যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনার জীবনে একটি সুস্থির লক্ষ্য থাকছে ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি হাজার চেষ্টা করলেও সফল হতে পারবেন না। হুম আপনি হয়ত লক্ষ্য নিয়েছেন যে আপনি একজন WBCS অফিসার হবেন, কিন্তু আপনি সেই লক্ষ্যটির পাশাপাশি অন্য আরও অনেক লক্ষ্য নিয়ে রেখেছেন, যেমন ধরুন- কিভাবে বাড়িতে বসে টাকা ইনকাম করা যায়, রেলের পরীক্ষায় কিভাবে পাশ করা যায় ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু বন্ধু এতগুলি লক্ষ্য আপনার জীবনে থাকলে হবে না। আপনার জীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত এক এবং অভিন্ন।
এটিকে একটু সহজ ভাবে বোঝার চেষ্টা করুন- ধরুন আপনি কলকাতা যাবেন, তাহলে আপনি কলকাতা যাওয়ার রাস্তাই খুঁজবেন। কিন্তু যদি আপনি নিজেই না জানেন যে আপনি কোথায় যেতে চান, তাহলে আপনি আর কোন জায়গার রাস্তা খুঁজবেন?
সফলতার সিঁড়ির প্রথম ধাপই হল একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য ঠিক করা। আপনি ভালভাবে বসুন এবং চিন্তা করুন, যে কোন বিষয়ে আপনার মন বেশি আগ্রহী। আপনি যদি ফ্রিলান্স্যার হতে চান তবে সেদিকেই যান, কারণ আপনার মন সেটিকে চায়। আবার একটি কথা মনে রাখবেন, লক্ষ্য কিন্তু বাস্তব সম্মত হওয়া চাই। যে লক্ষ্যের কোনো বাস্তবসম্মত ভিত্তি নেই সেই লক্ষ্যের পিছনে ছুটে অযথা সময় নষ্ট করবেন না। যেমন ধরুন আপনি রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন, কিন্তু এই স্বপ্নের কোনো বাস্তব সম্মত ভিত্তি নেই।
সমাজের কাছে দাঁড়িয়ে কথা বলার ভয়ঃ-
অনেকের মধ্যে এই ভয়টি কাজ করে। তারা সবার সামনে কথা বলতে ভয় পায়। তারা ভাবে, অন্য মানুষজন তার কথার ভুল ব্যাখ্যা করবে। আর এই ভয়ে সমাজের কাছে তারা মুখ লুকিয়ে চলে।
যদি জীবনে সফল হতে চান, তাহলে সবার সামনে দাঁড়িয়ে প্রশ্নের উপযুক্ত উত্তর দেওয়ার চেষ্টা আপনাকে করতে হবে। আপনি চুপ করে থাকলে সমাজ আপনাকে চিনবে না, যার ফলস্বরূপ আপনি সমাজে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবেন না।
ব্যর্থতার কারণ কি? মোটিভেশনাল উক্তি
যেমন ধরুন- ফেসবুকে কিছু কিছু মানুষ আছেন, যারা কেবলমাত্র অন্য জনের পোষ্টে রিয়্যাক্ট করেন, কিন্তু তারা কোনো দিনই তাদের নিজস্ব ভাবনা সবার সামনে শেয়ার করেন না। সে হয়ত ভাবে শেয়ার করে কি হবে? অথবা ভাবে লোকে কি ভাববে? কিন্তু সে এটা বোঝে না যে, সে যদি কোনো একটি বিষয় নিয়ে কোনো মতামত রাখে তাহলে মানুষ সেটির উপর কেমন প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করছে তা অনায়াসেই বোঝা যায়, যার ফলস্বরূপ নিজের limitation এবং দুর্বল জায়গাগুলির উপর আরও বেশি আলোকপাত করা যায়।
উদাহরণ স্বরূপ- ধরুন আমি ফেসবুকে আমার নিজের লেখা একটা কবিতা পোস্ট করলাম। এবার নানান ব্যাক্তি তাদের নানান মতামত এখানে আমাকে জানাবে। কেউ হয়ত বলবে- ‘ভালো হয়েছে’ আবার কেউ বলবে ‘এই জায়গাটি change করলে ভালো হয়’ ইত্যাদি ইত্যাদি। সুতরাং আমি এভাবেই বুঝতে পারব যে, আমার কোন জায়গায় খামতি রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ-
BENGALI MOTIVATIONAL STORY NEW ।। বাংলা নীতিকথার গল্প।।
সফলতার গল্প মোটিভেশনাল উক্তি বিখ্যাতদের সফলতার গল্প
বিনম্রতার অভাবঃ-
জীবনে সফল হতে গেলে বিনম্রতা থাকা অত্যন্ত জরুরি। জীবনে প্রতিটা পদক্ষেপকে কোনো নতুন কিছু শেখার কাজে ব্যয় করা উচিত। কখনো এটি ভাববেন না যে, আপনি পৃথিবীকে বোকা বানিয়েছেন, দিনশেষে খবর নিয়ে দেখুন, আপনিই পৃথিবীর কাছে বোকা হয়ে গেছেন।
তাই ‘সবজানি’ ভেবে বসে থাকবেন না। জীবনের প্রতিটা মুহূর্তকে কাজে লাগান এবং নতুন কিছু শিখতে থাকুন।
মানুষের সাথে মিলনের অভাবঃ-
যদি আপনি বন্ধুবৎসল না হন তাহলে আপনি কোনো দিনই সফল হতে পারবেন না। আপনি চেষ্টা করে আপনার জীবনের অন্তিম পর্যায়ে পৌঁছে গেলেও আপনি যদি রুঢ স্বভাবের হন, জীবনে সফল হতে পারবেন না। সর্বদা মনে রাখবেন- কোনো ব্যাক্তিই জীবনে একা একা সফল হতে পারে না। সফল হতে গেলে তাকে কারো না কারো সাহায্য নিতে হবেই। আর এই সাহায্যের জন্য চাই বন্ধুভাবাপন্ন মনোভাব।
যেমন ধরুন আপনি একটি কোম্পানির মালিক। এবং সেখানে -১০-২০ জন মানুষ কাজ করে। এবার আপনি যদি তাদের সাথে ভালো ব্যবহার না করেন, তাদের সুবিধা- অসুবিধা না দেখেন, তাহলে কিন্তু আপনার ভাত মারা যাবে। কারণ আপনি যেহেতু তাদের নীচ চোখে দেখছেন, সেহেতু তারাও আপনাকে নীচ চোখে দেখবে।
ব্যর্থতার কারণ কি? মোটিভেশনাল উক্তি
হঠাৎ তর্কে জড়াবেন নাঃ-
কোনো কথা পুরোপুরি না শুনে, ঠিক মত না বোঝেন তাহলে আপনার নিজস্ব মত প্রকাশ করে অযথা তর্কে জড়ানোর কোনো দরকার নেই। এর আগে আপনাকে বলা হল- মানুষের সাথে কথা বলতে বলা হল। সেই বিষয়টির সাথে এই বিষয়টিকে গুলিয়ে ফেলবেন না। আপনাকে বলার চেষ্টা করছি- হঠাৎ আপনার মত আপনি যেন প্রকাশ না করেন সেই বিষয়টির কথা।
সফলতা প্রাপ্ত করার জন্য প্রথমেই জীবনে ভালো কিছু কাজ করুন, এরপর মানুষের কাছ থেকে কাজটি সম্পর্কিত তাদের মতামত গ্রহণ করুন, এরপর নিজে বিবেচনা করুন তারা আপনাকে কতটা criticise করছে। অবশেষে আপনি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন আপনি সেই কাজটির উপযুক্ত কি না?
লক্ষ্য ভুলে যাওয়াঃ-
কখনো কখনো আমরা লক্ষ্য নিয়ে ভাবতে থাকি ঠিকই কিন্তু নিজের লক্ষ্য পূরণের রাস্তায় থাকি না। এটি একটি ব্যর্থতার বড় কারণ। নিজের লক্ষ্য পূরণের রাস্তায় স্থির ভাবে চলার জন্য আপনি যেগুলি করতে পারেন-
আপনার ডাইরির প্রথম পাতায় আপনার লক্ষ্যটি বড় বড় আকারে লিখুন। এরপর আপনার ঘরের যেসব জায়গায় সচরাচর চোখ চলে যায়, সেসব জায়গায় আপনার লক্ষ্যটি লিখে রাখুন। আপনার লক্ষ্যের কথা আপনার যত বেশি চোখে থাকবে, ঠিক তত বেশিই আপনার সেই লক্ষ্য পূরণের ইচ্ছা শক্তি মজবুত হবে।
বিশ্বাসঃ-
আপনার নিজের লক্ষ্যে অটুট থাকা এবং নিজের উপর বিশ্বাস রাখার কমতি রয়েছে। যদি আপনি নিজেই নিজেকে বিশ্বাস করাতে না পারেন যে, আপনি আপনার লক্ষ্যে ঠিকই পৌছাবেন, তাহলে আপনি কোনোদিনই সফল হতে পারবেন না। আপনার চিন্তা ভাবনা সর্বদা উঁচু করুন। আমার দ্বারা হবে না, আমি পারব না এইসব ভাবনাই আপনার বিশ্বাসকে নষ্ট করছে। তাই negative ভাবনা ভেবে সময় নষ্ট করবেন না।
নিজেকে মিথ্যা অজুহাত দেখানো বন্ধ করুন। যদি আপনি সব কাজেই অজুহাত দেখান, তাহলে সফলতাও বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে আপনাকে পাশ কাটিয়ে চলে যাবে।
ব্যর্থতার কারণ কি? মোটিভেশনাল উক্তি
অপর্যাপ্ত শিক্ষাঃ-
কথায় আছে “অল্পবিদ্যা ভয়ংকরী” এক্ষেত্রেও ঠিক তাই। আপনার যথাযথ শিক্ষাই আপনার সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। তবে মনে রাখবেন এখানে আমি শিক্ষা বলতে গতানুগতিক পুথিগত বিদ্যাকে বোঝাচ্ছি না। পুঁথিগত বিদ্যা অবশ্যই দরকার, কিন্তু তার পাশাপাশি কোনো বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকাটাও অনেক জরুরি।
অহংকারঃ-
কথায় আছে- “ অহংকার পতনের মূল কারণ” আপনি যদি কোনো কিছু জানেন, তাহলে সেটি যে মানুষটি জানেন না, তাকেও জানান। এরফলে আপনার জ্ঞানের কোনো কমতি হবে না। বরং আপনার জ্ঞান স্থায়ী হবে, এবং আগের থেকে অনেক উন্নত হবে।
ধৈর্যের অভাবঃ-
জীবন আসলে একটি গাছের মত। এটিকে ঠিক মত পরিচর্যা করতে পাড়লে একসময় ঠিকই ফল দান করবে। কিন্তু এরজন্য দরকার ধৈর্য। অনেকেই ধৈর্য হারিয়ে ফেলেন। যার ফলস্বরূপ ব্যর্থতার হীনমন্যতায় দিন কাটান।
জীবনে সফলতার মূল পদক্ষেপই হল- সঠিক সিদ্ধান্ত> সঠিক পথ> সময়> ধৈর্য= সফলতা
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।