বাস্তব জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনার আঙ্গিকেই আজকের বাস্তব শিক্ষনীয় গল্প দুটি। গল্প দুটি ছোট হলেও গল্প গুলির মধ্যে লুকিয়ে থাকা অর্থ বিশাল।

বাস্তব শিক্ষনীয় গল্পঃ- ০১

কল্পের বয়স ষোল। অভাব অনটনের সংসারে বাপ মায়ের একমাত্র ভরসা কল্প। সমুদ্র তীরে ঝিনুক কুড়িয়ে সেগুলো ঝিনুক দিয়ে আয়না বানানোর দোকানে বিক্রি করে, অতিকষ্টে সংসার চালায় সে।

একদিন ঘর থেকে না বেরোলে চুলোয় হাড়ি চড়েনা তাদের। বিগত দুইদিন কল্পের ভীষণ জ্বর। তাই ঘরে আর কিচ্ছুটি অবশিষ্ট নেই। ঠিক এমন পরিস্থিতিতে সেদিন হঠাৎ দুপুরবেলা এক সন্ন্যাসীর আগমন-

“আমাকে কিছু দেবে মা?”

কল্প মনে মনে ভাবে ঘরে যে কিছুই নেই, এই ভরদুপুরে সন্ন্যাসীকে কী দিয়ে সেবা করবে সে! লজ্জায় মাথা নিচু করে কল্প সন্ন্যাসীকে বলে- “বাবা, দেবার মত আমার কাছে কিছুই যে নেই, এই পাথরটি ছাড়া, এটা তুমি নেবে?”

পাথরটি কল্প সমুদ্র তীরে ঝিনুক কুড়াতে কুড়াতে পেয়েছিল আর এতদিন সেটা নিজের কাছেই রেখেছিল অতিযত্নে। অতিথি বিমুখ হয়ে ফিরবে ভেবে এই পাথরটি সে সন্ন্যাসীকে দিতে গেল, কিন্তু পাথরটি চকচকে সুন্দর হলেও সন্ন্যাসী সেটি না নিয়ে মুখ ভার করে বেরিয়ে গেল।

কল্প ভাবতে লাগলো হয়তো পাথরটি মূল্যহীন তাই সে গ্রহন করলো না। খুব মন খারাপ হলো তার। পাথরটি আর সে রাখবে না বলে মন স্থির করে পাশের গাঁয়ের তারই এক বান্ধবী তরু’কে দিল।

বাস্তব শিক্ষনীয় গল্প
বাস্তব শিক্ষনীয় গল্প

ঠিক কয়েকদিন পর সেই সন্ন্যাসী তরু’র বাড়িতে যায়। মধ্যবিত্ত ঘরের তরু তখন সবে রান্না শেষ করে উঠেছে। তরু সন্ন্যাসীকে বসতে দিয়ে জানতে চাইল-

“বাবা,আপনাকে কী দুটো অন্ন দিতে পারি?”

উত্তরে সন্ন্যাসী বললেন “আমাকে দুমুঠো চাল দিলে সাদরে গ্রহন করবো।”

তরু সন্ন্যাসীকে বাটিভর্তি চাল দিয়ে, দক্ষিণা হিসেবে তার উপর সেই পাথরটিও দিল। সন্ন্যাসী পাথরটি রেখে চাল নিয়ে বেরিয়ে গেল। তখন তরুও পাথরটিকে মূল্যহীন ভেবে ভীন গাঁয়ের তারই আরেক বান্ধবী লতা’কে দিল।

উচ্চবিত্ত ঘরের গর্বিত লতা পাথরটি পেয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত এবং মনে মনে তখনই স্থির করে ফেললো যে সে এই পাথরটি এমন কাউকে দিবে যে এর মূল্য সম্পর্কে যথেষ্ট অবহিত এবং এটি রক্ষা করতে দৃঢ়প্রত্যয়ী। আর এর ঠিক কয়েকদিন পরেই সেই সন্ন্যাসী লতার বাড়িতে।

লতা সন্ন্যাসীকে একবাটি চাল আর পাথরটি দিল। সন্ন্যাসী চাল গুলো না নিয়ে, শুধু পাথরটি নিয়ে বেরিয়ে যেতে যেতে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো-এ বাড়ির পাথর, ‘নিশ্চয়ই অনেক মূল্যবান’- ‘নিশ্চয়ই অনেক মূল্যবান…’

মানুষের মানসিকতা আসলে এরকমই। যখন দরিদ্রের হাত ধরে তার কাছে সুযোগ আসে সে- ‘ফালতু জিনিস’ ভেবে সেই সুযোগটিকে গল্পের পাথরের মত ফিরিয়ে দেয়। কিন্তু ঠিক একই সুযোগ যখন একজন ধনী ব্যক্তির হাত ধরে আসে সেটাকে সাদরে গ্রহণ করে। আসলে মানুষের স্বভাবটাই এরকম।

সুমন মণ্ডল

উপরের গল্পটির প্রেরক-
পড়ুনঃ- সেরা প্রেরণা মূলক ঘটনা 

বাস্তব শিক্ষনীয় গল্পঃ- ০২

হারুর পরিবারে খুবই অশান্তি। আর এই অশান্তির মূল কারণ হল তার স্ত্রী। তার স্ত্রী কথায় কথায় তর্ক করে। শুধু হারুর সাথে নয় পরিবারের বাকিদের সাথেও সে তর্কে জড়িয়ে পরে। এমনকি বাদ যায় না, হারুর মা- বাবাও।

এই তো সেদিনের কথা, সবাই টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছে, হারুর মা বলল- “বৌমা একটু লবণ টা এগিয়ে দেবে, লবণ কম হয়েছে।“

ব্যস অমনি, অমনি হারুর স্ত্রী রেগে মেগে শেষ। এই সাধারণ তিল সমান কথাটাকে তাল বানিয়ে ছাড়ল হারুর স্ত্রী। সে জবাব দিল- “আরে, আপনি বেশ আজব মানুষ মা! একে তো রান্না বান্না করতে পারেন না, আমিই করি আবার আমাকেই বলছেন লবণ এগিয়ে দিতে। সামান্য লবণ টুকু নিয়ে খাওয়ার মুরোদ নেই আপনার, আশ্চর্য! দেখুন আমার রান্না পছন্দ হয় না খাবেন না, কে বলেছে খেতে! নিজে রান্না করে খাবেন… ইত্যাদি ইত্যাদি।

ছোট শিক্ষণীয় গল্প
ছোট শিক্ষণীয় গল্প

এরপর হারুর মা, হারুকে নানান কথা শোনাতে থাকে- “বলেছিলাম ওই সব প্রেম পিরিতি করে মেয়ে ঘরে আনিস নিকো বাছা। হল তো এখন! দেখেছ তোমার বউয়ের মুখের কি শ্রী! যেন মুখ দিয়ে বিন্নি ধানের খই ফুটছে গো!”

এই কথাটা শোনা মাত্রই হারুর স্ত্রী বেজায় চটে যায়। ব্যস শুরু হয়ে গেল নিত্যদিনের কাক- চড়াই এর লড়াই।

এদিকে হারুর স্ত্রী নিজেও তার এই স্বভাবের জন্য লজ্জা পায়। কিন্তু সে নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে পারে না। তাকে কেউ কিছু বললেই সেই কথা তার গায়ে কাঁটার মত লাগে আর তার প্রতিক্রিয়া হিসেবে বেড়িয়ে আসে তার মুখের বিভিন্ন অশ্রাব্য গালাগালি। পাড়া- পড়শি রাও তার এই স্বভাবে ক্ষুণ্ণ। কেউই মেশে না তার কাছে।

হারুর স্ত্রী নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে করতে থাকে। এরপর সে ঠিক করে যেভাবেই হোক তাকে এই অভ্যাসটি ছারতেই হবে। কিন্তু সে ছাড়তে পারে না, সে যতই এই অভ্যাসটি ছাড়তে চায়, অভ্যাসটি তাকে যেন আরও বেশি করে আঁকড়ে ধরে।

কিছুদিন পরে তাদের বাড়িতে আগমন হল একজন সাধুর। ভাগ্যক্রমে সেদিন বাড়িতে হারুর স্ত্রী একাই ছিল। সে সাধুকে জানায় তার সমস্যা।

সাধুটি, তার হাতে একটি ছোট্ট কাঁচের বতল দিয়ে বলেন- “এই হল তোর ওষুধ। সবার সঙ্গে যাওয়ার আগে এই শিশি থেকে দু ফোঁটা ওষুধ মুখে নিবি। তবে এই ওষুধ মুখে নিলে একুশ মিনিট কিন্তু কোন কথা বলা যাবে না। ওষুধ মুখে নিয়ে একুশ মিনিট মুখে ধরে রাখবি, মুখ খুলবি না। একুশ দিন এই ওষুধ টি ব্যবহার করবি। আমি একুশ দিন পরে আবার আসব।“  এই বলে সাধু চলে গেল।

এদিকে হারুর স্ত্রী ওষুধ পেয়ে মহা খুশি। সে সবার সাথে যাওয়ার আগে ওষুধ মুখে নিয়ে নেয়। কারও কোন কাজ থাকলে সে বাধ্যমত করে, কেন না মুখ খোলা যাবে না। কিন্তু সে যেন নিজেকে কিছুতেই নিয়ন্ত্রন করতে পারছে না। যেন মুখ ফেটে শব্দ বেড়িয়ে আসছে। কিন্তু সাধুর কথা তার মনে পরে যায়, সে আর মুখ খোলে না।

এভাবে কেটে যায় দিন একুশ । হারুর স্ত্রীর প্রথম প্রথম নিজেকে নিয়ন্ত্রনে রাখতে অসুবিধা হলেও এখন দিব্যি সে ওষুধ নিয়ে মুখ বন্ধ করে থাকতে পারছে। 

২১ দিনের মাথায় হারুর স্ত্রী দেখল তার কথায় কথায় ঝগড়া করার অভ্যেসটি গায়েব হয়ে গেছে। সে বেজায় খুশি তার সঙ্গে খুশি তার পরিবার। পরের দিন আগের কথা মত সাধু এসে হাজির।

সাধু আসতেই হারুর স্ত্রী সাধুর পায়ে লুটিয়ে পরল- “কি ওষুধ দিলেন বাবা, মাত্র ২১ দিনেই আমার বদ অভ্যাস চলে গেছে।“

motivational story in bengali
motivational story in bengali
<

সাধু হাসতে হাসতে বললেন- ধুর পাগল, আমি কোন ওষুধই দিই নি। সেই শিশিতে সাধারণ জল ভরা ছিল। তোর মনের মধ্যে আমি একটা বিশ্বাস জন্মাতে চেয়েছিলাম যে, চুপ চাপ থাকলেই তোর এই সমস্যাটার সমাধান সম্ভব।

যতই রাগ আসুক না কেন, নিজেকে নিয়ন্ত্রন করাটাই দ্বন্দ্ব এড়িয়ে যাওয়ার সবথেকে বড় ওষুধ আর আমি ওই জল রূপী ওষুধ তোকে ২১ দিন খেতে বলেছিলাম কারণ, যে কোন কাজ টানা একুশ দিন করলে সেটি অভ্যাসে পরিনত হয়।

তাই সবার আগে নিজেকে, নিজের ইমোশন কে নিয়ন্ত্রন করতে শেখ। দ্বন্দ্ব এড়ানোর এটাই সবথেকে কার্যকরী ও সহজ ওষুধ। মৌন মৌন মৌন।                                                                                  

গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।

পড়ুনঃ- 
অসাধারণ উপদেশ মূলক গল্প

বাবাকে নিয়ে সুন্দর একটি শিক্ষণীয় গল্প
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

বাস্তব শিক্ষনীয় গল্প ছোট শিক্ষণীয় গল্প motivational story in bengali.

Spread the love

Leave a Reply