বাংলা ছোট রহস্য গল্প/ আমাদের জীবনে এমন কিছু রহস্যময় ঘটনা ঘটে যায় যার উত্তর আমাদের কাছে থাকে না, আবার অনেক সময় সেই ঘটনা সত্য নাকি স্বপ্ন সেটাও বুঝে উঠতে পারি না। আজকের বাংলা ছোট রহস্য গল্প টিতে পাঠক অনেকটা সেই ধরনের ছোঁয়া পাবেন।
বাংলা ছোট রহস্য গল্পঃ- “স্বপ্ন নাকি বাস্তব”
অফিসের সব কাজ শেষ করতে করতেই আমার বিকেল তিনটে বেজে গেল। তড়িঘড়ি বাস স্ট্যান্ডে এসে শুনি বর্ধমান যাওয়ার শেষ বাসটা ক্যান্সেল হয়েছে। এই খবরটা শুনতেই মনটা বিষাদে ভরে গেল, কিন্তু যেভাবেই হোক আমাকে আজকে বর্ধমান যেতেই হবে। বাস স্ট্যান্ডের একটা লোককে বললাম, কিভাবে বর্ধমান যাওয়া যায়, কেননা বর্ধমান যাওয়ার যে ট্রেন সেটাও চলে গেছে।
লোকটা বলল, খুচরো ভাবে যেতে হবে। অর্থাৎ কয়েকটা গাড়ি বদলে যেতে হবে। সে আমি যেতে রাজী আছি, সেটা নিয়ে আমার কোন সমস্যা নেই। কিন্তু আসল সমস্যা হল সময়। কারণ এখান থেকে আমাকে প্রথমে যেতে হবে বীরভূম। আর বীরভূম যেতেই আমার প্রায় রাত ৮ টা বেজে যাওয়ার কথা। এরপর এত রাতে বর্ধমানের বাস যে পাওয়ার সম্ভাবনা কম, সেই ব্যাপারে আমি ভালোভাবেই জানি।
আমার কাছে দুটো রাস্তা খোলা। প্রথমত, সেই বীরভূম এর গাড়ি ধরে সেখান যাওয়া তারপর পুরোটা ভাগ্যের উপর ছেড়ে দেওয়া, আর দ্বিতীয়ত শিলিগুড়ি এর গাড়ি ধরে বাড়ি ফিরে আসা। কিন্তু আমার পক্ষে বাড়ি ফিরে আসা সম্ভব নয়।

ভাগ্যের উপর সবটা ছেড়ে দিয়ে সেই বীরভূম এর গাড়িতে চাপলাম। গাড়ি তখন সবে মাত্র কিছুদূর এসেছে, শুরু হল তুমুল ঝড় বৃষ্টি। ঝড় বৃষ্টির দাপট এত্ত বেশি যে, সামনের গাড়ির লাল লাইট ছাড়া আর কিছুই চোখে আসছে না।
এদিকে রাস্তায় অনেকটা জল জমে আছে, আবার রাস্তার অবস্থা এমন যেন কেউ ছোট ছোট পুকুর খুঁড়ে রেখেছে। সেই পুকুর ডিঙ্গিয়ে জমে থাকা জল ঠেলে গাড়ি টি এগিয়ে যেতে লাগল টলমল করে।
প্রায় ৯.৩০ নাগাদ আমি যখন বীরভূম এ পৌঁছালাম, তখন বৃষ্টির প্রকোপ অনেকটাই কমেছে, তবে ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়ছেই।
জিজ্ঞাসা করে জানলাম, বর্ধমান যাওয়ার আর একটিও বাস নেই। এই নতুন জায়গায় নিজেকে কেমন যেন ছন্নছাড়া মনে হচ্ছিল, বারবার মনে হচ্ছিল এবার আমার কি হবে!
রানি কে ফোন করে জানিয়ে দিলাম, আজ হয়ত আর বর্ধমানে যাওয়া হবে না। রানির কথা শুনে বেশ বুঝলাম, অনেকটা খারাপ পেয়ে বসে আছে সে।
পড়ুনঃ- রহস্যময় গল্প- শুনশান রাস্তায় আমি ও নিলি
ঠিক করলাম বীরভূম এই একটা লজ খুঁজে, রাতটা কোনমতে কাটিয়ে সকালের গাড়িতেই বর্ধমানে চলে যাব। এরপর একটা লজে গিয়ে উঠলাম। সারাদিনের জার্নির পর পুরো শরীরের অবস্থা শেষ, কোনমতে স্নান সেরে শুয়ে পরলাম।
রাত তখন বেশ গভীর, বাইরে খুব জোড়ে মেঘের গর্জন শোনা যাচ্ছে, আর মাঝে মাঝে বৃষ্টির ঝিমঝিম শব্দ কানে ভেসে আসছে।
হঠাৎ করে মনে হল, বাথরুমের শাওয়ারটা যেন চলছে। ইচ্ছে না থাকলেও, উঠে গিয়ে দেখি সত্যি শাওয়ার বন্ধ করতে ভুলে গেছি। সেটা বন্ধ করে দিয়ে এসে আবার শুয়ে পরলাম। কতক্ষণ ঘুমিয়েছি জানিনা, কানে ভেসে এলো বালতি তে জল ভরার শব্দ। কান খাঁড়া করে শুনলাম, শব্দটা আসছে, আমার বাথরুম থেকেই।
আবার উঠে গিয়ে দেখলাম। কিন্তু বাথরুমে যেতেই শব্দটা হারিয়ে গেল। আমার ক্লান্তিতে হয়ত এরকম শুনেছি ভেবে আবার এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। কিছুক্ষণ পর আবার সেই বালতিতে জল ভরার শব্দটা ভেসে এলো। না এবার ভুল হওয়ার কথা নয়। এক লাফে বাথরুমে গিয়ে দেখলাম, সত্যি বালতি তে জল পড়ছে।
বড্ড অবাক হলাম, কেননা আমি একটু আগেই দেখেছি নল বন্ধ আছে, তাহলে সেটা চালু করল কে! আমার এই রুমের সাথে তো আর অন্য কোন রুমের যোগাযোগ নেই। তাহলে নল চালু করল কে!




ব্যাপারটা কেমন যেন অদ্ভুত লাগছে। এই অচেনা জায়গা, অচেনা সব লোকজন আর এরকম অদ্ভুত সব কর্মকাণ্ড! আমি নলটা বন্ধ করে দিয়ে আবার বিছানায় এসে বসে রইলাম, হাত ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখি রাত প্রায় ৩ টে।
এত রাতে, লজের সবাই ঘুমাচ্ছে। একবার ফোনটা হাতে নিয়ে রানিকে কল করতে চাইলাম, কিন্তু সারাদিন অনেক ধকল গেছে ওর উপর, তাই ওকে আর ঘুম থেকে তুলতে মন গেল না।
এই সব ভাবতে ভাবতেই মনে হল, দরজার ওপারে কেউ যেন ডাকছে। এরকম অচেনা জায়গায় এত রাতে দরজা খুলতে মন গেল না। একটা অজানা ভয় আমাকে ধীরে ধীরে আঁকড়ে ধরতে লাগল।
কম্বল টা ভালমত মাথায় ঢাকা নিয়ে বিছানার উপরে পড়ে রইলাম। কিন্তু এবার মনে হতে লাগল দরজার ওপাশে কেউ যেন ধাক্কা দিচ্ছে। আমি সব শুনেও না শোনার ভান করে পড়ে রইলাম। এদিকে আমি এত এত ঘেমে গেছি যে, বিছানাও ভিজে গেছে।
না আর এইভাবে থাকা যাচ্ছে না। মাথা থেকে ধীরে ধীরে কম্বলটা সরিয়ে রুমের লাইটটা অন করে বাথরুমের দিকে যেতে লাগলাম। কিন্তু এ কি!
পড়ুনঃ- ডিটেকটিভ গল্প- নিল নারী মূর্তি উধাও রহস্য
বাথরুমে এত এত ইঁদুরের বাচ্চা এল কোথা থেকে! ওগুলোকে দেখেই গা ঘিনঘিন করতে লাগল। নজর গেল, জল যাওয়ার পাইপে, সেখানে একটা বড় ইদুর মরে আছে। এত বড় ইদুর আমি জীবনে দেখি নি। কেমন অদ্ভুত যেন একটা গন্ধে গোটা ঘর ভরে যাচ্ছে।
হঠাৎ করেই লাইটটা অফ হয়ে গেল। চারিদিকে অন্ধকার। আমি হাতড়ে হাতড়ে দেওয়াল ধরে বিছানায় চলে এলাম। এসে শুনি দরজার ওপাশে এখনও কেউ যেন ধাক্কা দিয়েই চলছে। আমি কিছুই বুঝছি না, এত এত ইদুর এল কোথা থেকে! এই তো কিছুক্ষণ আগেই সব ঠিকঠাক ছিল।
আমার মনে হতে লাগল কেউ যেন আমার পায়ে সুড়সুড়ি দিচ্ছে। হঠাৎ করেই ঘরের লাইটটা জ্বলে উঠল। আর দেখলাম-
ইঁদুরের বাচ্চা গুলো আমার পায়ের নীচে কিলবিল করছে। দেখতে দেখতেই সেগুলো আমার শরীর বেয়ে উপরে উঠতে লাগল। ভয়ে আতঙ্কে আমার গোটা শরীর কাঁপছে।




এদিকে একটা বিকট শব্দ করে দরজাটা ভেঙে গেল আর দেখলাম…
ঘুম টা ভেঙে গেল ফোনের শব্দে। দেখি রানি কল করেছে, সময় তখন সকাল ৫.৩০। হাফাতে হাফাতে তার সঙ্গে কথা বলতে লাগলাম। সে জিজ্ঞাসা করতে লাগল কি হয়েছে, আমি জলের বোতল টা হাতে নিয়ে ভাবতে লাগলাম, এটা কি একটা স্বপ্ন ছিল নাকি স্বপ্নের আড়ালে লুকিয়ে থাকা এক বাস্তবতা। দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি সেটা ঠিক আছে বাথরুমে গিয়ে দেখি সেখানে কোন ইদুর নেই, সব গেলো কোথায়!
এদিকে ফোনে রানির কণ্ঠ বারবার জিজ্ঞাসা করে চলছে- “কি হয়েছে তোমার! তুমি ঠিক আছো কি না! কথা বলো।“ কিন্তু আমার মাথায় শুধু একটাই চিন্তা চলছে, আমার সাথে যেটা হয়ে গেল সেটা কি ছিল! স্বপ্নই তো!!
রহস্যের ছোঁয়ায়-
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
পড়ুনঃ- বাস্তব জীবনের একটি শিক্ষণীয় গল্প- জীবন অঙ্কুর হতাশা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প ভৌতিক গল্প- রহস্যময় নারী
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- ফেসবুক Group - গল্প Junction ফেসবুক- ছাড়পত্র টেলিগ্রাম- charpatraOfficial WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)
বাংলা ছোট রহস্য গল্প। রহস্যময় ভূতের গল্প। bengali mysterious horror story.




কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।