ছাড়পত্রের পাতায় নতুন একটি বাংলা ছোট গল্প নিয়ে আবারও চলে আসা। এই অপ্রকাশিত প্রেমের গল্পটির নাম নববর্ষের উপহার। পাঠিয়েছেন মানব মণ্ডল। “শেষ হয়েও হইল না শেষ” ছোট গল্পের এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যটি সুনিপুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক।

বাংলা ছোট গল্প -নববর্ষের উপহার। নতুন বাংলা গল্পঃ-

ও আজ বেশ খুশি, বাঁশি মানে নিখিল আজ সকাল থেকেই ওদের বাড়িতে কাজ করছে। একটা ছেলে হয়ে কি সুন্দর আলপনা দিয়েছে। মিলির গান রেয়াজে মন নেই ওকে একইভাবে দেখে যাচ্ছে পর্দার আড়াল থেকে। আজ সন্ধ্যার বাঁশিও বাজাবে সেইই ওদের বাড়ির জলসায়। সব কাজ করে দিয়ে দিলে বাবা ওকে দশ-টাকা দেবে বলেছে। ব্যান্যাজীদের দোকানে এই টাকা দিয়ে হালখাতা করে ও মায়ের জন্য শাড়ি কিনে নিয়ে যাবে। প্রতি বছর ওরা মিলিদের মতো নতুন জামা কাপড় কিনেতে পাড়ে না। নিখিল মানে বাঁশি প্রতিবছর ওর বোন কিংবা  ভাইয়ের জন্য  জামাকাপড় কেনে নিজের জন্য কেনে না। পুড়ানো বই পত্রের মতো সে এর-ওর পুরাতন জামা কাপড় পড়ে চালিয়ে নেয়।

মিলিদের  বাড়ির এটা ওটা করে দেওয়ার বদলে মিলির বইগুলো পড়তে দেয় ওকে। এক ক্লাসেই পড়ে ওরা। অথচ সে খুব সুন্দর ভাবে মিলিকে পড়া বুঝিয়ে দেয়। তাই সবাই ওকে ভালোবাসে। ঠাকুর মা তো কেউ না থাকলে মজাকরে বলে” পোঁ-দের ছেলে না হলে ঐ ছোঁড়াকে নাতিন-জামাই করতাম।” মিলিরও আজকাল ওকে ভালো লাগে। এই সরস্বতী পূজাতে  নিখিল ওকে শাড়ি পড়িয়ে দিলো। তখন ও নিখিল কে জড়িয়েও ধরেছিল, নিখিল ওকে ছাড়িয়ে নিয়ে চলে গেল কিছু করলো না। তারপর থেকে সে একটু এড়িয়ে এড়িয়ে চলছে যদিও, তবে মিলি ছাড়াবার পাত্রি নয়। কাল গোষ্ঠ মেলায় ওকে জোর করে নিয়ে গেছে। একটু হুমকি দিয়েছিলো যদিও বলেছিলো “আজ যদি আমাকে মেলায় না নিয়ে যাস তাহলে মামা বাড়ি চলে যাবো ওখানেই থাকবো। দেখবো তুই  কার বই নিয়ে পড়াশোনা করিস।”

যদিও প্রতিবছর সে স্কুল থেকে প্রথম হয় তাই স্কুল থেকে ওকে একটা সাইকেল দিয়েছে। তাই ও হয়তো আমতলায় গিয়ে এখন লাইব্রেরি থেকে বই নিয়ে পড়তে পারে। সেটাও জানিয়ে দিল মুখের ওপর, কিন্তু নিখিল বিকালে ঠিক হাজির হল সাইকেল নিয়ে। তবে ওর ছোট বোনটাকে নিয়ে এসেছিল। তাতে মিলির অবশ্য কোন আপত্তি নেই। ওদের বাপ মারা যাবার পর থেকে নিখিলই তো ওদের সংসারটা  আগলে রেখেছে , সব ঝড়ঝাপটা থেকে। ওর দাদাতো, যাত্রা পালা করে বেড়ায়,আর এমনি সময় বহুরুপী সেজে এ গ্রামে ও গ্রামে ঘুরে বেড়ায়, নগদ পেলেই মোল্লা পাড়া গিয়ে চম্পা সুন্দরীর ডেড়াতে মদ খেয়ে পরে থাকে।

বাংলা ছোট গল্প অপ্রকাশিত ভালোবাসা
বাংলা ছোট গল্প অপ্রকাশিত ভালোবাসা

যাইহোক এই গ্রামের গোষ্ঠ মেলাটা বেশ বড়সড় হয়।গোষ্ঠের দিন মন্দির থেকে বিগ্রহ নিয়ে গিয়ে মেলা প্রাঙ্গণে রাখা হয় রাত আটটা পর্যন্ত। তার পরে বিগ্রহ মন্দিরে ফিরিয়ে আনা হয়। প্রভু গোচারণে গিয়েছেন এটা মেনেই দুপুরে থালায় থালায় ভোগ নিয়ে যাওয়া হয় মেলার মাঠে। চলে পুজো, আরতি। বিগ্রহ নিয়ে যাওয়ার সময়ে শোভাযাত্রা এবং ৫০-৬০টি থালায় ভোগ পাঠানো দেখতে ভিড় জমে। মিলিদের বাড়ি থেকে ছলন গেছে এবছর। এবারের ছলনের গোপালটা নিখিল বানিয়ে দিয়েছে।

এ দিন দুপুরে রীতি মেনেই পৌঁছয় বনভোজনের সামগ্রী। ধুতি পরে সেবায়েত পরিবারের পুরুষেরা থালায়, থালায় নিয়ে এলেন ভোগ। সাজিয়ে রাখা হয় মঞ্চে। আরতির পরেই প্রসাদ নিয়ে আবার বাড়ির পথ ধরলেন তাঁরা।সন্ধ্যার পরে বিগ্রহ মন্দিরে ফিরে গেলেও মেলায় দর্শকদের মধ্যে আনন্দের খামতি থাকে না। সেবায়েতদের পরিবার তো বটেই, এখানকার বাড়িতে বাড়িতে এই সময় আত্মীয়স্বজন আসেন। একই দিনে গোষ্ঠ পালিত হয় গোশালায়। কয়েক দশক আগে এক সময় শতাধিক গরুর আশ্রয়স্থল ছিল এই গোশালা।

পড়ুনঃ- BENGALI MOTIVATIONAL STORY

ভয়ংকর ভূতের গল্প। ভূতের বাড়ি

সন্ধ্যায় যেহুতু সবাই ফিরে আসে তাই ইচ্ছে থাকলেও কোনো বছরই মিলির পুতুল নাচ দেখা হয়না। দেখ হয়না গাজন ঝাঁপ। গাজনের সন্ন্যাসী বা ভক্তরা নিজেদের শরীরকে বিভিন্ন উপায়ে যন্ত্রনা দিয়ে কৃচ্ছ্রসাধনের মাধ্যমে ইষ্ট দেবতাকে সন্তোষ প্রদানের চেষ্টা করে সেটা দেখার ইচ্ছে ছিলো অনেক দিন ধরে। গাজন উপলক্ষ্যে তারা শোভাযাত্রা সহকারে দেবতার মন্দিরে যায়। শিবের গাজনে দু’জন সন্ন্যাসী শিব ও গৌরী সেজে এবং অন্যান্যরা নন্দী, ভৃঙ্গী, ভূতপ্রেত, দৈত্যদানব প্রভৃতির সং সেজে নৃত্য করতে থাকে। শিবের নানা লৌকিক ছড়া আবৃত্তি ও গান করে এগুলো দেখার ইচ্ছে ছিলো ওর বহুদিনের।যদিও বাড়ি থেকে ওকে বলে সবাই গাজন টাজন ক্যাওড়া বাগাদীদের পূজা ওগুলো তুই দেখবি?

মিলি আজ সকাল থেকে বেশ খুশী, কাল মেলায় ও ক’টা পুতুল দেখেছিলো। ওর পছন্দ হয়েছিল কিনে নিতেই পাড়তো কিন্তু ওর বোনটা সাথে ছিলো তাই কেনেনি ও পুতুল গুলো। কিনলে তো ওর জন্যেও কিনতে হতো। ওর কাছে অতো পয়সা ছিলো না। আসলে নিখিলের জন্য ও একটা বই কিনছে। ও জানে নিখিল শরৎচন্দ্রের গল্প পড়তে খুব ভালোবাসে।

ভোলাদার বইয়ের দোকানে রোজ ‘শ্রীকান্ত’ উপন্যাসটার দিকে তাকিয়ে থাকে ফ্যাল ফ্যাল করে, মিলি চায় ঠিক এভাবেই নিখিল ওর দিকে তাকিয়ে থাকুক।আজ নতুন বছরে ওকে উপহার দেবে বলে মিলি ওই বইটা কিনেছে তাই ওর হাতটান। তবে ও দেখেছে নিখিল তিনটে মাটির পুতুল গড়ে এনেছে সকালে, রঙ এনেছে  শুকিয়ে গেলে রঙ করে নিশ্চয়ই ওকেই দেবে। তাছাড়া ও বলছে শানেরঘাটে সন্ধ্যায় একটু দেখা করতে। তার মানে ওর জন্যই পুতুল তৈরি  করেছে ও।

সন্ধ্যায় কথা মতো শানের ঘাটের কাছে, দেখা করল ওরা দুজনে। নিখিলের হাতে পুতুল। আর মিলির হাতে ‘শ্রীকান্ত’ উপন্যাস। পুতুল তিনটে মিলির হাতে দিলো নিখিল। বললো ” পছন্দ হয়েছে?”

মিলি বললো ” হুঁ, খুব” নিখিল বললো ” তাহলে তিনটাকা দে , বোনের জন্য দুটো চুরি কিনে আনি মেলা থেকে, নতুন বছরে ওকে উপহার দেবো না কিছু” কথা শুনেই মিলির মাথা গরম হয়ে গেলো। ও বইটা দিয়ে নিখিলকে মারতে শুরু করলো, বললো ” তুই সবার জন্য উপহার দিবি আমাকে কিছু দিবি না। খালি নিবি?”

নিখিল বললো “যত মারার ইচ্ছে হয় মেরে নে কিন্তু  পুতুল গুলো যেনো না ভাঙে। তুই না কিনলে পাঁচ টাকায়  টেপি ওগুলো নিয়ে নেবে বলেছে।”

নতুন বাংলা গল্প new bengali short story
নতুন বাংলা গল্প new bengali short story

গল্প প্রেরক- মানব মণ্ডল ( facebook)

“বাংলা ছোট গল্প। অপ্রকাশিত ভালোবাসার গল্প। নতুন বাংলা গল্প। bengali new short story”

stay update with us on- গল্প আর গল্প or on telegram- ছাড়পত্র (charpatra) 
Spread the love

Leave a Reply