আজ আমরা একটি সুপ্ত প্রেমের বেদনাময় কাহিনী পড়ব। এই হার্ট টাচিং লাভ স্টোরি সম্পর্কে আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না যেন।
সুপ্ত প্রেমের বেদনাময় কাহিনী
জলপাইগুড়ির ছেলে অনিক শিলিগুড়ির এক নামী কলেজের ছাত্র। সেই কলেজেই পড়ত সুলেখা নামের এক রূপবতী মেয়ে। অনিক পড়াশোনায় ভালই ছিল। একদিন প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসে দুইজনের পরিচয় হয়, সেখান থেকেই বন্ধুত্ব শুরু। তারপর অনেক উথান-পতনের মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে তাদের বন্ধুত্ব প্রেমের সম্পর্কে পরিণত হয়।
দেখতে দেখতে এভাবেই কেটে যায় তিনটা বছর। ফোনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলা, মেসেজ সবই চলছিল ঠিকঠাক। তাদের সম্পর্ক দেখে যেন মনে হত, নিজেদের জগৎ নিয়েই ওরা ব্যস্ত। নিজেদের জগতের বাইরে যে অনেক কিছুই হচ্ছিল সেদিকে তাদের পরোয়া নেই।

কিন্তু একদিন…
সুলেখা অনেকবার ফোন করলেও অনিক ফোন তুলেনি। সুলেখার মেসেজেরও কোনো রিপ্লাই করেনি অনিক। এদিকে সুলেখার মাথায় নানান ভাবনা ভেসে উঠতে থাকে, কিছু হয়নি তো অনিকের? ঠিক আছে তো অনিক? কোথায় এখন সে? এদিকে সূর্য পশ্চিম কোনে হেলে পড়লেও অনিকের তরফ থেকে কোনো সারা পায়নি সুলেখা। সারারাত চিন্তায় ঘুম আসেনা সুলেখার। সে কিছুতেই বুঝছে না কি করবে সে? সারারাত চোখের জল ফেলেছিল মেয়েটা।
পরের দিন ঘড়ির কাটা সবে ৯ এর ঘড় অতিক্রম করেছে, অনিকের ফোন আসে সুলেখার কাছে।
অনিকঃ- হ্যালো, গুড মর্নিং।
সুলেখা অনিকের গলার আওয়াজ শুনতেই অঝোরে কাঁদতে থাকে।
সুলেখাঃ- তুমি ঠিক আছো তো? কি জানি কতই আজব কিছু ভেবেছিলাম। তোমার গলার আওয়াজ শুনে মনে বড়ই শান্তি পেলাম। গতকাল কেন ফোন তোলোনি? ম্যাসেজেরও কোনো রিপ্লাই করোনি তুমি। তুমি জান আমার কত চিন্তা হচ্ছিল?
অনিকঃ- আমি গতকাল ব্যস্ত ছিলাম।
মুহূর্তের মধ্যে সবকিছু ঠাণ্ডা হয়ে যায়, সুলেখার এত অভিমান মুহূর্তের মধ্যে মাটিতে মিশে যায়, অনিকের কথা শুনে। মানুষ আদৌ অতটা ব্যস্ত থাকে না, যতটা সে দেখায়।
অনিকঃ- কি হল কথা বন্ধ হল কেন? শোনো আমার কিছু বলার আছে। আমার মনে হয়, আমরা আর কথা বলতে পাড়ব না।
সুলেখাঃ- খুব ব্যস্ত থাকছ না…..
সুলেখার গলা আঁটকে যায়, সে আর কথা বলতে পাড়ল না।
অনিকঃ- আমাকে ক্ষমা করে দিও, আমি তোমাকে আর সময় দিতে পাড়ব না।
সুলেখাঃ– কিন্তু হঠাৎ করে কি হল তোমার? কেন এই সিদ্ধান্ত?
অনিকঃ- এত কথার জবাব আমি দিতে পাড়ব না, ক্ষমা করে দিও, রাখছি, ভালো থেকো।
এরপরেই লাইনটা কেটে যায়। মুহূর্তের মধ্যে অনিকের সঙ্গে কাটানো মুহূর্ত গুলি তার চোখের সামনে ভেসে উঠে, তার মনে হতে থাকে, পুরো পৃথিবীটা যেন তার চারপাশে বনবন করে ঘুরছে। হঠাৎ সুলেখার চোখ অন্ধকারে ঢেকে যায়, সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।

কিছুক্ষণ পর তার জ্ঞান ফিরে আসে। সে অঝোরে কাঁদতে থাকে। যেহেতু সে একাই হোস্টেলে থাকত, তাকে শান্তনা দেওয়ার মতনও কেউ ছিল না।
সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছিল না যে, অনিকের মত একটা ছেলে যার সাথে এত বছরের সম্পর্ক সেও এরকম করতে পারে! মুহূর্তের মধ্যেই অনিককে নিয়ে দেখা তার স্বপ্নগুলি ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়।
আরও পড়ুনঃ-
এরপর সে সিদ্ধান্ত নেয়, অনিক হয়ত কোনো কারণে তার উপর রাগ করেছে, তাকে আরেকবার সে বোঝাবে। সে হাঁতে আবার ফোন তুলে নেয়-
সুলেখাঃ- হ্যালো শুনছ তুমি। আমি কি কিছু করেছি, যে তুমি রাগ করেছ আমার উপরে?
অনিকঃ- আরে তুমি আবার ফোন করেছ কেন? আমি তো বলেই দিলাম তোমাকে।
সুলেখাঃ- আমার তোমাকে কিছু বলার আছে শোনো, দয়া করে আমার কথা।
অনিকঃ- তারপর বল-
সুলেখাঃ- তোমার কি কোনো সমস্যা হয়েছে? সমস্যা হলে আমাকে বল, আমি তোমাকে যথাসাধ্য সাহায্য করার চেষ্টা করব।
অনিক কিছু না বলে ফোন কেটে দেয়।

এবার সুলেখা পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়ে। সে ভাবল হয়ত অনিকের কাছে তাকে দেওয়ার মত সময় নেই। হয়ত নতুন কাউকে সে পেয়ে গেছে, নতুন-কে পেলে মানুষ পুরাতনের আর কদর করে না। নতুনের সাথে সময় কাঁটাতে গিয়ে পুরাতন-কে হয়ত সে সময় দিতে পারছে না। কত স্বপ্নই না দেখেছিল সে, অনিককে বিয়ে করে, সুখে জীবন যাপন করবে। কিন্তু না অনিকের কাছে তো তাকে দেওয়ার মত সময়ই নেই। সে ব্যস্ত নিজের জীবন নিয়ে, এই সব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে, সুলেখা ঘুমের দেশে চলে যায়, পরের দিন উঠে সে কলেজে যাওয়ার জন্য তৈরি হয় এবং আরেক বান্ধবীর সাথে মনমরা হয়ে কলেজে যেতে থাকে।
অনিকের কথা ভাবতে ভাবতে রাস্তা পারাপার হওয়ার সময় কখন যে সে অন্য বান্ধবীর থেকে পিছিয়ে পড়ে, আর এদিকে একটি গাড়ি তীব্র গতিতে হর্ন বাজিয়ে আসলেও সেদিকে সুলেখার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই, বান্ধবী সরে যেতে বললেও সুলেখা মাথা নিচু করে অনিকের ভাবনায় বিভোর। বান্ধবীর চিল্লানোর আওয়াজ এবং গাড়ির হর্ন কিছুই সে বুঝতে পারে নি।
ফলস্বরূপ যা হওয়ার তাই হল। প্রায় ১২ টা নাগাদ অনিকের কাছে সুলেখার মায়ের ফোন আসে, সে জানতে পারে, সুলেখার অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে, অবস্থা খুবই খারাপ। সুলেখার জ্ঞান ফিরে আসার পর শুধু মুখে অনিকের নাম নিচ্ছে। অনিক দ্রুত হসপিটালে চলে যায়, সুলেখার বেডের পাশে, দাঁড়িয়ে অনিকের চোখে জল চলে আসে, ডাক্তার সুলেখার মা-কে জানায়- আপনিও আমাদের সাথে বাইরে আসুন, ওদেরকে একা ছাড়ুন।

অনিক সুলেখার হাত ধরে বলে-
আমি আর কোনোদিনও তোমাকে ব্যাথা দেব না। তুমিই আমার সব এখন। তোমাকে ব্যস্ততা দেখিয়ে, আমি খুব বড় ভুল করেছি। প্লিজ তুমি কিছু মনে করো না।
সুলেখাঃ- ডাক্তার বলেছেন আমি আর বেশিক্ষণ বাঁচব না, কিন্তু মৃত্যুর আগে আমি জানতে চাই তুমি কেন আমার সাথে এমন ব্যবহার করলে? কেন আমাকে এত ইগ্নোর করলে?
অনিক দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বলে-
অনিকঃ- আসলে আমার লাং ক্যানসার হয়েছে, এটা কয়েকদিন আগেই ধরা পড়েছে। ডাক্তার বলেছেন আমার আয়ু খুবই স্বল্প। আমিও তোমাকে বিয়ে করে সুখী হতে চেয়েছিলাম, কিন্তু বিয়ের পরেই যদি আমি মারা যাই, তুমি অনেক কষ্ট পাবে। তাই আমি ভেবেছিলাম বিয়ের কথা উঠার আগেই তোমার সাথে সম্পর্ক বিচ্ছেদ করি। এখন তোমার হয়ত বিচ্ছেদের কষ্ট সয়ে যাবে, কিন্তু বিয়ের পরেই যদি আমার মৃত্যু হয়, সেই কষ্ট তুমি সইতে পাড়বে না। তাই আমি ব্যাস্ততা দেখিয়ে তোমার থেকে দূরে সরে যেতে চেয়েছিলাম।
কথা শেষ হতেই সুলেখার হাত অনিকের হাতের উপর এসে পড়ে, অনিক মুখ থেকে হাত সরিয়ে দেখে সুলেখা তার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে, ডাক্তার অনেক চেষ্টা করেও সুলেখাকে আর বাঁচাতে পারেনি।
সুলেখার এই আকস্মিক প্রয়াণ অনিক মেনে নিতে পারেনি। তার ফুসফুস দুর্বল ছিল, এদিকে সুলেখাকে হারানোর যন্ত্রণায় তার হার্টবিট বেড়ে যায়, এবং সুলেখার বেডের পাশেই সে স্ট্রোক করে। কিছুক্ষণ পর ডাক্তার এবং সুলেখার মা দেখে সুলেখার হাতের উপর অনিকের মাথা পড়ে রয়েছে এবং দুইজনই মৃত।
মরার আগে অনিকের আফসোস- যাকে বাঁচানোর জন্য সে ব্যস্ততার অভিনয় করেছিল, তাকেই সে বাঁচাতে পাড়ল না।

এই সুপ্ত প্রেমের বেদনাময় কাহিনী টি পাঠিয়েছে জলপাইগুড়ি শহরের কলেজ পড়ুয়া Binita Dasgupta. লেখা পাঠানোর জন্য ইমেল করতে পার- charpatrablog@gmail.com এই ঠিকানায়।।

কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।