আজ দুটি প্রেমের ছোট গল্প নিয়ে হাজির আমরা। এই বিরহের প্রেমের গল্প দুটি একদম অন্য ধাঁচের। কে কখন কিভাবে প্রেমে পড়ে যাবে তা যেমন বলা যায় না, ঠিক সেভাবেই প্রেমে কি ভাবে বিচ্ছেদ ঘটে যাবে তাও বলা যায় না। সে যাই হোক এই নতুন প্রেমের গল্প দুটি পড়লেই বিস্তারিত জানতে পারবে।

প্রেমের ছোট গল্প। বিরহের গল্প। SAD LOVE STORY:-

প্রেমের ছোট গল্প ০১ঃ-

“সারাদিন শুধু মোবাইল আর মোবাইল,বলি কি ঢুকে যা না ঢুকে যা, মোবাইলের ভিতরে ঢুকে যা।“ শ্রেয়সীর মা প্রতিদিনের মত চেঁচিয়ে উঠল। “এই মেয়েকে নিয়ে আমার চিন্তা হয়। কিভাবে শ্বশুর বাড়িতে টিকবি দেখব ক্ষণ। কাজ কর্মের একটুও বালাই নেই, শুধু মোবাইল আর ঘুরে বেড়ানো। হ্যারে মায়ের প্রতি কি একটুও দয়া হয়না তোর, বলি কি একটু তো আমাকেও সাহায্য করতে পাড়িস নাকি!” মায়ের কথায়, আর থাকতে না পেড়ে বিরক্ত হয়ে শ্রেয়সী স্কুটি নিয়ে বাইরে চলে যায়।

না আর সহ্য হয় না, মায়ের এই প্রতিদিনের ঘ্যান ঘ্যানানি। একটু মোবাইল দেখলে কি জানি কি হয় মায়ের। এই সব ভাবতে ভাবতেই পার্কের দিকে দ্রুত স্কুটি চালিয়ে যেতে থাকে সে। কিন্তু একি, স্কুটির ব্রেক কাজ করছে না কেন, একটু আগেই তো ঠিক ছিল।

স্কুটির স্পীড কমার আগেই ঘটে গেল অঘটন। শ্রেয়সীর স্কুটি গিয়ে ধাক্কা মারল, রাস্তায় সাইকেল নিয়ে যাওয়া দুইজন ছেলেকে। শ্রেয়সীর অবশ্য সেরকম কোনো ক্ষতি হয়নি, কারণ সে ঘাসের উপর ছিটকে পড়েছিল। তবে বেজায় ক্ষতি হয়েছে ছেলে দুটির। একজনের পা পুড়ো দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। মানুষ একত্রিত হতেও সময় লাগল না। এদিকে শ্রেয়সী অনেক ভয় পেয়ে গেছে। সে কিছুতেই বুঝতে পাড়ছে না এবার সে কি করবে।

ছেলে দুটিকে হসপিতালে ভর্তি করানো হল। একজন ছাড়া পেয়ে গেলেও, আরেকজনের অবস্থা অনেক খারাপ। এদিকে শ্রেয়সীর মা আগে থেকেই তার উপর ক্ষেপে ছিল, এবার তিনি আরও রেগে গেলেন। শ্রেয়সীকে হসপিতালের মধ্যেই রামায়ণ কথা শোনাতে লাগলেন।

প্রেমের ছোট গল্প। বিরহের গল্প। SAD LOVE STORY-
প্রেমের ছোট গল্প। বিরহের গল্প। SAD LOVE STORY

এদিকে শ্রেয়সী প্রতিদিন কলেজ যাওয়ার নাম করে, সারাক্ষণ সেই ছেলেটার জন্য হসপিতালেই কাটিয়ে দিতে থাকে। কয়েক মাস পড়ে, ছেলেটি হসপিতাল থেকে ছাড়া পেলেও, হারিয়ে ফেলেছে সে তার পূর্বের সক্ষমতা। দুর্ঘটনায় তার একটা পা কেটে বাদ দিতে হয়েছে।

এদিকে শ্রেয়সীর মনে অপরাধ প্রবণতা বাড়তে থাকে, তার মনের মধ্যে সবসময় ‘তার জন্যই এমন হয়েছে’, এই ভাবনাটি ঘুরতে থাকে।

এদিকে শ্রেয়সী বাড়ি ফিরতেই, তার মা তাকে বলে- “সেজে গুঁজে তৈরি হও, ছেলে পক্ষ তোমাকে দেখতে আসছে।“

“দেখতে আসছে মানে! বলা নেই কওয়া নেই, দুম করে বললেই হল”

“তোর সারাদিন মোবাইলে ডুবে থাকা, তারপর এরকম একটা বিশাল ঘটনা ঘটীয়ে দিলি, ভাগ্যিস সেই ছেলেটার কেউই নেই, তাই পুলিশে অভিযোগ জানায়নি, জোর বেঁচে গেছে আমাদের পরিবার, নাহলে তো আমাদের মানসম্মান পথের ধুলোয় মিশিয়ে দিতি তুই। তোর এই স্বভাব আর সহ্য হচ্ছে না, তাড়াতাড়ি তুই বিদেয় হলেই আমি বাঁচি।“

“এরকম কথা তুমি বলতে পাড়লে মা।“ স্কুল ব্যাগটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে নিজের রুমে গিয়ে দড়াম করে দরজা বন্ধ করে দেয় শ্রেয়সী।

সে ভাবতে থাকে- ছেলেটার কেউ নেই, অনাথ একটা ছেলে। যদিও সে সেভাবে অনায়াসেই জীবন কাঁটাতে পাড়ত, কিন্তু আমার জন্য সে আজ প্রতিবন্ধী। এখন যে জীবন যুদ্ধে লড়াই করার মত শক্তি টুকুও সে হারিয়েছে। না আমি বিয়ে করলে সেই ছেলেটিকেই বিয়ে করব। তাকে জীবন যুদ্ধে জয়ী আমাকে করতেই হবে।

শ্রেয়সী তার মায়ের কাছে গিয়ে বলে-“হ্যাঁ আমি বিয়ে করতে রাজী আছি, যদি তোমরা আমার জন্য প্রতিবন্ধী হওয়া সেই ছেলেটার সাথে আমার বিয়ে দাও তবেই।“

“হ্যারে মাথা ঠিক আছে তোর, তুই কি বলছিস খেয়াল আছে সেদিকে তোর? কই গো কোথায় গেলে, তোমার আদুরে মেয়ের কথা শুনে যাও।“

বাবা এসে সবকিছু শুনে শ্রেয়সীর চিন্তা-ভাবনাকে তিরস্কার করতে থাকেন। এদিকে ছেলে পক্ষ শ্রেয়সীকে দেখতে চলে এসেছে। অনিচ্ছা সত্যেও তাকে ছেলে বাড়ির সদস্যদের সামনে দাঁড়াতে হল। এদিকে সময়ের সাথে সাথে বিয়েও ঠিক হয়ে গেল।

শ্রেয়সীকে তার বান্ধবী মিরাকে ফোন করে-“আমি এই বিয়ে কিছুতেই মেনে নিতে পাড়ব না রে, যে ছেলেটা আমার জন্য আজ প্রতিবন্ধী হয়েছে, আমি সেই ছেলেটার পাশে গিয়ে দাঁড়াতে চাই, আমি তাকে সাহায্য করতে চাই। আমি ওর জীবন সঙ্গিনী হতে চাই। নাহলে যে ভগবানও আমায় মাফ করবেন না।“ মিরা শ্রেয়সীর এমন পাগলামি কথা শুনে কিছুই উত্তর দেয় না।

এদিকে বাবা-মা বিয়ের দিন ঠিক করে ফেলেছেন। না আর বেঁচে থেকে লাভ নেই, কি জানি সেই ছেলেটা এখন কি অবস্থায় আছে, না জানি কিভাবে সে দিন কাটাচ্ছে! আমার জন্যই আজ সে তার কর্ম করার ক্ষমতা টুকুও হারিয়েছে। অপরাধ প্রবণতা ধীরে ধীরে শ্রেয়সীকে কুঁড়ে কুঁড়ে খেতে থাকে।

এদিকে শ্রেয়সী ঠিক করে সে আর তার জীবন রাখবে না। কারণ পাপ সে করেছে, সেই ছেলেটা কিছুই করেনি, কিন্তু শ্রেয়সী তার পাপের বোঝা কমাতে পাড়ছে না। কিন্তু অবশেষে আত্মহত্যার পথ সে বেঁছে নিতে পাড়ে নি।

যে মেয়েটা সারাটা দিন হাঁতে মোবাইল নিয়ে থাকত, সেই মেয়েটার হাঁতে আজ চলে এসেছে খুন্তি, স্কুটি নিয়ে ঘুরতে থাকা মেয়েটা আজ অপরাধের বোঝা বইছে। ইচ্ছে ছিল, যার নামের সিঁদুর কপালে সে পড়বে, তার নামের সিঁদুর নেই। মায়ের সাথে ঝগড়া করা শ্রেয়সী আজ একদম শান্ত।

নতুন প্রেমের গল্প। PREMER CHOTO GOLPO
নতুন প্রেমের গল্প। PREMER CHOTO GOLPO

মাথায় শুধুই সেই ছেলেটাকে সাহায্য করার চিন্তা, সেই ছেলেটার পাশে দাঁড়ানোর চিন্তা। আর এরকম চিন্তা করতে করতেই কেটে যায় একটা বছর। আজ শ্রেয়সী হয়ত সেই ছেলেটির কথা ভুলেই গেছে। স্বামী সন্তান নিয়ে অনেক সুখে আছে, তার উপর আজ শ্রেয়সীর ছেলের মুখে ভাত। 

কিন্তু সেই প্রতিবন্ধী ছেলেটা! সেই ছেলেটার আজ শ্রাদ্ধ। রাস্তায় ভিক্ষে করতে করতে সে গাড়ির নীচে চাঁপা পড়ে মারা যায়। এভাবেই অনাথ একটা ছেলের জীবনের উপসংহার লেখা হয়।

একসময় শ্রেয়সী চেয়েছিল ঠিকই সেই ছেলেটাকে বিয়ে করে তার পাশে দাঁড়াতে, এক সময় অপরাধ প্রবণতা তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খেয়েছিল ঠিকই, কিন্তু সময়ের সাথে সেই প্রবণতা ধরে রাখতে পারেনি সে। সংসারের মোহে আচ্ছন্ন হয়ে অবশেষে সেই অপরাধকে ভুলে যায় সে। ছেলেটাকে সাহায্য করার ইচ্ছে শ্রেয়সীর তাৎক্ষণিক উন্মাদনা ছাড়া আর কিছুই ছিল না। যদি সত্যি তার সাহায্য করার ইচ্ছে থাকত, তাহলে নিশ্চয় সে এই এক বছরে তার পাশে গিয়ে দাঁড়াতে পাড়ত। সাহায্য যদি করতেই হয় এমনিতেও করা যায়, সাহায্য করতে গিয়ে বিয়ে করতে চাওয়াটা শুধু একটা পাবলিসিটি মাত্র।  


পড়ুনঃ- শারীরিক প্রেমের গল্প

এক তরফা প্রেমের গল্প

প্রেমের ছোট গল্প ০২ঃ-

এই প্রেম কাহিনীটি আমার দেখা মর্মস্পর্শী প্রেম কাহিনী গুলির মধ্যে অন্যতম। এই প্রেম কাহিনীটির মূলে রয়েছে দুইজন চরিত্র। একজন হল রাজেশ এবং অপরজন হল শ্রেয়া।

শ্রেয়া ছোটবেলা থেকেই অন্ধ। আসলে সে যখন অনেক ছোট ছিল তখন সে খাট থেকে নীচে পড়ে যায়, আর সে উপুড় হয়ে নীচে থাকা ভাঙ্গা খেলনার উপর পড়ে যায়। সে প্রানে বেঁচে গেলেও, রক্ষা করা যায় নি তার চোখ। তখন তার বয়স ছিল মোটেই কয়েক মাস। স্বভাবত এই রঙিন দুনিয়ার সঙ্গে পরিচয়টাও তার ছিল না। অনেক চেষ্টা করেও যখন শেষ রক্ষা হল না, বাবা-মা শ্রেয়াকে দিয়ে দিলেন এক অনাথ আশ্রমে। সেখানেই শ্রেয়ার বড় হয়ে উঠা।

এই আশ্রমেরই বাপ-মা হারা এক ছেলে হল রাজেশ। শোনা যায় যে, এক অ্যাকসিডেন্টে তার বাবা-মা তাকে ছেড়ে চলে যায়। রাজেশ অনেক সাধা-সিধে একটি ছেলে। নিজের অজান্তেই সে শ্রেয়ার প্রেমে পড়ে যায়। হুম সে জানত যে শ্রেয়া চোখে দেখতে পাড়ে না, আর বোধ হয় এই জন্যই সে আরও বেশী বেশী তার কাছে গিয়ে তার পাশে থেকে তাকে সাহায্য করতে চেয়েছিল।

শ্রেয়ার দুঃখ একটাই, সে পৃথিবীর মুখ এখনও দেখেনি। আর এই কারণেই একঘেমেয়ি পনা পরিবেশ তাকে কিছুতেই ভাল লাগে না। রাজেশের মুখে পরিবেশের বৃত্তান্ত শুনে তারও ইচ্ছে হয়, দু-চোখ ভড়ে পৃথিবীর সৌন্দর্যটাকে লুফে নিতে, কিন্তু তার কাছে সবকিছুই যে অন্ধকার।

তাদের দুইজনের সম্পর্কে আসার পাঁচ-বছর সম্পূর্ণ হয়ে গেছে। এদিকে তারাও আশ্রম ছেড়ে নিজেদের আস্তানা গড়ে তুলেছে। শ্রেয়ার দেখ-ভাল করার দায়িত্ব রাজেশ নিয়ে নিয়েছে।

একদিন- “শ্রেয়া আমাদের সম্পর্কে আসার তো অনেক দিন হল, চলো না এবার আমরা বিয়ে করে নিই।“

শ্রেয়া- “বিয়ে সাধারণ জিনিস নয় রাজেশ, এটি সারাজীবনের ব্যাপার।“

রাজেশ– “হ্যাঁ তাতে কি হয়েছে, তোমার দায়িত্ব তো আমিই নিচ্ছি, তাই তোমার চিন্তার কোনো কারণ নেই।“  

শ্রেয়া-“না রাজেশ, আমি পৃথিবীর সৌন্দর্য না দেখা পর্যন্ত বিয়ে করব না।“

রাজেশ– “আচ্ছা, আমি কালই তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব।“

পরের দিন রাজেশ শ্রেয়াকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যায়, সব কিছুই ঠিক আছে, শুধু একজন চক্ষু-দাতার দরকার। তাহলেই শ্রেয়া একদম সুস্থ হয়ে উঠবে।

কোথা থেকে একজন চক্ষুদাতাও জোগাড় হয়ে গেল, ধীরে ধীরে শ্রেয়াও সুস্থ হয়ে উঠল। এদিকে সুস্থ হতেই সে রাজেশের খোঁজ শুরু করল, অবশেষে সে রাজেশকে খুঁজে পেল। কিন্তু রাজেশকে দেখেই তার মনটা ভেঙ্গে গেল, সে ভেবেছিল রাজেশ অনেক সুন্দর হবে, দেখতে অনেক হ্যান্ডসাম হবে। কিন্তু এ যে কালা ভূত, না আছে কোনো রূপ না আছে কোনো সৌন্দর্য। ‘একে আমার স্বামী মানতে পাড়ব না।’

BENGALI SAD LOVE STORY সেরা প্রেমের গল্প
BENGALI SAD LOVE STORY সেরা প্রেমের গল্প IMAGE
<

শ্রেয়া- “ও আচ্ছা, তুমিই তাহলে রাজেশ, দেখ আমার পক্ষে তোমাকে বিয়ে করা সম্ভব না, আমার রূপ আর তোমার ওই বাঁদরের মতন চেহারার কোনো মিল হয় না।“

রাজেশ– “চেহারা দেখে প্রেম হয়না শ্রেয়া।“

শ্রেয়া- “এতদিন আমি অন্ধ ছিলাম, আমার সঙ্গে অনেক সময় কাটিয়েছ। এবার আমাকে আমার রাস্তা বেঁছে নিতে দাও।“

এদিকে রাজেশ কি বলবে সে কিছুই বুঝছিল না। সে শুধু বলল- “ আচ্ছা ঠিক আছে, তোমার রাস্তা তুমিই দেখ। তবে একটা কথা- আমার চোখ দুটির যত্ন নিও। এই বাঁদরই তোমার দৃষ্টি ফিরিয়েছে। আর আমার কাছে এই রূপ-বদলানোর মত গিরগিটির দুনিয়ার চেয়ে অন্ধকার দুনিয়া অনেক ভালো।“

আমাদের Facebook Page Link:- গল্প আর গল্প

প্রেমের ছোট গল্প। বিরহের গল্প। নতুন প্রেমের গল্প। pREMER CHOTO GOLPO BENGALI SAD LOVE STORY সেরা প্রেমের গল্প

Spread the love

Leave a Reply