আজকে আমরা কিছু অমীমাংসিত রহস্য নিয়ে কথা বলব। পৃথিবীর এই আজব ঘটনা গুলি সমাধান করা আজও সম্ভব হয়ে উঠেনি। এই রহস্যময় ঘটনা গুলির ব্যাখ্যা বিজ্ঞানের কাছে আজও কুহেলিকাময়।
দুনিয়ার অমীমাংসিত রহস্য
১৫১৮ এর ডান্সিং প্লেগঃ-
সময়টা ১৫১৮ সাল, স্থান ফ্রান্সের স্ট্রাসবার্গ শহর। মাথার উপরে গনগন করছে সূর্য। হঠাৎ করেই রাস্তায় চলে এলেন এক মহিলা। শুরু করলেন রোদের মধ্যে ভয়ানক রকমের নাচ। এদিকে দিন গড়িয়ে রাত হয়ে গেল, সেই মহিলা কিছুতেই থামছেন না, নেচেই যাচ্ছেন। আশেপাশের লোকজন এই পাগলামি নাচ দেখে অনেক কিছুই বললেন তাকে, কিন্তু সে আর কার কথা শোনে? সে তো নাচ নিয়েই ব্যস্ত। এদিকে আবার ৩৪ জন মহিলা তার সঙ্গে এসে নাচ জুড়ে দিলেন। আশেপাশের মানুষজন কিছুই বুঝছিলেন না, যে কি চলছে?
একমাসের মধ্যে প্রায় ৪০০ জন লোক তাদের সঙ্গে যোগ দেন। এদের দেখে মানুষজন ভাবছিল, এদের শরীরে বোধহয় কোনো আত্মা প্রবেশ করেছে। আর এরকম মনে করবে নাই বা কেন বলুন? এই পাগলামি নাচের না ছিল কোনো কারণ, না ছিল কোনো উদ্দেশ্য। একমাস না খেয়ে কি আর থাকা যায় বলুন? তাও আবার প্রায় সবসময় নাচতে নাচতে? কয়েকজন তো সেখানেই লুটিয়ে পড়লেন, তারপর আর কি, চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
সেখানে নাচতে থাকা, মানুষদের অবস্থা খুবই খারাপ হতে থাকে, এরপর সেখানে পুরোহিত, ডাক্তার, গবেষকদের ডাকা হয়, তারা কেউ এটাকে মৃগী রোগ বলেছেন, আবার কেউ এটাকে বলেছেন মানসিক রোগ। কিন্তু এটা যদি মৃগী বা মানসিক রোগই হয়, তাহলে এতজনের একসাথেই কি মানসিক রোগ হওয়া কোনোদিনও সম্ভব? আপনার কি মনে হয়? সে যাই হোক এরকম আচরণের পেছনে, অনেক জন অনেক কথা বলেছেন, কিন্তু কোনো সন্তোষজনক কারণ আজ পর্যন্ত কেউই দিতে পারেননি। আজও এই আচরণের পেছনের কারণ আমাদের কাছে এক অমীমাংসিত রহস্য হিসেবেই থেকে গেছে।
জাতিঙ্গার পাখিদের আত্মহত্যাঃ-
ভারতের আসামের একটি ছোট্ট গ্রাম জাতিঙ্গা। এই গ্রামটি পাখিদের আত্মহত্যার গ্রাম নামেই লোকমুখে অধিক পরিচিত। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাসে সন্ধ্যা সাতটা থেকে প্রায় রাত দশটা পর্যন্ত পাখিরা নিজেরাই আত্মহত্যা করে। তবে সেখানকার স্থানীয় পাখিরাই এমন আচরণ করে, কোনো পরিযায়ী পাখির মধ্যে এরুপ আচরণ দেখা যায়নি।
সূর্যাস্তের পর থেকেই পাখিরা নিজেদের ইচ্ছাতেই কোনো বড় গাছ বা বাড়িতে উড়তে উড়তে গিয়ে ধাক্কা মারে, জোরে ধাক্কা খাওয়ায়, তারা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে, এবং মারা যায়। এরা নিজেরাই নিজেদের এভাবে আঘাত করে। পাখিদের এমন অদ্ভুত আচরণের ব্যাখ্যা আজ পর্যন্ত সঠিক কারো জানা নেই।
মালয়েশিয়ার ফ্লাইট ৩৭০-
ফ্লাইট ৩৭০ হল একটি যাত্রীবাহী বিমান। বিমানটির গন্তব্যস্থল ছিল মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে চীনের বেজিং পর্যন্ত। দিনটা ছিল ২০১৪ সালের ৮ মার্চ। ঝলমলে আবহাওয়া। কিন্তু উড্ডয়নের এক ঘণ্টার মধ্যেই র্যাডার থেকে হারিয়ে যায় বিমানটি। বিমানটিতে সর্বমোট ১২ জন কর্মী এবং ২২৭ জন যাত্রী সহ সর্বমোট ২৩৯ জন যাত্রী ছিল। যাত্রীদের অধিকাংশই ছিলেন চীনের বাসিন্দা। বিমানটি যখন মধ্যগগনে ভারত মহাসাগরের উপর দিয়ে যাচ্ছিল, তখনই হঠাৎ করেই বিমানটি র্যাডার থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। অনেক চেষ্টা করেও, র্যাডার সংযোগ স্থাপন করা যায় নি।
এরপরই খোঁজ শুরু হয়। ২৪ মার্চ পর্যন্ত কঠোর অনুসন্ধানেও বিমানটির কোনো হদিশ মেলে নি। বিমানটিতে না ছিল কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি, না ছিল সেদিন আবহাওয়া খারাপ, তাই ভেঙ্গে পড়ার কোনো আশঙ্কা ছিল না। ২৪ মার্চ মালয়েশিয়া সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয় যে, বিমানটি সম্ভবত ভারত মহাসাগরে ভেঙ্গে পরেছে, এবং এই বিমানটির কোনো যাত্রী ও ক্রু মেম্বার আর বেঁচে নেই।
উড্ডয়নের এক ঘণ্টার কিছু কম সময় আগেই বিমানটি কুয়ালালামপুর ট্রাফিক কন্ট্রোলে যোগাযোগ করেছিল, কিন্তু ভিয়েতনামের দক্ষিণ সীমানায় প্রবেশের সাথে সাথে এটি সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। প্রায় ১২ টি দেশ এই বিমানটির খোঁজে অনুসন্ধান শুরু করে, কিন্তু বিমানটির ভূমিতে অবতরণ কিংবা ভেঙ্গে পড়ার কোনো চিহ্ন এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি।
দক্ষিণ চিন সাগর সহ প্রায় ২৭,০০০ ন্যটিক্যাল বর্গ মাইল এলাকা অনুসন্ধান করা হয়, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। পরবর্তীতে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী র্যাডার এবং স্যাটেলাইট তথ্যের ভিত্তিতে ঘোষণা করেন যে, বিমানটিকে কেউ নিজের ইচ্ছাতেই র্যাডার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। আর বিমানে থাকা কোনো মানুষই এমন কাজ করেছে বলে তার দাবি। তিনি আরও বলেন যে, সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর বিমানটি সমুদ্রে ভেঙ্গে পড়ে।
কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও আজ পর্যন্ত সমুদ্রের তলদেশে বিমানটির কোনো ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়নি। Flight MH370 – আজও অমীমাংসিত রহস্য হিসেবেই রয়ে গেছে।
Tamam Shud রহস্যঃ-
অস্ট্রেলিয়ার অমীমাংসিত রহস্য গুলির মধ্যে অন্যতম হল Tamam Shud রহস্য। অস্ট্রেলিয়ার সোমারটন বীচে ১৯৪৮ সালের ডিসেম্বর মাসে একটি মৃতদেহ ভেসে আসে। কিন্তু এই মৃত দেহটির পরিচয় আজও জানা যায় নি। অনেক খবরের কাগজ এবং খবরের চ্যানেল সহ অন্যান্য উপায়েও মৃত ব্যাক্তির ছবি সহ প্রচার চালানো হয়, কিন্তু কেউই সেই মৃতদেহটিকে চেনার কথা স্বীকার করেনি। এমনকি কেউইই কোনো নিখোঁজ প্রতিবেদনও প্রকাশ করেনি। এপর্যন্ত মোটামুটি প্রায় সবই ঠিক ছিল।
কিন্তু রহস্য দানা দানা বাধে তখনই যখন সেই মৃত ব্যাক্তির ট্রাউজারের একটি ছোট্ট গুপ্ত পকেট থেকে “Tamam Shud” লেখা একটি ছোট্ট কাগজের টুকরো পাওয়া যায়। এই কথাটি অমর খৈয়ামের লেখা “The Rubiyat” নামক একটি কবিতা সংগ্রহের শেষ পাতায় লেখা আছে। এই কথাটির বাংলা অর্থ হল- “শেষ”। এই কাগজের টুকরোটিকে ঘিরেই রহস্য দানা বাধে। পরবর্তীতে ধারণা করা হয় যে, এটি সম্ভবত একটি কোড ছিল।
যেহেতু এটি অমর খৈয়ামের লেখা কবিতা সংগ্রহের সঙ্গে মিল রয়েছে, তাই অনেকে বলে থাকেন যে এটি আসলে একটি সুসাইড নোট। কিন্তু আজ পর্যন্ত এই “Tamam Shud” এর রহস্য অজানা।
আরও পড়ুনঃ-
মানুষের শরীরের সাথে ঘটে যাওয়া অবাক ঘটনা
বিশ্বের সেরা 7 টি কাকতালীয় ঘটনা
WoW সংকেতের অমীমাংসিত রহস্যঃ-
১৫ আগস্ট ১৯৭৭, জেরি এহম্যান ওহাইও রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার বেতার দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে আকাশে নজর রাখছিলেন। মূলত তার কাজ ছিল, মহাকাশের দূরবর্তী প্রান্তে রেডিও সংকেত পাঠানো, মহাকাশের কোনো প্রান্তে যদি অন্য কোনো প্রাণীর বাস থাকে, তার অনুসন্ধানের জন্যই এই রেডিও সংকেত। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই এই কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, কিন্তু তিনি কখনো অপর প্রান্ত থেকে কোনো প্রত্যুত্তর পাননি। এভাবেই তার রাত কাটত, অপর প্রান্ত থেকে সিগন্যাল পাওয়ার আশায়।
১৫ আগস্টও তিনি এভাবেই তার কাজ করছিলেন এবং হঠাৎই তার বেতার যন্ত্রটি তীক্ষ্ণ আওয়াজে বেজে উঠল, জেরির ঘুম ভাব হঠাৎ করেই কেটে গেল, তিনি দেখলেন, তার বেতার যন্ত্রটি সিগন্যাল রিসিভ করা শুরু করেছে। জেরি লক্ষ্য করলেন, একটানা সংকেত আসতেছেই, অবাক হয়ে তিনি রিসিভারের দিকে তাকিয়ে রইলেন। এও কি সম্ভব?
পরবর্তী ৭২ সেকেন্ড ধরে এই সিগন্যালটি আসতে থাকে, এবং আবার হারিয়ে যায়। হতভম্ব জেরি প্রিন্ট হওয়া গ্রাফটি হাতে নিয়ে, নিজের চোখকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। বিস্মিত হয়ে এই প্রিন্ট হওয়া কাগজটিতে তিনি লিখলেন WoW. সেদিন থেকেই এই সিগন্যাল “ওয়াও সিগন্যাল” নামেই সবার কাছে পরিচিতি লাভ করে।
৭২ সেকেন্ড স্থায়ী হওয়া এই সিগন্যালটি এসেছিল, পৃথিবী থেকে প্রায় ১২০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত স্যাগিট্টেরিয়াস নক্ষত্র থেকে। আলোর গতিতে গেলেও এই নক্ষত্রে পৌঁছাতে প্রায় ১২০ বছর লেগে যাবে। তাই সেখানে কোনো মানুষ পৌছাতে পারে না। কিন্তু সেখানে হয়ত মানুষের মতনই বা মানুষের থেকেও কোনো উন্নত প্রাণী আছে, যারা এই সিগন্যালটি পাঠিয়েছিল। পরবর্তীতে এই সিগন্যালটি গ্রহণের অনেক চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু আর কোনোদিনই এটি পাওয়া যায়নি।
এই সিগন্যালের কোড গুলিকে ডিকোড করাও আজ পর্যন্ত হয়ে উঠেনি। কোনো বিজ্ঞানীই এই সংকেতের কোড গুলিকে এখনও বিশ্লেষণ করতে পারেননি। এই কোড গুলিতে কি বলা হয়েছিল, সেই রহস্য উন্মোচন করা যেদিন সম্ভব হবে, সেদিন হয়ত আরেক নতুন সভ্যতার খোজে মানুষের চেষ্টাও আরেকধাপ এগিয়ে যাবে।
লন্ডনের এতিমখানায় প্রাপ্ত বস্তুঃ-
২০০৬, স্থান লন্ডনের একটি অনাথ আশ্রম। সেখানে মাটির নিচে একটি পাত্র পাওয়া যায়। সেই পাত্রে কিছু অদ্ভুত এবং ভয়াবহ জিনিসের নিদর্শন মেলে। এছাড়াও সেখানে পাওয়া যায়, একটি রহস্যময়ী ডায়রি। এই এতিমখানার নিচে প্রাপ্ত সমস্ত উপাদানগুলিকে একসঙ্গে বলা হত- “মেরিলিন ক্রিপ্টেড কালেকশন”। এগুলি বাস্তবিক নাকি আজগুবি সেটি কেউ জানেনা কিন্তু এখানে প্রাপ্ত জিনিসগুলি একজন মানুষের ভয় পাওয়ার জন্য যথেষ্ট।
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।