আজকের এই ব্লগে আমরা পৃথিবীর অজানা তথ্য জানতে চলেছি। আমাদের এই সুবিশাল পৃথিবী সম্পর্কে কতটুকুই বা আমরা জানি? এমন অনেক কিছুই আছে যেগুলি আমাদের জানা নেই। কি ভাবছেন জানার জন্য জন্য স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় তো রয়েছেই? উঁহু না, একেবারেই না, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেবলমাত্র প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষাই আমাদের দেওয়া হয়, তার বাইরে শিক্ষকদের মুখ ফসকে বেড়িয়ে যাওয়া দু-একটা কথার বেশি জানতে পাড়িনা আমরা।

পৃথিবীর অজানা তথ্য

হ্রদ বিস্ফোরণ

চারিদিকে গুমোট গরম, সেই গরমের হাত থেকে বাঁচতে কয়েকজন বন্ধু মিলে নদী বা হ্রদ সংলগ্ন অঞ্চলে  ট্রিপে যাওয়ার মজাই আলাদা। কিন্তু আপনি কি জানেন, হ্রদ বিস্ফোরিত হতে পাড়ে। হ্যাঁ ঠিকই পড়েছেন হ্রদ বিস্ফোরণ। কি ভাবছেন, জলের নীচের বোমা রেখে হ্রদ বিস্ফোরণ করা হয়? উঁহু না একেবারেই না, এটি সম্পূর্ণ একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। যদি কোনো হ্রদের নীচে আগ্নেয়গিরি অবস্থান করে, এবং সেই আগ্নেয়গিরি থেকে গ্যাস বাষ্প নির্গত হতে হতে হঠাৎ করেই বিস্ফোরণের ফলে উড়ে যেতে পাড়ে গোটা একটা হ্রদ।

জানি আপনারা হয়ত ভাবছেন বিস্ফোরণের ফলে হ্রদ উড়ে যাবে এটা কোনো কথা হল? না বন্ধু এটি সত্যি। পৃথিবী এর সাক্ষীও থেকেছে। ক্যামেরন-এর নিয়স হ্রদ প্রায় ৯৫০ মাইল লম্বা আগ্নেয়গিরির চেইন এর উপর অবস্থিত। ১৯৮৬ সালের আগস্ট মাস এই চেইন-এর ডুবন্ত আগ্নেয়গিরিগুলিতে অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়। হঠাৎ-ই বিস্ফোরণ ঘটে। প্রায় ১.৬ মিলিয়ন টন কার্বনডাইঅক্সাইড গ্যাস নির্গত হয়। এই প্রচুর গ্যাস ও জলীয়বাষ্প মিলে প্রায় ১৬০ ফুট উঁচু একটি ঘন মেঘের দেওয়াল তৈরি হয়। বিস্ফোরণের তাগিদে হ্রদ সংলগ্ন অঞ্চলের প্রায় ১৭০০ জন মানুষ মারা যান।

পৃথিবীর অজানা তথ্য lake burst cameron
পৃথিবীর অজানা তথ্য lake burst cameron

৭৭১ ট্রিলিয়ন ডলারের সোনা

সোনা সোনা প্রচুর সোনা। আপনি কি জানেন গবেষকদের মতে পৃথিবীর সমুদ্রগুলিতে সর্বমোট প্রায় ২০ মিলিয়ন টন সোনা রয়েছে। এদের আনুমানিক মূল্য প্রায় ৭৭১ ট্রিলিয়ন ডলার। অবাক হলেন তো? হুম অবাক হওয়ার কথাই বটে। এবার প্রশ্ন তাহলে সেগুলি তুলে পৃথিবীর সব মানুষদের দিয়ে দিলেই তো হয়ে যায়, কোনো অভাব থাকবে না। কিন্তু পৃথিবীর সবার কাছে যদি ভূরি ভূরি সোনা থাকে, তাহলে সোনা কিনবে টা কে?

আসলে সমস্যাটি হল, এই বিপুল পরিমাণ সোনা সমুদ্রের গর্ভে ছড়িয়ে ছিটিয়ে নেই, রয়েছে সমুদ্রের জলে মিশ্রিত অবস্থায়। সুদ্রের জলে, সোনার ক্ষুদ্র অণু পাওয়া যায়।এই অণুটির পরিমাণ প্রতি লিটার জলের ১৩ বিলিয়ন ভাগের মাত্র ১ ভাগ। সুতরাং বুঝতেই পাড়ছেন জল থেকে এই অণুকে আলাদা করা প্রায় অসম্ভব।

যদিও সেগুলি আমরা ভোগ করতে পাড়ব না, কিন্তু আছে তো পৃথিবীতেই। তাছাড়াও প্রকৃতির সম্পদ প্রকৃতির অলংকার, সেটি প্রকৃতির গায়েই ভাল মানায়, মানুষের হাঁতে শুধু ধ্বংসের বীজ।

পৃথিবীর অবাক করা কিছু তথ্য সমুদ্রের জলে রয়েছে সোনা
পৃথিবীর অবাক করা কিছু তথ্য

পৃথিবীর সবথেকে খাঁড়া পর্বত

পৃথিবীর সবথেকে উঁচু পর্বত, বা পৃথিবীর সবথেকে বড় পর্বতের নাম আপনার হয়ত নিশ্চয়ই জানা। কিন্তু আপনি কি পৃথিবীর সবথেকে খাঁড়া (vertical) জায়গাটির বা পর্বতটির নাম জানেন? পৃথিবীর সবথেকে খাঁড়া পর্বতটির নাম হল মাউন্ট থর। এটি ক্যানাডাতে অবস্থিত। এর ঢাল গড়ে প্রায় ১৫০ ডিগ্রী। এই পর্বতটির উচ্চতা প্রায় ৪১০০ ফুট। ১৯৮৫ সালের আগে পর্যন্ত প্রায় ৩০ জন ব্যক্তি এই পর্বতটির চূড়ায় উঠতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। ১৯৮৫ সালে চার জন ব্যক্তির একটি দল অবশেষে এর চূড়ায় উঠতে সফল হন, এবং এই সফরটি পূরণ করতে তাদের সময় লেগেছিল প্রায় ৩৩ দিন।

পৃথিবীর রোচক তথ্য vertical cliff মাউন্ট থর
পৃথিবীর রোচক তথ্য vertical cliff মাউন্ট থর
<

পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি কমে যাচ্ছে!

আপনি কি জানেন পৃথিবীর ঘূর্ণন বেগ আগের থেকে অনেক কমে গেছে, অর্থাৎ পৃথিবী আর আগের মত স্পীডে সূর্যের চারপাশে ঘুরছে না। এমনটাই জানিয়েছে নাসা। নাসার মতে প্রতি ১০০ বছর অন্তর পৃথিবীর গতি কমে যাচ্ছে। আমরা জানি যে পৃথিবীর নিজের অক্ষের উপর একবার পাক খেতে সময় লাগে ২৪ ঘণ্টা, কিন্তু এই সময়টি পুরোপুরি ২৪ ঘণ্টা নয়। ২৪ ঘণ্টা ২.৫ মিলিসেকেন্ড। ভাবছেন এই কয়েক মিলিসেকেন্ড পার্থক্যতে আর এমন কি আসে যায়?

কিন্তু ব্যাপারটি হল যখন অনেকগুলি মিলিসেকেন্ড একত্রিত হয়ে যায় তখন? তখন এই মিলিসেকেন্ড থেকে সেকেন্ড, মিনিট, ঘণ্টায় পরিণত হয় সংখ্যাটা। যখন ডাইনোসরেরা পৃথিবীতে ছিল তখন পৃথিবীতে প্রায় ২৩ ঘণ্টায় একদিন হত। সুতরাং কিছু আরব-বর্ষ পড়ে হয়ত পৃথিবীতে একদিন হতে সময় নেবে প্রায় ২৫ বা ২৬ ঘণ্টা।

unknown facts about earth
unknown facts about earth পৃথিবীর রোচক তথ্য

প্রতিদিন প্রায় ৬০ টন ধূলো পৃথিবীতে পড়ছে

চারিদিকে এত বিপুল পরিমাণে ধুলো। দেখলেই কেমন যেন বিষাক্ত মনে হয়। কিন্তু আপনি কি জানেন যে, প্রতিদিন আমাদের পৃথিবীতে প্রায় ৬০ টনের মত মহাজাগতিক ধুলো এসে পড়ছে। কি বিশ্বাস হচ্ছে না, হুম না হওয়ারই কথা বটে! বিভিন্ন মহাজাগতিক বস্তু, ধূমকেতু, ইত্যাদি থেকে বিপুল পরিমাণে ধুলো পৃথিবীতে এসে পড়ছে। তবে এই ধুলোর কণাগুলি খালি চোখে সহজে দৃষ্টিগোচর হয় না। এই ধরনের ধূলিকণা গুলি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে সোডিয়াম এবং লৌহের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। বিজ্ঞানীদের মতে প্রায় ৬০ টনের মত এরূপ ধূলিকণা প্রতিনিয়ত পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করছে।

অজানা তথ্য রোচক তথ্য edited
পৃথিবীর অজানা তথ্য রোচক তথ্য cosmic dust Image by beate bachmann from Pixabay

সবথেকে দূর থেকে নেওয়া ছবি

আপনার কি মনে হয়, সবথেকে দূর থেকে পৃথিবীর নেওয়া ছবি কোথা থেকে হতে পারে? ভাবছেন, কোনো স্যাটেলাইট থেকে? উঁহু, ১৯৭৭ সালে লাঞ্চ হওয়া ভয়েজার মিশনের সময় নীচের ছবিটি নিয়েছিল ভয়েজার-১। ১৯৯০ সালে যখন সে শনি গ্রহের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল তখন সে এই ছবিটি তুলেছিল। এই ছবিটিতে পৃথিবীকে খুবই ছোট দেখা যাচ্ছে এবং পৃথিবীর উপর যে ল্মবাকার দাগটি দেখা যাচ্ছে সেটি হল পৃথিবীর উপর পড়া সূর্যের কিরণ। প্রায় ৬ আরব বর্ষ দূরে থেকে তোলা এই ছবিটিই এখন পর্যন্ত পৃথিবীর সবথেকে দূর থেকে তোলা ছবি। এই ঐতিহাসিক ছবিটিকে বলা হয়- Pale Blue Dot.

উল্লেখ্য যে, ভয়েজার মিশন এখনও চলছে এবং যেদিন এই spacecraft দুটি জ্বালানি উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে সেদিন এগুলি তাদের কাজ বন্ধ করে দেবে। পড়ে ভয়েজার মিশনের অজানা তথ্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

পৃথিবীর অবাক করা কিছু তথ্য unknown facts about earth
পৃথিবীর অবাক করা কিছু তথ্য unknown facts about earth

আরও পড়ুনঃ-

বিশ্বের সেরা ৭ স্নাইপার

বিশ্বের ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা

ছেলেদের অজানা তথ্য

আরও কিছু অজানা তথ্য

মহাকাশ থেকে পৃথিবীকে চকচকে দেখায়, আর এর একমাত্র কারণ হল, জলের সাথে সূর্যের রশ্মির প্রতিফলন।

না হাতি না তিমি, আয়তনে পৃথিবীর সবথেকে বড় জীব হল Oregon এর পাহাড়ে অবস্থিত একটি হানি ফাঙ্গাস। Oregon এর ব্লু মাউন্টেন এ অবস্থিত এই ফাঙ্গাসটি প্রায় ২.৪ মাইল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত।  

যদি পৃথিবীর মাঝ বরাবর এপাশ থেকে ওপাশ একটি গর্ত খোরা সম্ভব হয়, তাহলে পৃথিবীর এইপাশ থেকে ওইপাশে যেতে সময় লাগবে মাত্র ৪৫ মিনিট। যদিও এরকম গর্ত খোরা অসভম্ব।

জানেন কি পৃথিবীর তুলনায় সূর্য এতটাই বড় যে, সূর্যের মধ্যে প্রায় ১৩ লক্ষটি পৃথিবী আরামেই ধরে যাবে।

পৃথিবীর অজানা কিছু তথ্য জেনে আপনার কি মতামত টা আমাদের জানাতে ভুলবেন না। প্রতিদিনের আপডেটের জন্য আমাদের ফেসবুক পেজ এবং ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হতে পারেন।

Spread the love

Leave a Reply