আজ আমরা হাজির আরেকটি নতুন প্রেমের গল্প নিয়ে। এই প্রেমের গল্পটি ব্যর্থ প্রেমের গল্প। পরিবারের চাপে একটা মেয়ের জীবন কিভাবে নষ্ট হয়ে যায়, সেই কথাই তুলে ধরা হয়েছে এই গল্পের মাধ্যমে। এই দুঃখের প্রেমের গল্প সম্পর্কিত আপনার মতামত আমাদের কাছে পৌঁছে দিতে ভুলবেন না। দুঃখে ভরা প্রেম কাহিনী। নতুন প্রেমের গল্প প্রেমের শেষ পরিণতি

নতুন প্রেমের গল্প। প্রেমের শেষ পরিণতিঃ-

নেহার টিউশন ছিল, অনেক দেড়ি করে ফেলেছে সে। তাড়াতাড়ি স্কুটিটা নিয়ে তাড়াহুড়ো করে সে তার বাড়ি থেকে প্রায় ১০ কিমি দূরে টিউশনের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেল, হাঁতে সময় বাকি মাত্র পাঁচ মিনিট, দেড়ি গেলে আবার স্যার পড়া শুরু করে দেবেন, ফলে অনেক কিছু মিস করবে সে, এই সব সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতেই নেহা তার স্কুটির অ্যাক্সিলেটর আরেকটু ঘুড়িয়ে দেয়, তার স্কুটির স্পীড উঠে যায় প্রায় ৭০ km/h-এ।

এত স্পীডে, স্কুটি সামলাতে পাড়েনি নেহা। রাস্তার অপর পাশ থেকে আসা, একটি বাইকের সাথে তার স্কুটি ধাক্কা মারে। প্রচুর চোট পায় নেহা। বাইক সওয়ার ছেলেটি নেহাকে নিয়ে দ্রুত, কাছের অতুলচন্দ্র হসপিটালে যায়। প্রায় ৭ দিন পড় নেহা সুস্থ হয়ে উঠে। এই সাতদিনেই সেই ছেলেটি নেহার অবস্থা দেখতে আসত, আর তার পরিবারের সাথে ক্ষমা চাইত, কারণ তার জন্যই তাদের মেয়ের এমন অবস্থা। সে যাই হোক-

এরপরই শুরু হল নেহার জীবনের এক নতুন অধ্যায়, নতুন জীবন চলা, তার জীবনে আবির্ভাব হল এক নতুন অতিথির। সেই উদ্ধারকারী ছেলেটির প্রেমে পড়ে যায় নেহা। এরপর সেই ব্যস্ত নেহা, যে ছোট বেলায় তার বাবাকে কথা দিয়েছিল যে, সে কোনো দিনও কারো সাথে সম্পর্কে জড়াবে না, সেও তার প্রেমের টানে কয়েক ঘণ্টা সেই ছেলেটির সাথে কাটিয়ে দিত।  

নতুন প্রেমের গল্প  KOSTER PREM KAHINI
নতুন প্রেমের গল্প KOSTER PREM KAHINIদুঃখে ভরা প্রেম কাহিনী

নেহার আবার রক্ষণশীল পরিবার। এই সব যদি তার পরিবারের কানে পৌছায় তার আর রক্ষে নেই। তাই তাদের প্রেম চলে লুকিয়ে। প্রতি সপ্তাহে শনিবার আর বুধবার নেহার বিকেলে প্রায়  এক ঘণ্টার মত সময় হাঁতে থাকত, সেই সময় টুকুতেই, পার্কে পাশাপাশি হাত ধরে হাঁটা, রাস্তার মোড়ের ফুচকার দোকানে ফুচকা খাওয়া, নানান গল্প-গুজবে মুহূর্তে কেটে যেত একটা ঘণ্টা। তাদের মন চাইত পরস্পরকে আরেকটু সময় দেওয়ার , কিন্তু হাঁতে সময় নেই।  

এভাবেই চলে যায় ছয় মাস। এক দিন নেহা আর সেই ছেলেটা রাস্তার মোড়ের সেই ফুচকার দোকানে ফুচকা খাওয়ার জন্য হাত ধরে যাচ্ছিল, নেহার মনে হল পেছনে কারও পায়ের আওয়াজ, আওয়াজটা অনেকটা চেনা। সে পেছন ঘুরে দেখতেই আতঙ্কিত হয়ে গেল, পেছনে তার বাবা দাঁড়িয়ে। উপস্থিত লোক গুলোর সামনেই তার বাবা তাকে চড় মেরে দেয়, আর সেই ছেলেটাকে শাসিয়ে দেয়- “অসভ্য ছেলে কোথাকার, এই সব করার সাহস আসে কোথা থেকে, এরপর যদি তোমাকে এর সাথে দেখি তাহলে তোমার কপালে শনি আছে।“  

হাত ধরে টেনে নেহার বাবা তাকে বাড়িতে নিয়ে আসতে থাকে। আর উপস্থিত লোকগুলো কেউ কিছু বলল না, সবাই ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল, অনেকেই আবার বলল- “ এই তো আজকালকার ছেলে মেয়ের নমুনা, বাপের খাবে আর ফষ্টিনষ্টি করবে।“ লজ্জায় নেহা মাথা নিচু করে ছিল।

এরপর নেহার স্থান হয় ঘড়ের চার দেওয়াল। টিউশন, স্কুল, বন্ধুদের সাথে দেখা করা সব বন্ধ, এমনকি নেহার মোবাইলটাও তার কাছে নেই, সে অনিককে(সেই ছেলেটার নাম) ফোন করতে চায়, তার সাথে কথা বলতে চায়, কিন্তু উপায় নেই, হয়ত অনেক খারাপ পেয়েছে সে, কিন্তু কিভাবে সে তাকে শান্তনা দিবে, তারও কোনো উপায় নেই।

দুঃখে ভরা প্রেম কাহিনী ব্যর্থ প্রেমের গল্প
দুঃখে ভরা প্রেম কাহিনী ব্যর্থ প্রেমের গল্প প্রেমের গল্প বাংলা

পরের দিন, সকালে নেহার কানে এল তার বাবা বলছেন-“ঠিক আছে তাহলে ওই কথাই রইল, তবে ছেলের কিন্তু সরকারী চাকরি লাগবেই।“ এরপর ঘটক মশাইয়ের কণ্ঠস্বর- “ছেলে সরকারী চাকরি তো করেই তার সাথে  ফ্ল্যাট আছে, বাংলো আছে, দুটি চার চাকা গাড়ি আছে, পরশু ছেলেকে নিয়ে আসছি” নেহার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে, মুহূর্তের মধ্যে তার কলেজের অধ্যাপক হওয়ার স্বপ্নটা ভেঙ্গে যায়, সে পড়তে চায়, সে জীবনে কিছু করতে চায়। কিন্তু সাধারণ একটা ঘটনা নিয়ে তার বাবা এত মাথা ঘামাচ্ছে কেন? সে তার জীবনটাকে নিজের মত গড়তে চায়, কিন্তু তার বাবার রাগের কাছে সবই যে, বন্যার জলে ভেসে যাওয়া শোলার পাতার সমান। সারাটা দিন সে কেঁদেছিল। তার মা সব বুঝেও নেহার বাবাকে কিছু বলার সাহস পায়না, কারণ তার বাবা অনেক রাগী।

নেহার মায়ের শান্তনা নেহার কাছে উষ্ণ মরুভূমিতে একফোঁটা জলের মতনই মনে হচ্ছিল, কি আর করবে সে, তার মা-ও যে নিরুপায়। তার মা মেয়ের ভবিষ্যৎ এভাবে শেষ হতে দেখে কোনো মতে চোখের জল ঢেকে রান্না ঘড়ে চলে যায়।

এরপর নেহার বিয়ের দিন ঠিক হয়ে যায়। কি আর করবে সে, কিছুই যে তার হাঁতে নেই, নেই প্রতিবাদ করার নুন্যতম অধিকার টুকুও, যে মেয়ে পড়াশোনায় এত ভালো, যে মেয়ে সবসময় বাবার কথা মেনে চলত, যে মেয়ে দেখতে এত সুন্দর, যে মেয়েকে নিয়ে একসময় গর্ব করত বাবা, সেই মেয়ের সামান্য একটা ভুলেই এতবড় পদক্ষেপ গ্রহণ করছে বাবা। সত্যি মেয়েদের কি কোনো স্বাধীনতা নেই, প্রতিবাদ করার কোনো রাস্তা নেই? সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতেই নিজের উপর তার অনেক রাগ হয়, আবার অনিক কি পরিস্থিতিতে আছে সে কথা ভেবে সে আতঙ্কিত হয়। না জানি কতবার সে ফোন করেছে তাকে, কিন্তু তার মোবাইল তো বাবার কাছে, সুইচ অফ হয়ে আছে।

প্রেমের গল্প বাংলা নতুন প্রেমের গল্প
প্রেমের গল্প বাংলা নতুন প্রেমের গল্প premer golpo
<

এরপর মহা-ধূমধামে নেহার বিয়ে হয়ে যায়, ছেলে একজন সরকারি চাকুরীজীবী, মাস গেলেই হাঁতে মোটা অঙ্কের টাকা পায়। শ্বশুর বাড়িতে কয়েকটা দিন মোটামুটি কাটল নেহার, হ্যাঁ এবার সে তার মোবাইল হাঁতে পেয়েছে, সে অনিককে ফোন করে কিন্তু অনিকের ফোন বন্ধ। অনিকের বন্ধুদের নেহা ফোন করে তারা সবাই নেহাকে একই কথা বলে- “কাজটা তুই ভালো করলি না, তোর আগে থেকেই যখন সব কিছু ঠিক ছিল, তাহলে অনিকের সাথে টাইম-পাস করলি কেন?” বলেই সবাই নেহার কোনো কথা না শুনেই ফোন কেটে দেয়। নেহা কিছুতেই তাদের বোঝাতে পাড়ল না যে ,যা হয়েছে তার অমতেই হয়েছে, বাধ্য হয়েই সে আজ তার পরিবারের কথা মেনে নিয়েছে।  

এর কিছুদিন পর শুরু হয় সেই চাকুরীজীবী স্বামীর কুকীর্তি। প্রতিদিন বাড়িতে নেহার সামনেই কয়েকজন বন্ধু মিলে মদ্য পান করে তার স্বামী। স্বামীর বন্ধুরা নেহাকে নিয়ে বাজে ইঙ্গিত করলেও তার স্বামী বিন্দুমাত্র প্রতিবাদ না করে হেঁসে উড়িয়ে দিয়েছিল, দিনের পর দিন এই কুকীর্তি বেড়েই চলছিল, এমনকি তার মাতাল স্বামীর সামনেই তার বন্ধুরা নেহাকে টাচ করতে শুরু করে দেয়, পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। অনিকের সাথে থাকার সময় কিভাবে মুহূর্তে একটা ঘণ্টা কেটে যেত, বুঝতেও পারত না সে, কিন্তু এখানে তার প্রতিটা মিনিট এক যুগের মত মনে হতে লাগল।

নেহা তার মাকে ফোন করে সব কিছু জানায়, কিন্তু তার মা, বাবাকে কিছুই বলেনি কারণ তার বাবার স্ট্রোক এর সমস্যা রয়েছে, উত্তেজনায় এলেই তার বাবা স্ট্রোক করে। মেয়ের এরকম পরিস্থিতি শুনলে নেহাত কিছু একটা হয়ে যাবে। এই ভয়ে মা কিছুই জানাননি নেহার বাবাকে।

পড়ুনঃ- সুপ্ত প্রেমের বেদনাময় কাহিনী

এরপর নেহার উপর অত্যাচারের সীমা অনেকটা বেড়ে যায়, তার সেই চাকুরীজীবী মাতাল স্বামী প্রতিদিন বাইরে থেকে এসে নেহার উপর চড়াও হতে শুরু করে, এমনকি ঘুমন্ত নেহার উপড়ে জ্বলন্ত সিগারেট ধরতেও ছাড়েনি সেই অত্যাচারী স্বামী। নেহার প্রতিবাদ করার শক্তি টুকুও হারিয়ে গেছে, সেই সুন্দর চাঁদের মত মুখ আর নেই নেহার, বিয়ের মাত্র পনেরো দিনেই তার উজ্জ্বল বদনে সিগারেটের দাগ আর শরীরে  আঘাতের চিহ্ন প্রবল হয়ে উঠে।  

দুঃখে ভরা প্রেম কাহিনী ব্যর্থ প্রেমের গল্প ভালবাসার গল্প
দুঃখে ভরা প্রেম কাহিনী ব্যর্থ প্রেমের গল্প ভালবাসার গল্প image

কিন্তু সহ্যেরও একটা সীমা থাকে, সেই সীমা পাড় হলেই মানুষ ভুল কিছু করে বসে, মানুষ তো আর পাষাণ নয় যে, সে বর্ষার প্রবল জলের প্রকোপ, গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহ আর শীতের কনকনে ঠাণ্ডা একসাথে সইবে!

অনেকদিন ধরে জল জমিয়ে কালো হয়ে উঠা মেঘটাও একসময় কঠোর গর্জনে বৃষ্টি হয়ে নেমে আসে। একদিন অনেক রাতে বাড়ি ফেরার পর নেহার স্বামী আবিষ্কার করে যে, নেহাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, এরপর অবশেষে তাকে খুঁজে পাওয়া গেল স্টোর রুমে, উঁহু জীবিত নয়, মৃত। গলায় দড়ি লাগিয়ে ঝুলছে নেহার দেহ, মুখে একটা তৃপ্তির হাঁসি, যেন অনেক ঝামেলা থেকে একসাথে মুক্তি পেয়েছে সে।

এরপর বেলা বাড়ার সাথে সাথে যথারীতি পুলিশ আসে, লোকজন আসে, বেলা শেষে যে যার মত বাড়ি ফিরে যায়। নেহার ভাগ্য এতটাই খারাপ যে, তার লেখা সুইসাইড নোটটাও কেউ দেখতে পেল না, সেখানে লেখা ছিল-“আমিও সবার মত আমার জীবনকে গড়ে তুলতে চেয়েছিলাম, আমিও সবার মত বাঁচতে চেয়েছিলাম, এই খোলা আকাশে ডানা মেলে প্রজাপতির মত উড়তে চেয়েছিলাম। কিন্তু বাজ পাখি এসে যে সেই প্রজাপতিকে সর্বশেষ করবে সে ব্যাপারে আমি অবগত ছিলাম না।

ভেবেছিলাম নিজের পছন্দের মানুষের সাথে হাঁতে হাত মিলিয়ে এই জীবন যুদ্ধে তাল মিলাব, কিন্তু তা আর পূর্ণ হল না, তোমার কোনো দোষ নেই বাবা, তুমি আমার ভালোই চেয়েছিলে, কিন্তু সেই ভালো চাওয়াটা হয়ত একটু বেশি হয়ে গেছে, মাকেও তুমি অনেক কথা শোনাও, এরকম করো না বাবা।

পড়ুনঃ- সেরা প্রেমের গল্প

আমরা মেয়ে হলে কি হবে, আমাদেরও তো মন আছে, আমরাও তো চাই নিজের জীবনের গল্পটাকে একটু নিজের মত করে লিখতে, হ্যাঁ আমিও আমার মত করে গল্প লিখতে বসেছিলাম, কিন্তু মাঝপথে ঝড় এসে সেই অর্ধেক লেখা গল্পটার পৃষ্ঠা ঝড়ের হাওয়ায় উড়ে গেল, চাইলেই কিন্তু সেই গল্পটি আবার লেখা যেত, কিন্তু কি আর করা যাবে বল, আমার কাছে গল্প লেখার ইচ্ছা থাকলেও খাতা আর কালি যে সবই উড়ে গেছে, ভালো থেকো আর নিজের ও মায়ের যত্ন নিও।“  সেই সুইসাইড নোটটাও কারও হাতে না এসে হাওয়ায় উড়ে যায়।

আর এদিকে নেহার মারা যাবার এক সপ্তাহের মধ্যেই তার স্বামী আরেকটি বিয়ে করে নেয়। কেউই নেহার ন্যায্য বিচারের দাবি জানায়নি, এমনকি নেহার সেই রাগী বাবাও না, কারণ ছেলে অনেক বড় সরকারী চাকরি করে, তার বিরুদ্ধে কথা বলাটা ঠিক হবে না, এমনকি যে মেয়েটাকে সে নতুন বিয়ে করে এনেছে তার বাবাও একদম আনন্দিত, কারণ তার মেয়ে সরকারী চাকুরীজীবী ছেলের স্ত্রী। কিন্তু সে হয়ত জানে না যে, এই ভদ্র পোশাকের পেছনে লুকিয়ে রয়েছে এক অসুরের মূর্তি।

আর এদিকে অনিকের কি হল? নেহার বিয়ে হয়ে গেছে শুনে বেচারি আত্মহত্যা করতে গিয়েছিল, কিন্তু ভাগ্যক্রমে সে দড়ি ছিঁড়ে পড়ে যায়। এরপর আরেক বিপত্তি ,সে মাথায় চোট পায়। অনিকের বাবার অতটাও সামর্থ্য ছিল না যে, ছেলের চিকিৎসা করায়। একমাত্র ছেলের এই অবস্থা দেখে অনিকের মা কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলে। আর অনিক! সে এখন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় আর মানুষদের ফেলে যাওয়া খাবার খেয়ে নিশ্চিন্তে পথের ধারে ঘুমিয়ে থাকে। 

নতুন প্রেমের গল্প। প্রেমের শেষ পরিণতি

All copyright reserved to admin of ছাড়পত্র

চাইলে তোমার লেখা গল্পও আমাদের পাঠাতে পারো। আমাদের গল্প পাঠানোর জন্য এই পেজের নীচে “আপনার লেখা প্রকাশ করুন” নামে বোতামে ক্লিক করুন অথবা আপনার লেখা গল্প আর গল্প পেজের ম্যাসেঞ্জারে পাঠান অথবা আমাদের মেইল করুন- charpatrablog@gmail.com –এ।

Spread the love

Leave a Reply