আজ আবার দুটি দমফাটা হাসির গল্প নিয়ে আমরা হাজির। প্রথম গল্পটি বিয়ে বাড়িতে আমার সঙ্গে ঘটেছিল। আর দ্বিতীয় গল্পটি আমার এক হাড়-কিপটে বন্ধুর গল্প। এই বাংলা নতুন হাসির গল্প দুটি সম্পর্কিত আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না যেন!
দমফাটা হাসির গল্প। বাংলা নতুন হাসির গল্প। new bengali best funny story :-
দমফাটা হাসির গল্প- ০১
এই তো গেল বছরের ঘটনা, বিয়ে বাড়িতে বরযাত্রী গিয়েছিলাম। জানেনই তো বরযাত্রী যাওয়ার কি ঠেলা, সারারাত না ঘুমিয়ে কাঁটাতে হয়। তখন মনে হয় যেন কোনো মুরগী ভ্যাকসিন না নিয়েই দারিপাল্লায় উঠেছে। আমার সাথে আমার বয়সী যারা গিয়েছিল, তারা সবাই নিজেদের নিজেদের উঁহু উঁহুর সাথে ফোনালাপে ব্যস্ত। হয়ত এভাবেই ওদের রাত কেটে যাবে। কিন্তু আমি! আমি কি করব! কিভাবে কাটাব আমি রাত? আমি যে খাঁটি ঘি এর মত খাঁটি সিঙ্গেল।
এদিকে আবার রাত একটু হতেই না হতেই ব্রয়লারের মত ঝিমোতে শুরু করে দিয়েছি। তবে বেশিক্ষণ ঝিমোতে হল না, কারণ এক সাদা পরী আমার দিকেই এগিয়ে আসছে। না আসলে আমাকে উদ্দেশ্য করে নয়, যাবে হয়ত অন্য কোথাও।
ভাবছি এর সাথেই রাত কাটিয়ে দিব। আই মিন গল্প করেই রাত কাটিয়ে দিব। কিন্তু মেয়েদের সাথে কথা বলায় আমার আবার এলারজি আছে। মানে লজ্জা লজ্জা ভাব আরকি। যদিও আমি কলেজে পড়ি, কিন্তু এখনও মেয়ে দেখলেই এলারজি হওয়ার অসুখ টা যায়নি।
মেয়েটা অসাধারণ দেখতে। আর তার চেয়েও অসাধারণ তার স্টাইল। মেয়েটা একাই আছে। আমিও মেয়েটার পিছু পিছু গেলাম বিয়ে বাড়ির ভিতরে। সেখানে সে এক চেয়ারে বসল। আমিও বসলাম তারই পাশে। প্রথম প্রথম আমি মেয়েটাকে এমন ভাব দেখাতে লাগলাম, যেন আমি মেয়েটাকে কোনো পাত্তা দিচ্ছি না। কিন্তু যখন দেখলাম মেয়েটা কিছুতেই আমার সাথে কথা বলা তো দূর আমার দিকে দেখছেও না, তখন একটু রাস্তা বদল করে ফেললাম।
আমি যেচে গিয়ে মেয়েটার সাথে কথা বললাম। আমি জানতে চাইলাম যে এই জায়গাটির নাম কি? ব্যাস এরপরেই জমে গেল ক্ষীর, এসে পড়ল গল্পের ভিড়। অনেকক্ষণ কথা চলতেই লাগল। কথা বলতে বলতে কখন যে দশের কাটা একে গিয়ে পৌঁছেছে সেদিকে খেয়াল নেই। আমি আবার মেয়েটার সাথে একবার দোকানেও গেলাম, মেয়েটা বাচ্চাদের ডায়পার কিনল। আমি ভাবলাম কেউ কিনে নিয়ে যেতে বলেছে হয়ত।
তখন রাত প্রায়….সরি ভোর প্রায় ২ টে। বিয়ে চলছে জমজমিয়ে। সবাই বিয়ে দেখছে। তবে খুশির খবর হল, আমার সঙ্গে সেই মেয়েটাও আছে। আহো ভাতিজা আহো। এরেই তো কয় জীবন।
কিছুক্ষণ পড়, একজন লোক এসে সে মেয়েটাকে বলল- “বাবু, ঘুম থেকে উঠে গেছে, চলো কান্না করছে।“ আমি অবাক হয়ে গেলাম ‘বাবু!’ আরে আরে এ কয় কি? মেয়েটা কি বিবাহিতা নাকি? কই কপালে তো সিঁদুর নেই। হাঁতেও তো গোটা কয়েক চুরি ছাড়া শাঁখা-পলা দেখছি না। উম্ম না তো দেখে তো একদমই মনে হচ্ছে না। আমার নীরবতা কাটিয়ে লোকটা বলল- “দাও বাবুর ডায়পার টা দাও।“ উঁহু এবার আমি ভুল শুনিনি।
এবার মেয়েটা বলল- “আচ্ছা তুমি একটু বস, আমি আসছি।“ এই বলে মেয়েটা চলে গেল লোকটার সাথে। তবে তখনও আমি ভাবছিলাম যে, কারও বাচ্চা হবে হয়ত। কারণ এত সুন্দর যে দেখতে এত্ত কিউট সে বিবাহিতা হয় কি করে? কি সব আলতু ফালতু ভাবছি আমি! দেখে তো বয়স ২১ এর বেশি মনে হল না। আমি আবার রাত জাগতে পাড়ি না। যা শুনছি বা মনে করছি হয়ত এরই সাইড-এফেক্ট।
কিছুক্ষণ পড় মেয়েটা একটা বাচ্চাকে নিয়ে এল। আমি আবারও ভাবলাম অন্য কারও হয়ত! এভাবেই কেটে গেল সারাটা রাত মেয়েটার সঙ্গে কথা বলতে বলতে। বা দারুন লাগল মেয়েটাকে। যেমন সুন্দর দেখতে তেমনই সুন্দর কথা-বার্তা। আমি তো ইতি মধ্যে ফিদা হয়ে গেছি। কিন্তু মোবাইল নাম্বারটা জোগাড় করা হল না মেয়েটার। আমি মোবাইল নাম্বার চাওয়ার আগেই- “কিছুক্ষণ পড় আসছি” বলেই মেয়েটা চলে যায়।
প্রায় আধাঘণ্টা পড় একজন মহিলা কোলে এক বাচ্চা নিয়ে আমার কাছে এসে বলল- “চা খেয়েছো”?
আমি দেখলাম এই বাচ্চাটি মেয়েটা কাল যে বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে ছিল, সেই বাচ্চাটিই। আমি মনে মনে ভগবান কে ধন্যবাদ জানালাম। কারণ বাচ্চাটা অন্য কারও। কিছুক্ষণ পড় আবিষ্কার করলাম কাল আমার সঙ্গে পরিচয় হওয়া মেয়েটা যে ড্রেস পরিধান করে ছিল, এই মহিলাও সেই ড্রেস পরিধান করে আছে। কিছুটা বিস্মিত হলাম।
কিছুক্ষণ পড়, আমার আর কিছুই বুঝতে বাকি রইল না। কাল যে মেয়েটাকে আমি দেখেছিলাম, সেই মেয়েটি আর এই মহিলা একি ব্যক্তি। কাল মেক-আপ করার জন্য আমি কিছুই বুঝতে পারিনি। আর আজ মেক-আপের আড়ালে থাকা আসল চেহারা প্রকাশ পেল। মুহূর্তের মধ্যে ২১ বছর দিগুন হয়ে প্রায় ৪২ হয়ে গেছে।
কাল যে মেয়ের উপড়ে ক্রাশ খেয়েছিলাম, আজ সেই মেয়ে রূপী মহিলার দিকে ফিরেও তাকাতে মন চাইছে না। আরে ভাই বিয়ে করেছিস কর, শাড়ি পড়ে আয়। সিঁদুর শাঁখা পড়ে আয়। এভাবে পরীর মত সেজে আসার কি হল? আর এই জন্যই আজ আমার মত হাজারো ছেলে মেক-আপের আলোয় আলোকিত বয়স্কার সাথে পালিয়ে যাচ্ছে। পড়ে আবার ভুল বুঝতে পেড়ে যার জিনিস তার কাছে ফিরেও আসছে। আর আমি কক্ষনোই বিয়ে বাড়িতে মেয়ের পিছনে ঘুরব না। বলা তো যায়না যে, যুবতী ভেবে বয়স্কা বুড়িকেই যদি বিয়ে করতে হয়!
আরও পড়ুনঃ- চরম হাসির মজার জোকস
দমফাটা হাসির গল্প- ০২
প্রতিদিনের মত, সেদিনও অফিস থেকে বাড়ি ফিরছিলাম। কিন্তু সেদিন হরতাল থাকায়, গাড়ি পেতে খুবই অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছিল। কি করব, কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না। ঠিক করলাম হেঁটেই বাড়ি ফিরব। কি আর করা যাবে, উপায় যে নেই।
কিছুক্ষণ হাঁটতে থাকার পড়ই মনে হল, আমার পেট যেন কিছু বলতে চাইছে। হুম ভালো ভাবেই শুনলাম, আমার পেট মহাশয় বলছে তার কিছু দরকার। পেট মহাশয়ের কথা উপেক্ষা করেই এগোতে লাগলাম। না আর এগোনো যাচ্ছে না। এবার কিছু একটা ব্যবস্থা করতেই হবে। এদিকে আবার রাস্তার পাশের সব দোকান বন্ধ।
হঠাৎ আমার মনে হল, এখানেই কোথায় যেন আমার এক স্কুলের বন্ধুর বাড়ি। হুম এখানেই আশেপাশে কোথাও। হ্যাঁ এবার খুঁজে পেয়েছি। তার বাড়িতে গিয়ে কিছু ভোজন না করলেই নয়। গেলাম তার বাড়ি, কিন্তু তাকে সরাসরি আর বলি কি করে যে, আমার প্রচণ্ড খিদে পেয়েছে। তাই নানান কথার মাধ্যমে তাকে বোঝাতে চেষ্টা করতে লাগলাম। এ পাগল যেন বোঝেও বোঝে না, আর এদিকে আমার পেট যেন গড়ের মাঠ।
কিছুক্ষণ পড়েই, সে খাওয়ার কথা বলল। আমি মনে মনে বেজায় খুশি হলাম। কারণ এই মুহূর্তের জন্যই আমি অপেক্ষা করছিলাম। সে বলল, বাড়িতে তো কেউই নেই, আমরা বরং আমাদের বাড়ির পেছনের দোকানে খেয়ে আসি।
গেলাম সেখানে কিন্তু, দেখলাম দোকান বন্ধ। আমার বন্ধু দোকানীর নাম নিয়ে ডাকতেই, ভিতর থেকে দোকানী সাড়া দিল। হুম্ম দোকান খোলা, কিন্তু বাইরে থেকে দেখলে মনে হয় বন্ধ। ভিতরে গিয়ে আমার বন্ধু বলল, “তোমার দোকানের লাড্ডু গুলো কেমন?” দোকানী বললেন-“চিনির মত মিষ্টি।“ আমার বন্ধু বলল- “তাহলে লাড্ডু খেয়ে লাভ কি? চিনি খেলেই হয়। অত খরচ না করে এক দানা চিনি খেলেই কাজ হয়ে যাবে। না লাড্ডু খাব না, অন্য কিছু খুজি, চলো।“ দোকান থেকে রাস্তায় বের হতেই, দেখি এক মধু বিক্রেতা মধু নিয়ে যাচ্ছে। বন্ধু থামিয়ে বলল –“কি ভাই, মধু পরিষ্কার আছে তো?” আমি মনে মনে ভাবছি, এ কি রে বাবা, আমার লেগেছে খিদে, আর এ মধু খাওয়াবে নাকি?
মধু বিক্রেতা বললেন-“হ্যাঁ একদম জলের মত পরিষ্কার।“
আমার বন্ধু বলল- “তাহলে মধু খেয়ে লাভ কি, জল খাওয়াই ভালো। চলো বন্ধু বাড়িতে জল খাই।“ এই বলে আমাকে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে এক গ্লাস জল হাঁতে ধরিয়ে দিল। আর এদিকে খিদের জ্বালায় আমার অবস্থা বেহাল। আর পড়েছি এমন এক হাড়কিপটে বন্ধুর কবলে, যে নিজেও টাঁকা খসাবে না, আর আমাকেও খরচ করতে দিবে না।
যতক্ষণ ধরে এই কিপটে বন্ধুর সাথে ঘুরছি, এতক্ষণে হয়ত আমি বাড়ি পৌঁছে যেতাম। অগত্যা শুকনো মুখ, আর পেট ভরা খিদে নিয়েই রাস্তায় নামতে হল। ভাগ্যিস রাস্তায় নামতেই একটি টোটো পেয়ে গেলাম। সেটিতে চেপে বাড়ি ফিরেই পেট ভড়ে ভাত খেয়ে শান্তি পেলাম।
জীবনে অনেক মানুষ দেখেছি, কিন্তু এরকম কিপটে বন্ধুর মত মানুষ দেখি নি।
পড়ুনঃ- এ কেমন গুরুসেবা!
দমফাটা হাসির গল্প বাংলা নতুন হাসির গল্প মজার ফানি গল্প bengali hasir golpo bengali best funny story
ALL RIGHTS RESERVED BY THE ADMIN. YOU DON'T HAVE THE RIGHT TO RE-USE IT. OTHERWISE LEGAL OPTION WILL BE TAKEN WITHOUT ANY WARNING.
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।