আজ আমরা এই ব্লগটির মাধ্যমে বিখ্যাত টাইটানিক জাহাজের কিছু অজানা তথ্য আলোচনা করব। টাইটানিকের অজানা তথ্য। টাইটানিক জাহাজের অজানা রহস্য।
টাইটানিক জাহাজের অজানা তথ্য টাইটানিক রহস্য
১৫ এপ্রিল, ১৯১২ আটলান্টিক মহাসাগরের -২ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড উষ্ণতা যুক্ত জলে, একটি বৃহৎ বরফের চাই-য়ে ধাক্কা লেগে টাইটানিক দুই-টুকরো হয়ে যায়। অনেক অনুসন্ধানের পর ১ সেপ্টেম্বর ১৯৮৫ সালে টাইটানিকের খোঁজ মেলে। সে যাই হোক এখন আমরা আলোচনা করব টাইটানিক কেন ডুবেছিল। হুম এর কারণ হিসেবে আপনারা হয়ত বলবেন হিমশৈলে ধাক্কা লেগে। কিন্তু এটি ছাড়াও অন্যান্য কারণগুলি হয়ত আপনি জানেন না। তো চলুন জেনে নিই।
টাইটানিক নামক বিশালরুপী সুদর্শন জাহাজটি হিমশৈলে ধাক্কা মারার প্রায় ২ ঘণ্টা ৪০ মিনিটের মধ্যেই পুরোটি জলের তলায় ডুবে যায়। প্রায় ১৫০০ জন মানুষ নিহত হন। কিন্তু ৮৮২ ফুট লম্বা একটি বিশাল রুপী জাহাজ মাত্র ২ ঘণ্টা ৪০ মিনিটের মধ্যে ধাক্কা লেগেই ডুবে যাওয়া অসম্ভব। একটি ডকুমেন্টারিতে টাইটানিক দ্রুত ডুবে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে যেগুলি বলা হয়েছে, সেগুলি হল-
- টাইটানিক জাহাজের যাত্রীরা ১২ টি ছোট ছোট জানালা খোলা রেখেছিল। যখন যাত্রীদের লাইফ বোটে যাওয়ার কথা বলা হয়, যাত্রীরা জানালাগুলি বন্ধ না করেই চলে যান। যার ফলে জল দ্রুত অভ্যন্তরভাগেও প্রবেশ করে।
- টাইটানিকের প্রথম ভাগ অনেক বড় ছিল। এটি এত বড় ছিল যে, প্রায় ৩০ লক্ষ টন এর ওজন ছিল। এত বিশাল ওজনের এই অংশটির প্রতিটি অংশ যোগ করার সময় প্রয়োজন ছিল হাইড্রোলিক শক্তির, যা সম্ভব ছিল না। তাই ম্যানুয়ালি কিল এর মাধ্যমেই এই অংশের ভাগগুলি একসাথে লাগানো হয়। যার কারণে, গঠন কাঠামোতে কিছু খামতি ছিল। যার কারণে একধাক্কাতেই এই অংশটি ভেঙ্গে যায়, এবং জাহাজের অন্য অংশেও জল ঢুকতে থাকে।
- যে ক্যাবিনে দূরবীনটি রাখা ছিল, সেই ক্যাবিনটি ছিল তালা বন্ধ। কিন্তু সংশ্লিষ্ট আধিকারিকেরা এই ক্যাবিনটির চাবি হারিয়ে ফেলেছিল। যার ফলে দূরবীন প্রয়োগ না করেই তারা বিশাল এই জাহাজটিকে চালাচ্ছিল। আর যখন খালি চোখে তারা হিমশৈলটি দেখতে পায়, তখন তাদের হাতে মাত্র ৩০ সেকেন্ডের মত সময় ছিল। যা এই জাহাজকে সামলানোর জন্য অনেক কম।
- এই ডকুমেন্টারিতে আরও বলা হয়েছে যে, ১৭ এপ্রিল নিউইয়র্ক পৌঁছাতে জাহাজটিকে ১৮ নটেরও বেশি গতিবেগে চালানো হচ্ছিল। যদি জাহাজটিকে নির্দিষ্ট মাত্রায় চলানো হত, তাহলে হয়ত, ধাক্কার প্রকোপ কম হত, এবং অনেকাংশেই জাহাজটিকে নিয়ন্ত্রণ করা যেত। এবং ১৫০০ প্রাণ বেঁচে যেত।
- এখানে আরেকটি কথা জানিয়ে রাখি যে, টাইটানিক যখন ডুবছিল, তখন তার আশেপাশেই SS Califirnian নামের একটি জাহাজ ছিল। এবার বিস্তারিত জানাই। Californian জাহাজটির রেডিও সিগন্যালে একটি জাহাজ আসে, এবং তারা জানতে পাড়েন যে, টাইটানিক নামক একটি প্যাসেঞ্জার জাহাজ এই সিগন্যাল পাঠিয়েছে। এই Californian জাহাজটি টাইটানিককে সতর্কিত করে যে, সেই জায়গাটিতে অনেক বরফের চাই রয়েছে।
যেহেতু অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল, এবং বিপুল পরিমাণ বরফের চাই থেকে বিপদ ঠেকাতে Californian নিজেই থেমে গিয়েছিল, এবং এই জাহাজটির রেডিও অপারেটরকে ঘুমিয়ে পড়ার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়। রাত প্রায় ১১.৫০ তখন জাহাজের অফিসার টাইটানিক থেকে আলোর ছটা দেখতে পান। এবং এর লাইট গুলি কখনো জ্বলছিল আবার কখনো নিভছিল। যদিও টাইটানিক প্রায় ১১.৪০ য়েই ধাক্কা লেগে গিয়েছিল। এই ধরনের অস্বাভাবিক এবং অস্বচ্ছ ঘটনার পরেও Californian জাহাজের কোনো সদস্যই রেডিও অপারেটরকে ডেকে তোলেননি। এর পরিবর্তে জাহাজটি কিছু আলোর সিগন্যাল ছাড়ে।
যদিও এই Californian জাহাজটি থেকে টাইটানিককে খুব ভালোভাবেই দেখা যাচ্ছিল, কিন্তু তারা টাইটানিক যে, ডুবছিল সেদিকে ঠিকমত খেয়াল করেননি। এরপর ভোর ১.৫০ নাগাদ আরও কিছু সিগন্যাল ছাড়া হয়। ২.১৫ নাগাদ Californian আর টাইটানিককে দেখতে পায় নি। তারা ধরে নেয়, টাইটানিক চলে গেছে। এরপর ভোর ৫.৩০ নাগাদ রেডিও অপারেটর ঘুম থেকে উঠার পর, তার কাজ সামলাতে চলে যান, এবং জানতে পাড়েন যে, টাইটানিক জলের তলায় তলিয়ে গেছে। পরবর্তীতে জানা যায় যে, এই Californian জাহাজটি চাইলেই টাইটানিকের অনেক যাত্রীর প্রাণ বাঁচাতে পাড়তেন, এমনকি সিগন্যাল দিয়ে আশেপাশের জাহাজ গুলিকেও SoS সংকেত দিয়ে ডাকতে পারত, কিন্তু এই জাহাজের Crew member দের অবহেলা এবং অসহযোগিতার ফলাফল ১৫০০ প্রাণ -২ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডের জলের তলায় তলিয়ে যায়।
আরও পড়ুনঃ-
পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত প্রাণী
এবার আমরা টাইটানিক জাহাজটির কিছু অজানা তথ্য জানব-
- নিউফাউন্ডল্যান্ডের দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল থেকে প্রায় ৬০০ কিমি দূরে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ সমুদ্রের গভীরে প্রায় ১২,৫০০ ফুট অর্থাৎ প্রায় ৩.৮ কিমি নিচে রয়েছে।
- যে হিমশৈল টিতে টাইটানিক ধাক্কা লেগেছিল, সেটি সমুদ্রের উপরে প্রায় ৫০-১০০ ফুট উপরে উঠে ছিল। আর এটির মোট উচ্চতা ছিল প্রায় ২০০-৪০০ ফুটের আশেপাশে। যেখানে টাইটানিকের উচ্চতা ছিল ১৭৫ ফুট।
- প্রায় ২২২৩ জন যাত্রী ( including crew members) নিয়ে টাইটানিক যাত্রা শুরু করেছিল। টাইটানিক ভেঙ্গে যাবার পরেও প্রায় অর্ধেক মানুষ বেঁচে যেত, যদি লাইফবোট গুলি ফাঁকা না রাখা হত। অনেকেই তাড়াহুড়োতে লাফবোট ভর্তি না করেই (পর্যাপ্ত মানুষ) নিরপদ দূরত্বে চলে যান।
- টাইটানিকের মোট চারটি ফানেল ছিল। এর মধ্যে মাত্র তিনটি ফানেল দিয়েই ধোয়া বেড় হত। চতুর্থ ফানেলটি দিয়ে ধোয়া বেড় হত না। এটি কেবলমাত্র জাহাজের ভারসাম্য রক্ষার্থে বানানো হয়েছিল।
- টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ বর্তমানে দ্রুত গতিতে নষ্ট করছে Halomonas নামের একটি ব্যাকটেরিয়া। এই ব্যাকটেরিয়া গুলি সাধারণত স্টিলের উপর দেখা যায়। কিন্তু সমুদ্রের অভ্যন্তেরও যে এরা সক্রিয়, তা টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখেই বোঝা যায়।
- টাইটানিকে প্রায় ২২২৩ জন মানুষ থাকেলও এর ধারণ ক্ষমতা কিন্তু অনেক বেশি ছিল। প্রায় ৩৫০০ জন মানুষ টাইটানিকে আরামে সওয়ার করতে পারত।
- বিশাল রুপী এই জাহাজটির প্রথম যাত্রা দেখতে প্রায় ১০০০০০ জন মানুষ একত্রিত হয়েছিল।
- এই জাহাজটির chief baker, Charles Joughin জানান যে, তিনি প্রায় ২ ঘণ্টা জলে ছিলেন। কিন্তু এতটা সময় ঠাণ্ডা জলে ১৫ মিনিটের বেশি কেউ বাঁচতে পারেন না। Charles জানান যে, তিনি পূর্বেই প্রচুর পরিমাণ হুইস্কি খেয়েছিলেন। যার ফলে তার শরীর অনেক গরম ছিল, এবং তিনি এই -২ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড উষ্ণতার জলেও বেঁচে গিয়েছিলেন।
- টাইটানিক জাহাজটির সমুদ্র যাত্রার পূর্বেই দুইজন মানুষ মারা যান। একজন জাহাজের লম্বা সিঁড়ি থেকে মাটিতে পড়ে যান, এবং সঙ্গে সঙ্গে তার শরীরের অধিকাংশ হাড় ভেঙ্গে যায়, ও তিনি মারা যান। অপরজনের মৃত্যু হয়েছিল, যখন জাহাজটিকে যাত্রার উদ্দেশ্যে সমুদ্রে নামানো হচ্ছিল তখন। নামানোর সময় একটি timber পড়ে যায়, এবং তাকে থেঁতলে দেয়।
- টাইটানিকের শেষ রাতের, প্রথম ক্লাসের মেনুর লিস্ট ২০১৫ সালে online নিলামে ৮৮,০০০ ডলার দিয়ে কিনে নেন, একজন কালেক্টর। তিনি সর্বোচ্চ নিলাম মুল্যের থেকে ১৮,০০০ ডলার বেশি মূল্য দিয়ে এটি নিজের করে নিয়েছিলেন।
- টাইটানিকে মাত্র দুই বছরের দুটি বাচ্চাও ছিল। আর ভাগ্যের ব্যাপার হল এরা দুইজনেই বেঁচে গিয়েছিল। এদের নাম- Edmond এবং Michel Navratil. তাদের পিতা Michel Sr. তাদের তার মায়ের থেকে কিডন্যাপ করে আমেরিকায় নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। এখানে কিডন্যাপ কথাটি বলার কারণ হল তাদের পিতা-মাতার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছিল। টাইটানিক দুর্ঘটনা ঘটার সর্বশেষ মুহূর্তে Michel Sr. –কে তার সন্তান দুটিকে লাইফবোটে নিতে দেখা গিয়েছিল। এই দুই ভাইকে বলা হত- “Titanic Orphan”.
- একটি অনুমান অনুসারে টাইটানিক জাহাজটি যে হিমশৈলটীতে ধাক্কা লেগেছিল, সেটি প্রায় ১০,০০০ বছর আগে গ্রিনল্যান্ড থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু টাইটানিকের সাথে ধাক্কা লাগার প্রায় দুই সপ্তাহের মধ্যেই এটী সম্পূর্ণ গলে যায়।
এই ছিল টাইটানিক জাহাজের কিছু অজানা কথা।
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।