আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের বক্তব্য নিম্নের কথোপকথনটি বাংলাদেশের বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার, একটি টিভি চ্যানেলকে দিয়েছিলেন। খুব সুন্দর কথা বলেছেন তিনি, প্রত্যেক মানুষের উচিত এগুলি মনযোগ সহকারে উপলব্ধি করা। জীবন বদলে দেওয়া উক্তি
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের বক্তব্য ।। জীবন বদলে দেওয়া উক্তি
প্রশ্নকর্তাঃ- স্বাস্থ্য হচ্ছে কোনো কিছুর উন্নতি সাধনের জন্য প্রধান বিষয়, এটি কি স্যার একটু ব্যাখ্যা করে বলতে পাড়বেন?
অধ্যাপকঃ- স্বাস্থ্য মানে কি অমুখ লোকটা অলস, এটা বলা হয়। কিন্তু আমি মনে করি অলস শব্দটা ঠিক না, অমুখ লোকটা অক্ষম, পাড়ে না, করতে চায় না, বড় হতে চায়, জিততে চায়, আক্রমণ করতে চায়, রাজ্য চায়, সাম্রাজ্য চায়, কিন্তু পেরে উঠে না।
প্রশ্নকর্তাঃ- মানুষের জীবনে সবথেকে বড় সম্পদ কি?
অধ্যাপকঃ– বড় সম্পদ হচ্ছে স্বপ্ন, এবং অনেকেই মনে করেন যে স্বপ্ন জিনিসটা হচ্ছে একটি অবাস্তব জিনিস, অলৌকিক জিনিস। কিন্তু স্বপ্ন কিন্তু আসলে অবাস্তব জিনিস না। স্বপ্ন মানে হচ্ছে গন্তব্য। আমি কোথায় যেতে চাই, সেটা হল আমার স্বপ্ন।
প্রশ্নকর্তাঃ- পৃথিবীতে মানুষের সৃষ্টী হওয়ার পর থেকে, মানুষের সবথেকে বড় দুর্বলতা কি?
অধ্যাপকঃ- মানুষের সবথেকে বড় দুর্বলতা যদি হয় তা হল, আত্মবিশ্বাসের অভাব। সে যদি একবার ভেবে বসে আমি পারব না, সে আর করে উঠতে পারবেনা।
প্রশ্নকর্তাঃ- এই যে সমাজে শিক্ষার্থীদের ভেতর লেখা-পড়ার যে প্রতিযোগিতা, আমাদের ছোট ছোট বাচ্চারা স্কুলে যায় এবং সবসময় একটা পরীক্ষায়, লেখাপড়ায় ফার্স্ট হওয়ার অর্থাৎ competition এটি তৈরি হওয়ার কারণ কি?
অধ্যাপকঃ- এটি তৈরি হওয়ার কারণ হল, আমাদের অভিভাবক যারা মানে বাবা-মা তারা চান যে, আমরা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ হই। কিন্তু তারা জানেন না যে শ্রেষ্ঠ মানুষ কাকে বলে? শ্রেষ্ঠ মানুষতো প্লেটো, আইনস্টাইন, মহাপুরুষেরা। এটা তারা (আমাদের অভিভাবকরা) বুঝতে পারেননা। তার ফলে তারা মনে করেন যে, যত বেশি (তাদের সন্তানদের) মুখস্ত করাবে এবং নম্বর পাওয়াবে, তত বেশি সেই ছেলে বা মেয়ে বড় হবে। সব চাই চাই চাই, চাইনা এই কথাটি বলার মানুষ এখন আর নাই। অর্থাৎ সুখী হতে গেলে চাইনা বলতে শিখতে হয়।

প্রশ্নকর্তাঃ- আপনার টাকার প্রতি লোভ নেই কেন স্যার?
অধ্যাপকঃ- টাকা অনিশ্চয়তা বাড়ায়।
প্রশ্নকর্তাঃ- টাকা তো নিশ্চয়তাও দেয় কিছু কিছু ক্ষেত্রে।
অধ্যাপকঃ- টাকা, কিছুটা দরকার।
প্রশ্নকর্তাঃ- যাদের এর চেয়ে বেশি আছে তারা কি সবাই বিপদে আছেন?
অধ্যাপকঃ- হ্যাঁ, খুবই বিপদে আছেন, যেমন তোমার কাছে যদি একটা টাকাও না থাকে, তুমি অনায়াসে রাত্রিবেলায় রাস্তার ফুটপাতের উপর, একটা গাছের তলায়, নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে থাকতে পাড়বে। যত বেশি তুমি টাকা রোজগার করছ ততবেশি তোমার অশান্তি বাড়ছে, তুমি আক্রান্ত হচ্ছ।
প্রশ্নকর্তাঃ- স্যার আপনি কি, Young Generation কে টাকা রোজগারের পথ থেকে বিমুখ করছেন, নাকি তাদের বোঝাতে চাইছেন যে, টাকার দরকার নেই?
অধ্যাপকঃ- না, আমি বলছি যে, তোমরা টাকা রোজগার কর, সেইটুকু যেইটুকু দরকার, কিন্তু তোমার maximum রোজগার করো না। গাড়িতে থাকেনা মাইল মিটারে যে, ২০০ মাইল যাওয়া যায় (ঘণ্টায়), কিন্তু (ঘণ্টায়) ২০০ মাইল কেউ যদি যেতে চায় সে কি হবে তাহলে?
প্রশ্নকর্তাঃ- অ্যাকসিডেন্ট হবে।
অধ্যাপকঃ- সুতরাং আমাকে ৬০ মাইলে যেতে হয়, আমাকে ম্যাক্সিমাম ৭০ মাইলে যেতে হয়। এইটাই গাড়ির স্পীড।




প্রশ্নকর্তাঃ- আপনার মতে প্রেমের সংজ্ঞা কি?
অধ্যাপকঃ- প্রেমের সংজ্ঞা আমি দিতে পাড়বনা, তবে প্রেম কি করে হয় সেটা সম্পর্কে আমার একটা ধারণা আছে। একটা হিন্দি গান আছে- এ লেড়কা হায় আল্লা, কেইস্যা হে দিওয়ানা, কিতনা মুশকিল হে তবা ইসকো সমঝানা। ধীরে ধীরে ধীরে দিল বেকরার হোতা হে, হোতে হোতে হোতে প্যায়ার হোতা হে। প্রেম হচ্ছে একটা মধ্যবিত্ত সমাজের ব্যাপার। একদম গরীব, যে নির্মম জীবন সংগ্রামে প্রতিনিয়ত শেষ করছে, তার মধ্যে প্রেমের ছোয়া লাগে না। ওই পরিবেশটাই তার থাকে না।
আবার যে এক্কেবারে ধনী, অর্থে বিত্তে পরিপূর্ণ তার প্রেমের দরকারই হয়না। আমরা মধ্যবিত্ত থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছি। আশঙ্কা, না থাকার ভয় এইসব দিয়ে প্রেম তৈরি হয় না। সে কি এল সে কি এল না বোঝা গেল না বোঝা গেল না। প্রেম একটা নিবেদনের বিষয়, ভালবাসার বিষয়, গভীরতার বিষয় এবং পরস্পরের আত্মার সঙ্গে আত্মার একটা সংমিলনের বিষয়। এটি অনেক বড় একটা জিনিস।
প্রশ্নকর্তাঃ- স্যার আপনাকে টানে কোনটা বেশি? প্রেম!
অধ্যাপকঃ- হ্যাঁ, আমাকে প্রেম টানে। শুধু যে নরনারীর প্রেম তা না, সমস্ত কিছুর প্রেম। আমাকে একবার এক টেলিভিশন ইন্টার্ভিউ নিতে গিয়ে বলেছিল যে, আপনি একসময় এই কাজ করেছেন, একসময় ওই কাজ করেছেন, এক সময় সেই কাজ করেছেন। আমি বললাম দেখ ভাই, একদিন আমি একটা পাকা কন্দলের জন্য জীবন দিয়ে দিতে পারতাম, আজকে আর পাড়ি না। একদিন প্রিয়ার গালের কালো তিলের জন্য সমস্ত কিছু দিয়ে দিতে পারতাম, আজকে আর পাড়ি না।
প্রতি মুহূর্তে মানুষ পাল্টাচ্ছে। এখান থেকে ওখানে যাচ্ছে, ওখান থেকে ওখানে যাচ্ছে, এবং যখন সে যাচ্ছে তখন তার জীবন পাল্টে যাচ্ছে, তার চাওয়া পাল্টে যাচ্ছে, তার স্বপ্ন পাল্টে যাচ্ছে, তার আকুতি পাল্টে যাচ্ছে, শিশু ছিলাম শিশু থেকে কিশোর হয়েছি, কিশোর থেকে তরুণ হয়েছি, তরুণ থেকে যুবক হয়েছি, প্রবীণ হয়েছি বৃদ্ধ হয়েছি এখন আমি মারা যাব।
প্রশ্নকর্তাঃ- লিপস্টিক মেয়েদের ব্যবহারের কারণ কি?
অধ্যাপকঃ- (মেয়েরা) লিপস্টিক দেয়, সমস্ত মুখের সৌন্দর্যের সঙ্গে ঠোঁটকে একই ছন্দের মধ্যে নিয়ে আসতে।




প্রশ্নকর্তাঃ- স্যার মেয়েদেরতো নিজেদের আকর্ষণীয় করার অনেক পথ রয়েছে, কিন্তু ছেলেদের তো নেই, সেই কারণে ছেলেরা কি অভাগা?
অধ্যাপকঃ- না, ছেলেদের নেই নয়। ছেলেদেরও আছে। মেয়েরা এত সাজে কেন, কারণ ছেলদের মধ্যে প্রচণ্ড রূপ তৃষ্ণা আছে, সেইজন্য ছেলেদের আকৃষ্ট করার জন্য মেয়েরা সাজে। কিন্তু মেয়েদের চোখের মধ্যে ছেলেদের মত অতখানি রূপ তৃষ্ণা নেই, মেয়েদের মধ্যে রূপ তৃষ্ণা অত-প্রবল নয় বলে আমাদের (ছেলেদের) চেহারা, পোশাক, এত ordinary এই দিয়েই মেয়েদের চলে যায়। কিন্তু মেয়েদের অনেক রূপ না হলে পুরুষদের চলে না। সেইজন্য রবীন্দ্রনাথ বলেছেন- ‘অর্ধেক মানবী তুমি, অর্ধেক কল্পনা’
প্রশ্নকর্তাঃ- কোন পেশার মানুষকে আপনার হিংসা হয় স্যার?
অধ্যাপকঃ– হিংসা কেন হবে?
প্রশ্নকর্তাঃ- আমি হতে পারিনি (এই জন্য হিংসা)
অধ্যাপকঃ- না, আমি কি সব হওয়ার জন্য জন্মেছি পৃথিবীতে?




প্রশ্নকর্তাঃ- বর্তমান সময়ে স্যার, প্রেমে অনেকের বিচ্ছেদ হয়, বিরহ হয় যেটা আগে হত না, এত বিচ্ছেদ, বিরহের কারণ কি?
অধ্যাপকঃ- কে বলে হত না? বিরহ বিচ্ছেদের গান এখন কয়টা লিখা হয় কয়টা গাওয়া হয়? যত বিরহ, যত বিচ্ছেদ যত বেদনা যত যন্ত্রণা সব তো আগের গান। তখন ছিল বিরহ, তখন ছিল বিচ্ছেদ। লায়লা-মজনু বিচ্ছেদে শেষ হয়ে গেছে, আজকে আর শেষ হয় না, কারণ আজকে প্রেমও হয়না, আধা-প্রেম হয় এবং কিছুদিনের মধ্যে ব্রেক হয়।
আরও পড়ুনঃ-
স্বামী বিবেকানন্দ এবং চাণক্যের বাণী
জীবন বদলে দেওয়ার মত কিছু কথা
প্রশ্নকর্তাঃ- গাড়ির ব্রেকের সাথে এই ব্রেকের পার্থক্য কি?
অধ্যাপকঃ- গাড়ির ব্রেক (কষলে) থামে, এই ব্রেক চলে।
প্রশ্নকর্তাঃ– একজন উপস্থাপক তার সমালোচনাকে কিভাবে দেখবে?
অধ্যাপকঃ- সবচেয়ে বড় সৌভাগ্য হল সমালোচিত হওয়া, কারণ সমালোচনাই আমাকে জানিয়ে দেয় যে আমার কোথায় দুর্বলতা, অর্থাৎ আমাকে কি সংশোধন করতে হবে, কি আমাকে শুদ্ধ করে তুলতে হবে।
আর সেই মানুষই সবচেয়ে দুর্ভাগা যে সবসময় শুধু প্রশংসা শোনে। সে কোনোদিন জানতেও পাড়ে না যে তার অযোগ্যতাগুলি কি কি?
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের বক্তব্য গুলি ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না যেন! আর চাইলে আমাদের ফেসবুক পেজ এবং ফেসবুক গ্রুপে জয়েন হয়ে আপডেট থাকতে পাড়েন।
জীবন বদলে দেওয়ার মত কিছু কথা। জীবন বদলে দেওয়া উক্তি। মোটিভেশনাল উক্তি




কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।