আজকের ছোট ফানি গল্প তে ফন্দি ফিকির খাটাতে গিয়ে কিভাবে কিকির মিকির হয়ে গেছেন পটাশ বাবু সেই কর্মকাণ্ডের একটি মিউজিয়াম এ সাজিয়ে রাখার মত নমুনা দেখবেন।
ছোট ফানি গল্পঃ- “কুমড়োপটাশ”
দেখুন দিকি কি কান্ড ! বাড়ির বাইরে পাড়ার লোক জমা হয়েছে । এখন আমি কি করি ? ও গো , শুনছো ফেলফেলির মা- দরজা জানালা সব লাগিয়ে দাও । কেউ ইট ছুড়লে , ঘুরে পাটকেল না ছুড়ে চুপচাপ ঘর ঢুকে যাও…।।
কি কুনক্ষণে আমার বাপ যে তোমার সাতে বিয়ে টা দিয়েছিল । একটা দিনও শান্তি পেলাম না বিয়ের পর থেকে …।
বলো কি ? সেদিন যখন হ্যাংলার দোকান থেকে , চপ ধার করে এনে খাওয়ালাম , তখন তো বেশ বলছিলে- আহা কি শান্তি !
সেসব কি মিথ্যে ছিল কুমড়ো পটাশ তুমি কি আমার মন নিয়ে খেলতেসো ( হাও মাও স্বরে ক্রন্দনের আওয়াজে বাড়ী কেঁপে উঠলো)
কি বললে তুমি , ” কুমড়ো পটাশ” , আমাকে এই নামে ডাকার সাহস হয় কি করে ? আমার মা বাপ কত্ত যত্ন করে আমার নাম রেখেছিল ” কুমি ” আর ওই কুমড়ো নামে তুমি আমায় আরেকবার ডাকো, আমিই হবো তোমার খুনি।
বুড়ো বয়সে আদিখ্যাতা! যত্তসব! কাড়ার মতো কেঁদো না তো ।
এই যে ক্রন্দনরত পটাশ বাবু ওনার জীবনে অনেক দুক্কু, আর ওনার ইস্ত্রি মানে ধম্ম পত্নী কুমড়ো দেবী , সেই দুক্কুর মলম ।
ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন হলেও মানুষটি বেশ ভালো। যেমন ধরুন “সত্যি কথা বলতে গেলে ওনার হেচকি ওঠে তাই উনি সত্যির ধার ধারেন না “টাকার বিনিময়ে জিনিস কিনতে গেলে ওনার বুকের বামপাশে ব্যথা শুরু হয় তাই উনি ব্যথা এড়াতে টাকা এড়িয়ে যান।
নানান বেগুন থাকা সত্বেও তার গুন কিন্তু অনেক।নিজ স্ত্রী ছাড়া পর স্ত্রীর মুখপানে চেয়ও দেখেননা। সেই নিয়েই ঝামেলার সূত্রপাত ।
আগের দিন সন্ধ্যা বেলায় নিজ ধর্ম পেত্নী, ইয়ে মানে ধর্ম পত্নীর সাথে ঝগড়া করেন রাত্রের খাবার নিয়ে আর পেত্নী কে বলেন রাতের খাবার তিনি বাইরে থেকেই জোগাড় করবেন আর না জোগাড় করা অব্দি তিনি বাড়ি ফিরবেন না।
পড়ুনঃ- নতুন কয়েকটি হাসির গল্প
তাই নিজের প্রতিজ্ঞা রাখতে সোজা ভাঙ্গা ডাঙার রাস্তা দিয়ে হাঁটতে শুরু করলেন । বেচারা পটাশ বাবু দেড় কুইন্ট্যালের শরীর টাকে কোনরকমে বয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও শেষমেশ রাস্তার মাঝেই বসে পড়লেন আর হাও মাও করে কাঁদতে শুরু করলেন ” কুমড়ো কুমড়ো , ও কুমড়ো পটাশ বলে “। কিছুক্ষন পর ওই রাস্তা দিয়ে পেরিয়ে যাচ্ছিল একদল ছাপরি।
তাদের লাল চুল , ছেড়া জিন্স, ফাটা জামা আর গলায় হাতের কয়েকটা পোষ্য বেঁধে রাখার ন্যায় চেন প্রমাণ দিচ্ছিল তারা নির্ঘাত রাস্তার মোড়ে বসে টোন টিটকিরি করা ফন্দি ফিকির এর দল ।
তাদের মধ্যে থেকে একটি ছেলে এসে পটাশ বাবুর সম্মুখে বসে জিজ্ঞাসা করলো ” কি কাকা, এত রাত্রে রাস্তার মাঝে কুমড়ো কুমড়ো করে চিৎকার করছেন কেন?”
ছেলে গুলির পোশাক পরিচ্ছেদ দেখে পটাশ বাবুর মাথায় বুদ্ধি খেলে গেল। তিনি ভাবলেন যেভাবেই হোক এদের কাছ থেকে রাত্রের খাবার টা জোগাড় করতেই হবে। তাই আরো উচ্চঃস্বরে চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বললেন ” কি বলবো ভায়া , দুক্কুর কথা , আমি বড়ো নিরুপায় , বউয়ের মারের ভয়ে গৃহত্যাগী পুরুষ আমি , বড্ডো অসহায়।”
ছেলে গুলো বলে উঠলো , “চিল কাকা চিল, কাকিমার মুখে মারো ঢিল।”
বউয়ের নামে এমন কু মন্তব্য শুনে পটাশ বাবু রেগে গেলেও , রাগ হজম করে বলে উঠলেন- “বুঝতে পারছি বাবারা তোমাদের অবস্থাও ঠিক আমার মতই । কিসব ফাটা ছেড়া জামা কাপড় পরে আছো , তোমাদের জীবনেও অনেক কষ্ট তাই না , রাস্তায় থাকো বুঝি !”
ছেলেগুলো হাসতে হাসতে বলে উঠলো , “আরি কাকা , ইয়ে তো হাম লোগো কা স্ব্যাগ হ্যায় । মানে এটাই এখনকার স্টাইল কাকা , এটাই স্টাইল।”
পড়ুনঃ- হাসির গল্প- গ্যাস জ্ঞান
পটাশ বাবু আবার মুখ ভেংচি কেটে বললেন , “হুম যত্তসব ন্যাকা গিরি। তা বাপু যদি এতই স্টাইল ফ্যাশন দেখানোর যখন তোমাদের টাকা আছে। তখন আমাকে আজ রাত্তিরে দুটি ভোজনের জোগাড় করে দাও দিকি বাপু । বড্ডো খিদে পেয়েছে।”
ছেলে গুলো একে ওপরের মুখের দিকে চেয়ে কি বুঝলো জানি না , তবে তারা এরপর পটাশ বাবুকে পাড়ার সবচেয়ে দামী রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেলো । সেখানে পেট পুরে নিজে খাওয়ার পর বাকি খাবার টা গামছায় পুঁটলি বেঁধে যেই পটাশ বাবু বেরোতে গেছে , সেই দোকানী পুরো বিল এনে পটাশ বাবুর হাতে দিয়ে বলল , “স্যার বিল পে না করে কোথায় যাচ্ছেন ?”
পটাশ বাবু এক গাল হেসে পেছনে ইশারা করে দেখালেন “ওই যে ওরা দেবে।”
লোকটা রেগে বলে উঠলো , ” আপনি কি আমায় পাগল পেয়েছেন মশাই” কেউ কোত্থাও নেই আর আপনি ফাঁকা চেয়ার টেবিলের দিকে ইশারা করে বলছেন যে ‘ওরা দেবে।’
পটাশ বাবুর হাসি মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেলো। তিনি পিছনে ঘুরে দেখলেন একটাও ছেলে রেস্টুরেন্ট এর ধার পাশেও নেই । কাঁদো কাঁদো হয়ে বিলের কাগজ টা নিয়ে দেখলেন ৩ হাজার ৩৯ টাকা । চোখ গুলো বিড়ালের মত করে ড্যাব ড্যব করে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন- “এতো টাকার খাবার কখন দিলেন বাপু আমায় ?”
লোকটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বললো , “জোচ্চোর এর দল সব , কেন নিজেই তো গুষ্ঠি শুদ্ধু নাতি পুতিদের নিয়ে অ্যান্ডে পিন্ডে গিললেন এতক্ষন ধরে। তারাই তো বলে গেলো দাদু পুরো বিল টা দেবে। এখন মানতে অস্বীকার করছেন! দাড়ান ব্যবস্থা করছি আপনার।”
এই বলে ম্যানেজার কাছে লোকটা যেতেই পটাশ বাবু জীবন নিয়ে দৌড় দিলেন তার কুমড়োর কাছে।
পরের দিন সকাল থেকে সেই রেস্টুরেন্ট এর ম্যানেজার পাড়ার লোক জমা করে চিৎকার চেঁচামেচি করে পাড়া মাথায় করেছে বটে , তবে পটাশ বাবু ঘর থেকে এক পা ও বের হন নী । বোধয় আইনের লম্বা হাত ছাড়া পটাশ বাবুর নাগাল পাওয়া ওই ম্যানেজারের পক্ষে আর সম্ভব নয়।।
আলোরানি মিশ্র
হাস্যরসের পরিবেশনায়-
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
পড়ুনঃ- হাসির গল্প- বউ জব্দ অসাধারণ কয়েকটি ভালোবাসার গল্প দারুণ কয়েকটি শিক্ষণীয় গল্প
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- ফেসবুক Group - গল্প Junction ফেসবুক- ছাড়পত্র টেলিগ্রাম- charpatraOfficial WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)
ছোট ফানি গল্প। হাস্যকর মজার গল্প। 1 awesome bengali short funny story.
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।