দুটি প্রেমের গল্প থাকছে আজ। তবে প্রথমটি হল কষ্টের লাভ স্টোরি। প্রিয়জন ছেড়ে যাবার পড়ই যে আমাদের নিজেদেরই বড় অপরাধী মনে হয় তা রয়েছে প্রথম গল্পটিতে। আর দ্বিতীয়টি হল ভুতের সাথে প্রেম – কিন্তু নায়ক কিছুতেই বুঝতে পারেননি, যে তিনি ভুতের প্রেমে পড়েছেন, আবার তিনি ইতিমধ্যে বিবাহও সেরে ফেলেছেন।
কষ্টের লাভ স্টোরি- তুমি রবে নীরবেঃ-
ওপারে যে মেয়েটি কথা বলছিলো সে চুপ করে গেলো আর রথি রাস্তার ওপর পড়ে হাউ হাউ করে কাঁদতে লাগল আর তার মুখে শুধু একটাই কথা ,কেনো বলেছিলি তুই আমাকে যে “I am always with you…”
গত দুই বছর ধরে রথি মোহর কে আর মোহর রথিকে ভালোবাসে। প্রথম প্রথম সব ঠিক ছিল, তারা দু-জনেই একে-অপরকে খুব ভালোবাসত , কেউ কাউকে ছাড়া একটা মুহূর্ত থাকার কথাও ভাবত না। আস্তে আস্তে দিন যত পেরোতে থাকলো তাদের সম্পর্কে কোথাও যেনো একটা বিশ্বাস আর ভরসাটা কমতে থাকল। ২ জনই একে-অপরের ছোটো ছোট ভুল গুলো নিয়ে ঝগড়া করে দিনের পর দিন কথা না বলে আলাদা থাকতে শুরু করলো। কিছুতেই আর আগের মত সম্পর্কটা গড়ে উঠছিল না, তারা চেষ্টা করছিল কিন্তু একে অপরের কথা শুনে চলতে পারছিল না।
আর এরকম ঝগড়া এর মাঝেই ৩ দিন কথা ছিল না তাদের। ২ জনই এটা ভাবতে শুরু করলো যে সত্যি তারা একে অপরকে ছেড়ে খুশিতে আছে আর এভাবেই টানা ৭ দিন কথা নেই তাদের। রথি আর পারলো না, সে ভাবলো সত্যি এমন ঝগড়া তো আমাদের প্রায়ই হয়, তাই হয়তো এবার মহারানীকে আমাকেই আগের থেকে message করতে হবে আর রাগও ভাঙ্গাতে হবে।
WhatsApp এর হিস্ট্রি জানান দিচ্ছে তাদের শেষ কথা হয়েছিল 24 September রাত 9:58 pm তে। আজ ৭ দিন পর রথি whatsApp টা খুলে অবাক হয়ে গেলো, যে মোহর একটা দিন WhatsApp না খুলে থাকতে পারতো না সেই মোহর এর last seen কিনা 24 sep er 9 : 58 pm!
মুখে প্রকাশ না করলেও রথির মন ভেঙে পড়লো কিছু একটা ভয় এর আশঙ্কার ছাপ তার মুখে দেখা দিল। আর ফোনটা হাতে নিয়ে বলল আজ একবার কলটা তুলুক তারপর দেখাবো মজা মহারানিকে। কিন্তু টানা 17 বার কল 28 টা ম্যাসেজ এর পরও কোনো উত্তর না পেয়ে রথি অস্থির হয়ে পড়ল। তখন সে কল করলো মোহর এরই এক বান্ধবী কে। আর call টা তুলতেই রথি জিজ্ঞাসা করলো সোনাই কেমন আছো, আর বলছি মহারানী কে কল করে বা ম্যাসেজ করে কোনো উত্তর পাচ্ছি না। ও কি খুব রাগ করেছে!
সোনাই কাঁপা গলায় বলে উঠলো রথি দা তুমি কি কিছু জানোনা! রথি আঁতকে উঠলো। ‘জানিনা’ মানে কি হয়েছে কথা আঁটকে গেল রথির। একটা কান্নার আওয়াজ এলো, তার কিছুক্ষন পর সোনাই কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলো “রথি দা মোহর যে আর নেই” গত ৬ দিন আগে বিষ খেয়েছিল আর ওর ঘরের দরজা খোলা ছিল, কেউই বুঝতে পারে নি। পরের দিন ওর মা ওর ঘরে ঢুকে যে আর ও নেই!
এরপরেও সোনাই কিছু বলে যাচ্ছিল কিন্তু ওই কথা টা শোনার পর রথি আর কিছু শুনতে পাচ্ছিলো না। শুধু মনে পড়ছিল যে রথি বারবার তাকে বলতো যে, দেখ আজই আমি মরে যাবো, কিন্তু কোনোদিনও কিছু করেনি। আর তখন মোহর একটাই কথা বলত যেদিন আমি তোকে ছেড়ে চলে যাবো সেদিন তুই জানতেও পারবি না। কান্নাতে আছড়ে পড়লো রথি আজ সবকিছুই তার কাছে মিথ্যে। বারবার নিজেকে দোষ দিতে লাগলো যে, সব কিছুর জন্য আমিই দায়ী, আমি সেদিন Good bye না বললে হয়তো ও আজ আমার সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলত। কিন্তু তখন আর চাইলেও কিছু করতে পারতনা রথি!
গল্পটি পাঠিয়েছেন- আলোরানি মিশ্র
ভুতের সাথে প্রেম
গেস্ট হাউস থেকে বেরোতেই একটা ভিজে সকালের সঙ্গে মোলাকাত হয়ে গেল। মধুর এমন সকাল যে কতদিন দেখিনি! তখন সূর্য সবে আড়মোড়া ভেঙেছে। কিন্তু চোখ খোলেনি। ফলে ভিজে মাটির রস শুকোতে শুরু করেনি। টাওয়ারের সামনের মোরাম ফেলা রাস্তাটা আরও বেশি লাল। চারপাশের গাছগুলো প্রবল গরমের পরে ধারাস্নানে জল ছিটিয়ে চান করা শিশুর মতো সজীব। পাখিগুলো ডেকে চলেছে একটানা। একে কচি পাতা, তার ওপরে বৃষ্টির জলে লালধুলোর আস্তর ধুয়ে গেছে। জঙ্গল যেন সেই শাড়ির বিজ্ঞাপনের মতো, ছোট্ট টিপ, হালকা লিপস্টিক আর…। ঘুরতে ঘুরতে কখন বিকাল হয়ে গেছে বুঝতে পারিনি। গ্যেস্ট হাউজ ফিরবো তখনই টায়ার পাঞ্চার।
কি করব বুঝতে পারছি না, তখনই দেখা হল এক মেয়ের সঙ্গে। জঙ্গলে কাঠ ভাঙছে। কতই বা বয়স হবে? খুব বেশি হলে আঠেরো। সুন্দর একটা লালছাপা শাড়ি পরেছে। কানে ঝুমকো দুল। চোখে-মুখে ঘুমের আলতো রেশ। এমন শাড়ি পরে জঙ্গলে কাঠ ভাঙছে? হয়তো এটাই ওর একমাত্র শাড়ি। হয়তো কাল কোনও আত্মীয়ের বাড়ি গিয়েছিল। আজ কাচার পরে তুলে রাখবে।
আমি কিছু বলার আগেই মেয়েটা জিজ্ঞাসা করলো, ‘‘হরিণ দেখতে এসেছিস বাবু” ।
আমি বললাম “এখানে হরিন আছে নাকি”
উত্তর এল, ‘’গাদা ক্যানেলের পাশে মিলবে।”
আমি গাদা হরিণ দেখতে চাই না। একটি হরিণ হলেও চলবে। উৎসাহ নিয়ে বললাম “এখন হরিণের দেখা মিলবে!”
ও বললো ” আজতো পূর্নীমা দেখতে পাবি বাবু, হরিন অনেক “
বাইকের দিকে তাকিয়ে বললাম “না আজ থাক, বাইকের চাকা খারাপ হয়ে গেছে”
ও বললো “বাবু বন বাংলো তো অনেক দূর তুই যাবি কি করে? তুই থেকে যা আমাদের ঘরে। কাল মোর বাপ তোকে, তোর বাইক নিয়ে দিয়ে আসবে গরুর গাড়ি করে।”
রাজি হয়ে গেলাম। কারণ বেহিসাবি এসে পড়েছি এ জঙ্গলে এদিকে। মোবাইল ও কাজ করছে না। হরিন দেখলাম। রাতে যত্ন করে খাওয়ালো ও। ও বিছানা করে দিলো। ঘরের মেঝেতে নিচে বিছানা করলো। ওর বাবা ফেরেনি, এক ঘরে একটা যুবতী মেয়ের সাথে শুতে আপত্তি থাকলেও থাকতেই হবে। ঘরটা নিরাপদ বারন্দাটাতো নয়। লোকালয়ে অনেক দূর আমরা তাই লোক লজ্জার ভয় করে লাভ কি?
বেশ ঘুম এসেছিল , একটা সুন্দর স্বপ্ন দেখছিলাম। একটি মশার কামড় হাতুড়ি মেরে যেনো ঘুম ভাঙ্গলো। তারপর আর চোখে ঘুম আসলো না আমার, আসলে আমার চোখ পড়ল ওর ওপর। প্রদীপের আলোয় মাটির ঘর টায় একটা মায়াজাল করে রেখেছে রূপকথার মতো। অসতর্ক কাপড় সরে গিয়েছে ওর শরীর থেকে। ফর্সা উরু, একটা কালো জরুল, একটা কালো তিল নাভির খুব কাছাকাছি, ব্লাউজ এর হুক ছিঁড়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে যৌবন। আমার উসপাশে ওরও ঘুম ভাঙ্গলো।
ও আমার কাছে এসে গায়ে হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করল ” ভয়ের স্বপ্ন দেখেছিস নাকি” ওর ছোঁয়ার অজুহাত খুঁজতে আর দেরি হলো না। বুঝতে পেরেছিলাম আমি ওর জীবনের প্রথম পুরুষ। আমার জীবনে ও প্রথম নারী ছিলো না, তবু যেনো উৎসাহ শেষ হতে চায় না। কোনো কথা বাঁধা না মেনে বিয়ে করে ফেলাম ওকে পাহাড়ের উপর মন্দিরে। তিন দিন কেটে গেলো ওর বাবা ফিরলো না। আমাকে ওকে না নিয়ে ফিরতে হলো বাড়িতে।
চাকুরী বাকুরি করতে হবেই , আমি বলেছিলাম ” বিদেশে থেকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবো, তোমাকে। মাঝখানে শুধু মাস তিনেক। একটু কষ্ট করো।”
কথা মতো, তিন মাস পরে আবার গেলাম ওর কাছে, মা বাবার উপহার গুলো দিলাম ও খুশি। তবু ও এলো না। খুশির খবর ছিলো ওর বাপ সেদিন বাড়ি নেই বাবা এলেই ফিরবে। ও আমাকে বললো ওদের ঐ মাসে কি একটা ব্রত আছে তাই ওর যাওয়া হবে না।
আবার চার মাস পর নিজের গাড়ি নিয়ে হাজির হলাম জঙ্গলে। আগের বার ও অজুহাত দেখিয়ে ছিলো প্রেগন্যান্ট অবস্থায় গাড়ি ছাড়া, ওর অসুবিধে হবে। কিন্তু গাড়ি নিয়ে যাবার পথ জানিনা। তাই গেস্ট হাউজ এর ছেলেটাকে যেতে বললাম আমার সাথে। ও সব শুনে বলল “ও জায়গায় গেলে সবার গাড়ির টায়ার পাঞ্চার হয়ে যায়। ওখানেই গল্প শেষ হয়ে যায়। আপনার গল্পের গাড়ি বিনা টায়ারে অনেক দূর চলছে। এবার ভালোয় ভালোয় বাড়ি ফিরে যান। সকালে যাবেন নাকি পাহাড়ের উপর? সেখানে কোন মন্দির খুঁজে পাওয়া গেলে, না হয় আপনি নিয়ে যাবেন আপনার বৌকে। তবে আপনার এ ঘটনা নতুন নয়, নতুন এটাই যে আপনি জীবিত এবং অক্ষত।”
প্রেরক- ছাড়পত্রের নিয়মিত লেখক- মানব মণ্ডল facebook
আমাদের সাথে যুক্ত হন- ফেসবুক গ্রুপ- গল্প junction ফেসবুক-ছাড়পত্র WhatsApp group- ছাড়পত্র ২ টেলিগ্রাম- CharpatraOFFICIAL
“কষ্টের লাভ স্টোরি। ভুতের সাথে প্রেম। ভালোবাসার গল্প। bengali sad love story”
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।