আজ আমরা হাজির আরেকটি কষ্টের প্রেমের গল্প নিয়ে। এই প্রেমের গল্পটি হল স্কুল জীবনের প্রেমের গল্প। ব্যর্থ এক প্রেমিকার গল্প এটী। এই ব্যর্থ-প্রেমের-গল্প সম্পর্কিত মতামত আমাদের কাছে পৌঁছে দিতে ভুলবেন না।
কষ্টের প্রেমের গল্প।। স্কুল জীবনের প্রেম
কিছুতেই ফিজিক্সের একটা প্রশ্নের উত্তর আমি খুঁজে পাচ্ছিলাম না, বান্ধবীদের কাছে থেকে তাদের বই গুলি ঘেঁটেও কিছু কূলকিনারা করতে পারছিলামনা প্রশ্নটির। কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তর না হলে আমার চলবেনা। একরকম বাধ্য হয়েই গেলাম স্কুলের লাইব্রেরীতে। স্কুলের লাইব্রেরীতে আমি সচরাচর যাইনা, খুব দরকার না হলে আমার পায়ের ধুলো লাইব্রেরীতে পড়ে না।
লাইব্রেরীতে গিয়ে, ফিজিক্সের বইয়ে প্রশ্নের উত্তর খুজছি, কিন্তু না, কাজের কাজ কিছুই পাচ্ছি না, আমার প্রশ্নের উত্তর কোথাও নেই। মেজাজটা বিগড়ে গেল, এত বই কোনোটাই কাজের না, রাগের মাথায় দিলাম বইয়ের তাকে একটা ধাক্কা, তারপর আরকি যা হবার তাই হল, আমার সামনেই প্রায় একটা সারির ৩০০-৩৫০ বই হুড়মুড়িয়ে পড়ে গেল। এরকম শব্দে লাইব্রেরীয়ানও আসতে দেড়ি করল না, আমাকে দেখেই সে কি রকমের বকা দেওয়া শুরু করল রে বাবা। আমাকে শাসাতে থাকলেন যে আমার নামে হেড স্যারের কাছে নালিশ করবেন।
মুহূর্তের মধ্যে আমার রাগে লাল হয়ে যাওয়া মুখটা ভয়ে চুপসে গেল। আমি কি বলব কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আমি আমতা আমতা করে বলেছিলাম, “ভুল হয়ে গেছে, মাপ করবেন” কিন্তু আমার কথা আর শোনে কে? লাইব্রেরীয়ানের গলার আওয়াজ শুনে পরের সারি থেকে একটি ছেলে আমাদের দিকে এল, দেখে বেশ ভালোই মনে হল। সেই ছেলেটি এসে বলল- “স্যার ওর ভুল হয়ে গেছে, আসলে ভুলও নয় কোনোভাবে হাত গেলে বইগুলো পড়ে গেছে, প্লিজ কিছু মনে করবেন না” এটি শুনে লাইব্রেরীয়ান বললেন-“এতগুলি বই আবার সাজিয়ে রাখবেটা কে শুনি?” আমি বললাম-“আমি সাজিয়ে রাখব”
এটি শুনে লাইব্রেরীয়ান বলে গেলেন- “ভালো মতো সাজিয়ে রেখে দাও যদি ভালো চাওতো।“ এরপর লাইব্রেরীয়ান চলে গেলেন। আমি বই গুছোতে লেগে পড়লাম। এরপর আমি দেখলাম সেই ছেলেটাও আমার সাথে বই গুছোতে লেগে পড়েছে। এটি দেখে আমি বললাম-“আরে থাক থাক আমার জন্য তুমি কষ্ট করতে যাচ্ছ কেন? আমি বই গুলি ফেলেছি, তাই আমাকেই সাঁজাতে দাও।“
এটি শুনে সেই ছেলেটি বলল- “সাহায্য করতে তো আর কোনো বাঁধা নেই, বেশি কথা না বাড়িয়ে কাজ শুরু করা যাক, কিছুক্ষণ পর সব ঠিক-ঠাক করে সাজিয়ে রাখা হয়ে গেল। এবার ছেলেটি আমাকে বলল- “আমি দেখেছি তুমি নিজেই এই তাক টিকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছ, হয়ত রাগের চোটে, তা আমি কি জানতে পাড়ি এই রাগের কারণ কি, না মানে তেমন কিছু না, যদি কোনো হেল্প করতে পারতাম আরকি!
আমি আমার প্রশ্নটি তাকে বলতেই সে হেঁসে ফেলল। আমার আবার দারুন রাগ হয়ে গেল। যে প্রশ্ন খুঁজতে এত কিছু কাণ্ড ঘটে গেল সেই প্রশ্ন শুনে সে হেঁসে দিল, হু এমন ভাব দেখাচ্ছে যেন বিশাল বড় একটা, মনে হয় সব কিছু জানে! আমি মনে মনে বললাম।
এরপর সে যা বলল তা শুনে সত্যি আমি রীতিমত থ বনে গেছি। আমার সেই খুঁজে না পাওয়া প্রশ্নের উত্তর, সে একদম গড়গড় করে বলে দিল। আমার মুখ দিয়ে আর কোনো কথা বেড়িয়ে আসছিল না। এবার সেই ছেলেটি আমার ভীমরতি কাটিয়ে দিয়ে বলল- “এতেই চলবে নাকি আরও বলব।“ আমি বললাম-“আমি লিখে নিব, বলো কখন ফাঁকা আছ?” ছেলেটি বলল-“আজ টিফিনে স্কুলের মাঠের দক্ষিণ পাশের আম গাছের নীচে চলে এসো খাতা নিয়ে সেখানে না হয় লিখে নিও।“ আমি ঠিক আছে বলে লাইব্রেরী থেকে বেড় হতে শুরু করলাম। এই যা ধন্যবাদও জানালাম না, নামটাও জানলাম না, কোন ক্লাসে পড়ে সেটাও জানলাম না।
আবার লাইব্রেরীর ভীতরে গেলাম, কিন্তু এই কয়েক সেকেন্ডেই ছেলেটি যেন বেপাত্তা হয়ে গেল। এত সাহায্য করল অথচ ধন্যবাদ টুকুও জানালাম না, ইসস কি ভুলোমনা আমি! এরপর কোনো মতে বাকি দুটি ক্লাস করার পড়ে টিফিনের বেল পড়ার সাথে সাথেই সেই আম গাছের নীচে আমি খাতা নিয়ে চলে যাই।
কিছুক্ষণ পর সেই ছেলেটি আসতেই আমি বলে উঠি- “অনেক অনেক ধন্যবাদ,সাহায্য করার জন্য, আসলে তখন আমি ধন্যবাদ জানাতে ভুলে গিয়েছিলাম আর কি!” ছেলেটি বলল-“না এরকম কোনো ব্যাপার না, ধন্যবাদের থেকে বড় কথা হল তোমার সমস্যা টা, নাও লিখতে থাকো আমি বলতে থাকি”
বাঃ ছেলেটিতো পড়াশোনার ব্যাপারে দারুন সিরিয়াস। কেন জানিনা এখান থেকেই আমার সেই ছেলেটিকে ভালো লাগা শুরু হয়ে যায়। সেদিন সেই প্রশ্নটির উত্তর লেখার পর আরও অনেকক্ষণ গল্প করেছিলাম ছেলেটির সাথে, তার সাথে কথা বলে তার প্রেমে পড়ে গেছি আমি। তবে একটা ব্যাপার যেটা সেটা হল ছেলেটা আমার থেকে বড়। আমি তখন ক্লাস ১১-এ পড়তাম আর সে পড়ত ১২-এ।
তাকে যে আমার ভালো লাগে সেই কথা ভয়ে আর লজ্জায় বলা হয়নি কখনো। এরপর আমার পড়াশোনা সম্পর্কিত অনেক সমস্যার সমাধান করেছে সে। এমনকি আমি তাকে ফোন করেও সমস্যার সমাধান জেনে নিতাম। আর ফাকে ফাকে তার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কেও জানার চেষ্টা করতাম।
একদিন আমার ভালোবাসার কথা লুকিয়ে রাখতে না পেরে, তাকে sms এ বলেই ফেলি, সে কোনো উত্তর দেয়নি, শুধুমাত্র একটি হাসির ইমোজি দিয়ে দিয়েছিল। এরপর স্কুলে আর তার সাথে দেখা করার সাহস হচ্ছিল না, কিছুটা ভয় কিছুটা লজ্জা কাজ করছিল, সিনিয়র বলে কথা!
একদিন টিফিনের বেলায় সে আমাকে ডেকে বলে-“এখন আর কোনো সমস্যা হয়না নাকি!” কথাটি শুনে আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে হেসেছিলাম। এরপর সে আমার কাছে এসে বলে-“আচ্ছা ঠিক আছে, তোমার আবেদন গ্রহণ করা হল” ব্যাস আর কি! আনন্দ আমার মনে টগবগ করছে, খুব ফুর্তি করে বাড়ি ফিরেছিলাম সেদিন।
এরপর আমাদের প্রেমে পদার্পণ। আমি জানতে পাড়ি সে এর আগেও একজনকে ভালোবেসেছিল, কিন্তু সেই মেয়েটি তাকে ছেড়ে চলে গেছে, চলে গেছে বলতে সেই মেয়েটির বাবা পড়াশোনার জন্য দূরে পাঠিয়ে দিয়েছেন। তার মুখে এই কথাটি শোনার পর থেকে আমার কেমন জানিনা ভয় পেতে শুরু করে, যদি সেও আমাকে ছেড়ে চলে যায়, যদি ভেঙ্গে যায় এই বিশ্বাস, যদি ভেঙ্গে যায় এই একসাথে কাটানো মধুর স্মৃতিগুলি।
ইসস কত কিছু আবোল-তাবোলই না ভাবছি আমি, না এই সব সাত পাঁচ ভেবে কাজ নেই, বর্তমানকে নিয়ে চলাই ভালো।
পড়ুনঃ- অপরিপূর্ণ ফেসবুকের প্রেম
দেখতে দেখতে তার উচ্চমধ্যমিক পরীক্ষাও শেষ হয়ে গেল। এবার সে বাইরে BBA পড়তে যাবার কথা ভাবছে। কেন জানিনা মনটা হঠাৎ করেই ভয় পেয়ে গেল, এই ভয় বিচ্ছেদের ভয়, এই ভয় প্রিয়জনকে হারানোর ভয়।
আমি শুনেছি, long-distance relationship গুলি অনেক ভালো হয়, মজবুত হয়, এর প্রমান আমার পরিচিত দুই বন্ধু-বান্ধবী, একজন থাকে কলকাতায় তো আরেকজন থাকে প্রায় ৫৯০ কিলোমিটার দূরে জলপাইগুড়িতে। অনেকদিন পর পর তাদের দেখা হয়, তাদের দুইজনকে দেখে আমার মনে হয়, ভগবান বুঝি এদের জুটি আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছেন, কি কিউট এদের রিলেশন, হয়ত আমার বেলাতেও তাই হবে। কিন্তু যদি না হয়!
না আমি অনেক বড্ড বেশি ভাবছি। অবশেষে সেই ছেড়ে যাবার দিনটি চলে এল, নিজের অজান্তেই চোখের কোণায় জল চলে এসেছিল, আমার হাত ধরে সে বলেছিল-“যাওয়ার সময় কাঁদতে নেই, বোকা মেয়েটি, আমি কিছুদিন পড়ে আবার তোমার কাছে দেখা করতে আসব, শুধু তোমার জন্যই আসব।“
অনেকটা ভরসা পেয়েছিলাম তার কথাতে।
যাওয়ার কয়েকদিন পরেই সে তার মোবাইল নাম্বার বদলে নেয়, আমি কল করলে বারবার সুইচ অফ বলছিল, ভেবেছিলাম সে আমাকে ফোন করবে কিন্তু না, আজ প্রায় ৫ বছর হতে চলল সে যে গেল আর ফিরে এল না, এমনকি কোনো কলও এলনা। যেই বাসস্ট্যান্ডে আমাদের শেষ দেখা হয়েছিল, সেই বাসস্ট্যান্ডের পাশ দিয়ে গেলে এখনও আমার পা থমকে দাঁড়ায় দূরগামী বাসগুলির দিকে আমার চোখ চলে যায়, হয়ত সে ফিরে আসছে এই আশায়, ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতাম একসময় স্ট্যান্ডে।
বিষাদভরা মন নিয়েই একসময় বাড়ি ফিরে আসতাম, মনে আশা ছিল সে ফিরে আসবে, কিন্তু সেই আশা আশাই থেকে গেল। হয়ত সে ফিরে গেছে তার প্রাক্তনের কাছে, হয়ত সে ফিরে পেয়েছে তার হারানো প্রেম। আর আমার প্রতি তার প্রেম, সেটা পুরোটাই অভিনয়, পুরোটাই ছেলেখেলা।
একজায়গায় পড়েছিলাম, যে সম্পর্ক ৫ বা ৭ বছরের বেশি পুরানো সেগুলি টিকে থাকার সম্ভাবনা অনেক বেশি। কিন্তু আমাদের প্রেম তো সদ্য অঙ্কুরিত প্রেম। একবছরও ছিল না আমাদের প্রেমের বয়স, তা তো বিচ্ছেদ হওয়াটাই স্বাভাবিক, এই কথাটি ভেবেই চোখের জল মুছে আগন্তুক বাসগুলিকে উপেক্ষা করেই আবার বাড়ি ফিরে আসি, সুখে থাকুক সে তার প্রাক্তনকে নিয়ে। আর তার প্রতি আমার যে ভালোবাসা সেটা না-হয় মিশেই যাক চোখের জলে।
আমাদের টেলিগ্রামে আড্ডা দেওয়ার গ্রুপ :- https://t.me/charpatraOfficial
আরও পড়ুনঃ- প্রথম প্রেমের গল্প
চাইলে তুমিও লিখতে পাড়ো আমাদের সাথে । আমাদের লেখা পাঠানোর জন্য এই পেজের একটু নীচে দেখ লেখা আছে “আপনার লেখা প্রকাশ করুন” সেখানে প্রেস করলে অনায়াসেই তোমার লেখা আমাদের পাঠাতে পারো। আমাদের গল্পের ফেসবুক পেজ গল্প আর গল্প-তে মেসেঞ্জারেও পাঠাতে পারো তোমার লেখা।
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।