প্রেম বা ভালোবাসার ক্ষেত্রে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল একে অপরকে বুঝতে পারা। সেটি যদি একবার হস্তগত হয়ে যায় তাহলে একে অপরকে মানিয়ে নেওয়ার দিকটা সহজ হয়ে উঠে।

একে অপরকে বুঝতে পারার গল্পঃ- “উন্মোচন”

কি গো চুপ করে গেলে যে , কিছু বলবে না!

“কি বলবো ? বলার মতো কিছু উত্তর পাচ্ছি না , আসলে মাঝে মাঝে প্রশ্ন গুলোই এমন হয় , যেগুলো অবাক করে দেয়। উত্তর দেওয়া তো পরের কথা প্রশ্নটার মানে খুঁজে বের করা কঠিন। ” কথাটা বলেই রাজা চুপ করে গেল। প্রীতি বেশ বুঝতে পেরেছে , রাজা খারাপ লাগা গুলোকে খুব সহজে হজম করে নিতে পারলেও , প্রীতির বলা ছোট ছোট কথা গুলো ওর ওপর মারাত্মক ছাপ ফেলে।

এই রাজা আর প্রীতির সম্পর্কটা সচরাচর বর্তমানের আর পাঁচটা প্রেমিক প্রেমিকার সম্পর্কের মতো নয়। .দুই জনেই প্রেম বিরোধী , লক্ষ্য প্রিয় , বাস্তব বাদি, কঠোর ধরনের মানুষ। তবে ওরাও যে একে অপরের সাথে সম্পর্কে জড়াতে পারে , তা কল্পনাতীত। ওদের গল্পটা বেশ অন্য স্বাদের। কি জানতে চান আপনারা, তাহলে কিছুক্ষণ থেকেই যান আমার সাথে।।

প্রীতি তখন দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী , সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি প্রথম থেকেই আগ্রহ টা কম বলে ও ফেসবুক বা অন্যকিছু করতো না। কলেজের শুরু থেকেই জীবনের লক্ষ্য পূরণ করার জন্য নিজেকে তৈরি করতে শুরু করেছিল।

এদিকে রাজা প্রীতির থেকে দুই বছরের সিনিয়র। সেও নিজের ভবিষ্যত নিয়ে যথেষ্ট সজাগ। তাই সেও তার লক্ষ্য পূরণ এর পাশাপাশি একটি সাইট এর কর্ণধার ।

একে অপরকে বুঝতে পারার গল্প
একে অপরকে বুঝতে পারার গল্প

প্রীতি প্রায় সই , সেই সাইটে নানান ধরনের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করত। আর আলোচোনাতেও অংশ নিতো। আর খুব অবাক হতো , যেকোনো প্রশ্নের উত্তর সেই কর্ণধারের কাছে পাওয়া যেত। তাই মনে মনে কোথাও যেন একটা শ্রদ্ধা জন্মেছিল তার প্রতি।
দিন যত যেতে থাকে রাজা ও প্রীতির আগ্রহ দেখে যথেষ্ট অবাক হতে থাকে। এরপর আর e mail মারফত নয় সরাসরি wp নাম্বার আদান প্রদানের মাধ্যমে , উভয়েই কথা বলার সূত্রপাত হয়।

আর সেই কথা বলায় পড়াশোনা বা বাহ্যিক বিষয়ে জানার বাইরেও প্রীতি , রাজার ব্যক্তিগত জীবন সম্বন্ধে জানতে আগ্রহী হয়ে উঠে। রাজাও কোনোরূপ সংকোচ না করে অদ্ভুত ভাবেই নিজের জীবনের ছোট বড় সব ঘটনা প্রীতির সাথে শেয়ার করতে শুরু করে।

একে অপরকে দাদা , বোন বলে সম্বোধন করতো ওরা। তবে প্রীতির বারেবারে মনে হতো না , দাদা নয় এটা অন্য কিছু । সত্যিই যদি সে দাদা হয় তাহলে তার একটা রিপ্লাই এ এতটা খুশি হয় কেন? তার সামান্য ছোট কথা গুলোতেও এতটা কষ্ট পায় কেন? আর কষ্ট পেয়ে মন খারাপ হলে , আমার দেখে তার দ্বিগুণ মন খারাপ হয়ে যায় কেন ? তবে কি সম্পর্কটা অন্য দিকে মোড় নিচ্ছে ? না না হতেই পারেনা । সে শুধু মাত্র আমার দাদা , অন্য কিছু নয়।

তবে মন কে ঘোড়ার সাথে তুলনা করে লাভ নেই , কারণ ঘোড়ার লাগাম টানা গেলেও মনের লাগাম টানা সম্ভব নয় । তাই হলো প্রীতির সাথেও, সারাদিন মাথায় শুধু রাজার ভাবনাই চলতে থাকে। রাজার ম্যাসেজে দিন শুরু আর রাজার ম্যাসেজেই ওর রাত্রির সমাপ্তি ঘটে। রাজাও প্রীতির প্রতি অদ্ভুত রকমের দুর্বল হতে শুরু করে। একে অপরকে কয়েকমাস ধরে চিনতে জানতে পারার পর বুঝতে পারে ওরা একে অপরের পরিপূরক। তবে মুখ ফুটে বলার সাহস কারুর হয়না। বলার আগে হারাবার ভয় মাথা চাড়া দিয়ে উঠে ।

তবে হঠাৎ একদিন রাজার সকাল থেকে খুব মন খারাপ হলে প্রীতি সারাদিন এক চিলতে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করে রাজার মুখে। তবে সেদিন রাজা না হাসলেও তার মনের হাসি সত্যি ফুটেছিল ।

অনেক দিন চেপে রাখার পর একদিন কথায় কথায় প্রীতি বলেই ফেলে রাজাকে , সে তাকে ভালোবাসে । রাজাও আগ্রহ ভরে তাকে নিজের জীবনসঙ্গী রূপে কাছে টেনে নেয়। যদিও প্রীতি ভাবেনি কোনোদিন , রাজা এই প্রস্তাবে রাজি হতে পারে বলে , তবে পরে সে জানতে পারে , সে একা নয় , রাজাও তাকে আগে থেকেই ভালোবাসতো। কিন্তু হারাবার ভয়ে কোনোদিনও বলতে পারেনি।

একে অপরকে মানিয়ে নেওয়ার গল্প
একে অপরকে মানিয়ে নেওয়ার গল্প

এভাবেই লক্ষ্য পিপাসু দুটি প্রাণ একে অপরের সাথে জুড়ে গিয়ে একে অপরকে লক্ষ্য বানিয়ে নতুন পথ চলা শুরু করে। না কোনোদিনও ওরা একে অপরকে সামনে থেকে দেখিনি , না সামনে চোখে চোখ রেখে বলেছে ঠিক কতটা ভালোবাসে , “স্থান গত দূরত্বটা অনেক অনেক হলেও মনের মিল এর কাছে তা তুচ্ছ ” সেটা তারা প্রমাণ করে দেখিয়েছে। উন্মোচন ঘটেছে দুটি সুপ্ত মনের যা দিয়ে গড়ে উঠেছে এক নতুন পৃথিবী।

দেখা করার কোনোরূপ সুযোগ নেই বলেই এই ম্যাসেজ আর কল টুকু ওদের ভরসা। আর এই ম্যাসেজেই প্রায় সময় খুনসুটি লেগেই থাকে। তবে দিন শেষে একে অপরকে আকড়ে ধরেই নতুন দিনের শুরু করে ওরা। আর আজ সেই প্রীতির কথাতেই রাজার এত মন খারাপ , তবে সেই খারাপ লাগার ওষুধ সে নিজেই। তাই ঠিক মানিয়ে নেবে তার রাজাকে, কারন কি জানেন ?

দূরত্ব , ব্যস্ততা , অজুহাত , জেদ , অহংকার , বিরক্তিবোধ এগুলো যেকোনো একটা মধুর সম্পর্ককে নিমেষে শেষ করার ক্ষমতা রাখে। তবে রাজা প্রীতির সম্পর্কে আর যাই হোক এগুলো নেই। একে অপরকে সবসময় মানিয়ে চলার চেষ্টা করে। তবে দুই তরফা এরূপ মনোভাব টিকে থাকলে অবশ্যই একদিন ওরা প্রমাণ করবে … ” ভালোবাসার মতো করে ভালোবাসতে পারলে ভালোবাসার জয় অবশম্ভাবী”

পড়ুনঃ-  হারানো ভালোবাসা ফিরে পাওয়ার গল্প 

একে অপরকে মানিয়ে নেওয়ার গল্পঃ-

নিরা আর শুভ্র দুইজনেরই প্রেম নামক জিনিসটাতেই । হুম ভীষণ রকমের এলার্জি। এমনকি তারা ঠিকও করে নিয়েছে যে, তারা কখনোই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে না। আপনি হয়ত ভাবছেন নিরা আর শুভ্র পূর্ব থেকেই পরিচিত। উহু মোটেও তা নয়। কেউই একে অপরকে চিনত না প্রথমে।

তাদের পরিচয়টা হয় একটি টেলিগ্রাম গ্রুপের মাধ্যমে। শুভ্র আগাগোড়া মেয়েদের ইগনোর করে আসছে। অন্যদিকে নিরারও ছেলেদের প্রতি রয়েছে অদ্ভুত এক এলার্জি। গ্রুপে একদিন কথা হচ্ছিল একটি বিষয়ে। নিরার কি মনে হল, সে শুভ্র কে পার্সোনালি ম্যাসেজ করে বসল। জানতে চাইল কিছু। কিন্তু শুভ্র নিরার প্রশ্ন ছাড়া আর বাড়তি কোন কথা বলেনি।

এইভাবে বেশ কয়েকবার তাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। ধীরে ধীরে নিরার মনে জায়গা করে নিতে থাকে শুভ্র। কিন্তু অন্যদিকে শুভ্র আগাগোড়া নিরা কে ইগনোর করেই আসছে। সে যেন বাড়তি কোন আলোচনায় যেতে চাইছে না।

কিন্তু তবুও শুভ্র নিরা কে ইগনোর করতে থাকে। নিরা যখনই কোন ব্যক্তিগত বিষয়ে জানার চেষ্টা করত শুভ্র হুট করেই, এখন রাখছি বলে রেখে দিতে থাকে।

একদিন সকাল থেকেই শুভ্রর মাথা টা বেমালুম চটকে আছে। সকালে নিরা কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে বসে শুভ্র কে। অদ্ভুত ভাবে সেই সব প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রথম বারের জন্য শুভ্রর মনে হয়, সত্যি এরকম কাউকে তার দরকার যে প্রতিক্ষণ তার খবর রাখবে, তার কেয়ার করবে।

এরপর তাদের মধ্যে কথা বারতে থাকে। ধীরে ধীরে পার্সোনাল ব্যাপার নিয়েই আলোচনা হওয়া শুরু হয় ওদের। বাড়ি কোথায় বাড়িতে কে কে আছে ইত্যাদি ইত্যাদি। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি টা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, একদিন কথা না বললে উভয়েরই মন খারাপ হয়ে যেতে থাকে।

প্রথম প্রেমে পড়ার গল্প
প্রথম প্রেমে পড়ার গল্প
<

এইভাবেই কেটে গেল প্রায় ৯ টা মাস। এই নয় মাসে তাদের মধ্যে বেশ রাগারাগিও হয়েছে, অনেকটাই বুঝে গেছে তারা একে অপরকে। নিরার করা পাগলামি গুলো শুভ্রর খুব ভালো লাগত। একে অপরের রাগ ভুলাতেও শিখে গেছে তারা। প্রায় ১০ মাসের মাথায় একদিন নিরা ইনডাইরেক্টলি শুভ্র কে তার ভাললাগার কথা বলে দেয়। শুভ্র যেন আগে থেকেই রেডি ছিল, সে এক কথাতেই রাজী হয়ে যায়।

এরপর শুরু হল, তাদের নতুন ভাবে পথ চলা, নতুন ভাবে একে অপরকে বোঝা। তাদের মধ্যে মাঝে মাঝেই কথা কাটাকাটি হতে থাকে, কিন্তু তারা কখনোই একে অপরকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবতে পারে না। নিরার রাগ হলে শুভ্র তাকে ভোলায়, আর শুভ্র রাগ করে বসে থাকলে নিরা তাকে ভোলায়। আবার কখনো দুইজনে রাগ করলে একে অপরকে বোঝায়। কিন্তু কেউই কখনোই রাগ করে কথা বন্ধ করে না। কারণ তারা ভালভাবেই জানে যে, তারা একে অপরকে কতটা চায়।

শুভ্রর সমস্যা হল সে মাঝে মাঝেই খুব ইয়ার্কি করে বসে, আর কখনো কখনো এই ইয়ার্কি গুলি নিরার দারুণ খারাপ লেগে যায়। রাগ করে বসে থাকে নিরা। শুভ্র শান্ত গোপালের মত নিরাকে বোঝাতে গিয়ে আবিস্কার করে যে, শুভ্রর বলা ছোট ছোট কথা গুলিও নিরার কাছে অনেক বিশাল। শুভ্র নিরাকে আশ্বস্ত করে যে, আর কখনোই সে এরকম টি করতে যাবে না।

দুইজন মানুষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হলে তাদের মধ্যে দূরত্ব বারে কিন্তু অদ্ভুত ভাবেই নিরা আর শুভ্রর প্রতিটি কথা কাটাকাটি তাদের দুইজনকে আরও কাছে নিয়ে আসে। কারণ তারা বেশ ভালো ভাবেই জানে যে একে অপরকে তারা কতটা চায়।

আজ ওদের নিয়ে এত কথা বলছি কেন জানেন! আজ ওদের সম্পর্কে আসার এক মাস পূর্ণ হল। আর সেই নিয়েই তাদের দুইজনকেই অনলাইনে দেখলাম। তাই মনে পড়ে গেল তাদের এই সুন্দর সম্পর্কের কথা। 

অসিলো 💕

লেখাটির সততায়-
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে। 

সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।

পড়ুনঃ- 

এক তরফা ভালোবাসার গল্প- কলেজের সেই মেয়েটি 

বন্ধুত্ব থেকে প্রেমের গল্প 
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

একে অপরকে বুঝতে পারার গল্প। একে অপরকে মানিয়ে নেওয়ার গল্প। প্রথম প্রেমে পড়ার গল্প

Spread the love

Leave a Reply