বেদনাদায়ক হলেও পৃথিবীর সবথকে সুন্দর ভালোবাসার গল্প গুলি হল একতরফা ভালোবাসা গল্প গুলি। কেননা এই গল্পে আপনার প্রিয় জনকে হারানোর কোন ভয় থাকে না। আবার গল্পটিও নিজের মত করে লেখা যায়, হুম একদম নিজের মত করে সাজিয়ে গুছিয়ে।।
একতরফা ভালোবাসা গল্পঃ- ‘কলেজের সেই মেয়েটি’
কলেজ জীবনের প্রথম থেকেই নিকিতা আমার কাছে বিশেষ একজন ছিল। সে যেদিন আসত না, সেদিন তাকে অনেক মিস করতাম। অনুভব করতাম তার অনুপস্থিতি। হয়ত ভাবছেন নিকিতা আমার প্রেমিকা! কিন্তু না, নিকিতা আমার প্রেমিকা নয়। সে হল আমাদের ইতিহাস বিভাগের একজন ছাত্রী। প্রথম যেদিন তাকে কলেজে দেখেছিলাম সেদিনই তার প্রতি দুর্বল হয়ে পরেছিলাম। কিন্তু সমস্যা কি জানেন!
আমি কখনো তাকে আমার মনের কথা বলি নি। এমনকি প্রথম প্রথম কোনদিন তার সঙ্গে নিজে থেকে কথাও বলি নি। ভয় হত প্রচণ্ড ভয় হত! তাই আমার প্রেমের গল্পটিও একতরফা।
বেশ মনে আছে নিকিতার চুল এই কোমর পর্যন্ত আসত। তার সেই সুন্দর মাঝারি লম্বা মুখ। দুই চোখের কাজল, আর তার সরু ভ্রু এর মাঝে একটা কালো টিপ সর্বদা আমাকে আকর্ষিত করত।
আমি আগে কলেজে তেমন যেতাম না, কিন্তু যেদিন প্রথম তাকে দেখলাম সেদিন থেকে মনে হয় না যে খুব একটা কলেজ মিস করেছি। নিকিতা পড়াশোনার দিক থেকে অনেক ভাল ছিল, আর অন্যদিকে আমি কোনমতে টেনে টুনে পাশ করা এক ছাত্র!
তার প্রতি অনেক দুর্বল হয়েও মনের কথা তাকে না বলার মূল কারণ হল ভয়। হ্যাঁ ভয় হত, যদি সে গোটা ক্লাসের সামনে আমাকে অপমান করে! যদি সে প্রফেসরদের সবকিছু বলে দেয় আর আমাকে কলেজ থেকে বেড় করে দেয়! আবার সে যদি তার বাড়িতে বলে দেয় অথবা আমার বাড়িতে বলে দেয় তাহলে আমি আর আস্ত থাকব না।
সবসময় আমার মাথায় ঘুরত একটাই চিন্তা, কিভাবে নেহার নজরে নিজেকে আনা যায়! আর এই চিন্তার সমাধান হিসেবে আমি পেয়েছি একটাই উপায়। আর সেটা হল পড়াশোনা। হ্যাঁ একদম ঠিক পড়েছেন। আমি চেয়েছিলাম আমিও অনেক ভাল রেজাল্ট করব। ইতিহাস বিভাগের সবার নজরে আনব নিজেকে।
বেশ জমিয়ে পড়াশোনা শুরু করেছিলাম। সবার নজরে আসতে বেশিদিন সময়ও লাগল না। দুটো সেমিস্টার পেরিয়ে যেতেই নিজেকে সেরা প্রমাণ করেছিলাম। ইতিহাস বিভাগের সবাই অবাক হলেও, মন ভাল নেই নিকিতার কারণ এতদিন সেইই বিভাগের মধ্যে সেরা হয়েছিল।
নিকিতার মন খারাপ দেখে আমারও মনটা খারাপ হয়ে যায়। এর পর থেকে আমার পারফরম্যান্স আবার কমতে থাকে। খুশি হল নিকিতা কে দেখে। কারণ সে ডিপার্টমেন্টের সেরা হয়েছে তাই সে অনেক খুশি।
এইভাবেই চলল সব কিছু। এদিকে আমি কিছুটা হলেও নিকিতার নজরে এসেছি। কারণ একদিন সে যেচে আমার সাথে কথা বলতে এসেছে। সে আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল- “তোমার রেজাল্ট হঠাৎ করেই খারাপ হল কেন!”
আমি এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারি নি। কারণ আমার বলার ক্ষমতা নেই যে, কার জন্য আমি ইচ্ছে করে রেজাল্ট খারাপ করছি।
এরপর থেকে মোটামুটি কথা বলা শুরু হয় আমাদের। এরই মাঝে আসে চকোলেট ডে। সে আমাকে একটি চকোলেট দিয়ে হ্যান্ডশেক করে হেসে হেসে বলেছিল, হ্যাপি চকোলেট ডে।
এই সবের পর থেকে তার প্রতি আমি আরও বেশি দুর্বল হতে শুরু করি। রাতে ঘুম আসত না, নানান চিন্তায়। অনেক অনেক স্বপ্ন দেখতাম আমি নিকিতা কে নিয়ে। অনেক অনেক কল্পনার ছবি আঁকতাম মনের খাতায়।
আমি ভেবেই নিয়েছিলাম যে, একদিন তাকে আমার মনের কথা বলে ফেলব। সেও রাজী হয়ে যাবে। এরপর পরিবারের সম্মতি নেওয়ার চেষ্টা করব। আর যদি সম্মতি না মেলে দুইজনে এমন কোন জায়গায় চলে যাব যেখানে কেউই আমাদের খুঁজে পাবে না।
অনেক অনেক স্বপ্ন দেখতাম ওকে নিয়ে আমি লং ড্রাইভে গেছি। পাহাড়র ঘন কুয়াশার মাঝে ওর হাত ধরে হারিয়ে যাচ্ছি। বসন্তে সব গাছে যখন ফুল ফুটেছে আর ফুল গুলো ঝরে ঝরে পরছে ও আর আমি মিলে সেই ফুল গুলোর মধ্য দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি।
এদিকে দেখতে দেখতে চলে এল ফাইনাল সেমিস্টার, অর্থাৎ কলেজ জীবনের অন্তিম পর্যায়। আমি ভেবেই নিয়েছিলাম যে শেষ পরীক্ষার দিন ওকে আমি আমার মনের কথা বলেই ফেলব। কারণ এর পর আমাদের দূরত্ব বারবে, একটু যে কথা হত সেটাও বন্ধ হয়ে যাবে। এমনকি ওর ফোন নাম্বারও আমার কাছে নেই যে, ওর সাথে আমি কথা বলব।
বাজার থেকে একটি ফুলের তোরা কিনে নিয়ে গিয়েছিলাম শেষ পরীক্ষার দিন। তার আগের রাতে প্রপোজ করার বিভিন্ন ধরন আর কিভাবে প্রপোজ করতে হয় সেই বিষয়ে বিস্তারিত সার্চ করেছিলাম ইন্টারনেটে।
পড়ুনঃ- অপরিপূর্ণ ফেসবুকের প্রেম!
অন্য রুমে বসে দুইজন পরীক্ষা দিচ্ছিলাম। পরীক্ষা শেষে দেখি নিকিতা রুম থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছে, আমিও তাড়াতাড়ি সব কিছু গুছিয়ে তার পিছনে হাঁটা শুরু করি। সে কলজের গেট টা ক্রস করল। আর আমিও তার পিছনে।
কিন্তু মুহূর্তে তাকে নিয়ে বোনা স্বপ্ন গুলি চুরমার হয়ে গেল। আমি দেখলাম নিকিতা একটি ছেলের বাইকে গিয়ে বসল। প্রথমে ভেবেছিলাম ছেলেটা হয়ত ওর ভাই অথবা দাদা হবে। কিন্তু ওদের হাবভাব দেখে বুঝতে বাকি রইল না যে, ওরা রিলেশনে আছে।
পরিষ্কার মনে আছে, ওরা চলে যাবার পরও কিছুটা সময় সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। সব কিছু মুহূর্তে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল।
নিকিতার জন্য কিনে নিয়ে আসা সেই ফুলের তোরা টি, বাড়ির ফেরার সময় কলেজের প্রফেসর কে দিয়ে এসে বললাম- বিদায় নিচ্ছি স্যার ভাল থাকবেন।
এইভাবে হঠাৎ নিকিতা কে হারিয়ে অপ্রকাশিত রয়েই গেল ওর প্রতি আমার প্রেম। অবশ্য আমি এখনও রাত জাগি। তাকে নিয়ে যে সব স্বপ্ন গুলো দেখতাম, কল্পনার দুনিয়ায় সেগুলোকে নিজের মত করে রূপ দিই। আর নিকিতা কে কাছে না পেয়েও কল্পনার দুনিয়ায় আমি তার অনেক কাছের হয়ে আছি।
পৃথিবীর কারও ক্ষমতা নেই আমার এই কল্পনার দুনিয়া থেকে নিকিতা কে কেড়ে নিয়ে যাবে। আর সবথেকে মজার ব্যাপার কি জানেন! এই কল্পনার দুনিয়ায় লেখা নিকিতা ও আমার গল্পটা আমি নিজের মত করে সাজাতে পারি, নিজের মত করে রূপ দিতে পারি, নিজের মত করে গোছাতে পারি আর এই ভাবেই এই কল্পনার দুনিয়ায় আমি তাকে আরও কাছের করে পেয়ে বসি। আর এগুলিই তো একতরফা ভালবাসা গুলির পূর্ণতা স্বরূপ।
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
পড়ুনঃ-
মধ্যবিত্তের প্রেম- স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা
আমার প্রথম প্রেমের গল্প
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে-
ফেসবুক Group - গল্প Junction
ফেসবুক- ছাড়পত্র
টেলিগ্রাম- charpatraOfficial
WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)
একতরফা ভালোবাসা গল্প। একতরফা প্রেমের গল্প। bengali one sided love story
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।