সাধারণ একজন ভাল ছেলে কিভাবে ধীরে ধীরে একটি নষ্ট ছেলের গল্প তকমা পেল, সেই ক্যানভাসেই গল্প টিকে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখিকা।

একটি নষ্ট ছেলের গল্প:- ‘আর্টিস্ট’

রং নিয়ে খেলাটা আমার ছোট থেকেই একটা বদঅভ্যাস। হ্যাঁ সত্যি ! কারণ অকারণে আমি এই খেলায় মেতে উঠি। তবে রং বলতে কিন্তু আবিরের কথা আমি বলিনি , আমি বলছি চরিত্রের রঙের কথা। যে রঙ বদলাতে বদলাতে গিরগিটি ক্লান্ত হলেও , আমি হয়নি । কারণ টা কি জানেন ? আমি একজন আর্টিস্ট …

সেই ছোট বেলা থেকে আমার একটা স্বভাব গত বৈশিষ্ট্য আছে। যাকে একবার দেখি তাকে আর কখনো ভুলি না । তাই অপিরিচিত জিনিস টা, আমার কাছে খুব একটা মানানসই নয় । তাই এই বৈশিষ্ট্যর জন্যই পুরো জীবন টা বদলে গেছে আমার । জানতে চান আমার গল্পটা! তাহলে থেকে জান কিছুক্ষণ আমার সাথে –

কয়েক মাস আগে , রাত ১১ টা নাগাদ হাঁটতে বেরিয়েছিলাম। হঠাৎ লক্ষ্য করলাম একটা কালো রঙের স্করপিও গাড়ি দ্রুত গতিতে এসে পিষে দিয়ে চলে গেলো ফুটপাতের দুটো বাচ্চাকে। দৌড়ে সেখানে পৌঁছানোর আগেই গাড়িটি হাওয়ার বেগে চলে গেলো কিন্তু গাড়ির কাঁচে লক্ষ্য করেছিলাম ড্রাইভারের মুখ। বাড়ি পৌঁছে নিজের ড্রইং এর খাতায় হুবহু ড্রাইভারের ছবি টা এঁকে পুলিশ স্টেশনে জমা দিয়ে এলাম।

একটি নষ্ট ছেলের গল্প
একটি নষ্ট ছেলের গল্প

পরের দিন দেখি কলোনি তে ঢোকার মুখেই , অনেক লোকের সমাগম । মাথায় ক্যাপ আর রুমালে মুখ চেপে , সামনের এক দোকানদারকে জিজ্ঞাসা করলাম ” কিছু হয়েছে কি এখানে “
কড়া গলায় ওই ব্যক্তি উত্তর দিল ” ওই যে ছেলেটা , সবসময় ছবি আঁকাআঁকি করে বেড়ায়, সে নাকি পুলিশ স্টেশনে ফুটপাতের বাচ্চা মারা যাওয়ার কেস টা তে সাক্ষী হিসেবে , এক নেতার ছেলের ছবি জমা দিয়ে এসেছে ” । সেই নিয়েই কেলেঙ্কারি। শুনলাম ওর রুমের সব জিনিস পত্র ভাঙচুর করে, ওর জন্য অপেক্ষা করছে । বেচারা যদি একবার এসে পড়ে আর প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারবে না।

ভয়ে গলা শুকিয়ে এলো আমার। সেখান থেকে সন্তর্পনে বেরিয়ে গেলাম মেট্রো স্টেশন এর দিকে। গা ঢাকা দেওয়ার তেমন কোনো জায়গা নেই , তাই বস্তির একটা ঝুপড়ি তেই আশ্রয় নিয়ে একটা মাস কাটিয়ে দিলাম । ভেবেছিলাম সবটা মিটে গেলে আবার ফিরে যাবো , কিন্তু না ! কিছুই মেটেনি। বরঞ্চ দেয়ালে , সোশ্যাল মিডিয়াতে , খবরের কাগজে আমার নামে নিখোঁজের টেমপ্লেট এ ছেয়ে গেছে। এমনকি সেই ফুটপাতের অনেকেই পুলিশের কাছে জানিয়েছে , তারা নাকি সচক্ষে দেখেছে , ” আমি বাচ্ছাদুটির খুন করেছি , তারপর সেখান থেকে পালিয়ে গেছি “। আর নিজেকে বাঁচানোর জন্য অন্য ব্যক্তির ছবি থানাতে জমা দিয়েছি।

পড়ুনঃ- গোয়েন্দা গল্প- অদ্ভুতুড়ে বিজনেস 

দেখতে দেখতে আরো দু মাস কেটে গেলো। আমি নিজেকে বাঁচানোর কোনো রাস্তাই খুঁজে পাচ্ছিলাম না। দিশেহারা মনে হচ্ছিল নিজেকে। ঠিক সেই সময় আমার জীবনে দূত হিসেবে অবতীর্ণ হলো ” অনুপম দা ” , বস্তিতেই তার সাথে আমার পরিচয় হয়েছে। সে আমার সম্বন্ধে সবটাই জানে। পেশায় একজন ড্রাগ মাফিয়া হলেও , বন্ধু হিসেবে সে নিখুঁত সোনা। সে বারেবারে আমায় রাজ্য ছাড়ার উপদেশ দিয়েছিল , কিন্তু আমি শুনিনি।

হঠাৎ করে একদিন পুলিশ হানা দিল বস্তিতে , পালানোর কোনো পথ খুঁজে পেলাম না । পুলিশ টানতে টানতে , নিয়ে গেলো বস্তি থেকে । পুলিশ ভ্যানে ছয় জন পুলিশের মাঝে , দুষ্কৃতী হিসেবে আমার ‘আমি’ টা কে, ঠিক মানিয়ে নিতে পারছিলাম না। জঙ্গলের রাস্তা টা দিয়ে পেরোনোর সময় মনে হলো গাড়িটা যেন পাল্টি খেলো। এরপর সবকিছুই ঝাপসা , বুঝতে পারলাম না কিছুই।

real life story of a boy bengali
real life story of a boy bengali

হুস যখন ফিরলো , তখন চোখের সামনে অনুপম দা এর মুখমণ্ডল টা দেখে, স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম । কিন্তু পরক্ষণেই মনে হলো ” আমি তো পুলিশ ভ্যানে ছিলাম, অনুপম দা কি করে এলো ?”

কিছু জিজ্ঞাসা করতে যাবো , তখন অনুপম দা মুখে আঙ্গুল টা চাপা দিতে বললো ” খবর টা দেখ আগে “
চক্ষু চড়ক গাছ হয়ে গেলো আমার , কারণ ততক্ষনে গোটা রাজ্যের কাছে আমি একজন আতঙ্কবাদির তকমা পেয়ে গেছি।

খবরের হেডলাইন ” ফুটপাত হত্যাকাণ্ড মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে পুলিশ ভ্যানে অ্যারেস্ট করে নিয়ে আসার সময় , তার জঙ্গিবাদী দল আক্রমণ চালায় , যার ফলে পুলিশ ভ্যান পাল্টি খেয়ে পড়ে যায়। এতে একজন পুলিশ নিহত ও চারজন আহত হয়েছেন । তবে দুষ্কৃতী নিখোঁজ । তাকে ধরতে পারলে সরকার এক লক্ষ টাকার পুরস্কার দেবে বলে ঘোষণা করেছে। “

নিরুত্তর হয়ে অনুপম দা এর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম । অনুপম দা হাসতে হাসতে বললো ” তোকে বাঁচানোর আর কোনো উপায় আমার কাছে ছিলো না ।”

ড্রাগ চালান করার মত অনুপম দা আমাকেও ভিন্ন দেশে চালান করে দিলো। নিজের প্রাণ বাঁচাতে তার কোনো কথাই অমান্য করিনি। তাকে গুরু মেনে , আমিও তার সাথে এই ব্যবসায় নেমে পড়লাম । ধীরে ধীরে পারদর্শী হয়ে গেলাম এই ব্যবসায়। অনুপম দা কেও ছাপিয়ে গেলাম , তাতে অবশ্য অনুপম দা এর মোটেও হিংসা হয়নি । বরঞ্চ সে বারবার বলতো ” আমার এরকম একজন যোগ্য মানুষকেই দরকার ছিল ” । সামান্য একজন পোট্রেট আর্টিস্ট থেকে , ড্রাগ মাফিয়া আর্টিস্টের জন্ম হলো ।

ভিন্ন ভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিতি লাভ করলাম । তখন শুধু রাজ্যের নয় , নয়টি দেশের পুলিশের নজরে দাগী আসামি আমি ” আর্টিস্ট”।

পড়ুনঃ- অসাধারণ শিক্ষণীয় গল্প 

গোপন সূত্রে জানতে পারলাম , RAW এজেন্ট দের সাথে আমার দলেরই একজন যোগাযোগ করে , সব তথ্য তুলে দিয়েছে। যেকোনো সময় আমি ধরা পড়ে যেতে পারি । তাই ছদ্মবেশে গা ঢাকা দিলাম পুনরায় ।

অনুপম দা আমায় হন্যে হয়ে খুঁজে চলেছে খবর পেয়ে , তার সাথে দেখা করার জন্য রওনা দিলাম মাঝ রাত্রে । তার আস্তানায় লুকিয়ে লুকিয়ে ঢুকে পড়লাম । কিন্তু কাউকে কোথাও দেখতে পেলাম না , শুধু দেখলাম একটা ল্যাপটপ আর পেনড্রাইভ পড়ে আছে। পুলিশের কোনো পরিকল্পনা ভেবে প্রথমে চলে যেতে গেলেও থেমে গেলাম , ল্যাপটপ টা পাসওয়ার্ড দেওয়া নেই দেখে আরো সন্দেহ হলো । কিন্তু পেনড্রাইভ টা থেকে ভিডিও গুলো দেখার পর জানতে পারলাম – অনুপম দা আমার কাছে বারেবারে ক্ষমা চাইছে, আর বলে চলেছ পরের পর তার পরিকল্পণা গুলো –

” আর্টিস্ট , ভাই পারলে আমায় ক্ষমা করে দিও। আর তোমার হাতে বেশি সময় নেই , কিছুক্ষনেই মধ্যেই তোমায় অ্যারেস্ট করা হবে । তারপর হয়তো ফাঁসির দড়িতে তোমার জীবন শেষ হবে ।” তাই জীবনের শেষ মুহূর্তে তোমায় কিছু কথা জানাতে চাই , নইলে কোনোদিনও নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না। তুমি জানোনা, আমি তোমায় দীর্ঘ আঠারো বছর ধরে চিনি । তোমার চরিত্র , ব্যক্তিত্ব সব কিছু আমায় ভীষণ আকর্ষিত করতো তোমার প্রতি । বারবার ভাবতাম এরকম একটা মানুষ যদি আমার দলে থাকতো তাহলে দেশে বিদেশে আমার ব্যবসা ছড়িয়ে পড়তো।

বাস্তব জীবনের গল্প
বাস্তব জীবনের গল্প
<

আর এই লালসার বশবর্তী হয়েই আমি পরিকল্পনা করে ফুটপাতের দু জনের খুন করাই , ঠিক তোমার হাঁটতে আসার সময়। তারপর মেট্রো তে আমার লোকের মাধ্যমেই তোমাকে বস্তিতে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করাই। তারপর বন্ধুর মতো তোমার পাশে থেকে , তোমার বিশ্বাস অর্জন করে , এই ব্যবসার বেশিরভাগ দায়িত্ব তোমার হাতেই তুলে দি। তোমার সঙ্গে আজ অব্দি যা যা হয়েছে তার জন্য শুধু মাত্র আমি দায়ী , পারলে ক্ষমা করে দিও ।

কিছুক্ষন পর পুলিশ সেখানে এসে পৌঁছালে ল্যাপটপ আর পেনড্রাইভ টা পেলেও , আমায় খুঁজে পায়নি। কিন্তু দিন সাতেক পর অনুপম দা এর লাশ টা ওখান থেকেই পাওয়া গিয়েছিল। বিশ্বের নয় টি দেশ আমায় খুঁজলেও বাকি এখনো অনেক দেশ আমায় খুঁজতে বাকি। ভিডিও টা বানিয়ে হয়তো অনুপম দা মস্ত বড়ো ভুল করেছিল , সে হয়তো ভুলে গিয়েছিল ” আমি আর্টিস্ট ” রঙ নিয়ে খেলাই আমার কাজ।

আলোরানি মিশ্র

গল্পের ক্যানভাসে-
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে। 
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।

পড়ুনঃ- 
রহস্যময় ছোট গল্প- নিখোঁজ 

আধুনিক শিক্ষামূলক গল্প 

ছোট ছোট শিক্ষণীয় গল্প 
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

কটি নষ্ট ছেলের গল্প। বাস্তব জীবনের গল্প। 1 new sad real life story of a boy bengali

Spread the love

Leave a Reply