আজকের ব্লগে পৃথিবীর কিছু আজব প্রাণী সম্পর্কে জানব। এই আজব ও অদ্ভুত প্রাণী গুলি কিন্তু কোনো Visual Illusion নয়। বরং সত্যি সত্যি পৃথিবীতে এই অবাক প্রাণীগুলির বাস।
পৃথিবীর আজব প্রাণী
কত বিচিত্রই না আমাদের এই পৃথিবী, এই পৃথিবীতে বসবাস করে, কত আজব রকমেরই না প্রাণী ! খুব কম সংখ্যক প্রাণীর পরিচয়ই আমরা পেয়েছি আজ পর্যন্ত। আপনি হয়ত কল্পনাও করতে পাড়বেন না যে, এমন সুন্দর এবং আজব প্রাণীর বাস সত্যি কি পৃথিবীতে? আপনি সচরাচর এদের দেখতে পাবেন না। কিছু বিশেষ জায়গাতেই এদের দেখা মেলে। তাহলে দেখে নিই, পৃথিবীর কিছু অদ্ভুত প্রাণী।
ওকাপি বা Okapi:-
ওকাপি(Okapi) এই প্রাণীটিকে দেখুন। কি মনে হচ্ছে? ফটোশপে ইডিট করে জেব্রার অর্ধেক আর জিরাফের অর্ধেক লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাই তো? কিন্তু আসলে তা নয়। এমন প্রাণী সত্যি রয়েছে। অনেক বিবেচনার পর একে জিরাফ পরিবারের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই অদ্ভুত দর্শন প্রাণীটির বাস আফ্রিকা মহাদেশের মধ্যভাগে। এদের শ্রবণ শক্তি খুব প্রখর। এরা সাধারণত দলবদ্ধ প্রাণী। এদের তৃণভোজীর আওতায় ফেলা যেতে পারে। জেব্রার থেকে এদের গলা একটু বেশি লম্বা।

দুঃখের কথা হল IUCN এর করা একটি সার্ভে মোতাবেক কঙ্গোর উত্তর পূর্বাঞ্চলে নব্বই এর দশকে প্রায় 4,400 টি ওকাপি বাস করত, কিন্তু বর্তমানে এদের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় 2500 তে।
সামুদ্রিক শুকর বা Sea-pig:-
এই অদ্ভুত দর্শন প্রাণীটির নাম হল- স্কোটোপ্লেনস। এদের জনপ্রিয় নাম হল সি পীগ বা সামুদ্রিক শুকর। নাম সামুদ্রিক শুকর হলেও,বাস্তবে এটি দেখতে কিন্তু শূকরের মত অত বড় নয়। ভারত মহাসাগর, আটলান্টিক মহাসাগর এবং প্রশান্ত মহাসাগরের প্রায় ১২০০-৫০০০ মিটার গভীরে এদের আস্তানা। এদের পা অনেকটা শুঁড়ের মত। অনেক সময় এদের পরজীবী হিসেবেও অন্য প্রাণী যেমন- শামুক, মাছ এদের শরীরেও পাওয়া গেছে। এদের আয়তন সাধারণত ৪-৬ ইঞ্চি এর মধ্যে হয়ে থাকে। এদের চামড়া থেকে একপ্রকার বিষাক্ত পদার্থ নির্গত হয়, যা অন্য প্রাণীদের জন্য বিপদ ডেকে আনে।




শুবিল পাখি (shoebill bird):-
কখনো প্রায় চার ফুট দীর্ঘ হাঁস দেখেছেন? না এটি হাঁস নয়, দূর থেকে একে দেখলে হাঁস বা সারস মনে হওয়াটা স্বাভাবিক। সুদান, জিম্বাওয়ে, রোয়ান্ডা প্রভৃতি স্থানে, এই বিসালাকার পাখিটির দেখা মেলে। তবে এরা সংখ্যায় অনেক কম। বিলুপ্ত প্রায় এই পাখিটি আগে মিশর এবং আরবের দেশ গুলিতে প্রচুর পরিমাণে দেখা যেত। এত বিশালাকার হওয়া সত্যেও এই পাখিটি কিন্তু আকাশে উড়তে সক্ষম। মিনিটে প্রায় ১৫০ বার এই পাখিটি পাখা ঝাঁপটায়। তবে, এ কিন্তু অন্যান্য পাখিদের থেকে অনেক কম গতিতে উড়ে।
যদি দ্রুত এর সংরক্ষণের ব্যবস্থা না নেওয়া যায়, তাহলে অচিরেই বিরল এই পাখিটি পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাবে।




থর্নি ড্রাগন বা কাঁটাওয়ালা ড্রাগন (thorny Dragon)
অনেক গল্প বা কল্প কথাতেই তো ড্রাগন কথাটি শুনেছেন, কিন্তু বাস্তবেও যে ড্রাগন হতে পারে, সে বিষয়ে কি জানেন? আজ্ঞে না আমি মজা করছিলাম। নাম ড্রাগন হলেও আকারে এবং ব্যবহারে কিন্তু এই প্রাণীটি ড্রাগনের থেকে অনেক শান্ত। এটি আসলে একধরনের গিরগিটি। তবে এদের শরীর কিন্তু কাঁটাতে ভরা। যার ফলে কোনো শিকারি প্রাণী একে খেতে, গেলে একটু ভালমত চিন্তা-ভাবনা করে নেয়।
এদের আরেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট হল, এরা বিপদ দেখলেই, নিজেদের শরীরে অতিরিক্ত বায়ু ভরিয়ে নেয়, যার ফলে এদের আকার অনেক বেড়ে যায়। ড্রাগন নাম দেওয়ার পেছনে কারণ হল এদের শরীরের গঠন। এরা পাহাড়ি ড্রাগন, থর্নি লিজার্ড, থর্নি ড্রাগন ও কাঁটাময় অসুর নামেও পরিচিত। এদের আপনি অস্ট্রেলিয়ার উষ্ণ অঞ্চল গুলিতে দেখতে পাবেন। এদের দুটি মাথা রয়েছে। প্রধান মাথার উপরে একটু পেছনে এদের আরেকটি মাথা রয়েছে, তবে সেটি কেবলমাত্র জরুরী ভিত্তিতে কাজে লাগায় এরা।




Blue Parrotfish ব্লু প্যারট ফিসঃ-
ক্রান্তীয় এবং উপক্রান্তীয় অঞ্চলের সমুদ্র গুলিতে বিশেষত আটলান্টিক এবং ক্যারিবিয়ান সাগরে এদের দেখা মেলে। এরা সাধারণত প্রবাল প্রাচীর গুলির নিকটবর্তী অঞ্চলে বাস করে। এদের শরীরের রং নীল এবং এদের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০-৭৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। সমুদ্র গর্ভের প্রায় ৩-২৫ মিটার গভিরতায় এদের বসবাস। বালির মধ্য থেকে অ্যালগি খুঁজে খাওয়াই এদের মূল কাজ। এদের ওজন সর্বোচ্চ প্রায় ৯.১ কিলোগ্রাম পর্যন্ত হতে পারে। যতই দিন যাচ্ছে এই প্রজাতির মাছের সংখ্যাও ততই কমে আসছে। কারণ বড় বড় মাছ গুলিকে জেলেরা ধরে ফেলে, যার কারণে বংশ বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয়। তাই IUCN একে বিরল প্রজাতির মাছ আখ্যা দিয়েছে।




Saiga Antelope বা সাইগা হরিণ বা সাগা হরিণঃ-
প্লিস্টসিন যুগেও এদের একটি প্রজাতির বসবাস ছিল। প্লিস্টোসিন যুগের জীবাশ্ম গুলিতে এদের পরিচয় মেলে। বর্তমানে এদের বিপণ্ণ প্রাণীর আওতায় রাখা হয়েছে। তখন থেকে বর্তমান পর্যন্ত এদের শরীরে বিশেষ কিছু পরিবর্তন হয়নি। এদের উচ্চতা প্রায় ৬১-৮১ সেন্টিমিটারের আশেপাশে। এদের ওজন প্রায় ১৬-৬৯ কিলোগ্রাম পর্যন্ত হয়। এদের আকৃষ্ট করে তুলেছে, এদের জোরা নাক। এদের নাকের ছিদ্র দুটি এমন ভাবে নীচের দিকে বাঁকানো যে, দেখলে মনে হয়, কেউ মুখ গোমরা করে বসে রয়েছে। এদের নাক ফিল্টারের মত কাজ করে। গরমের সময় এদের নাক বালি গুলিকে বায়ুথলিতে যেতে বাঁধা দেয়। আবার অন্যদিকে ঠাণ্ডার সময়, এদের নাক স্বয়ংক্রিয় ভাবে, ঠাণ্ডা বাতাসকে, গরম করে দেয়, তারপর ফুসফুসে প্রেরন করে।




READ MORE
আয়রন ডোম কি? আয়রন ডোম কিভাবে কাজ করে?
The bush viper দ্য বুশ ভাইপারঃ-
ক্রান্তীয় বৃষ্টি অরণ্যের ঘন জঙ্গলে, মানুষের হস্তক্ষেপ থেকে অনেক দূরে, এদের বসবাস। এরা লম্বায় খুব একটা বেশি হয় না। এরা 40-78 সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এদের বাস গাছের উপরে। এদের ত্রিকোণাকৃতি মাথা শরীরের অনুপাতে, একটু বড়। রাত হলেই এরা শিকার শুরু করে দেয়। সুতরাং বলা যায় এরা হল- Night Hunter. এদের কামড়ে মানুষের লোহিত কণিকা ধ্বংস হয়। তবে এদের কামড়ে কোনো মানুষের মৃত্যুর কথা শোনা যায়নি। এই সাপটি অন্য সাপেদেরও মেরে খেয়ে নেয়।




পাকু মাছ বা Pacu Fish:-
মাছেদেরও যে এরকম বড় বড় দাঁত থাকতে পারে, তা আগে জানা ছিল না। এই মাছটিকে বলা হয় পাকু মাছ বা Pacu Fish. এরা ভয়ংকর পিরানহা মাছের সমগোত্রীয় তবে, পিরানহার মত ভয়ানক নয়। এটি সাধারণত মিষ্টি জলের মাছ। দক্ষিণ আমেরিকা এদের মূল বসতি স্থল। এরা সাধারণত দ্রুত ভক্ষণকারী হিসেবেই বেশি পরিচিত।




ব্লু ড্রাগন বা নীল সামুদ্রিক ড্রাগন বা glaucus atlanticus বা blue dragon:-
সম্প্রতি এর দেখা মিলেছে, আফ্রিকাতে। অসম্ভব সুন্দর এই প্রাণীটির নামের শেষে ড্রাগন কথাটি থাকলেও এটি কিন্তু আদতে ড্রাগন নয়। সম্ভবত, ড্রাগনের মত কিছুটা দেখতে বলেই এমন নামকরণ। এদের দৈর্ঘ্য তিন সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। পাকস্থলীতে বায়ু ধরে রেখে, এরা অনায়াসেই ভেসে থাকতে পারে। এরা কিন্তু দক্ষ শিকারি। এরা আবার মানুষকেও কামড়াতে পারে। এদের কামড়ের পড়ে, সাধারণত যে সমস্ত উপসর্গ গুলি দেখা যেতে পারে, সেগুলি হল- বমি ভাব, মাথা ব্যাথা এবং তীব্র এলারজি। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে, এর কামড়ে মানুষ মারাও যেতে পারে।




hummingbird hawk-moth বা হামিংবার্ড মথ :-
অনেকটা হামিংবার্ডের মত দেখতে, এই পতঙ্গটি আসলে, মথের একটি প্রজাতি। ফুলের মধু এবং ফলের রসই এদের প্রধান খাদ্য। এদের পৃথিবীর প্রায় অনেক জায়গায় দেখা গেলেও মূলত, উষ্ণ প্রধান অঞ্চল গুলিতেই এরা বাস করতে বেশি ভালোবাসে। এদের বিশেষত্ব হল এরা প্রজাপতির মত, ফুলের উপর বসে নয়, বরং উড়ন্ত অবস্থাতেই ফুল থেকে মধু শুষে নিতে সক্ষম, এরজন্য এদের সাহায্য করে, বড় একটি শুর।




ম্যান্টিস চিংড়ি বা Mantis Shrimp:-
এদের দেখে আপনার দিওয়ালীর ফিলিং চলে আসতে পারে। রং-বেরঙ্গের এই প্রাণীটির বাস ভারত মহাসাগর, প্রশান্ত মহাসাগর, হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ এবং পূর্ব আফ্রিকাতে। এদেরকে বক্সার বললেও কিন্তু ভুল হবে না। এরা শিকার মারার জন্য, শিকারটিকে লাথি এবং ঘুসি দিয়ে মেরে ফেলে। এদের ঘুসি এবং লাথি এতটাই তীব্র হয় যে, এটি কাঁচের অ্যাকুরিয়ামও ভেঙ্গে ফেলে, যার কারণে এদের কাঁচের অ্যাকুরিয়ামের পরিবর্তে, পুরু প্লাস্টিকের অ্যাকুরিয়ামে রাখা হয়।
এদের খোলসও অত্যন্ত শক্ত। এদের দাড়া অনেক শক্ত হয়, এটি দিয়েই এরা সজোরে আঘাত করে, কিন্তু এত জোরে আঘাত করার পরেও এদের দাড়াতে কোনো ক্ষতিই হয় না। এদের আঘাতের ত্বরণ ২২ কিলোমিটার ক্যালিবার বুলেটের চেয়েও বেশি।মাত্র কয়েক মিলিমিটার দূরত্বের ব্যবধানে, এরা ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে শত্রুর দিকে ছুটে যায়। ম্যান্টিস চিংড়িগুলো তাদের ওজনের চেয়েও ১০০ গুণ বেশি শক্তিশালী হয়।




পান্ডা পিঁপড়া Panda Ant:-
ছবিতে হোক বা বাস্তবে পাণ্ডা তো প্রায় সবাই দেখেছেন। কিন্তু এই পাণ্ডারও যে একটি ছোট ভার্সন থাকতে পারে, তা এই ব্লগটি লেখার আগে পর্যন্ত জানা ছিল না। চিলিতে একপ্রকারের পিঁপড়ে পাওয়া যায়, যাদের পাণ্ডার মতনই সাদা কালো ছোপ রয়েছে। সাধারণত পিঁপড়ের শরীরে লোম দেখা যায় না, কিন্তু এই পান্ডা পিঁপড়ার শরীরে সাদা কালো লোম দেখা যায়। এরা সাধারণত উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলে বিশেষত চিলি এবং আর্জেন্টিনার শুষ্ক অঞ্চলে বাস করে। স্ত্রী পান্ডা পিঁপড়া পুরুষের তুলনায় বেশি হৃষ্টপুষ্ট এবং লোমশ হলেও এদের কোনো পাখা নেই। স্ত্রী পিঁপড়া মাটিতে অন্য কোনো পোকার বাসস্থান খুজে বের করে সেখানে ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে বের হয়ে পান্ডা পিঁপড়ার বাচ্চারা ওই বাসস্থানে থাকা পোকাগুলোর ডিম খেয়ে ফেলে।




লাল ঠোঁট যুক্ত ব্যাটফিশ বা Red-lipped Batfish:-
মনে হচ্ছে, কেউ এর ঠোঁটে লাল লিপস্টিক পড়িয়ে দিয়েছে, উমম হয়তবা ফটোশপের মাধ্যমে কারও ঠোঁট এর উপর বসিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আদতে এগুলির কোনোটিই সত্যি নয়। এই ব্যাটফিশটি জন্ম থেকেই এরকম। হুম জন্ম থেকেই এদের ঠোঁটের রং লাল। গালাপাগোস এবং পেরুর সমুদ্রে ৩-৭৬ মিটার গভীরে এদের বসবাস। এরা সাধারণত ছোট ছোট পোকামাকড় ও ছোট মাছ খেয়ে বেঁচে থাকে।








কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।