আজ আমরা কথা বলব কিছু আজব ও অদ্ভুত ১০ টি গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড সম্পর্কে। এই অদ্ভুত গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গুলি ভাঙ্গা অনেকটাই অসম্ভব।
আজব ও অদ্ভুত ১০ টি গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডঃ-
সবথেকে নমনীয় চামড়াঃ-
আচ্ছা আপনি আপনার শরীরে চামড়া হাত দিয়ে টেনে কতটা প্রসারিত করতে পাড়বেন? বড়জোর কয়েক সেন্টিমিটার। কিন্তু পৃথিবীর সবথেকে নমনীয় অর্থাৎ ঢিলে চামড়ার অধিকারী হলেন গ্যারি টার্নার। তিনি ব্রিটেনের বাসিন্দা। সবথেকে বড় কথা হল তিনি ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে টানা ২১ বছর এই রেকর্ডটি ধরে রেখেছেন। তিনি তার শরীরের চামড়া ৬.২৫ ইঞ্চি পর্যন্ত প্রসারিত করতে পারেন।
টার্নার আসলে Ehlers-Danlos Syndrome নামক এক দুরারোগ্য রোগে ভুগছেন। এটি আসলে একটি বংশগত রোগ। মূলত জিনগত ত্রুটির কারণে এমনটি হয়ে থাকে। শরীরের বিভিন্ন সংযোগকারী কলা এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। যার ফলে শরীরের চামড়া অনেক নমনীয় হয়ে যায়। ডাক্তারদের মতে, এই উপসর্গে আক্রান্ত ব্যাক্তির গড় আয়ু ৪৮ বছর।
সাধারণত আমাদের চামড়া যদি আমরা টানি তাহলে আমাদের ব্যাথা অনুভূত হয়ে থাকে। কিন্তু অবাক করার মত বিষয় হল, চামড়া প্রসারিত করার সময় টার্নার-এর শরীরে কোনো ব্যাথা অনুভূত হয় না।

সবথেকে লম্বা জিহ্বাঃ-
ইনি হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার বাসিন্দা নিক স্ট্রোবাল এখনও পর্যন্ত পৃথিবীর সবথেকে লম্বা জিহ্বা যুক্ত পুরুষ হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন। ২০১২ সালে গড়া তার এই রেকর্ডের সময় তার জিহ্বার দৈর্ঘ্য মাপা হয়েছিল ১০.১০ সেমি। যদিও সাধারণত একজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের জিহ্বার গড় দৈর্ঘ্য প্রায় ৮.৫ সেমির আশেপাশে।
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের এই বাসিন্দা ২৪ বছর বয়সে এই রেকর্ডটি করেছিলেন। তার এই রেকর্ডটি ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে করা স্টিফেন টেইলর-এর রেকর্ডটি ভেঙ্গে দেয়। স্টিফেন-এর জিহ্বার দৈর্ঘ্য ছিল ৯.৮ সেমি।




সবথেকে লম্বা হাতের নখের অধিকারিণীঃ-
সবথেকে লম্বা নখের অধিকারিণী হিসেবে লি রেডমণ্ড গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে জায়গা করে নিয়েছেন। তার জন্ম হয়েছিল ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে।
১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে তিনি তার হাতের নখ কাটা বন্ধ করে দেন। সাধারণত নখ বড় হলে কাজে অনেক সমস্যা হয়, কিন্তু রেডমণ্ড তার দৈনিক সব কাজই করতেন। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে দেখা যায় যে তিনি, এত বড় নখ নিয়েই গাড়ি চালাচ্ছেন, ঘড় পরিষ্কার করছেন, বাসন পরিষ্কার করছেন এবং তার নাতি-নাতনি দের মাথার চুলও কাটছেন।
১০ ফেব্রুয়ারী ২০০৯, তার এই রেকর্ডধারী নখগুলি ভেঙ্গে যায়। এদিন তাকে উটাতে একটী গাড়ি থেকে বাইরে ফেলে দেওয়া হয়। তিনি খুবই গুরুতর ভাবে জখম হয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু তিনি দ্রুত আরোগ্য লাভ করেন।
তার এতবড় নখ বানাতে সময় লেগেছিল ৩০ বছর। বর্তমানে তার নখের দৈর্ঘ্য ১০ সেন্টিমিটারের আশেপাশে।
তিনি ২০০৮ সালে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করেছিলেন। সেই সময় তার হাতের সব নখ গুলির মিলিত দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় ২৮ ফুট ৪ ইঞ্চির মতন।




সবথেকে লম্বা গোঁফঃ-
এবারের রেকর্ডটি একজন ভারতীয়ের। রাজস্থানের জয়পুর শহরের বাসিন্দা ৬৮ বছর বয়স্ক রাম সিং চৌহান। তিনি তার গোঁফ ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দ থেকে বাড়ানো শুরু করেছিলেন। তার মতে তিনি প্রতিদিন প্রায় 2 ঘণ্টা সময় তার গোফের পেছনে লাগান। ২০১০ সালে তিনি এখন পর্যন্ত পৃথিবীর সবথেকে লম্বা গোঁফের অধিকারী হিসেবে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়ে তোলেন।
তার গোঁফের দৈর্ঘ্য ১৪ ফুট। তার মতে তিনি এগুলিকে ৩৭ বছর ধরে কাটেনইনি।




দাঁড়ির মধ্যমে সবথেকে বেশি ভাঁড় তোলার রেকর্ডঃ-
আচ্ছা কেউ তার দাঁড়ি দিয়ে সবথেকে বেশি কতটা ভারী জিনিস তুলতে পারবে বলে আপনার মনে হয়? ইনি হলেন অ্যানটানাস কোনট্রিমাস। তিনি তার দাঁড়ির মাধ্যমে ৬৩.২ কিলোগ্রাম ওজন তুলে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে জায়গা করে নিয়েছেন। তিনি তার গোঁফের মাধ্যমে একজন মহিলাকে মাটি থেকে অনেকটা উপরে তুলেছিলেন। তিনি এই রেকর্ডটি করেন ২০১৩ সালে। এই রেকর্ডের দ্বারা তিনি পূর্বের কয়েকটি রেকর্ড ভেঙ্গে দেন।




সবথেকে লম্বা পায়ের অধিকারিণীঃ-
ইনি হলেন ম্যাকি। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা ম্যাকি ১৭ বছর বয়সেই গিনেস বুকে নাম তুলে নিয়েছে। সে এখন পর্যন্ত পৃথিবীর সবথেকে লম্বা পায়ের অধিকারী। তার বাম পায়ের দৈর্ঘ্য ১৩৫.২৭ সেন্টিমিটার এবং ডান পায়ের দৈর্ঘ্য ১৩৪.৩ সেন্টিমিটার। ম্যাকির উচ্চতা ৬ ফুট ১০ ইঞ্চি হলেও, মোট উচ্চতার প্রায় ৬০% তার পায়ের জন্যই।
২০১৮ সালে তার এই অস্বাভাবিকতা প্রথম নজরে আসে, যখন তার এক বান্ধবী তাকে জানায় তার জন্য হয়ত জুতো অর্ডার দিয়ে বানাতে হবে, কারণ কোনো জুতোই তার পায়ে ঢুকছিল না। তার স্বপ্ন সে আমেরিকার কলেজে উচ্চ ডিগ্রী নিয়ে পড়াশোনা করবে।
২০২০ সালে সে বিশ্বের সবথেকে বড় পায়ের অধিকারিণী হিসেবে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে জায়গা করে নেয়।




শরীরে সবথেকে বেশি চুল থাকার রেকর্ডঃ-
ভিক্টর ল্যারি গোমেজ, গ্যাব্রিয়েল ড্যানি রামোস গোমেজ, লুইসা লিলিয়া ডি লিরা এবং জেসুস ফাজারডো এই চারজন একটি পরিবারের সদস্য। এরা পাঁচ প্রজন্ম ধরে Congenital Generalized Hypertrichosis নামক একটি অতি দুর্লভ রোগে আক্রান্ত। এই রোগে আক্রান্তের শরীর এবং মুখমণ্ডলে অতিরিক্ত চুল জন্মায়। এই পরিবারের মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের শরীরে বেশি চুল আছে। ছেলেদের শরীরে প্রায় ৯৮% স্থান অতি ঘন চুল দ্বারা বেষ্টিত।
ল্যারি এবং ড্যানি একটি সার্কাস দলের সঙ্গে যুক্ত। অনেক চিকিৎসকের মতে জীনগত ত্রুটির কারণেই এমনটি হতে পারে। যদিও সুনির্দিষ্ট ভাবে এই রোগটির কারণ এখনও অজানা এবং রহস্যময়।
২০০০ সালে এই পরিবারটি শরীরে সবথেকে বেশি চুল সম্পন্ন পরিবার হিসেবে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম নথিভুক্ত করে ফেলে।




সবথেকে বেশি ক্যান খোলার রেকর্ডঃ-
এতক্ষণ আমরা যে রেকর্ডগুলি জানলাম সেগুলি সবই মানুষের। কিন্তু এবার আমরা একটি তোতাপাখির করা ওয়ার্ল্ড রেকর্ড সম্পর্কে জানব। কি অবাক হলেন?
মাত্র এক মিনিটে ৩৫ টি পানীয়র ক্যান খুলে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়ে তুলেছিল জ্যাক নামের একটি তোতাপাখি।
এই তোঁতাটির এক মিনিটে সবথেকে বেশি রবারের বাস্কেট বল নেটে ফেলার রেকর্ডও রয়েছে। জ্যাক-এর মালিকের নাম হল জুলি এবং কারডোজা।
শুধুমাত্র তাই নয় এই পাখিটি প্রায় ১০০ টি শব্দ উচ্চারণ করতে পারে, যা অন্যান্য সমগোত্রীয় পাখিদের তুলনায় অনেক বেশি। তবে পাখিটির এই বিশেষ পারদর্শিতার পেছনে কাজ করছে, স্পেসাল ট্রেনিং।




শরীরে সবথেকে বেশি চা চামচ রাখার রেকর্ডঃ-
২৬ জুন, ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে সার্বিয়ার বাসিন্দা ডেলিবর জ্যাবলেনোভিক অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখালেন। তিনি তার শরীরে ৭৯ টি চা-চামচ ব্যালেন্স করে দেখিয়ে গিনেস বুক অফ রেকর্ডে নাম তুলে নিলেন। তবে এখানে বলে রাখা ভাল যে, সেই চামচ গুলির আয়তন ভিন্ন ভিন্ন ছিল।
এর আগে মুখে ৩১ টি চামচ ব্যালেন্স করে দেখিয়ে রেকর্ড গড়ে তুলেছিলেন তিনি।




আরও পড়ুনঃ-
বিশ্বের সেরা 7 টি কাকতালীয় ঘটনা
সব থেকে বেশি সময় টুথ ব্রাশের উপর বাস্কেট বল ঘোরানোর রেকর্ডঃ-
কি অবাক হলেন? আমরা অনেকেই আঙ্গুলে বল ঘোরাতে পারি না। কিন্তু ভারতের সন্দীপ সিং কাইলা ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে গড়ে তুলেছেন এক অদ্ভুত এবং আজব রেকর্ড। তিনি তার মুখে একটি টুথ ব্রাশে বাস্কেট বল নিয়ে ১ মিনিট ৮.১৫ সেকেন্ড ঘোরান।
তিনি নেপালের থানেশ্বর গুরাগির ২০১৮ সালে করা রেকর্ডটি ভেঙ্গে দিয়ে একটি নতুন রেকর্ড করেন। থানেশ্বর ১ মিনিট ৪.০৩ সেকেন্ড বাস্কেট বল ঘুরিয়েছিলেন।




এই আজব ও অদ্ভুত ১০ টি গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড-গুলি আপনাদের কেমন লাগল তা আমাদের জানাতে ভুলবেন না। প্রতিদিনের আপডেটের জন্য আপনি আমাদের ফেসবুক পেজে যুক্ত হতে পারেন।
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- ফেসবুক-ছাড়পত্র WhatsApp- ছাড়পত্র ২ টেলিগ্রাম- CharpatraOfficial




কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।