আজকের গল্পের কেন্দ্রে রয়েছে এক অভিশপ্ত বাড়ি। অভিশপ্ত এই ভুতুড়ে বাড়িটি বহু পুরনো। এই ভুতুড়ে বাড়ি কেন্দ্রিক আমাদের গ্রামে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা রয়েছে আজকের গল্পে।

রহস্যময় ভূতের গল্প- “অভিশপ্ত বাড়ি”

রাত তখন প্রায় ১.৩০ টা। অমাবস্যার রাত, কিন্তু বাবা এখনও বাড়ি ফেরে নি। বাবা গেছে ব্যবসার এক কাজে পাশের শহরে। বাবা রাস্তায়, থাকলেও কিছুতেই ঘুম আসছে না আমাদের। তাই মেন গেট টা খোলা রেখে আমি আর মা আঙিনায় বসে গল্প করতে লাগলাম। বেকার বেকার বিদ্যুতের মিটারের কাটা বেড়ে যাবে ভেবে, একটা মোম জ্বালিয়ে দিলাম বারান্দায়।

একটু পর দৌড়াতে দৌড়াতে রানা আমাদের বাড়িতে এসে ঢুকল। হাফাতে হাফাতে বলতে লাগল, জেঠিমা আমা আমার দি দি দিদি কথা কেমন করে করছে, তুমি চলো চ আমার ভ ভয় লাগছে। রানাকে ভয় মিশ্রিত মুখ দেখে বুঝলাম কিছু একটা হয়েছে, আর কোন প্রশ্ন না করে মা আর আমি দৌড়ে গেলাম রানার সাথে। গিয়ে দেখি রানার দিদি দেবী মাটিতে গড়াগড়ি যাচ্ছে আর মুখ দিয়ে অদ্ভুত অদ্ভুত সব শব্দ বেড় করছে। দেবীর মুখ দিয়ে লালা ঝড়ছে।

আমি সেখানে দাঁড়িয়ে না থেকে তাড়াতাড়ি ছুটলাম ডাক্তারের কাছে। যখন আমি ডাক্তারকে সঙ্গে করে নিয়ে আসি তখন এই মাঝ রাতেও দেবীর বাড়ির সামনে গ্রামের মানুষ জটলা বেঁধেছে।

অভিশপ্ত বাড়ি
অভিশপ্ত বাড়ি

যতক্ষণে আমি ডাক্তার নিয়ে এসেছি ততক্ষণে সব শান্ত।

আজ থেকে ১৫ বছর আগে ঘটে যাওয়া এই ঘটনা টা আজ বেজায় মনে পড়ছে।

আমাদের গ্রামে রানা এবং দেবী নামে দুই ভাই বোন একসাথে থাকত এক জীর্ণ কুঠির এ। রানাকে জন্ম দেওয়ার পর রানার মা পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। অন্যদিকে রানার মায়ের শ্রাদ্ধ ঘুরতে না ঘুরতেই বাবা নিয়ে এলেন আরেক মহিলা কে, রানার কাছে সেই মহিলা সৎ মা।

সৎ মা কে নিয়ে বাবা উধাও হলেন আর ভিটে মাটিতে ফেলে গেলেন তার দুই সন্তান রানা আর দেবীকে। দেবী রানার থেকে ৩ বছরের বড়। প্রতিদিন দুই-ভাই বোন মিলে পাড়ার জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে ঘুরে শাক-পাতা, ঢেঁকি শাক, কচুর গাছ কাটে আর পরের দিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে দেবী আগের দিনের শাক পাতা নিয়ে হেঁটে হেঁটে চলে যায় শহরে। সেখানে শাক পাতা বিক্রি করে যা পায় তাই দিয়ে মোটা হলুদ চাল কিনে আনে, আর দুপুরে দুই ভাই বোন মিলে সেই মোটা চালের ভাত পেট ভরিয়ে খেয়ে আবার পরের দিনের জন্য শাক পাতা জোগাড় করতে যায়।

পড়ুনঃ- ভূতের গল্প- কি ভয়ানক ছিল সেই রাত 

এরকমই একদিন অমাবস্যার বিকেলের গুমোট গরমে গোটা পাড়া যখন ঘুমের দেশে বিচরণ করতে ব্যস্ত দুই ভাই বোন মিলে যায় পাড়ার শেষে যে পরিত্যক্ত বাড়িটা আছে সেখানে। দেওয়াল টপকে দুইজনে ভিতরে ঢুকে যায় আর সেই পরিত্যক্ত বাড়ির বিশাল উদ্যান থেকে তুলে নিয়ে আসে ঝুড়ি ঝুড়ি শাকপাতা।

সেই রাতেই বড়ই অদ্ভুত ভাবে মারা গিয়েছিল দেবী।

বাবার কাছে থেকে জানতে পারি যে, ওই বাড়িটা নাকি অভিশপ্ত। আর এই বাড়িটা নাকি পঞ্চম শতাব্দী তে হুন আক্রমণের সময় থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। আগে বিশাল এই বাড়িতে নাকি রাজপুতদের এক মন্ত্রীর বসবাস ছিল। খুব রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হয় এই বাড়িতে থাকা পরিবারটির।

রহস্যময় ভূতের গল্প
রহস্যময় ভূতের গল্প

অমাবস্যার রাত ছিল, মন্ত্রীর স্ত্রীর কক্ষ থেকে এক আতঙ্ক মিশ্রিত চিৎকার ভেসে আসে, যখন সবাই ছুটে যায়, ততক্ষণে তারা দেখে যে মন্ত্রীর স্ত্রী বিছানায় পড়ে আছে আর তার মুখ দিয়ে লালা ঝরছে অবিরাম। কোথা থেকে কি হল কিছুই বোঝা যায় নি।

এরপরের অমাবস্যার রাতে মন্ত্রীর কন্যার কক্ষ থেকে ঠিক একই রকম চিৎকার ভেসে আসে, সবাই উপস্থিত হতেই আগের মত চিত্র ধরা পড়ে।

এরকম আকস্মিক দুই প্রিয়জনের মৃত্যু মেনে নিতে পারেন নি মন্ত্রী। তিনি গোপনে শুরু করলেন সেই অপরাধীর খোঁজ। তিনি হয়ত সফল ও হয়েছিলেন অপরাধীকে খুঁজতে। তিনি নিজ পুত্রের নিকট পরের দিন গুরুত্ব পূর্ণ কিছু বার্তা ভাগ করে নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই রাতেই আবার রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হয় সেই মন্ত্রীর।

এরপর মন্ত্রী পুত্র, সেই বাড়ির সমস্ত কর্মচারী, পাত্র মিত্রকে ডেকে পাঠান। সবাইকে ভুরি ভোজ করালেন এবং সবাইকে সুরাসক্ত করে দিলেন। কিন্তু নিজে শুধুমাত্র এক চুমুক সুরা এর বদলে কিছুই খেলেন না।

পড়ুনঃ- একটি সত্যি ভূতের গল্প 

সেই রাতেই ওই বাড়িতে ঘটে গেল এক বিশাল হত্যা লীলা। মন্ত্রী পুত্র চেঁচিয়ে বললেন, আমি আমার বাবা মা বোন সকলকে হারিয়েছি এই বাড়ির একজন বিশ্বাসঘাতক এর জন্য, আমি এই বাড়ির একটি প্রাণীকেও জীবিত রাখব না। এই বলে তিনি ছুটে গিয়ে দুই হাতে ধারালো তরোয়াল তুলে নিলেন। মন্ত্রী পুত্রের এরকম ভয়ংকর রূপ দেখে উপস্থিত সবার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে যায়, এবং টলতে টলতে নিজের জীবন রক্ষার তাগিদে পালিয়ে যাওয়ার ব্যর্থ প্রয়াস করতে থাকে।

 এরপর মন্ত্রী পুত্র একে একে সমস্ত সুরাসক্ত পাত্র মিত্রকে খুন করতে শুরু করলেন। ভয় পেয়ে যে যেদিকে পারে, পালিয়ে যেতে লাগল, কিন্তু কেউই পালাতে পারল না, কেননা মূল দরজা আগে থেকেই বন্ধ ছিল।

সেই রাতে ওই বাড়িতে রক্ত বন্যা বয়ে যেতে লাগল। বর্ষার জলে ফুলে ফেপে ওঠা নদী যেমন সেই রাতে মন্ত্রীর বাড়ির দরবারের মূল রাস্তার অবস্থা ঠিক তেমনই হয়েছিল। কাঁচা লাল টকটকে রক্ত নালার মত বয়ে যাচ্ছে আর গিয়ে পড়ছে মাটিতে আর মাটি রক্ত পিপাসুর মত সে গাঢ রক্ত নিজের অভ্যন্তরে গ্রহণ করছে।

হত্যালীলা শেষ হওয়ার পর, মন্ত্রীর পুত্র আকাশের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে ওঠেন- আজ থেকে যে এই বাড়ির কোন সম্পদ এর দিকে নজর দেবে তার শেষ বিচার হবে যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু।

bengali horror story
bengali horror story
<

কিন্তু দেবী তো সেই বাড়ির কোন সম্পদে হাত দেয় নি, সে তো শুধু মাত্র শাকপাতাই তুলেছিল। তবে কি, সেই বাড়ির শাক পাতা এর উপরেও সেই অভিশাপ লেগে আছে। আর তাইই যদি হয় তাহলে রানার কিছু হল না কেন, হুম হতে পারে সে শুধু ঝুড়ি ধরে ছিল।

কিন্তু আবার প্রশ্ন জাগছে আমার মনে, দেবীর সাথে এরকম ঘটনা  ঘটেছিল রাতে। অর্থাৎ সে সেই অভিশপ্ত শাক পাতা গুলি বিক্রি করে এসেছে শহরে। তাহলে যে সমস্ত ব্যক্তি সেই শাক পাতা গুলি কিনেছেন তাদেরই বা কি হল, দেবীর সাথে যা হয়েছে তার থেকে কি রেহাই পেয়েছে তারা!

বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে শুধু একটিই কথা- “আজ থেকে যে এই বাড়ির কোন সম্পদ এর দিকে নজর দেবে তার শেষ বিচার হবে যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু। “    

ব্ল্যাক শ্যাডো

গল্পের ভাবনায়-
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে। 

সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।

পড়ুনঃ- 
ডাইনিরূপী সেই মেয়েটি 

রহস্যময় গল্প- অভিশপ্ত পেইন্টিং 

ভুতের গল্প- হোস্টেলের শেষ রাত 
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

অভিশপ্ত বাড়ি। রহস্যময় ভূতের গল্প। 1 new bengali horror story haunted house

Spread the love

Leave a Reply