আজকের অভিমানী ভালোবাসা গল্পটিতে এক লং ডিসটেন্স রিলেশনশিপ এর কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে। অভিমান কিভাবে তাদের দূরে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও কিভাবে একটি সম্পর্ক আবার জয়ী হল সেই বিষয়টি সুচারুভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে গল্পটিতে।

অভিমানী ভালোবাসাঃ- “তোমায় আমায় মিলে”

অনীশ আমার পক্ষে আর এসব ব্যাপার মেনে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না । তুমি দিন দিন অনেক বদলে যাচ্ছে, আর তার সাথে সাথে বদলে যাচ্ছে আমাদের এই তিন বছরের সম্পর্ক।

মিনুর বলা কথা গুলো অনীশ চুপচাপ শুনে যাচ্ছে। মুখে তার কোনো কথা নেই এমনকি সরাসরি মিনুর দিকে চোখে চোখ রেখেও কিছু বলতে পারছে না…

অনীশ আর মিনুর সম্পর্কটা বেশ আলাদা ধাঁচের । ওরা চাইলেও একে অপরের সাথে দেখা করতে পারে না , একে অপরের প্রতি অভিমান রাগ যাই হোক সেটা সরাসরি গিয়ে এক গোছা ফুল দিয়ে কাছে জড়িয়ে সব ভুল বুঝাবুঝি মিটিয়ে নিতে পারে না। আর এই না পারার কারণ শুধু মাত্র একটাই , সেটা হলো দূরত্ব । রাজ্যের দুই প্রান্তে দুই জনের বসবাস। তবে কোনক্রমে বর্তমানের সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে ওদের পরিচয় গড়ে উঠে আর সেই থেকেই বন্ধুত্ব আর পরবর্তীকালে সেই বন্ধুত্ব থেকেই ভালোবাসা আর নতুন সম্পর্কের সূত্রপাত।

এই স্থানগত দূরত্ব দিয়ে শুরু এই সম্পর্কের মূল ভীত ছিল একে অপরের প্রতি বিশ্বাস আর ভালোবাসা। সেই জোরেই এই তিন বছর এর সম্পর্কে মাত্র ৪ বার দেখা হয়েছে ওদের। এর মাঝে অবশ্য কম ঝড় যায়নি ওদের জীবনে। তবে একে অপরকে শক্তি বানিয়ে সব সমাধান ঠিক বের করে নিয়েছে ওরা।

অভিমানী ভালোবাসা
অভিমানী ভালোবাসা

তবে মাস তিন আগের থেকে ওদের ওই ঝগড়া মান অভিমান মেশানো সম্পর্কে নানান পরিবর্তন এসেছে। অনীশ কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেছে। কথায় কথায় খালি মিনুর ভুল ধরে সেগুলো শুধরে কম বকা বেশি দিতে শুরু করেছে। অবশ্য অনীশ এর রাগের মাথায় মুখের যে কোনো ঠিক থাকে না , সেটা মিনু খুব ভালো করেই জানে। তাই দিন শেষে সব ঝামেলা মিটিয়ে ওরা একে অপরকে সম্বল করেই বেড়ে ওঠে আর বেড়ে ওঠে ওদের চারা গাছের মতো কোমল সম্পর্কটা।

কিন্তু সব মিটে গেলেও অনীশ এর পরিবর্তন কিছুতেই যেন আটকাতে পারে না মিনু। ওর বারবার মনে হয় অনীশ ওর থেকে কিছু আড়াল করার চেষ্টা করছে , যার জেরে সম্পর্কটা ঠিক আর আগের মত নেই। দিনের পর দিন অনিশের ব্যবহারের পরিবর্তন মিনুর ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। সেও অনীশ এর মত আচরণ শুরু করে। তাই একে অপরকে মানিয়ে চলার জায়গায় শুধু মাত্র ভুল ধরে অশান্তি ঝামেলাতে সম্পর্কের ভীত টা অনেকটাই নড়বড়ে হয়ে উঠে ।

মিনু সকাল সকাল অনীশ কে ম্যাসেজ করে জানায়, “যেভাবেই হোক কাল বিকেলের মধ্যে রেল স্টেশন এ দেখা করো, আমি কাল অপেক্ষা করবো “

মিনুর হঠাৎ এই দেখা করতে চাওয়ার মানেটা অনীশ খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারে , তাই সক্কাল সক্কাল বেরিয়ে পড়ে মনের মানুষটার কথা রাখতে।

পড়ুনঃ- বাস্তব জীবনের কাহিনী 

পরদিন বিকেলে ঠিক চারটা নাগাদ , তিন নাম্বার প্ল্যাটফর্ম এ মুখোমুখি দাড়িয়ে অনীশ আর মিনু। একে অপরের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে , কারোর মনে যেন আগের মত দেখা হওয়ার পরের উৎসাহ টা নেই , তাই জড়িয়ে ধরা তো দূরের কথা, মাঝে ওদের পাঁচিল সম দূরত্ব। ফাঁকা প্ল্যাটফর্ম এ সরাসরি মিনু অনীশ কে জিজ্ঞাসা করে ” তার এই পরিবর্তনের জন্য কে দায়ী ?” সে কি চায়? এসব ব্যাপার যে আর মিনু মেনে নিতে পারছে না , সেটাই স্পষ্টভাষায় অনীশ কে বুঝিয়ে দেয় ।

কিছুক্ষন নিরুত্তর থাকার পর্ অনীশ চুম্বকের বিপরীত মেরুর ন্যায় মিনুকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। ক্রমাগত তার চোখ থেকে জল পড়তেই থাকে। সে ভাঙ্গা গলায় বলতে শুরু করে-

মীইইইই নু…… তোমার কি মনে হয় , আমার এই পরিবর্তনের পেছনে আসল কারণ কি ? জানি তুমি আর উত্তর দেবে না ! যাই হোক সবটা তোমায় না বলা অব্দি শান্তি পাচ্ছি না। শোনো তবে , তুমি তো জানোই আমি বাড়ির বড়ো ছেলে , আমার ওপর বাড়ির সব ছোটদের দায়িত্ব। এদিকে বাবা আর এক বছর পর রিটার্ড করবে , তাই গত কয়েক মাস আগে একদিন আমায় ডেকে বাড়ির চাবি টা হাতে তুলে দিয়ে বললো ” তোর মা যাওয়ার পর্ , আমি একা হাতে তোদের সমলেছি , অনেক গুলো বছর কষ্ট করেছি বাবু , তবে আর শরীর নিতে পারছে না , তাই এবার সংসারের সব দায়িত্ব তোকেই নিতে হবে। তাড়াতাড়ি একটা চাকরি জোগাড় করে বাড়িতে একটা টুকটুকে রাজকন্যা নিয়ে আয়, সে যেন নিজের হাতে এই সংসার টা কে বাগিয়ে নেয়।

রাগ অভিমান ভালোবাসা
রাগ অভিমান ভালোবাসা

এই সমস্ত কথা গুলো সোনার পর বড্ডো দিশেহারা লাগছিল । একদিকে এত পরিশ্রম এর পরেও কোনো চাকরি হচ্ছে না তার চাপ অন্যদিকে , জানি তুমি কিছু কাজ না পাওয়া অব্দি তোমার বাড়িতে বিয়ের জন্য রাজি হবে না , সেটার চাপ। সব মিলে বিশ্বাস করো, কিছু বুঝতে পারছিলাম না কি করবো না করবো । তোমাকে বলতেও ভয় পাচ্ছিলাম , কারণ জানি তুমি এসব নিয়ে ভাববে আর আমি কখনোই চাই না আমার ভালোবাসার মানুষ টা কোনো চোট পাক।

আর পুরুষরা সবসময় নিজেদের থেকে বেশি ভালোবাসার মানুষটা নিয়ে বেশি ভাবে। তাই তোমায় কিছু বলতে গিয়েও বারেরবারে থেমে যাচ্ছিলাম যার জেরেই অনেক আজেবাজে কথা শুনিয়ে ফেলেছি। এমনকি তোমায় অনেক আঘাত ও দিয়ে ফেলেছি।

পড়ুনঃ- একে অপরকে মানিয়ে নেওয়ার গল্প- প্রেমানুভূতি 

মিনু অনীশ এর চোখের জল মুছে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে , “শুনছো প্রিয় , নিজের মধ্যে এত চেপে রেখে কি লাভ ? এতে তো দুই জনের এই ক্ষতি হচ্ছিল , তাই নয় কি ! শুধু ভালো সময় না খারাপ সময়েও তোমার হাত টা একি ভাবে ধরে সব বাধা বিপত্তির সম্মুখীন দুই জনে একসাথে হতে চাই। কথাগুলো বলার পর মনে হচ্ছে , ” না , তারমানে আমাদের সম্পর্কটা সত্যিই সুন্দর ” । আর এসব নিয়ে একদম চিন্তা করো না , দুইজন একসাথে ভালোকরে প্রিপারেশন নিয়ে এই বছরের মধ্যেই কাজ জোগাড় করেই ছাড়বো। আর কাকুর মতেই কাজ পাওয়া মাত্রই বিয়েটা সেরে নেবো , কেমন ? চলবে তো!

অনীশ মিনু কে জড়িয়ে কাঁদতেই থাকে, আর বারেবারে বলতে থাকে ” এভাবেই সবসময় পাশে থেকো , তাহলে নিশ্চিত থেকে যাবো , তোমায় আমায় মিলে “

ovimani valobasar golpo
ovimani valobasar golpo
<

বিশ্বাস আর ভরসার জোরে একটা সুন্দর সম্পর্ক আবার জিতে গেলো। জিতে গেল এক মনের অধিনস্ত দুই মানুষ। তবে সত্যিই! পুরুষরা সবসময় নিজেদের একটা কঠিনের আবরণে মুড়ে, আমাদের কাঁদতে নেই , অনুভূতি প্রকাশ করতে নেই , এটাই আমাদের সাইকোলজি বলতে থাকে … তবে আদৌ কি তাই ! সবার প্রথমে পুরুষরাও তো মানুষ , আর মানুষের ধর্মই তো সবার জন্য সমান।

এক্ষেত্রে কান্নার মাধ্যমে দুর্বলতা নয় পুরুষেরও যে দুঃখ নামক অনুভূতি আছে তার বহিঃপ্রকাশ হয়। অনুভূতি গুলো কাছের মানুষটা কাছে প্রকাশ করলে সম্পর্কটা আরো মজবুত হয় , এতে ছেলেদের ‘সাইকোলজি’ ঠিক কতোটা ব্যাঘাত হয় তার ধারণা আমার ঠিক নেই –
তবে মনের মানুষ সেই
সুখ দুঃখ সব ক্ষণেতেই
যে সমান ভাবে সাথ দেয়।

আলোরানি মিশ্র

গল্পের বুননে-
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে। 

সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।

পড়ুনঃ- 
হারিয়ে যাওয়া প্রেম 

দুঃখের গল্প- ব্যস্ততা 
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র () 

অভিমানী ভালোবাসা। রাগ অভিমান ভালোবাসা। ovimani valobasar golpo

Spread the love

Leave a Reply