আজকের এই অন্যরকম ভালোবাসার গল্প টিতে জঙ্গল সমাজের অংশ বানর এবং কাঠবেড়ালির ভালোবাসার গল্প তুলে ধরেছেন লেখিকা।

অন্যরকম ভালোবাসার গল্পঃ- ‘মিও- আমোরে’

এই যে শুনছেন, হুমম হুমম আপনাকেই বলছি। জানি আপনি মানুষের ভালোবাসার অনেক গল্প শুনেছেন পড়েছেন। কিন্তু কোনোদিন কি জঙ্গল সমাজের প্রেম কাহিনী পড়েছেন ? পড়েন নী বোধয় , সে যাই হোক, আজ আমি আপনাদের জন্য একটা সত্য ঘটনার আঙ্গিকে জঙ্গলের প্রেম কাহিনী নিয়ে এসেছি। কি জানতে চান তো! চলুন তাহলে বলি আপনাকে…

সময়টা ছিল মধ্য প্রস্তর যুগ , ঠিক যখন মানুষ শুধুমাত্র পাথরের ভোতা হাতিয়ার ছুঁচলো করার বিষয়ে পরিদর্শকতা অর্জন করছে , আর শিকারের জন্য তৈরি করছে নতুন নতুন অস্ত্র শস্ত্র । ঠিক সেই সময় বর্তমানের ভারত আর শ্রীলঙ্কার মধ্যে অবস্থিত মান্নার উপকূলে , ছিল বৃহৎ বৃহৎ গাছের অবস্থান । সেই এক একটি গাছ প্রায় আকাশ ছোঁয়া উচ্চতা আর স্থল ভরা আয়তন নিয়ে দন্ডায়মান থাকতো। আবার সেই গাছেদের উচ্চতা অনুযায়ী নাকি নির্ধারণ করা হতো কে রাজা আর কে প্রজা।

এইরকম এই একটি ছোট্ট আম গাছে বাস করতো একটি ছোট্ট কাঠ বেড়ালি। নাম ছিল তার মিও। সে ছোট থেকে তার বাবার মায়ের কাছে শুনে এসেছে , তারা হলো এই ছোট্ট আম গাছটির বাসিন্দা , আর তাদের রাজা হলেন ওই বৃহৎ কুতুব গাছ এর বসবাসকারী একটি বানর যার নাম আমোরে । আর সেই বানরের রাজত্বে নাকি কোনো কিছু বেনিয়ম হওয়ার জো নেই। যেই কিছু ভুল করে তাকেই সেই বানর দেয় চরম শাস্তি। তাই সেই রাগী জেদী বানরের থেকে যেন , মিও সবসময় দূরত্ব বজায় রাখে।
ছোট মিও এর মনে তাই ভীষন কৌতূহল সেই বানর রাজা অর্থাৎ আমোরে সম্পর্কে।

অন্যরকম ভালোবাসার গল্প
অন্যরকম ভালোবাসার গল্প

সে সারাক্ষণ শুধু তার মায়ের বাবার কাছে আমোরেকে নিয়ে জানতে চায়। আর তার এই কৌতূহল দেখে তার বাবা মা যথেষ্ট চিন্তিত বোধ করেন । তাই তাকে নির্দেশ দেন তারা, আমোরে সম্পর্কে সে কিছু জানতে চাইলে তাকে বাদাম খেতে দেওয়া হবে না । মিও এর প্রিয় খাদ্য যেহেতু বাদাম আর আমোরে হলো তার আগ্রহ , তাই সে কোনটাকেই হাত ছাড়া না করে , রাত্রির অন্ধকারে বেরিয়ে পরে আম গাছ থেকে আমোরের খোঁজে।

ওই টুকু মিও এর পক্ষে এত বড় বড় গাছে ঘেরা জঙ্গল এর মাঝে আমোরে কে খুঁজে পাওয়া হয়ে উঠলো ভীষণ মুস্কিল । তাও সে দীর্ঘ কয়েকদিনের যাত্রা শেষে টিয়া পাখি আর ইঁদুরের সাহায্য নিয়ে শেষমেশ কুতুব গাছ এর কাছে পৌঁছতে সক্ষম হলো । কিন্তু গিয়ে ওই প্রকান্ড গাছের কাছে বানরের সেনা দেখে ভীষণ ভয় পেয়ে একটা ছোট গর্তে আশ্রয় নিল । তবে সেই গর্তের ভেতর আবিষ্কার করলো মিষ্টি সুস্বাদু বাদামের বীজ। সেই বীজ খাওয়া আর ফাঁকা পেলেই গাছে চড়ে বানর রাজা আমোরে কে দেখার চেষ্টা সে বারেবারে করতে লাগলো ।

চারদিক সুপারি গাছে ঘেরা , চা বাগানের মাঝে ছোট্ট মিও , বেশ আনন্দে থাকতে শুরু করলো । দীর্ঘ কয়েক মাসের প্রচেষ্টা এর পর একদিন সে শেষমেশ আমোরের কক্ষ তে গিয়ে হাজির হলো। আর মন দিয়ে পর্যবেক্ষণ করে দেখতে লাগলো আমোরেকে । এরপর মিও প্রায় সেই গাছের আড়াল থেকে আমোরে কে দেখতো ,আর মন দিয়ে বাদাম খেতে খেতে তার বাবার মায়ের বলা কথা ঠিক কতটা সত্যি তা যাচাই করার চেষ্টা করতো ।

পড়ুনঃ- একতরফা ভালোবাসার গল্প 

হঠাৎ একদিন আমোরের চোখ গেলো গাছের পেছনের আড়ালে দিকে , সে দেখতে পেলো একটি ছোট্ট কাঠ বেড়ালি খুব আগ্রহ ভরে বসে বসে বাদাম খাচ্ছে । হঠাৎ করে আমোরে তার একটা হাত বাড়িয়ে মিও কে ধরে ফেললো। মিও তো ভয়ে চিৎকার শুরু করে দিলো। কিন্তু আমোরে ছাড়ার পাত্র নয় তাই সে মিও কে নিয়ে নিজের সামনে বসালো। আর পরের পর জিজ্ঞাসা করতে লাগলো , সে এখানে কি করছে ? তার নাম কি ? কোথা থেকে এসেছে ? সেসব নানান প্রশ্ন।

মিও আমোরের করা প্রতিটা প্রশ্নের জবাব খুব শান্ত ভাবে দিয়ে তার ছোটো ছোট দুই হাতে আমোরের দিকে এগিয়ে দিলো সেই বাদামের বীজ । সেও খুব আগ্রহ ভরে সেই বিজ টেস্ট করে দেখলো । আর আদেশ দিলো প্রতিদিন তার জন্য এই রকম বীজ এনে দিতে।

bengali awesome love story
bengali awesome love story

মিও এরপর থেকে আমোরের জন্য প্রতিদিন বীজ নিয়ে আসতো। আর দুই জন একসাথে বসে সেই বাদাম বীজ খেতে খেতে একে অপরকে নিজেদের মনের কথা খুলে বলতো । ধীরে ধীরে মিও এটা বুঝতে পারলো যে তার বাবার মা আমোরে সম্পর্কে তাকে যা কিছু বলেছিল সেগুলো সব মিথ্যে। আসলে এই রাগী বানর এর পেছনে লুকিয়ে আছে একটা কোমল মন যেটা সে সবার সামনে প্রকাশ করে না । আর আমোরে ও মাঝে মধ্যে সেই গাছের নিচে গিয়ে মিও এর সাথে তার জমিয়ে রাখা বাদাম গুলো একসাথে খেতো।

এইভাবে তাদের সম্পর্কের শুরু হলো যেখানে বানর, কাঠ বেড়ালি কে নিজের স্নেহ দিয়ে বোনের মতো করে ভালোবাসত।
কিন্তু হঠাৎ একদিন বেড়ালি বাদাম নিয়ে এলে বানর সেটা মুখে নিয়ে ফেলে দিলো। আর তার সাথে কোনো কথা না বলেই সেখান থেকে চলে গেলো। এদিকে বেড়ালি অর্থাৎ মিও এর হলো ভীষণ অভিমান । সে ঠিক করলো, না আর সে কোনোদিনও আমোরের কাছে ফিরে যাবে না , আর কোনোদিনও তার জন্য বাদাম নিয়েও যাবে না ।

তবে ওই ক্ষণস্থায়ী রাগ বেশিক্ষন তোপে টিকলো না , শেষমেশ মিও আবার বাদাম নিয়ে আমোরের কাছে ফিরে গেলো আর নানান ভাবে তাকে হাসানোর চেষ্টা করলো। কোনো কিছুতেই সে আমোরের মুখে হাসি ফোটাতে না পেরে , আবার নিজের গর্তে ফিরে গেলো ।

কিন্তু আমোরে উপলব্ধি করলো এখনো অব্দি কেউ তার এতটা খেয়াল রাখার চেষ্টা করেনি যতটা সেই ছোট্ট কাঠ বেড়ালি করছে । তার মন খারাপে সেই মিও এর ও মন খারাপ হয়েছে দেখে সে অবাকের সাথে সাথে অদ্ভুত একটা অনুভুতি লক্ষ্য করলো নিজের মধ্যে। এরপর কাঠ বেড়ালি এলে সেই বানর রাজা তার সব কথা শুনে চলতে শুরু করলো। ধীরে ধীরে মিও ও বুঝতে পারলো আমোরেকে ছাড়া একটি মুহূর্ত ও তার শতবর্ষের সমান ।

পড়ুনঃ- কলেজ জীবনের স্যাড লাভ স্টোরি 

ধীরে ধীরে একসাথে থাকতে থাকতে ওরা একে ওপরের অভ্যাস এ পরিণতি হলো । সেই থেকে শুরু হলো একটা নতুন সম্পর্ক যেটা ওরা নিজেরাও বুঝছিল না । কিন্তু যখন বুঝে গেলো তখন আর রাখে কে! কাঠ বেড়ালি অর্থাৎ মিও বুঝতে পারলো সে বানর রাজা অর্থাৎ আমোরেকে ভালোবেসে ফেলেছে। তাই প্রথম প্রথম ভয় পেয়ে না বলতে পারলেও , একদিন সে সাহস যুগিয়ে মনের কথা বলেই ফেললো।

আমোরেও যেন সেটা শোনার অপেক্ষায় ছিল। তাই সে মিও কেও নিজের মনের কথা খুলে বললো , যে ছোট বোন নয় বউয়ের মর্যাদা দিতে চায় সে মিওকে। শেষ মেষ উভয়েই মেনে নিল একে অপরকে। মিও কে আমোরে বোন থেকে সোজা বউয়ের মর্যাদা দেওয়ার কথা দিলো।

কিন্তু এদিকে জঙ্গল সমাজের সবাই মজা করতে শুরু করলো, কোথায় কুতুব গাছ এর রাজা বানর আর কোথায় এতটুকু কাঠ বেড়ালি!

ওদের ভালোবাসা নাকি বানর এর হাতের তালুতে ওদের ভালোবাসাকে তাই জঙ্গল সমাজের কেউ মেনে নিতে রাজি হলো না। এমনকি এটাও বলা হলো বানর কে তার সিংহাসন নয়তো কাঠ বেড়ালি, যেকোনো একটা জিনিস বেঁছে নিতে হবে । বানর হাসি মুখে সিংহাসন ত্যাগ করে কাঠ বেড়ালি কে বেছে নিলো ।

একটি অন্যরকম ভালোবাসার গল্প
একটি অন্যরকম ভালোবাসার গল্প
<

ওরা কারুর তোয়াক্কা না করে একসাথে থাকতে শুরু করল । খুব খুব ভালোবেসে একে অপরকে নিয়ে সুখের সংসার গড়ে তুললো । ওদের সুখী সংসার দেখে ধীরে ধীরে সবাই ওদের সম্পর্কের কাছে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হলো। সবাই মেনে নিল ওদের ভালোবাসাকে। এমনকি সসম্মানে পুনরায় বানর কে রাজ সিংহাসনে বসানো হলো । এভাবেই মিও আর আমোরের সম্পর্ক পূর্ণতা পেলো। পুরো জঙ্গল সাক্ষী রইলো মিও আমোরের ভালোবাসার ।

শুধু মাত্র মানুষ নয় অন্যন্য প্রাণীদের মধ্যেও কিন্তু জাত পাত গোষ্ঠী নিয়ে যথেষ্ট মতবিরোধ আছে। তাও তাদের মধ্যে থেকে কেউ কেউ সব শৃঙ্খল ভেদ করে একে অপরকে নিয়ে নিজেদের পৃথিবী গড়ে তুলে ঠিক যেমনটা গড়ে তুলেছিল মিও আমোরে।।

আলোরানি মিশ্র

গল্পের কথনে-
ড়ুনঃ- 

বন্ধুত্ব থেকে প্রেমের গল্প- অবহেলিত গোলাপ 

একজন অবহেলিত মেয়ের ভালোবাসার গল্প 
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে। 

সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।

আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২

একটি অন্যরকম ভালোবাসার গল্প। bengali awesome love story।

Spread the love

Leave a Reply