প্রেমে ব্যর্থ হয়ে দেবদাস হওয়া কোন সাধারণ ব্যাপার নয়। আবার প্রেমে ব্যর্থ হয়ে সফল হওয়াটাও অস্বাভাবিক কিছু নয়। আসলে এই দেবদাস দুটো প্রকারের হতে পাড়ে। হয় সে নিজেকে এমন জায়গায় নিয়ে যাবে যার কল্পনা কেউ করতে পারবে না, আর নাহয় সে নিজেকে তিলে তিলে শেষ করবে।

প্রেমে ব্যর্থ হয়ে সফলতার গল্পঃ-

মেয়েদের ব্যর্থ প্রেমের গল্পঃ-

ওই নিরুদ্দেশের দেশে শুধু থাকতে চাই একা । একা থাকতে ভালোবাসেন? এমন তো অনেকেই আছেন তাই না , আপনাদের দলে!

বানী বলেও একটা মানুষ আছে , জানতে চান তার গল্পটা? চলুন আজ বানীর গল্পটি শোনাই আপনাদের।

গৈরহাটা গ্রামের তুহিন মিত্রর মেয়ে বাণী। বাবা মায়ের খুব আদরের মেয়ে তাই ওর চোখের জল তাদের কাছে প্লাটিনামের ন্যায় বিরল ও দামী। দেখতে দেখতে ২১ টা বছর পেরিয়ে গেছে স্কুল, কলেজের গণ্ডি পেরিয়েছে বাণী । তবে এর মধ্যে ওর জীবনে অনেকেই এসেছে কিন্তু ওর পরিবার কোনোদিনও তা টের পাইনি। পরিবারের কাছে নিষ্পাপ শিশু মত থাকা মেয়েটার আসল জীবন অমাবস্যার মতো অন্ধকার।

প্রথম যে ছেলেটি ওর জীবনে এসছিল তাকে সবটুকু দিয়ে ভালোবাসলেও ছেলেটি ঠিক সময় তাকে একা ফেলে চলে গিয়েছিল । সেই ভালোবাসার প্রতিশোধ নিতে সে বারবার নিজের জালে ছেলেদের ফাঁসিয়েছে আর তারাও যখন বানীকে নিয়ে স্বপ্নের দুনিয়া গড়ে তুলতে শুরু করেছে , ঠিক তখনি বাণী তাদের থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে । প্রথম প্রেমের আঘাত তাকে একটি নৃশংস জন্তুতে পরিণত করেছে। ছেলেদের পুতুলের মত ব্যবহার করতে করতে ও অদ্ভুত এক খেলায় মত্ত হয়ে উঠেছে ।

বানীর বাবা একদিন বাজার করতে গিয়ে হঠাৎ করে লক্ষ্য করেন তাঁর মেয়ে একটি ছেলের হাত ধরে হাঁটছে । নিজের চোখের থেকেও বেশি নিজের মেয়েকে বিশ্বাস করা তুহিন বাবু মেয়ে বাড়ি ফিরলে জিজ্ঞাসা করেন আজ কোথায় ছিলে সারাদিন? খুব সুন্দর ভাবে বাণী বাগিয়ে মিথ্যে উত্তর দেয় “বাবা আমি স্নেহার বাড়িতে পড়ছিলাম।”

মেয়েদের ব্যর্থ প্রেমের গল্প
মেয়েদের ব্যর্থ প্রেমের গল্প

এরপর থেকে তুহিন বাবু তার মেয়ের ওপর নজর রাখা শুরু করেন বিভিন্ন দিন বিভিন্ন ছেলের সাথে নিজের মেয়েকে দেখে , তার নিজেকেই অপরাধী মনে হয় । মেয়েকে সঠিক পথ দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন ভেবে , নিজেকেই বারেবারে দোষারোপ করেন।

তাই লাগামহীন ঘোড়া কে বাগে আনতে , মেয়ের অজান্তেই তুহিন বাবু ওর বিয়ে ঠিক করে দেন । বাণী নিজের বিয়ের কথা জানার পর ঠিক কি করবে বুঝে উঠতে পারে না । ওর একটা কথাই মাথায় আসে এত গুলো ছেলের সাথে এতদিন কাটানোর পরেও কেউ তার মনের মত হয়নি। তারমানে হয়তো ওর বাঁচার জন্য অন্য কোনো জীবন সঙ্গীর প্রয়োজন নেই হয়তো ও একা বাঁচার জন্য জন্মেছে।

বাণী বাড়ি থেকে পালিয়ে কোনো আশ্রমে চলে যাবে বলে সিদ্ধান্ত নিলো কিন্তু বিয়ের কয়েকদিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় বানীর এমএমএস আর ফটো ভাইরাল হয়ে গেলো । এতদিন ধরে বাণী যেসমস্ত ছেলেদের নিয়ে মিথ্যা প্রেমের খেলা খেলেছে তারাই আজ আসল খেলাটা দেখিয়ে দিয়েছে । তুহিন বাবু এত বড় অপমান সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করতে গেলেন। কিন্তু না, তিনি এক পিতা হয়ে মেয়ের খারাপ সময় একা ছেড়ে যেতে পারেন না ভেবে নিজেকে সংযত করে মেয়ের পাশে দাঁড়ালেন।

পড়ুনঃ- কলজে লাইফের ব্যর্থ প্রেম কাহিনী- অসমাপ্ত 

বিয়ের দিন চলে এলো তবে পাত্র পক্ষ আগেই না করে দিয়েছে । কিন্তু সেদিন বানীর বাড়ি এলো তার প্রথম প্রেম যার জন্য ওই নোংরা খেলায় মত্ত হয়েছিল বাণী। ছেলেটি সবকিছু মেনে নিয়ে বাণীকে বিয়ের প্রস্তাব দিল । বাণী হাসি মুখে তাকে না করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো।

দীর্ঘ পাঁচ বছর পর বাণী আবার বাড়ি ফিরলো তবে আজ ওর পরিচয় শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর । জীবনের অনেক সংঘর্ষ পেরিয়ে একা একা আজ ও এই জায়গায় পৌঁছেছে । ভালোবাসা , প্রেম , আর মোহ এসব থেকে অনেক দূরে ওর একটা একার জীবন আছে যেখানে ও নিজেই নিজেকে নিয়ে একলা থাকতে ভালবাসে ।

আলোরানি মিশ্র

গল্পের রংতুলিতে-
পড়ুনঃ- বাংলা ছোট রহস্য গল্প- স্বপ্ন নাকি বাস্তব 

ছেলেদের ব্যর্থ প্রেমের গল্পঃ-

অভিযোগ বিশাল বড় অভিযোগ। আগেও অভিযোগ ছিল এখনও অভিযোগ আছে। ভাবছেন কার কথা বলছি! আমি বলছি দুলে পাড়ার ছেলে রমেশের কথা। রমেশের গল্পটা প্রথম থেকেই শুরু করি।

আজ থেকে প্রায় ১০ বছর আগের কথা। রমেশ তখন কলেজে পড়ত। মাঝারি উচ্চতা শ্যামলা গায়ের রং আর ছোট ছোট করে কেটে ফেলা চুলে রমেশ কে দেখতে একদম সাধারণ। পড়াশোনায় সে অনেকটা ঠিকঠাক।

ইতিহাস ক্লাস করতে গিয়ে প্রেমে পড়ে যায় তুহিনা নামে এক মেয়ের সাথে। পিছনে ঘুরে ঘুরে মানিয়ে নিয়েছিল মেয়েটিকে। পড়াশোনা প্রেম সব কিছুই চলছিল। প্রায় ছয় মাস কেটে গেছে তাদের সম্পর্কে আসার। কিন্তু ইদানীং তুহিনা যেন একটু বেশিই ব্যস্ত। যেন রমেশকে দেওয়ার মত সময় তার নেই। আগে প্রায় প্রতিদিন দেখা হলেও সেই দেখা হওয়াটা এক সপ্তাহ পর পর হতে থাকে।

কলেজ ছুটি হয়েছে। রমেশ ছুটে গিয়ে তুহিনার পথ আগলে বলে- “তুমি আর আগের মত নেই কেন! কথা দিয়েছিলে সবসময় আমার সাথে থাকবে, আমাকে ব্যস্ততা দেখাবে না। কিন্তু আজ এত ব্যস্ততা কেন তোমার!”

প্রেমে ব্যর্থ হয়ে সফলতার গল্প
প্রেমে ব্যর্থ হয়ে সফলতার গল্প

তুহিনা জবাব দেয়- “আমাদের সম্পর্ক টা হয়ত আর টিকবে না, কারণ আমি তোমাকে আর সময় দিতে পারছি না।” এরপর তুহিনা তার সারাদিনের রুটিন রমেশকে বলতে থাকে- সকালে উঠেই হোস্টেলের সব কাজ সারতে হয়। তারপর টিউশন। টিউশন থেকে এসে কলেজ। কলেজ ছুটির পর মাইন্ড ফ্রেশের জন্য বন্ধুদের সাথে আড্ডা। এরপর রুমে এসে খাবার তৈরি করা আরও অনেক কিছু কাজ আছে।

রমেশ এতক্ষণ চুপচাপ সব শুনছিল। সে এতক্ষণে মুখ খোলে- “তুমি কি আমার উপর রেগে আছো!”

তুহিনা- ” তুমি আমাকে সত্যিকারের ভালবাসোনা। এমনকি আমার বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে গিয়ে কি গল্প হয়েছে না হয়েছে সব তোমাকে বলতে হয়। আর এটা আমার মোটেও পছন্দ নয়। এটা করবে না, ওখানে যাবে না এরকম কিছু ভালোবাসায় মানায় না। তুমি আসলে ভালবাসতেই জানো না। যদি ভালবাসতে জানতে তাহলে কখনো রিপন, সুমন এদের নিয়ে প্রশ্ন করতে না। ওরা তো আমার বন্ধু আর বন্ধু তো থাকতেই পাড়ে।”

পড়ুনঃ- ভালোবাসার গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রমেশ আর কোন কথা বলে না। সে চুপচাপ নিজের রুমে ফিরে যায়। মোবাইলটা হাতে নিয়ে উপরে তুলে কিন্তু সে থেমে যায়। এরপর সে নতুন একটি সিম কার্ড কিনে পুরোনোটি ফেলে দেয় ডাস্টবিনে। এক কাক ভোরে বেড়িয়ে পড়ে সে অজানা এক দিগন্তের উদ্দেশ্যে। সেই রাতে অনেক কেঁদেছিল সে।

এরপর কেটে গেছে বেশ কয়েক বছর। বুকে পাথর চোখে জল নিয়ে যে রমেশ সেদিন ঘর ছেরেছিল সেই রমেশ আজ এক বড় ব্যাবসায়ি। কিভাবে সে ব্যবসায়ী হল সেই গল্পটা অন্যদিন ভাগ করে নেবো।

ছেলেদের ব্যর্থ প্রেমের গল্প
ছেলেদের ব্যর্থ প্রেমের গল্প
<

একদিন রমেশ সকালে খবরের কাগজ পড়ছে। চোখ গেলো কাগজের তিন নাম্বার পাতার মাঝে একটি মেয়ের ছবির উপর। মেয়েটা তার অনেকটা চেনা লাগলো। সে দেখল সেখানে লেখা রয়েছে, বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গিয়ে ধর্ষণ করে খুন হয়েছে তুহিনা রায় নামে এক যুবতী। এই তুহিনা আর কেউ নয় এই তুহিনা হল সেই তুহিনা যাকে একসময় রমেশ নিজের প্রানের থেকেও বেশি ভালবাসত। আর এখনও ভালবাসে। শুধু মাঝে লক্ষ যোজন ফাক।

রমেশ আজও বিয়ে করেনি। কেননা তার উপর ট্যাগ লেগে গেছে সে নাকি ভালবাসতে জানে না। সে আর চায়না তার ভালোবাসার ফাক খুঁজে কেউ আবার তাকে কষ্ট দিক। কেননা সর্বদা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকা মানুষদের মাঝে রমেশের ভালোবাসার কোন মূল্য নেই।

ব্ল্যাক শ্যাডো

গল্পটির লিপিতে-

সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।

গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।

পড়ুনঃ- 
রহস্যে রোমাঞ্চে ভরা কাহিনী পড়ুন 

অসাধারণ সব শিক্ষণীয় গল্প 
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র () 

Spread the love

Leave a Reply