আজকের দূরে চলে যাওয়ার গল্প টিতে ব্যর্থ প্রেমের শেষ কথার শিহরন খুঁজে পাওয়া যাবে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে।

দূরে চলে যাওয়ার গল্পঃ- “দুই পৃথিবী”

ট্রেন লাইনের এপারে দাঁড়িয়ে তিস্তা , ওপারের মানুষটা কে নিয়ে ভেবেই চলেছে । আর ওপারে ট্রেনের কামরায় বসে থাকা মৈনাক অপেক্ষার ঘড়ি গুনছে , কখন তিস্তা তার প্রশ্নের জবাব দেবে।

তিস্তা খুব সাধারণ পরিবারের মেয়ে হলেও সে ছিল তার বাবার মায়ের প্রথম সন্তান । তিস্তার বাবা সরকারি স্কুলে ক্লার্ক এর চাকরি করতেন আর তার মা ছিলেন কর্মনিপুণ গৃহবধূ। অনেক সুখের সংসার ছিল তাঁদের । আর সেই সুখের সংসারে আরেক পরির আগমনে খুশির জোয়ার বয়ে গিয়েছিল তাদের জীবনে ।

এদিকে তিস্তাও পড়াশোনা গান বাজনা সবকিছুতে বেশ পারদর্শী ছিল। এমনকি স্কুলের প্রথম এর শিরোপা সর্বদাই ওর মাথায় বিরাজমান থাকতো । বাবা মায়ের নয়নের মণি সকলের নয়নের মণি হয়ে উঠেছিল ধীরে ধীরে। কিন্তু সুনামির মত আসা এক বদনাম তার জীবনের সমস্ত সুনাম গুলিকে ধূলিসাৎ করে দেয়।

দূরে চলে যাওয়ার গল্প
দূরে চলে যাওয়ার গল্প

ক্লাসের এক সহপাঠী তার নামে একটি চিঠি লিখে স্কুলের গ্রুপ এ দিয়ে দেয়। এরপর সেই চিঠির ব্যাপারে কোনোরূপ পর্যালোচনা না করেই। যে যার মতো তিস্তার নামে বদনাম রটাতে শুরু করলে মেয়েটা ধীরে ধীরে ভেঙে পড়তে শুরু করে । তবে সেই খারাপ সময় তার বাবা মা তাকে ভরসা আর বিশ্বাসের জোরে আবারও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শেখান।

কিন্তু ভেতর থেকে যেমন একবার ভেঙ্গে যায় সেটা কী জোড়া দেওয়া এতটাই সহজ !

আবারো পড়াশোনায় মনোযোগ দিয়ে সে স্কুলের প্রথম স্থান এই অর্জন করে। আর স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায় । তবুও তার মনে সেই বদনামের কলঙ্কের আঁচড় রয়েই যায়। তবে তার ক্ষতি করার জন্য কে এতটা হীন কাজ করলো সেটা জানতে অনেক চেষ্টা করেও সে সফল হয় না । তাই ব্যর্থ প্রচেষ্টা বন্ধ করে কলকাতার এক কলেজে ভর্তি হয়।

স্বল্প সময়ের মধ্যেই তিস্তার পড়াশোনার সুনাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ইতিহাস বিভাগের সেরা ছাত্রী এর শিরোপা প্রথম সেমিস্টারের পরেই তার মাথায় বিরাজমান হয় । নিজের পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকা মেয়েটা কখনো বাইরের কোনো জিনিসের প্রতি আকৃষ্ট হয়নি ।

পড়ুনঃ- অসাধারণ শিক্ষণীয় গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তবে প্রতিদিন কলেজ যাওয়ায় পথে হোক বা ফেরার পথে একটি ছেলে তার অপেক্ষায় রাস্তার মোড়ে রোজ অপেক্ষা করতো। এই বিষয়টা তিস্তা লক্ষ্য না করলেও তার বান্ধবীরা বেশ লক্ষ্য করে। আর ছেলেটি সম্পর্কে সব খবরাখবর নিয়েই তিস্তা কে জানায় । তবে এসব জেনেও তিস্তার মনে কোনোরূপ আগ্রহ জন্মেনি । কারণ তার মন জুড়ে তখনও কলঙ্কের ক্ষত তার অপরাধীকে খোঁজার চেষ্টাতে রত ছিল ।

এভাবেই দেখতে দেখতে দুই বছর কেটে যায়। এর মধ্যে ছেলেটির অদম্য জেদ আর সাহসের জন্য সে তিস্তার খুব ভালো বন্ধু হয়ে ওঠে। কিন্তু তিস্তা বন্ধুত্বের শুরুতেই জানিয়ে দেয়, তার জীবনে কখনো কোনো ছেলে বন্ধুর জায়গা ছিল না। আর সে যখন প্রথম কোনো ছেলের সাথে বন্ধুত্ব করছে, তখন সেই বন্ধুটি যেন তার বন্ধুত্বের সীমার গণ্ডি লঙ্ঘন না করে । তাই সেই ছেলেটি অর্থাৎ মৈনাক তিস্তার কথায় খুব সহজেই রাজি হয়ে যায়।

ব্যর্থ প্রেমের শেষ কথা
ব্যর্থ প্রেমের শেষ কথা

দেখতে দেখতে তিস্তা মৈনাকের খুব কাছের বন্ধু হয়ে ওঠে। তিস্তার না বলা কথাগুলোও অদ্ভুতভাবে মৈনাক বুঝে যায়। তিস্তার মন খারাপ , রাগ , খারাপ লাগা ,ভালো লাগা সব কিছুতেই মৈনাক সবটা দিয়ে তাকে আগলে রাখতে শুরু করে। অদ্ভুত রকমের একটা অধিকার বোধ জন্মে একে অপরের প্রতি । আর সেই অধিকার বোধ বন্ধুত্বের সীমা অতিক্রম করে । তিস্তা নিজেই মৈনাক কে আর কারুর সাথে মিশতে দেওয়া, কথা বলা কোনোটাই মেনে নিতে পারে না । তাই ছোট ছোট ব্যাপার নিয়ে শুরু হয় ঝগড়া ঝামেলা , আর এসবের মাঝে তিস্তার 5 th সেমের এক্সাম এর রেজাল্ট খারাপ হয় । সব মিলিয়ে তিস্তা সরাসরি মৈনাকের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।

দেখতে দেখতে আরো ছয় টা মাস পেরিয়ে যায়। মৈনাক অনেক চেষ্টার পরেও তিস্তার সাথে কোনোরকম যোগাযোগ করতে পারে না। ইতিমধ্যে এক্সাম শেষ হয়ে রেজাল্ট এর দিন সবাই একসাথে কলেজে উপস্থিত হয়। পুনরায় মুখোমুখি হল মৈনাক-তিস্তা । মৈনাক তিস্তার পায়ের কাছে বসে পড়ে আর বারবার হাত জোড় করে ক্ষমা চেয়ে বলে , “জানি তুই সবটা জেনে গেছিস , তাই আমার মুখ আর তুই দেখতে চাস না। কিন্তু বিশ্বাস কর সেদিন যেটা ঘটেছিল তার জন্য আমি দায়ী ছিলাম না । সত্যিই আমি কিছু জানতাম না ….।।

পড়ুনঃ- অজানা ও অবাক করা তথ্য পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তিস্তা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে , মানে ?
তুই আমায় কি বলতে চাইছিস ….. কি করেছিস তুই ?

মৈনাক মাথা নত করে বলে ….. তুই এতদিন ধরে, তোর নামে মিথ্যে রটানো যে ছেলেটাকে খুঁজছিস, সে আসলে আমি….. কিন্তু বিশ্বাস কর আমি ইচ্ছে করে কিছু করিনি।

আমি সায়েন্স ডিপার্টমেন্ট এর স্টুডেন্ট ম আর তুই আর্টস। তাই তোকে দুর থেকেই একতরফা ভালোবাসায় পড়ে গিয়েছিলাম । কিন্তু বারবার চেষ্টা করেও আমার মনের কথা তোকে জানাতে পারিনি। কিন্তু সেদিন একটা চিঠি তোর জন্য আমি লিখেছিলাম আর তোর এক বান্ধবীকে সেটা দিয়েছিলাম তোকে দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিশ্বাস কর সে যে ওইভাবে তোর দুর্নাম ছড়াবে, আমি স্বপ্নেও কল্পনা করিনি। সেই অপরাধ বোধ আজ অবধি আমায় কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে । পারলে ক্ষমা করে দে তিস্তা ….. দয়া করে পারলে ক্ষমা করে দে ।

তিস্তা সবটা শুনে হতবাক হয়ে যায়। তার অজান্তেই দুই চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে এতদিনের জমিয়ে রাখা তার অপরাধীর খোঁজ এর সমস্ত প্রচেষ্টা । সব রাগ যেন চোখের জল হয়ে গড়িয়ে পড়ে।

bengali sad love story broken heart story bangla
bengali sad love story broken heart story bangla
<

রেল স্টেশনে মুখোমুখি আবার দেখা হয় মৈনাক তিস্তার । একে অপরের দিকে চেয়ে থাকে। অপরাধীর দৃষ্টিতে মৈনাক তিস্তার কাছে হাত জোড় করে বলে, পারলে ক্ষমা করে দিও আমায় । তবে এতদিনের বন্ধুত্বের আড়ালে যদি অন্য কোনো বিষয় তুই লুকিয়ে রাখিস তাহলে আজ অন্তত সেটা আমায় জানিয়ে দে । কারণ আজ আমি অনেক দূরে চলে যাচ্ছি। আর চাইলেও হয়ত এখানে ফিরতে পারবো না। আমি কামড়ায় বসছি। পারলে তোর উত্তরটা জানিয়ে যাস।

নির্বাক শ্রোতা হয়ে সবটা শোনার পর তিস্তা সেখানে দাঁড়িয়েই থাকে। মৈনাকের ট্রেনের ভেতর অপেক্ষা করতে থেকে তিস্তার উত্তরের। তিস্তার চোখের সামনে ট্রেনটা ধীরে ধীরে স্টেশন ছেড়ে রওনা দেয়।

মৈনাক এর অপরাধ বোধ আর তিস্তার নিস্তব্ধতা শেষমেশ , হাজারো ব্যর্থ প্রেমিক এর দলে ওদের গল্পটাকেও শামিল করে। এভাবেই আলাদা হয়ে যায় আবারও দুই মনের মানুষ দুই পৃথিবী।।

আলোরানি মিশ্র

গল্পের চিত্রপটে

গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।

সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।

পড়ুনঃ- 
কলেজ লাইফের ব্যর্থ প্রেম কাহিনী- অসমাপ্ত 

ভালোবাসার গল্প- বিশ্বস্ত হস্ত 
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র () 

দূরে চলে যাওয়ার গল্প। ব্যর্থ প্রেম গল্প। ব্যর্থ প্রেমের শেষ কথা new bengali sad love story. broken heart story bangla.

Spread the love

Leave a Reply