(আজব আইন)পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই নিজস্ব সংবিধান রয়েছে। আর এই সংবিধানে রয়েছে বিভিন্ন প্রকার আইন বা নিয়ম কানুন। তবে এদের মধ্যে কিছু দেশের আজব আইন বা আজব নিয়মকানুন দেখে আপনিও অবাক না হয়ে থাকতে পাড়বেন না।
আজ আমরা কথা বলব কিছু দেশের আজব আইন নিয়ে।
আজব আইন আজব নিয়মকানুনঃ-
গ্রীসে হাই-হিলস পড়া যাবে না
বাইরে বেড়াতে যাব, আর হাই হিলস সঙ্গে নিব না, তা কি কখনো হয় বলুন তো? কিন্তু না আপনি গ্রীসে হাই হিলস পড়ে ঘুরতে পাড়বেন না। ২০০৯ সালে গ্রিস সরকার সেখানে হাই হিলস পরিধান করে ঘুরে বেড়ানো বন্ধ করে দিয়েছে।
আমরা জানি যে, গ্রিস সাধারণত স্থাপত্যের এবং ভাস্কর্যের শহর। প্রায় ২৫০০ বছরেরও পুরানো স্থাপত্যের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে এখানে। হাই হিলস এর পেছনের ভাগ সাধারণত খুবই তীক্ষ্ণ হয়ে থাকে। যার ফলে এই ধ্বংসাবশেষের উপর দিয়ে হাটার সময় সেগুলির গায়ে দাগ পড়ার একটি বিশাল বড় সম্ভাবনা থাকে। এই কথাটিকে মাথায় রেখেই, গ্রিস সরকারের এই ভাবনা। তাই সেখানে ঘুরতে গেলে অবশ্যই নরম সোলের জুতা পড়ে যেতে হবে।
অস্ট্রেলিয়ায় ঘুড়ি ওড়ানো নিষিদ্ধ
পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে…। এমন দিনে মাঠে ঘুড়ি ওড়ানোর মজাই আলাদা। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার আইন অনুসারে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়ায় আপনি পাবলিক প্লেসে ঘুড়ি ওড়াতে পাড়বেন না।
আমাদের দেশে দেখা যায়, এরকম অনেক মানুষই আছেন, যারা অন্য লোকেরা বিরক্ত হলেও তাদের কথা না শুনে নিজের খেলা জারি রাখে আবার অনেককে তো রাস্তাতেও খেলতে দেখা যায়, কিন্তু আপনি অস্ট্রেলিয়ায় পাবলিক প্লেসে এমন কোনো খেলা খেলতে পাড়বেন না, যাতে অন্য মানুষের অসুবিধা হয় বা অন্য মানুষ বিরক্ত হন।
বার্সেলোনার রাস্তায় খালি গায়ে ঘোরাঘুরি করা বে-আইনি
মাথার উপরে গনগন করছে সূর্য, এই সূর্যের তাপে ঘেমে-নেয়ে একাকার। মন চাইছে শরীরের জামাটিকে খুলে ফেলার। কিন্তু না, বার্সেলোনার আইন অনুসারে রাস্তায় ছেলেরা সার্ট ছাড়া ঘুরতে পাড়বে না। আবার অনেক বিদেশী দেশ আছে যেখানে মেয়েরা গরমের সময় রাস্তায় ছোট কাপড় (আপনাকে বুঝে নিতে হবে কি বলতে চাওয়া হয়েছে) পড়ে বেড় হন, কিন্তু বার্সেলোনায় আপনি যদি এরকমটি করেন, আপনাকে মাশুল গুনতে হবে ২৬০ ইউরো অর্থাৎ ভারতীয় টাকায় প্রায় ২৩০৫৪ টাকা। এবার সিদ্ধান্ত আপনার গরমে জামা গায়ে রেখে ঘুরবেন নাকি, জামা খুলে এতগুলি টাকা ফাইন দিবেন!
যদিও আগে এই আইনটি সেখানে ছিল না ২০১১ সালে এই আইনটি সেখানে পাশ হয়। আবার আপনি যদি সুইমিং শুট পড়ে রাস্তায় ঘুরতে ঘুরতে পুলিশের চোখে পড়ে যান তাহলেও আপনাকে ফাইন দিতেই হবে।
সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ চুইংগাম
মুখে চুইংগাম কানে হেডফোন, রাস্তায় একাকী। কিন্তু না সিঙ্গাপুরের রাস্তায় আপনি এমনটি করতে পাড়বেন না। এমনকি সিঙ্গাপুরের দোকানেও আপনি এগুলি কিনতে গেলে পাবেন না। সময়টা ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দ, এই বছরেই সিঙ্গাপুরে চুইংগাম আমদানি এবং বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়। আসলে এমন একটা সময় ছিল যেখানে সিঙ্গাপুরের সাফাই কর্মীদের এই যত্রতত্র ফেলে দেওয়া চুইংগামের অবশেষ গুলি পরিষ্কার করতেই দিন কেটে যেত। যার ফলে একসময় সরকারের বার্ষিক গড়ে প্রায় ১৫০,০০০ ডলার অতিরিক্ত খরচ হত। একারনেই সিঙ্গাপুরে চুইংগাম ব্যান করে দেওয়া হয়েছে।
এবার হয়ত ভাবছেন যে, এগুলি আবার পরিষ্কার করার কি হল? আমরা জানি যে, সিঙ্গাপুর হল পরিষ্কার জায়গা, এখানে ভারত বা বাংলাদেশের মত, জঙ্গলের পাহাড় আপনি পাবেন না, রাস্তাঘাট পরিষ্কার রাখতেই সরকারের এই পদক্ষেপ। তাছাড়াও যদি কখনো রাস্তায় ভুল করে, জুতাতে এই গাম লেগে যায়, তারপর এটাকে ছাড়াতে যা সমস্যা ভোগ করতে হয়, সেটি হয়ত আপনার অজানা নয়।
রেডিওতে বাজাতেই হবে দেশীয় শিল্পীদের গান
রেডিও সেন্টার বাংলাদেশী কিন্তু গান চালাচ্ছে ইংরেজি! কিন্তু কানাডার ক্ষেত্রে বিষয়টা একটু আলাদা। ক্যানাডিয়ানরা মনে হয় একটু বেশি দেশপ্রেমী। তাই ক্যানাডার আইন অনুসারে সেখানকার রেডিও সেন্টারগুলিকে ৩৫% সময় কানাডার নিজস্ব আর্টিস্টদের গান বাজাতেই হবে। বিশেষত সকাল ৬ টা এবং সন্ধ্যা ৬ টায়। এই নিয়ম পালন না করলে রেডিও সেন্টারের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও আইনে বলা রয়েছে।
শ্রীলঙ্কাতে বুদ্ধের সামনে সেলফি নিষিদ্ধ
অনেক টাকা খরচ করে, বাইরে ঘুরতে যাব, আর ফটো তুলব না, তা কি কখনো হয়? কিন্তু অনেকটা এমনই আইন রয়েছে শ্রীলঙ্কাতে। সেখানে বুদ্ধদেবের মূর্তির সামনে গিয়ে আপনি কোনো সেলফি তুলতে পাড়বেন না। তাদের মতে আপনি যখন সেলফি তুলছেন তখন আপনি বুদ্ধদেবকে পিছনে রাখছেন এবং আপনার আঙ্গুল সেলফি তোলার জন্য উপরে তুলছেন অর্থাৎ বুদ্ধদেবের প্রতি আঙ্গুল দেখাচ্ছেন। এর অর্থ আপনি বুদ্ধদেবকে সম্মান করছেন না এবং অবমাননা করছেন। তবে সব জায়গায় নয় কিছু কিছু জায়গায় আপনি সেলফি তোলার উপরে ব্যান দেখতে পাড়বেন।
তবে শরীরে বুদ্ধদেবের ট্যাটু বানানো যাবে, তবে ট্যাটুর ভঙ্গি যেন খারাপ না হয়। ২০১৪ সালে একজন ব্রিটিশ মহিলাকে খারাপ ট্যাটুর জন্য ৩ দিন জেল খাটতে হয়েছিল।
তাই শ্রীলঙ্কাতে গেলে এই নিয়ম আপনাকে প্রথমেই জেনে নেওয়া উচিত।
রাস্তায় চলতে চলতে ফিউয়েল শেষ হলে কপালে দুঃখ আছে
কক্ষনো কি রাস্তাতে গাড়ি নিয়ে চলতে চলতে আপনার ফিউয়েল শেষ হয়েছে? আপনার হয়ত এমনটা হয়নি। কিন্তু আপনি হয়ত অনেককেই দেখেছেন, যারা বাইক বা গাড়ি ফিউয়েল শেষ হওয়ায় ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু জার্মানির রাস্তায় কেউ যদি এভাবে ঠেলে গাড়ি নিয়ে যায়, তাকে মোটা অঙ্কের ফাইন দিতে হবে, কেবলমাত্র এখানেই শেষ নয়, আপনি যদি ফিউয়েল শূন্য অবস্থায় ফিউয়েল সেন্টারে যান, তাহলে সেখানেও আপনাকে ফাইন কাটা হবে। আসলে জার্মানির রাস্তাগুলি দ্রুত গতি সম্পন্ন হয়, অন্যদিকে কেউ যদি হেঁটে যায়, তাও আবার গাড়ি নিয়ে তাহলে রাস্তা জ্যাম হওয়ার আশঙ্কা থাকে, এই কথা মাথায় রেখেই জার্মানির সরকারের এই সিদ্ধান্ত।
আমাদের দেশের রাস্তার পাশে লাগানো স্পীড বোর্ডে এখন পর্যন্ত আমার দেখা সর্বোচ্চ স্পীড লেখা ছিল ৬০ কিমি/ ঘণ্টা, কিন্তু জার্মানির বেশিরভাগ অটোবাহন গুলিতে স্পীড বোর্ডে লেখা থাকে, ১০০ কিমি/ ঘণ্টা। তাহলে হয়ত বুঝতেই পারছেন ,সেখানকার রাস্তা কত দ্রুত গতি সম্পন্ন হয়ে থাকে।
ডেনমার্কে ফেস মাস্ক নিষিদ্ধ
আমরা অনেকেই নিজের পরিচয় গোপন রাখার জন্য ফেস মাস্ক ব্যবহার করি। আবার অনেককেই দেখা যায়, ফেস মাস্ক পড়ে রাস্তায় ঘুরছেন। কিন্তু শুধুমাত্র ফেস মাস্ক নয়, আপনার মুখমণ্ডল ঢাকা থাকে এমন কিছুই আপনি ডেনমার্কে পড়তে পাড়বেন না।
ফেস মাস্ক, পর্দা, টুপি, হেলমেট, নকল দাঁড়ি এমনকি বোরখা-ও কেউ পড়তে পাড়বে না। মোট কথা নিজের পরিচয় গোপন রাখে, এমন কিছু আপনি সেখানে পড়তে পাড়বেন না। ২০১৮ সালে এই আইনটি কার্যকর হয়। আইন প্রণেতাদের মতে, এরফলে কোনো পাবলিক প্লেসে কোনো খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে আসা লোকজনকে সহজেই খুঁজে পাওয়া যাবে।
প্রকাশ্যে স্ত্রীদের মদ্যপান মানেই ডিভোর্স
বর্তমানে ছেলেদের পাশাপাশি অনেক মেয়ে এমনকি অনেক বিবাহিত মহিলারাও নেশা করেন। যার ফলে পরিবারে এই নিয়েই অনেক ঝামেলাও হয়। বলিভিয়ার আইন অনুসারে আপনি যদি বিবাহিত মহিলা হন, তাহলে আপনি এক গ্লাসের বেশি মদ্যপান করতে পাড়বেন না।
কোনো ব্যাক্তি যদি তার স্ত্রীকে প্রকাশ্যে মদ্যপান করতে দেখেন, তাহলে তার পুরো অধিকার আছে, তার স্ত্রীকে সঙ্গে সঙ্গে ডিভোর্স দেওয়ার।
কিন্তু আমার মতে শুধুমাত্র মেয়েদের বেলায় কেন? ছেলেদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম করা হোক। যাতে সব পরিবার সুখী হয়।
আরও পড়ুনঃ-
আজব ও অদ্ভুত ১০ টি গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড
চীনের আইন অনুসারে বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে সন্তান দেখাশোনা করতে বাধ্য
এবার চীনের একটি খুবই সুন্দর আইনের বিষয়ে আসি। আমাদের দেশে, দেখা যায় যে, বৃদ্ধ মা-বাবা দিন কাটাচ্ছে বৃদ্ধাশ্রমে। আবার ছেলে-বউ বৃদ্ধ মা-বাবার উপর নানান অকথ্য অত্যাচার চালায়। কিন্তু চীনের আইন অনুসারে ৬০ –এর বেশি বয়স্ক মা-বাবার দায়িত্ব সন্তানকে নিতেই হবে। শুধুমাত্র তাই নয়, তাদের কাজের দায়িত্বও আপনাকে নিতেই হবে।
তা না করলে সেই পিতা-মাতার পুরো অধিকার আছে আইনের দ্বারস্থ হওয়ার। যদিও আমাদের দেশে এই আইনটি রয়েছে, কিন্তু সেটি কেবলমাত্র কাগজে কলমে আবদ্ধ। বর্তমানে আমাদের দেশে এর কোনো অস্তিত্বই প্রায় খুঁজে পাওয়া যাবে না।
জাপানের আইন অনুসারে ভুঁড়ি বাড়লে চলবে না
আমাদের দেশে ভুঁড়ি ওয়ালা মানুষের অভাব নেই, বিশেষ করে, আমাদের রক্ষকরা তাদের ভুঁড়ি অনেক বেশি বাড়িয়ে ফেলেছেন। কিন্তু জাপানের আইন অনুসারে ভুঁড়ি বাড়লেই আপানর কপালে শনি আছে। তাই ঠিক মত ডায়েট মেনে চলতে হবে, ভুঁড়ি বাড়তে দিলে হবে না।
জাপানের এই বিশেষ আইনটির উদ্দেশ্য হল সব জনগণকে ফিট রাখা। Metabo law নামের এই আইনে ৪০-৭৪ বছর বয়সী সব ব্যাক্তিকে বছরে একবার মেদ পরীক্ষার জন্য ডাক্তারের নিকট যেতে হয়।
যদি কোনো পুরুষের কোমরের মাপ ৩৩.৫ ইঞ্চির বেশি হয়, তাহলে তাকে বেশ মোটা অঙ্কের ফাইন দিতে হবে, অবশ্য মহিলাদের ক্ষেত্রে কোমর হতে হবে ৩৫.৪ ইঞ্চির মধ্যে।
কোনো মতামত থাকলে আমাদের জানাতে ভুলবেন না। প্রতিদিন আপডেটের জন্য আমাদের ফেসবুক পেজ বা ফেসবুক গ্রুপ অজানা তথ্য এ যুক্ত হতে পারেন।
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।