আজ দুটি শিক্ষণীয় বাংলা গল্প থাকছে আপনাদের জন্য। এই শিক্ষণীয় ছোট গল্প দুটির মাধ্যমে ভালো কিছু শিক্ষা দেওয়ার প্রচেষ্টা করা হয়েছে। তাহলে এই নতুন শিক্ষণীয় গল্প দুটি পড়তে থাকুন।

শিক্ষণীয় বাংলা গল্প। নতুন শিক্ষণীয় গল্প। শিক্ষণীয় ছোট গল্পঃ-

শিক্ষণীয় বাংলা গল্প ০১ঃ-

আজ থেকে কয়েক দশক আগের কথা। ভারতের রাষ্ট্রপতি রাশিয়া সফরে গিয়েছিলেন। সেখানে রাষ্ট্রপতির যত্ন-আদির কোনো রকম খামতি ছিল না। রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভারতের রাষ্ট্রপতির যাতে বিন্দুমাত্র অসুবিধা না হয়, সেদিকে পুড়ো নজর রেখেছিলেন। রাশিয়ার রাষ্ট্রপতির এমন বন্ধুত্ব মূলক আচরণে ভারতের রাষ্ট্রপতি মুগ্ধ হয়ে যান। সেখানে পাঁচ দিন কাটানোর পড়, এবার রাষ্ট্রপতি মহোদয়ের ভারতে ফেরার পালা। ফেরার সময় রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভারতের রাষ্ট্রপতির হাঁতে দুটি কাকাতুয়া পাখি দিয়ে বললেন- “এই পাখি দুটি আমাদের দুটি দেশের মধ্যে বন্ধুত্বকে দর্শাবে। এদের যত্ন নিবেন।

এরপর রাষ্ট্রপতি ভারতে ফিরে আসেন। যেহেতু কাকাতুয়া দুটি তখন ছোট ছিল, তারা উড়তে পাড়ত না। আবার তাদের মা যেহেতু তাদের কাছে নেই, তাই তাদের উড়তে শেখানো নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান রাষ্ট্রপতি। এরপর রাষ্ট্রপতি তার ভবনের সামনের বিশাল জাম গাছটার উপড়ে পাখিদের থাকার জন্য একটি ছোট্ট বাসা বানিয়ে নেন। এরপর পাখি দুটিকে সেখানে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এরপর পাখিদের উড়তে প্রশিক্ষণ দেবে তথা, পাখিদের প্রতিদিন দেখাশোনা করবে এমন ব্যাক্তিকে নিয়োগ করা হল, এবং তাকে জানিয়ে দেওয়া হল যে, পাখি দুটি যেন শীঘ্র উড়তে শেখে। দিন যায়, সপ্তাহ যায়, এরপর একমাস কেটে যায়, ব্যস্ততার মাঝে রাষ্ট্রপতি মহাশয় একদিন পাখি দুটি উড়তে পাড়ছে কি না, তার খোঁজ খবর নিতে এলেন।

শিক্ষণীয় বাংলা গল্প। নতুন শিক্ষণীয় গল্প
শিক্ষণীয় বাংলা গল্প। নতুন শিক্ষণীয় গল্প

এরপর প্রশিক্ষক জানালেন- কাকাতুয়া দুটির মধ্যে একটি উড়তে শিখে গেছে ঠিকই, কিন্তু অপরটি কিছুতেই উড়তে পাড়ছে না, সে প্রতিদিন ওই ডালটিতে গিয়ে বসে থাকে, আর খাবার খাওয়ার সময় খাবার খেয়ে যায়। চুপটি করে ওই ডালে গিয়ে আবার চোখ বুজে আরাম করে।

কিন্তু রাষ্ট্রপতি মহাশয় মনে যেন কিছুতেই শান্তি পেলেন না, কারণ একটি কাকাতুয়া উড়ছে আর অন্যটি উড়ছে না। এরপর তিনি একজন মন্ত্রীকে ডাকলেন, পরামর্শ করে, এবার একজন ব্যাধকে নিয়োগ করলেন, কারণ ব্যাধেরা পশু-পাখিদের সম্পর্কে অনেক ভালো জানে।

কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হল না। সেই কাকাতুয়াটি কিছুতেই উড়ছে না। খাবার খেয়ে সেই একটি ডালে আরাম করেই সে দিন কাটিয়ে দিত। ব্যাধের কোনো প্রচেষ্টাই কাজে আসছে না দেখে, আবার লোক পরিবর্তন করে নতুন প্রশিক্ষক নিয়োগ করা হয়। এভাবে দশজন প্রশিক্ষক নিয়োগ করা হলেও সেই পাখিটি মোটেই উড়ছে না।

এরপর একজন মন্ত্রী বললেন, তার নাকি একজন চেনা-পরিচিত মানুষ আছে যিনি বনের পশুপাখিদের খুঁজে অসুস্থ পশুদের চিকিৎসা করেন। পরামর্শ মত সেই মানুষটিকে নিয়ে আসা হল। কিন্তু সেই মানুষটি আসা মাত্রই সবাই দেখে অবাক হয়ে গেলেন, কারণ সেই পাখিটিও এবার উড়ছে। রাষ্ট্রপতির কানে এই কথাটি যাওয়া মাত্রই তিনি চলে এলেন এবং বললেন, এতজন প্রশিক্ষককে নিয়োগ করা হল, কেউই সফল হল না, আর আপনি কিভাবে এই পাখিটিকে উড়াতে সফল হলেন?

এরপর সেই লোকটি বলল- মানিনীয় রাষ্ট্রপতি মহোদয়, আমাকে যখন জানানো হয় যে, পাখিটি খাবার খেয়ে প্রতিদিন একটি ডালে গিয়ে শুধু আরাম করে, সেদিনই আমি বুঝে গিয়েছিলাম এই পাখি সহজে শায়েস্তা হবার নয়। তাই আমি ওই পাখিটি যে ডালে আরাম করত সেই ডালটিই কেটে দিয়েছি। আর ডালটি কেটে দেওয়াতেই পাখিটি তার প্রিয় জায়গাটি হারিয়ে ফেলে, আর প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে সে উড়তে থাকে।

শিক্ষণীয় ছোট গল্প। নতুন শিক্ষণীয় গল্প। bangla ছোট গল্প।
শিক্ষণীয় ছোট গল্প। নতুন শিক্ষণীয় গল্প। bangla ছোট গল্প।
ছোট গল্পের শিক্ষণীয় নীতিকথাঃ-

আমাদের প্রত্যেকের স্বপ্ন অনেক অনেক বড় হয়ে থাকে, কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ জন্য প্রয়োজনীয় চেষ্টা আমরা কিছুতেই করি না। আমরা সেই স্বপ্ন পূরণ করার পেছনে কঠিন রাস্তার কথা ভেবেই শঙ্কিত হয়ে যাই। আর সেই পাখিটির মতই চুপচাপ আরাম করতে থাকি, আমরা ভেবে বসে থাকি যে, আমাদের দ্বারা হবে না। আবার খাবার তো পাচ্ছিই এই মানসিকতাটাও অনেকের সাথে কাজ করে। কিন্তু শুধু একবার সেই আরাম থেকে বাইরে বেড়িয়ে আসুন তো!

দেখুন তো একবার চেষ্টা করে, পাড়বেন কি না! যখনই আমাদের আরাম কেড়ে নেওয়া হয় তখনই আমরা লাফিয়ে পড়ি, আর দেখা যায় সেই পাখিটির মত সহজেই উড়তে পাড়ি। কিন্তু তার চেয়ে বরং যদি আগে থেকেই চেষ্টা করি, দেখা যাবে সেই কাজটি আমাদের কাছে কিছুই নয়। তার চেয়ে বরং কিছু আগেই যদি আমরা উড়তে শিখে যাই, তাহলে আর ক্ষতি কি?

পড়ুনঃ- নৈতিক শিক্ষামূলক ছোট গল্প

শিক্ষণীয় বাংলা গল্প ০২ঃ-

বিলাশপুর গ্রামে বিলাশ নামে এক ব্যক্তি বাস করত। সে সারাদিন শুধু ঘুমিয়ে কাটাত, আর মাঝে মধ্যে উঠে খাবার খেত। এরপর সে কি খাবে সেটিই ছিল তার মূল চিন্তা। শুধুমাত্র ঘুম-খাওয়া আর ঘুরে বেড়ানো এই ছিল তার জীবন। এরকমই একদিন ঘুরতে ঘুরতে সে তাদের গ্রামের একটি আপেলের বাগানে চলে যায়।

গাছে ঝুলছে পাকা পাকা লাল আপেল, সেগুলি দেখে আর লোভ সামলানো যায় না। বিলাশ ঠিক করল সে আপেল খাবে। সে গাছের কাছে গিয়ে আপেল পাড়তে লাগল। কিন্তু ক্ষেতের মালিক যে সেখানেই কাজ করছিল, সেটি কিছুতেই এই অলস বিলাশ দেখতে পাড়েনি। ক্ষেতের মালিক তাকে লাঠি নিয়ে তারা করে, বিলাশ হাতের আপেল ফেলে দিয়ে দিল এক চৌ চৌ দৌড়। সে পিছন ফিরে দেখে ক্ষেতের মালিক লাঠি হাঁতে আসছে, সে আরও বেশি জোড়ে দৌড় দেয়।

BANGLA গল্প বাংলা গল্প নতুন গল্প
BANGLA গল্প বাংলা গল্প নতুন গল্প image
<

দক্ষিণ দিক দিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে একসময় সে গ্রাম ছেড়ে একটি বনে পৌঁছে যায়। সে পিছন ফিরে দেখল কিন্তু ক্ষেতের মালিক কে আর দেখতে পেল না। এতদূর দৌড়ে আশায় তার অবস্থা পুড়ো শেষ। সে ক্লান্ত হয়ে একটি গাছের নীচে বসে পড়ল আর হাফাতে লাগল।

হঠাৎই তার নজর একটি হরিণের উপর পড়ল। হরিণটির একটি পা কোনো কারণে ভেঙ্গে গেছে, আর সেটি তার শরীরেই ঝুলছে। হরিণটি ঠিক মত হাটতেও পাড়ছে না। সেই ব্যক্তিটি ভাবল এই জঙ্গলে এত হিংস্র পশু বাঘ, শিয়াল, নেকড়ে আছে কিন্তু কেউই একে খেয়ে নিচ্ছে না কেন?

হঠাৎ তার কানে, সমস্ত পশুপাখিদের চিৎকার করে পালিয়ে যাওয়ার শব্দ আসতে লাগল। সেই লোকটি ভয় পেয়ে একটি গাছে উঠে পড়ল। সে দেখল যে, একটি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার আসছে। হরিণটিকে হয়ত এবার সে মেরে ফেলবে। কিন্তু বাঘটি হরিণটির কাছে এসে, থমকে দাঁড়াল। বাঘটির মুখে রেয়ছে কিছু ঘাস। ঘাস গুলি হরিণটির সামনে রেখে, কিছুক্ষণ পড় বাঘটি চলে গেল। এটি দেখে সেই লোকটি ভাবল- বাঃ ঈশ্বর আছেন মানতেই হবে। ঈশ্বর এই দুনিয়ার সমস্ত জীবকে সাহায্য করেন।

এরপর সে গাছ থেকে নীচে নেমে এল এবং তার বাড়িতে চলে এল। বাড়িতে এসেই সে দরজা জানালা খোলা রাখল এবং আবার ঘুমিয়ে পড়ল। পাড়ার মানুষেরা তাকে দরজা জানালা খোলা রাখার কারণ জিজ্ঞাসা করতেই সে বলল-“ঈশ্বর আমাকে সাহায্য করতে আসবেন, তাই ঈশ্বরের যাতে আমার ঘড়ে ঢুকতে অসুবিধা না হয়, তাই দরজা জানালা খোলা রেখেছি।

পড়ুনঃ- শিক্ষণীয় রূপকথার গল্প

এদিকে পুরোদিন চলে যায়। দুইদিন কেটে যায়, এক সপ্তাহ কেটে যায়। কিন্তু ঈশ্বর আর আসে না। লোকটি আর বিছানায় ঘুমিয়ে থাকতে পাড়ল না, কারণ খিদের জ্বালায় পেট চুঁইচুঁই করছে। সে ঘড় থেকে বাইরে বেড় হতেই কেদারনাথগামী এক সাধুবাবাকে দেখল এবং তার কাছ এগিয়ে বলল- ঈশ্বর বাঘের রূপ ধরে সেই আহত হরিণটিকে সাহায্য করতে এলেন, কিন্তু আমাকে সাহায্য করতে আসছেন না কেন? আমাকে কি ঈশ্বর দেখতে পাড়েন না নাকি?

সাধুটি বলল- পুত্র ঈশ্বর তোমাকে ঠিকই দেখছে। কিন্তু তোমার কর্ম দোষের কারণে ঈশ্বর তোমার কাছে দেখা করতে আসছেন না। কর্ম কর। ফল স্বয়ং ঈশ্বর এসে দিয়ে যাবেন। হতেও তো পাড়ে ঈশ্বর তোমাকে বড় কোনো গিফট দেওয়ার কথা ভাবছেন। তাই কর্ম ত্যাগ করো না।

charpatra.com-কিভাবে-লেখা-পাঠাতে-হয়
charpatra.com-কিভাবে-লেখা-পাঠাতে-হয়
ছোট গল্পের শিক্ষণীয় নীতিকথাঃ-

আমরা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব। আমাদের এই শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট কি আর সাধেই আমরা পেয়েছি? উঁহু মোটেই নয়, নিশ্চয়ই আমরা এমন কিছু করেছি বা করছি যার জন্য শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট আজও আমাদের দখলে। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের মধ্যেই রয়েছে অবিস্মরণীয় শক্তি। কিন্তু যথেষ্ট চর্চার অভাবে, উপযুক্ত ব্যবহারের অভাবে আমরা সেই শক্তি হারিয়ে ফেলছি। যদি আমরা কর্ম না করে, “ঈশ্বর তো আছেনই, তিনি সহযোগিতা করবেন” ভেবে বসে থাকি, তাহলে ঈশ্বরও আমাদের দিকে ফিরে তাকাবেন না। নিজেকে সেই বাঘটির মতো গড়ে তুলুন, যাতে নিজের সাথে সাথে অপরেরও সহযোগিতা আপনি করতে পাড়েন। আর আমি জানি যে, আপনি এটি পাড়বেনই।

টেলিগ্রামে যুক্ত হওয়ার জন্য ক্লিক করুন- ছাড়পত্র অফিশিয়াল

আমাদের ফেসবুক পেজ- গল্প আর গল্প-তে যুক্ত হতে ভুলবেন না যেন।

শিক্ষণীয় বাংলা গল্প। বাংলা নতুন গল্প।

Spread the love

Leave a Reply