মিষ্টি প্রেমের ছোট গল্প। জানা বা অজানাই আমাদের কাউকে ভালো লেগেই যায়। আর এই ভালোলাগা ধীরে ধীরে ঘনীভূত হতে থাকে। আবার এই ভালোলাগা অনেক সময় অপ্রকাশিত হিসেবেও থেকে যায়। বাকি বিস্তারিত আপনি না হয়, এই বাংলা গল্প দুটি পড়েই আয়ত্ত করে ফেলুন! ও হ্যাঁ আরেকটি কথা, আপনার মতামত কিন্তু অবশ্যই জানাবেন।

মিষ্টি প্রেমের ছোট গল্প। বাংলা গল্প।

মিষ্টি প্রেমের ছোট গল্পঃ-

ভালোবাসা আমার জীবনে যে আসে নি এটা ভুল। এসেছিল নিরবে খুব নিরবে, রঙ ছিলো ফিকে, তাই বুঝে উঠতে পারিনি । ছাত্র অবস্থায় একবার বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গিয়েছিলাম রাগ করে। ইস্টার্ন বাইপাসে ঘর নিয়েছিলাম। তখনও ওখানে বড়োলোকেদের বসবাস শুরু হয়নি। কম ভাড়াতেই ঘর পেয়ে গিয়েছিলাম। তবুও দুই তিন মাসের ভাড়া বাকি পড়ে গিয়েছিল একবার। দুই একটা টিউশনি আর জুনিয়র আর্টিস্ট এর কাজ করতাম তখন।

তখনই এসেছিলো দ্বিতীয় প্রেমটা কিন্তু রঙটা এতো ফিকে ছিলো বুঝতে পারি নি। 8B রোডের চৌমাথার ওখানে একটা ছাত্রী পড়াতাম। সেই দিন পড়াতে ঢুকবো তখন, ছাত্রী বললো ” স্যার আপনাকে আজ থেকে আসতে হবে না। মা বাবা আপনার টাকাটা দিয়ে গেছে। আপনাকে দিচ্ছি।”

আমি হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম। কারণ মাইনেটা শুধু মোটা অঙ্কের ছিলো না, ভালো মন্দ খেতেও দিতো ওরা। আর মেয়েটিও আগের চেয়ে বেশি পড়াশোনায় মনোযোগী হয়েছে, পরীক্ষায় ফল ভালো করছে। মেয়েটি আমার চাকরি যাবার কারণটা বলেও দিলো। ও বললো “আমাদের এক আত্মীয়ের বাড়ীতে একটা ঘটনা ঘটেছে, কাল যে বিয়ে বাড়ীতে গেলাম সেখানে। প্রাইভেট টিউটরের সাথে আমার ঐ দিদি বিয়ে করে নিয়েছে। আপাতত সবাই মেনে নিয়েছে কারণ ছেলেটি সরকারি চাকুরি পেয়ে গেছে, বেশ বড় বাড়ির ছেলে। আপনিও ভালো কথা বলেন, যে কোনো মেয়ে প্রেমে পড়তে পারে,কিন্তু আপনি তো নিজের বাড়িটাই ছেড়ে চলে এসেছেন, কবিতা টবিতা লেখন। তাই বাবা-মাকে, আত্মীয় স্বজনরা আপনাকে ছাড়িয়ে দিতে বললো।”

আমি হেসে বলেই ফেললাম “দুঃখ হলো সন্ধ্যায় ভালো টিফিন জুটবে না আর ..”
এই সময় দেখলাম একটা হাঁটু ছেঁড়া জিন্স প্যান্ট , আর টক টকে লাল টপ পরে, ওর দিদি চোখ মুছেতে মুছতে কোথায় যেন বেড়িয়ে গেলেন। তবে তিনি যে পাড়ার মোড়ে আমার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন, সেটা আমার জানা ছিলো না। হঠাৎ পথ আগলে আমাকে বেশ বকাঝকা দিলো ” আপনি এমনটা কেন? এ বয়সের ছেলেরা কত ভাট বাজি করে। বাবা মায়ের টাকায় ফুর্তি করে। আর আপনি মা-বাবা দুটো কথা শুনিয়েছে বলে বাড়ি ছেড়ে দিলেন! আপনার বাবা নাওয়া খাওয়া প্রায় ছেড়ে দিয়েছে জাননে? আপনার মা ভীষন কাঁদেন। বাড়ি চলে যান প্লিজ আমার জন্য। “

মিষ্টি প্রেমের ছোট গল্প
মিষ্টি প্রেমের ছোট গল্প

আমি কিছু বলতে যাচ্ছিলাম। আমাকে একটা এগরোল হাতে ধরিয়ে দিলো। ভীষন খিদে পেয়েছিল তাই আমি এগরোলে মনোসংযোগ করলাম। উনি নিজের মতো আবার বকতে শুরু করলেন-
” আপনি সন্তুকে পড়াতে আসলে ভাঙা সাইকেল নিয়ে আর আসবেনা না। এখন আমার সাথে যাবেন আপনাকে ভালো পোশাক কিনে দেবো।”
আমার বেশ আত্ম সন্মানে লাগলো, বললাম – ” আমার পোশাক আপনি কিনে দিবেন কেন? আমার পয়সা হলে আমি কিনে নেবো। তাছাড়া যত ঝগড়া হোক মা বাবার কেনা জামা কাপড় আমি ঠিক নিয়ে আসবো।”

উনি ধমকে উঠলেন ” না সেটা হবে না। আমি যেটা বলব সেটিই শুনবেন, কারণ আপনার চাকরিটা আমার জন্য গেছে। বাবা মা আমার বিয়ে মিত্র অ্যাঙ্কেলের ভাইপো রাহুল এর সাথে ঠিক করে ছিলো। আমি মা বাবাকে বলে দিয়েছি, আমার আপনাকে পছন্দ। তাই আমার কথা মতো আপনাকে চলতে হবে স্মার্ট বয় হতে হবে।”

পড়ুন- অবহেলা থেকে ভালোবাসা-কলেজ লাইফের লাভ স্টোরি

আমি মনে মনে ভাবলাম চাকুরী নয়। আজ আমাকে আমার জামাকাপড় নিজেকেই কাঁচতে হয়েছে। দুই দিন ধরে পড়া সবজী দিয়ে ভাত খেতে হচ্ছে। কারণ আমার বাড়িওয়ালার মেয়ে মিঠাই, লুকিয়ে লুকিয়ে আমার রান্নাটা করে দিতো, ঘরটা গুছিয়ে দিতো। জামা কাপড়টাও কেঁচে দিতো। দুই দিন ধরে সে রেগে বোম হয়ে আছে। হাঁটু ছেঁড়া জিন্স প্যান্ট, লাল টপ পড়া কোনো একটা মেয়ে আমার মুদির দোকান আর দুই মাসের বাড়ির বকেয়া ভাড়া দিয়ে গেছে। পরিচয়ে বলে গেছেন দূর সম্পর্কের আত্মীয়া। চাপ দিতে বলেছে মামাতো বোন। মিঠাইের দাবি সেই বোন যেনো আমার কাজ গুলো করে যায়।

তবে পৌলমী দেবীর হাতে একবার চা খাবার সৌভাগ্য হয়েছিল। আমি চা খেতে ভালোবাসি বলে ইউটিউব দেখে শিখে ছিলেন,উনার বোন জানিয়ে ছিলো। তবে সেটিকে চা না বলে সরবৎ বললে ভালো হয়। যদিও এটা উনার দোষ নয়। ইউটিউবার বলেছিলো চিনি দেবেন আপনার স্বাদ অনুযায়ী!

প্রেরক- মানব মণ্ডল facebook

গল্পটি লিখিত হয়েছে যায় কলমে-
পড়ুন- অসাধারণ সব প্রেমের গল্প 

বাংলা গল্প- মিহিদানাঃ-

বড়োরা তো সবসময় বলে থাকে যে, এটা ঘোর কলি চলছে বাপু এতে সব সম্ভব। এতদিন কথাটা শুনেও অতটা পাত্তা দিই নি, কিন্তু আজকের ঘটনা শোনার পর, ঘোর নাকি জানিনা তবে বাচ্চাগুলো যে বড্ডো আধুনিক হচ্ছে তার পরিচয় অবশ্যই পেলাম।
গ্রামের জুনিয়র স্কুল এ ক্লাস ৬ এর ছাত্রী গোপা রায় আর তার সঙ্গী হল, নিলু মিশ্র আর বামা মিশ্র। ক্লাসের তথা পুরো গ্রামের ফেমাস ছেলে এরা ২ জন। ওই স্কুলেরই ক্লাস ৭ এর ছাত্র প্রেম তিওয়ারি । গোপা মামাবাড়িতে থাকে ওর বাবা মা থাকে বর্ধমানে তাই সে দাদু দিদার খুব প্রিয়।

এদিকে বর্ধমানের মিহিদানা খুব ফেমাস তাই ক্লাসের সমস্ত ছেলে মেয়েরা গোপা কে মিহিদানা বলে ডাকে। ও চুপ করে সহ্য করে নেয়। কিন্তু আজ বিষয় টা একটু অন্য রকম ঘটেছিল। গোপারই এক বান্ধবী, ব্ল্যাক বোর্ডে “গোপা রায় মিহিদানা” বড়ো বড়ো করে লিখে দিয়েছিল। সাথে তাকে নিয়ে চরম ইয়ার্কি চলছিল। ক্লাস ৫ এর বাচ্চা গুলোও আজ যোগ দেয় তাই গোপার অবস্থা দেখার মত হয়। ও বেচারির সাথ দেবার মতো কোনো বন্ধু ছিল না। তাই ও কেঁদেই ফেলেছিল। এতক্ষন অব্দি ক্লাসের বাইরে নিলু আর বামা জল আনতে গিয়েছিল তাই ওরা কিছুই জানতে পারেনি। এসে যখন দেখে সবাই গোল করে ঘিরে গোপা কে বুলি করছে তা দেখে ওরা দৌড়ে যায় প্রেমের কাছে।

সুন্দর বাংলা গল্প
সুন্দর বাংলা গল্প

প্রেম এর পরিচয় টা ভালো করে দি তাহলে এবার। ওর মাসী ওই স্কুল এরই টিচার, ছেলেটা পড়াশোনাতে মোটেই ভালো না কিন্তু মারপিট আর খেলা ধুলাতে ওর পাত্তা পায় এমন কেউ নেই। স্কুলের কোনো ছেলে ওর সাথে তর্কে যেতে চায় না কারণ সবাই জানে ও ঠিক কতটা জেদী আর রাগী। এবার প্রেম কে গিয়ে যখন নিলু আর বামা সব বলে তখন প্রেম ছবি আঁকছিল। সব শোনার পর রং গুলো দেয়ালের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে ছুট্টে গেলো ক্লাস ৬ এর রুমের সামনে। তখন গোপার সামনে একটা ছেলে দাড়িয়ে ছিলো,তার দিকে লক্ষ্য করে প্রেম হাতের সামনে কুড়িয়ে পাওয়া একটা পাথর নিয়ে ওর ওপর ছুড়ে মারল। ছেলেটার চোখের ঠিক ওপরে পাথর টা গিয়ে সজোরে আঘাত করায় ছেলেটা মাটিতে বসে পড়ে কাঁদতে শুরু করলো।

প্রেম গিয়ে বললো তোকে কে বলেছিল বল গোপার সামনে দাড়াতে? নইলে তো আমি এটা ছুড়তাম না। শুধু তোকে এক থাপ্পড় মারতাম। ছেলেটা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো তার মানে তুই আমাকে মারতি? তখন প্রেম বললো- কে কে গোপা কে এতক্ষন ধরে বিরক্ত করছিলি বল? তারা সাহস আছে তো সামনে আয়, ক্লাস ৫ এর আর ক্লাস ৬ এর প্রায় ৪ টা ছেলেকে মেরে ও জাস্ট রুম থেকে বেরোতে যাচ্ছে, তখন একটা ছেলে ওকে ধাক্কা দিয়ে ছাদে উঠে গেলো। প্রেম পিছু পিছু দৌড়ে গিয়ে ছেলেটাকে ধরে কষিয়ে এক থাপ্পড় মারলো। তারপর জামার কলার টা ধরে ছাদের রেলিং এর বাইরে অর্ধেক টা শরীর বের করে বললো আর বিরক্ত করবি কোনোদিন গোপা কে?

ছেলেটা তো ভয়ে না টাও ঠিক করে বলতে পারছিল না, তারপর গোপার কথায় ছেলেটাকে তুললো প্রেম। গোপাকে বললো মার তুই একে, এখুনি মার। গোপা শুধু হালকা করে হাতটা ছুঁইয়ে সরিয়ে নিলো। এটা দেখে প্রেম হেসে হেসে বললো কাঁদতে শিখেছিস শুধু , কাজের কাজ কিছুই শিখিস নি। এতকিছু ঘটছিল স্কুলে, কিন্তু অফিসে বিশ্রাম রত কোনো স্যারের এদিকে খেয়াল ছিল না। বাচ্চারা কি করছে না করছে। কাউকে কিছু না জানিয়ে প্রেম গোপাকে স্কুল থেকে নিয়ে চলে এলো নিজের সাইকেল এ চাপিয়ে। বাড়ি পৌঁছে দিয়ে বলে গেলো কিছু হলে প্রথমে আমাকে জানাবি।

নতুন বাংলা গল্প
নতুন বাংলা গল্প
<

বিকেল এ ঘুম থেকে উঠেই যেই বাইরে বেরিয়েছি অমনি টিউশন এর স্টুডেন্ট গুলো এলো। আর স্টুডেন্ট গুলো অন্য কেউ নয় গোপা নিলু আর বামা। সপ্তাহের ৪ দিনের মধ্যে ঘটে যাওয়া ৭ দিনের সব ঘটনা নিলু আমায় এসে বিবরণ দেয়। ওদের মুখেই শুনলাম, ঘটনাটা জানার পর প্রেমের মাসী ওকে স্কুল থেকে restricted করবে বলেছে। তার প্রতিউত্তরে প্রেম বলেছে, গোপার সাথে কেউ খারাপ ব্যাবহার করলে আমি আবারও এরম করব। এটা শোনার পর ওর মাসী ওকে গৃহবন্দি করে রেখেছে।

আচ্ছা আপনাদের কি মনে হয় বলুন তো  প্রেম ঠিক করেছে না ভুল করেছে ? আর এটার জন্য ওর কি শাস্তি পাওয়া উচিৎ, নাকি কোনো শাস্তিরই প্রয়োজন নেই? কোনটা ?
আপনাদের মতামত অবশ্যই জানাবেন।।

প্রেরক- আলোরানি মিশ্র

অসাধারণ গল্পটি যার কলমে পরিপূর্ণতা পেয়েছে-

আপনার লেখা গল্প আমাদের সাথে ভাগ করে নিতে পাড়েন অনায়াসেই। আপনার লেখা গল্পটি আমাদের ইমেল করুন- charpatrablog@gmail.com -এ। অথবা নীচের সোশ্যাল মিডিয়ার লিংক গুলিতে ক্লিক করে আমাদের সাথে ভাগ করতে পাড়েন। আপনার লেখা গল্পের স্বাদ আস্বাদনের প্রতীক্ষায় আমরা—

পড়ুনঃ- স্কুল লাইফের প্রেমের গল্প  
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 
ফেসবুক গ্রুপ- গল্প junction
ফেসবুক- ছাড়পত্র
টেলিগ্রাম- CharpatraOfficial
WhatsApp Group- ছারপত্র (২)

“মিষ্টি প্রেমের ছোট গল্প। বাংলা গল্প। সুন্দর বাংলা গল্প”

Spread the love

Leave a Reply