হারানো প্রেম ফিরে আসার গল্প টিতে খুঁজে পাবেন বহু সময় পর পাশে পেয়েও ‘সে আমার তো!’ এই সন্ধিহান প্রশ্নের গুপ্ত উৎকণ্ঠা।।

ফিরে আসার গল্প:- ‘শুভ মহরত’

জিয়া আমাকে দেখে আবেগ সামলাতে পারলো না। আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমি হতভম্ব! বৃষ্টি আমাদের দেখছে ‌। আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে ফেললাম, ” আমি যে জানি তুই গাড়ি এক্সিডেন্টে মারা গেছিস।”

ওর চোখে জল। আমার কাঁধটা ছুঁলো খুব আস্তে। ধীরে ধীরে ও বললো “হুঁ খবরটা আমি ছাপাতে বলে ছিলাম। কারণ চাচা, আব্বু সবাই জেনে গিয়েছিলো তোর কথা। তোকে ওরা পেলে, তোর জীবনটাই শেষ করে দিতো।”

আমি বললাম ” বৃষ্টি দেখছে, ছাড়া”
বৃষ্টির দিকে তাকাতেই ” আমার বাপি কি তোমার বয়ফ্রেন্ড, নতুন ম্যাম! ”
একটু আমতা আমতা করে জিয়া বললো ” না… তবে বেস্ট ফ্রেন্ড ”

ফিরে আসার গল্প
ফিরে আসার গল্প

বৃষ্টি গড়গড় করে ওর নিজের কথা বলতে শুরু করে দিলো ” বাপি আমার বাপি হলেও আমার মাম্মির বয়ফ্রেন্ড নয়। আমার মাম্মি তখন আকাশে তারা হবার জন্য হাসপাতালে ভর্তি। বাপি আমার বাবা হতে চাইছিলো। কিন্তু কোর্ট থেকে আমি মেয়ে বলে বাপিকে আমার বাবা হতে দিচ্ছিলো না। মানে আমাকে এডপ করতে দিচ্ছিলো না। তাই আমার মাম্মিকে বিয়ে করে। আমার বাপির কোন গার্লফ্রেন্ড নেই। তুমি হবে আমার বাপির গার্ল ফ্রেন্ড।”

ওর কথা শুনে জিয়া হাসতে লাগলো খুব। জিয়া বৃষ্টির স্কুলে শিক্ষকতা চাকুরী নিয়ে এসেছে। এখান থেকে কুড়ি কিমি দূরে মথুরা রিফাইনারিতে ওর বর অফিসার হয়ে এসেছে মাস তিনেক। ওর একা ভালো লাগছে না বলেই চাকুরী নিয়েছে। ওর বর খুব ব্যস্ত থাকে মাঝে মাঝে দিল্লী যায়। তাই উইক এন্ডে এখানে আসবে বলেছেন। ও আমার নতুন ভাড়াটে।

ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময় জিয়ার সঙ্গে আলাপ। আমি মাঝপথে থামিয়ে দিলাম পড়াশোনা। কারণ, সাহিত্য চর্চা আমার মূল লক্ষ্য ছিলো। তাই পুঁথি গত শিক্ষা শিক্ষিত না হয়ে ভবঘুরে জীবন যাপন বেছে নিলাম।

পড়ুনঃ- করুন প্রেমের গল্প 

ও পড়াশোনা শেষ করে ভালো চাকরিও পেয়ে গেলো। আমার নিউজ পোর্টালে প্রথম ও পয়সা ইনভেস্টমেন্টই করলো শুধু নয়, ও এডমিন মানে ব্যবস্থাপক ছিলো । এ সময় মনে হলো পয়সা ইনকাম করতে হবে । তাই বিদেশে পাড়ি দিলাম। দূরত্ব বেড়ে যাওয়ার পর মনে হতে থাকলো , আমি ওকে আর ও আমাকে ছাড়া একেবারে অচল। দুই জন দুই জনকে ছাড়া কিছুই যেনো ভালো লাগে না।

ঠিক করলাম আমরা একসাথে থাকবো। ভারত বর্ষ, বাংলাদেশ, পাকিস্তানের মানুষরা ধর্ম নিয়ে বড্ড বেশি মাতামাতি করে। তাই দেশ ছেড়ে, ইউরোপ গিয়ে আমরা এক সাথে থাকবো বলে ঠিক করলাম। কিন্তু হঠাৎ খবর পেলাম ও মারা গেছে। আসলে ওকে বাংলাদেশ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আর আমি কাজের জগতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লাম। তারপর ক্যাপ্টেন অভয় স্যারের বাড়িতে বৃষ্টির সাথে আলাপ।

bengali new love story
bengali new love story

টরটর করে তখনও কথা বলতো। ওর মা বাবার সাথে অশান্তি করে ডিভোর্স নিয়ে চলে এসেছিলো বাপের বাড়িতে। কিন্তু কপালে সন্তানের সুখ হলো না উনার। ক্যানসার হয়েছিল উনার। আমি বৃষ্টিকে দত্তক নিতে চেয়েছিলাম। অভয় স্যার খুশি হয়েছিলেন। উনার একটা জমি পড়েছিলো রাজস্থানে, ভরত পুর শহরে কাছে । আমি সেই জামিটাকে আজ, আয়সি গ্যাস্ট হাউসের রূপ দিয়েছি। এখানে থেকে আগ্রা , গোবর্দ্ধন, বৃন্দাবন, বরসনা, ডিগ সব যেতে পারবেন আপনি আমার গাড়ি নিয়ে। সুন্দর ফুলের বাগান, পুকুর, রেস্টুরেন্ট, একটা ছোট মন্দির। আশ্রমিক পরিবেশ। তবে আমার প্রচার কম। তাই একটা দুইটো স্থায়ী ভাড়াটে রাখবো বলে ঠিক করেছিলাম। জিয়া আমাদের প্রথম ভাড়াটে।

বৃষ্টি , জিয়া , আমি বেশ ভালোই কাটছিল আমাদের। সেইদিন হঠাৎ জিয়াউল ওর সাথে খুব চ্যাঁচামেচি করলো। জিয়া খুব ভেঙে পরলো । জিয়াউল ওকে তালাক দিয়ে দিয়েছে তুচ্ছ কারণে। খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেলো আসলে জিয়াউল দিল্লিতে মিস সোমা বলে কোন মহিলার সাথে রিলেশনে আছে। বাড়ির অমতে জিয়াউলকে ও নিকা করছিল। ফলে ও বাড়িতে ফিরতে পারবে না।

আমি ওকে নিয়ে গোবর্দ্ধনে আমার মাসির কাছে গেলাম। মাসি সব শুনে হেসে বললো “তুমি কেন বলছো , তোমার আত্মীয় স্বজন কেউ নেই যার কাছে যাবে তুমি। এই তো তোমার পরম আত্মীয় গোবিন্দ আছে, একে তুমি সন্তানের মতো ভালোবাসতে পারো, সখার মতো মনের কথা বলতে পারো।”

পড়ুনঃ- অসম্পূর্ণ ভালোবাসার গল্প 

ও কেমন একটা বিভোর হয়ে গেলো। আমরা ওখানে দুই একদিন থাকলাম। মাসি বললো ” শুধু নাম আর পোশাক দিয়ে তো মানুষ বুঝতে পারে তুমি হিন্দু , না মুসলিম। জিয়া নামটা বদলে , আজ থেকে যদি তোমাকে বিষ্ণুপ্রিয়া ডাকি কেমন হবে! আর একজন ছেলে ছেড়ে চলে গেছে তো ভালো হয়েছে, তোমার সামনে অনেকের মধ্যে নতুন করে ভালো বন্ধু বাছাই করার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে সে তোমাকে। তাই তাকে ধন্যবাদ দাও। নতুন কাউকে বেছে নাও তুমি।”

ও আমার দিকে তাকালো । মাসি সব বুঝতে পেরে আমাদের বিয়ের ব্যবস্থা করলো। বৃষ্টি ও খুব খুশি। আমাদের বিয়ে হল। বৃষ্টির পাকামি কম হবার নয়। সে আমার মাসির কাছে শোবে বললো। সে বললো ” কাল থেকে কিন্তু আমি তোমাদের কাছে শোবো না বুঝতে পারলে তো। ”

কিন্তু সত্যি ফুল শয্যা করা হলো না। জিয়া ফোনে কল এলো। হাইওয়েতে জিয়াউল এর গাড়ি দূর্ঘটনা হয়েছে। হয়তো সে আর বাঁচবে না।

osadharon প্রেমের গল্প
osadharon প্রেমের গল্প
<

জিয়া খুব ভেঙে পরলো। মাসি বললো ” তদ হৃদয়ং মম্ বললেই হৃদয় মিলন যেমন হয় না, তালক বা একটা সই দিয়ে একটা সম্পর্ক ভাঙা যায় না। তাই মন চাইলে যাও তুমি। তবে মন না চাইলেও তোমাদের যাওয়া উচিত। মন্দির মসজিদ গির্জায় প্রার্থনা করলেই ঈশ্বর কে পাওয়া যায়, কে বলে? মানুষের বিপদের পাশে থাকার যে আনন্দ তাই ঈশ্বরের সঙ্গ সাক্ষাত সমান। নারী স্ত্রী হয় মায়ের মতো ই , সে শুধু আশ্রয় দেয়। তাই তুমি যাও মা। ”

আমি গাড়ি স্টার্ট দিলাম। জানি না আমার জীবনের শুভ মহরত হলো কিনা আজ। একটা নারী সত্যিই আশ্রয়, সে আশ্রয় যদি আমার না জুটেও আমার মেয়ে বৃষ্টির আছে, ওকে আঁকড়ে কাটিয়ে দিতে পারবো আশা করি বাকি জীবনটা।

মানব মণ্ডল

গল্পের ভাবনায়-
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে। 
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
পড়ুনঃ- দুঃখের প্রেম কাহিনী 

হৃদয় ছুয়ে যাওয়া প্রেমের গল্প 
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

ফিরে আসার গল্প। প্রেমের গল্প। 1 new bengali love story

Spread the love

Leave a Reply