কিছু কিছু প্রেম আছে, যেগুলি বর্ণন করা সহজে সম্ভব নয়। এই নিঃস্বার্থ ভালোবাসা গল্প গুলি পর্যবেক্ষকদের কাছে নেহাতই পাগলামি পনা মনে হয়।

নিঃস্বার্থ ভালোবাসা গল্পঃ- ‘অতিথি’

ইস কি অসভ্য দেখ দেখ, যেন কোনোদিনও খেতে পায়নি । কোথা থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে কি জানি! তবে সুমন কেউ বলি হারি, পৃথিবীতে আর মেয়ে ছিল না কোথাও। শেষমেশ কোথা থেকে একটা গাইয়া মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে এলো!

সৈকত, মেঘনার বলা কথা গুলো শুনেও না শোনার ভান করে , পাস কাটিয়ে পেরিয়ে গেলো। কেমন যেন একটা ভয় পাওয়া দৃষ্টিতে ওই নির্মল মুখটার দিকে চেয়ে রইল।

সুমন তার স্ত্রী স্বপ্না কে জিজ্ঞাসা করলো ” আর কি খাবেন বলুন ? আপনার যেটা ইচ্ছে অর্ডার করুন “
সলজ্জ্য দৃষ্টিতে স্বপ্না, মাথা নিচু করে উত্তর দিলো , ” আমি তো মাছ ভাত খাচ্ছি , পেট ভরে এসেছে । আপনিও কিছু খেয়ে নিন “
খাবার শেষে সুমন রুমাল দিয়ে স্বপ্নার হাত মুখ মুছিয়ে দিতে গেলে , মেঘনা এসে সুমনের হাত টা ধরে ফেললো ।

নিঃস্বার্থ ভালোবাসা গল্প
নিঃস্বার্থ ভালোবাসা গল্প

-“কি রে সুমন , এসব কি দেখছি ? শহরের সুশিক্ষিত সুন্দরী মেয়েদের লাইন লেগে আছে তোর পেছনে আর তুই কিনা এই কুৎসিত চেহারার একটা গাইয়া মেয়েকে বিয়ে করলি ? দেখ দেখ , কি বিচ্ছিরি ভাবে খাবার গুলো ফেলেছে । এরম মেয়েকে নিয়ে কেউ রেস্টুরেন্ট এ আসে ? তোর কি বোধ বুদ্ধি সব বিলোপ পেয়েছে নাকি? আদিখ্যেতা করে আবার মুখ মোছাতে যাচ্ছিস ? নিজের চোখকেও তো বিশ্বাস করতে পারছি না রে…”

সৈকত দুর থেকে সবটা দেখছিল, শেষমেশ মেঘনার অভদ্রতার বাঁধ ভাঙন রুখতে , নিজে এসে রুখে দাড়ালো ওদের সামনে।

“আচ্ছা মেঘনা সুমন কাকে বিয়ে করবে , কার মুখ মোছাবে সেটা সম্পূর্ণ ভাবে ওর ব্যক্তি গত ব্যাপার , এতে তুই বলার কে ? তুই তো আমার হবু স্ত্রী নাকি ? তাহলে সুমনের ব্যক্তিগত ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করিস না। চুপচাপ চল এখান থেকে।

সৈকত মেঘনার হাত টা ধরে বেরিয়ে যেতে গেলে ,সুমন পেছন থেকে ওর জামার কলার টা টেনে ধরলো ।
সুমনে, সৈকত কে টানতে টানতে নিয়ে গেলো রেস্টুরেন্টের সামনে রাস্তায় । চণ্ডাল রূপি সুমনের দৃষ্টির চাহনিতে, সৈকতের বুক কেঁপে উঠলো।

মেঘনা ওদের মাঝে এসে বারবার সৈকত কে সুমনের হাত থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও , ব্যর্থ হলো । সুমনের হাতের ঝাঁকুনিতে মেঘনা বেশ কিছুটা দূরে গিয়ে ছিটকে পড়লো। সুমনের এই রূপ আচরণ মেঘনা প্রথমবার প্রত্যক্ষ করে কাঁদতে কাঁদতে এসে ওর পা দুটো জড়িয়ে ধরে বলল ” ওকে ছেড়ে দে সুমন , সব দোষ আমার । আমি ভুলকথা বলে ফেলেছি , শাস্তি দেওয়ার হলে আমায় শাস্তি দে । “

পড়ুনঃ- প্রেমের গল্প- এক পশলা বৃষ্টি 

সুমন চিৎকার করে বলে উঠলো ” তোর কোনো দোষ নেই মেঘনা । আসল দোষী এই সৈকত ” ওর জন্য তিনটা জীবন নষ্ট হয়েছে , হ্যাঁ হ্যাঁ তিন তিনটা জীবন।”

মেঘনা , সুমনের বলা কথা গুলোর কোনো মানে খুঁজে না পেয়ে , অধীর আগ্রহে জিজ্ঞাসা করলো ” মানে ?”

-“আজ থেকে এক বছর আগে আমি, সৈকত , তরুণ , সুমন্ত , চারজন একসাথে , ছুটি কাটাতে একটা জঙ্গল এলাকায় গিয়েছিলাম। অবশ্য আমাদের তিন জনের যাওয়ার ইচ্ছে না থাকলেও , সৈকতের ইচ্ছতেই রাজি হয়েছিলাম। সুমন্ত আর তরুণ ওদের সাথে আরো দুটি মেয়েকে নিয়ে গিয়েছিল , অবশ্য সেটা ওদের নিজেদের দায়িত্বেই। তাই আমি আর সৈকত একসাথে থাকার প্ল্যান করেছিলাম।

সৈকতের ঠিক করা জায়গাতেই আমরা গিয়ে উপস্থিত হই। সেখানে বেশ সুন্দর একটা পুরনো দিনের বাড়ি , চারিদিকে গাছপালায় ঘেরা মনোরম পরিবেশ , সবুজ ঘাস আর নানারকম ফুলের গাছ জায়গাটাকে আরো দর্শনীয় করে তুলেছিল ।
বাড়িতে প্রবেশ মাত্রই একটি তরুণী এসে সৈকতকে জিজ্ঞাসা করলো ” দাদাবাবু , ভালো আসেন তো ? কোনো কিসুর প্রোয়সন হলে আমারে ডাকবেন,কেমন । দাদু আমারে পাঠাইসে আপনাগো দেখভালের জন্য” ।

মেয়েটির দিকে আমরা চার বন্ধুই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম , কারণ জঙ্গলের মাঝে মনে হচ্ছিল কোনো স্বর্ণ হরিণীর আবির্ভাব ঘটেছে ।

one sad love story in bengali
one sad love story in bengali

মেয়েটি হাত জোড় করে সেখান থেকে চলে গেলো । তবে সৈকত যেন কেমন একটা অদ্ভুত দৃষ্টিতে ওর দিয়ে তাকিয়েই রইলো । সৈকতের এরূপ দৃষ্টি আমি জীবনে কখনো দেখিনি ।

দেখতে দেখতে চারটা দিন কেটে গেল । জঙ্গলের বিভিন্ন পশু পাখি গাছ গাছালি , অনেক কিছু নিয়েই জ্ঞান আহরণ করলাম । তবে সৈকতের যেন কিছুতেই মন নেই। জল ছাড়া মাছের মত ছটপট করছিলো।

হটাৎ করে সেই রাত্রিতে এসে সৈকত সবার ঘুম ভাঙিয়ে বললো , এখুনি এখান থেকে বেরিয়ে পড়তে হবে। সবাই রেডী হয়ে যে যার মতো বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দে। এখানে থাকা আমাদের পক্ষে আর সুরক্ষিত নয় ।

বারেবারে সবাই জানতে চাইলাম, হঠাৎ এরকম সিদ্ধান্তের কারণ কি! কিন্তু সৈকত কারুর প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে , ব্যাগ নিয়ে সোজা বেরিয়ে পড়লো । তারপর আমরাও বেরিয়ে পড়লাম যে যার মতো ।

সেখান থেকে ফেরার পর সৈকতের মধ্যে অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম । কারুর সাথে মিশতো না , কথা বলত না । সবাইকে কেমন যেন উপেক্ষা করছিলো। সৈকতের এরূপ পরিবর্তনে অন্য কারুর কিছু না যায় আসলেও আমার যায় আসে । কারণ যতই হোক ও আমার প্রিয় বন্ধু। তাই আমি সাত মাস আগে , আবার ওই জঙ্গলে গিয়েছিলাম।

পৌঁছে দেখলাম নির্মল সেই পরিবেশ , মনোমুগ্ধকর দৃশ্য সব যেন কেমন বদলে গেছে । গাছ গুলো আর একটাও নেই । চারদিক খা খা করছে। গাছ গুলো কেটে পুরো জঙ্গল টা কে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে । আর সেই ভস্ম স্তূপের মাঝে একটি মেয়ে ওই পুরোনো বাড়িটির সিড়িতে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।

পড়ুনঃ- ইমোশনাল লাভ স্টোরি- শেষ কথা 

মেয়েটির কাছে গিয়ে, জিজ্ঞাসা করলাম ” তুমি কে ?” আর এই জঙ্গলের এরূপ অবস্থা কে করলো ?
ক্রন্দনরত মেয়েটি কাপা গলায় জবাব দিলো , ” আমার দিদি এই বাড়িতে কাজ করতো , আমি তার বোন।” কোন এক শহুরে বাবু নিজের কোম্পানি না কি বানাবে তাই আমাদের এই জঙ্গল মা কে , কেটে পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছে । জানো বাবু আমাদের মানুষ গুলো সবাই পুড়ে মারা গেছে । আমি শহরে এক মেমসাহেবের বাড়িতে কাজ করতে গিয়েছিলাম কয়েক মাস। ফিরে দেখি সব শেষ। কেউ কোথাও নেই। তাই এই বাড়িতেই আশ্রয় নিয়েছি।

প্রিয় বন্ধুর এরূপ পাপী কাজকর্ম দেখে নিজেকে ক্ষমা করতে পাচ্ছিলাম না। সাথে করে নিয়ে এলাম তাই মেয়েটিকে। প্রথম থেকেই অসুস্থ শরীর দেখে চিকিৎসা করাতে গিয়ে জানতে পারলাম মেয়েটির ফুসফুসে ক্যান্সার হয়েছে। মাত্র ছয় মাস সময় দিয়েছে ডাক্তার।

এরূপ অবস্থায় কাজের লোক বানিয়ে ওর সেবা করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাই সমাজের কাছে স্বীকৃতি দিতে ওকে বিয়ে করলাম । মাত্র আর ছয় মাসের অথিতি এই পৃথিবীতে , ওই নিষ্পাপ মেয়েটা। তাই ওর সমস্ত ইচ্ছে গুলোর দাম দেওয়া টা মনুষত্বের খাতিরে… না না , স্বামীর খাতিরে , পূরণ করা এখন আমার কর্তব্য ।”

ভালোবাসার গল্প কষ্টের
ভালোবাসার গল্প কষ্টের
<

মেঘনা চোখের জল ফেলতে ফেলতে সেখান থেকে বিদায় নিলো। রাস্তার মাঝে সুমনের বলা কথা গুলো অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল করে দিলো। স্বপ্না নিষ্পাপ শিশুর মত আইস ক্রিম খেতে খেতে সুমনের কাছে এসে বললো ” নাগর দোলনা তে চাপাতে নিয়ে যাবে না?”

স্বপ্নার চিতার সামনে দাড়িয়ে সুমনের চোখে গড়িয়ে পড়ছে বিন্দু বিন্দু জলকণা। সৈকত ও তার বাবা এখন জেলে আছে। মেঘনাও নিজেকে সামলে নিয়েছে। শুধু সুমন হারিয়েছে তার প্রিয় বন্ধুকে সাথে সাথে কয়েকদিনের জন্য আসা গুরুত্বপূর্ণ অথিতি কে।
সময়ের মূল্য বুঝেই সুমনের দেওয়া গুরুত্বে কয়েকটা মাসেই স্বপ্না নতুন করে বাঁচতে শিখেছিল । সবকিছু হারিয়েও নতুন করে বাঁচার সম্বল ফিরে পেয়েছিল । তাই নিজেই নিজের চিতার ওপর বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়লো স্বপ্না । সুমন হয়তো বুঝতে পারল, স্বপ্না নামের অতিথি আজও তার জীবনে বর্তমান।

আলোরানি মিশ্র

গল্পের ক্যানভাসে-

গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।

সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
পড়ুনঃ- 
অভিমানী ভালোবাসার গল্প- সমাপ্তি 

হারিয়ে যাওয়া প্রেম 

ছাড়পত্রের সমস্ত আপডেট পেতে পারেন- 
ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

নিঃস্বার্থ ভালোবাসা গল্প। ভালোবাসার গল্প কষ্টের। 1 very sad love story in bengali.

Spread the love

Leave a Reply