আমাদের সুবিশাল এই পৃথিবী নিজেই এক বিস্ময়। আর তার থেকেও বিস্ময় হল এই সুবিশাল সৌরজগত। আমাদের সৌরজগতের মূল কেন্দ্রবিন্দু হল সূর্য। সূর্যকে কেন্দ্র করেই গ্রহরা নিজ কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করছে। আজ থাকছে, সৌরজগত তথা পৃথিবীর তথা সূর্যের অজানা রহস্য।
অজানা পৃথিবী। সৌরজগতের অজানা তথ্য। সূর্যের অজানা রহস্যঃ-
প্রথমেই আমরা পৃথিবী এবং সৌরজগতের অজানা রহস্য জানব।
সৌরজগতের অজানা তথ্য। পৃথিবীর অজানা তথ্যঃ-
১. সাধারণত বেশিরভাগ গ্রহের নাম বিভিন্ন রোমান দেবতার থেকে এসেছে, কিন্তু পৃথিবী এমন একটি গ্রহ যার নাম কোনো রোমান দেবতার থেকে আসেনি। এই নামটি এসেছে একটি জার্মান শব্দ থেকে যার অর্থ হল- “ভূমি”।
২. আপনি কি জানেন, যতই দিন গড়িয়ে যাচ্ছে, ততই পৃথিবীর দিন ছোট হয়ে যাচ্ছে। আজ থেকে প্রায় ৪.৬ বিলিয়ন বছর আগে, যখন পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছিল, মনে করা হয় যে, তখন পৃথিবীতে মাত্র ৬ ঘণ্টায় এক দিন হত। কালক্রমে ৬২০ মিলিয়ন বছর পড়ে, প্রায় ২১.৯ ঘণ্টায় এক দিন হত। বর্তমানে প্রায় ২৪ ঘণ্টায় একদিন হয়। আবার বৈজ্ঞানিকদের মতে, আগত বছর গুলিতে পৃথিবীর দিনের দীর্ঘ আরও বাড়বে। বিজ্ঞানীদের মতে, প্রতি শতাব্দীতে দিনের সময় প্রায় ১.৭ মিলি সেকেন্ড হারে বাড়ছে।
৩. Snow Ball কথাটি আশা করি সবাই শুনেছেন। Snow Ball হল বরফের বল। কিন্তু আপনি কি জানেন এমন একটা সময় ছিল, যখন এই পুড়ো পৃথিবীটাই Snow Ball এ পরিণত হয়েছিল। আজ থেকে প্রায় ৬০০-৮০০ মিলিয়ন বছর আগে প্রায় পুড়ো পৃথিবীটাই বরফে ঢেকে গিয়েছিল। আর বরফের এই সময় কাল টিকে বলা হয় “হিম যুগ।“
৪. যদি কোনোরূপ সুরক্ষা ব্যবস্থা না নিয়ে একজন মানুষকে অন্তরীক্ষে ছেড়ে দেওয়া যায়, তাহলে সেই মানুষটি মাত্র ১.৫-২ সেকেন্ড পর্যন্তই জীবিত থাকতে পাড়বে।
৫. মানুষের দ্বারা খোদিত এখন পর্যন্ত পৃথিবীর সবথেকে বড় গর্ত রুশ দেশে অবস্থিত। এর গভীরতা হল- ১২.২৬২ কিলোমিটার। আর এর নাম হল the Kola Superdeep Borehole.
৬. ইন্টারন্যাশনাল স্পেস ষ্টেশনের কথা আশা করি সবাই শুনেছেন। ইন্টারন্যাশনাল স্পেস ষ্টেশন হল মহাকাশে মনুষ্য দ্বারা নির্মিত একটি মহাকাশ গবেষণা সম্পর্কিত আবাস-স্থল। কিন্তু আপনি কি জানেন, এই ইন্টারন্যাশনাল স্পেস ষ্টেশন নির্মাণ করতে খরচ হয়েছিল প্রায় ১৫০ আরব ডলার।
৭. পৃথিবীতে এত্ত মানুষের ভিড় যেন, মনে হয় পা রাখার জায়গা নেই, কিন্তু আপনি কি জানেন, পৃথিবীর প্রায় ৯৯% প্রাণীর বাসস্থল হল সমুদ্র। আর এদের মধ্যে বেশিরভাগ প্রাণীকে আমরা এখনও দেখিনি।
৮. পৃথিবীতে বায়ুদূষণের হাঁর নিয়মিত বেড়েই চলেছে। প্রতি বছর শুধু বায়ুদূষণের ফলে সৃষ্ট রোগের কারণে প্রায় ৭০ লক্ষ মানুষ মারা যান।
৯. আমাদের সৌরমণ্ডলে পৃথিবী হল একমাত্র গ্রহ, যেখানে জল তিনটি অবস্থাতেই অর্থাৎ- কঠিন, তরল এবং বায়বীয় পাওয়া যায়।
১০. অনেকেই শুনে থাকবেন যে, পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা নাকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু আপনি কি জানেন, পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে পৃথিবীর পর্বত গুলির উচ্চতা ১৫,০০০ মিটারের অধিক কক্ষনোই বৃদ্ধি পাবে না।
১১. আজ থেকে প্রায় ৪৫০ কোটি বছর আগে, সৌরমণ্ডলে পৃথিবীর নিকটবর্তী গ্রহ মঙ্গলের আকারে আরেকটি গ্রহ ছিল। সেই গ্রহটি এবং আমাদের পৃথিবী একই কক্ষপথে সূর্যকে আবর্তন করত। কিন্তু একটা সময় পর, কোনো এক কারণে পৃথিবী এবং সেই গ্রহটির মধ্যে ধাক্কা লাগে। আর এই ধাক্কা লাগার ফলে সেই গ্রহটি চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যায়, বা দূরে কোথাও ছিটকে যায় এবং এই সংঘর্ষের ফলেই পৃথিবীর অংশ বিশেষ ছিটকে বাইরে বেড়িয়ে গিয়ে চাঁদের সৃষ্টি হয়েছে।
১২. আপনি কি জানেন, ২০১৫ সাল এমন একটি বছর ছিল, যেখানে অন্য বছর গুলির তুলনায় সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে পৃথিবীর ১ সেকেন্ড বেশী সময় লেগেছিল।
১৩. মঙ্গল গ্রহের উত্তর এবং দক্ষিণ দিকে বিস্তৃত বরফের চাদর জমে রয়েছে। কিন্তু এই বরফ জল থেকে জমেনি। জমেছে কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর ঘনীভবনের ফলে।
১৪. ১৮৬৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পৃথিবীর ইতিহাসে এমন একটি মাস, যেই মাসটিতে একটিও পূর্ণিমা আসেনি।
১৫. পৃথিবীর সবথেকে বড় মল রয়েছে চিনে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই সুবিশাল মলটি প্রায় ৯৯% -ই খালি পড়ে রয়েছে।
১৬. নাসার একটি রিপোর্ট মোতাবেক, ভারত এবং চীন বিশ্বের অন্যান্য দেশ গুলির তুলনায় বৃক্ষ রোপণের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে।
১৭. শনি এবং বৃহস্পতি এমন দুটি গ্রহ, যেখানে হীরের বৃষ্টি হয়। এই কথাটি আপনি হয়ত শুনেই থাকবেন। কিন্তু এমনটা কেন হয় জানেন কি? আসলে এই গ্রহ দুটির বায়ুমণ্ডলে কার্বন গ্যাসের মাত্রা অধিক রয়েছে। যখন আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে সেখানে বৃষ্টির পরিবেশ সৃষ্টি হয় এবং আকাশে বিদ্যুৎ চমকায়, তখন বায়ুমণ্ডলের কার্বনের সাথে বিদ্যুতের তীব্র ঝলকানির সংযোগ ঘটে এবং এই তাপের ফলে কার্বন গ্রাফাইটে পরিণত হয়। আর এই গ্রাফাইটই হল হীরের মূল উপাদান। পরবর্তীতে বায়ুমণ্ডলের ঘাতপ্রতিঘাতে এই গ্রাফাইট হীরেতে পরিণত হয়ে যায়।
১৮. এক বার Discovery-র লোকেরা কৈলাস পর্বতে চড়ার সিদ্ধান্ত নেন, কিন্তু তাদের মধ্যে কেউই এই পর্বতে উঠতে সক্ষম হননি। অনেকের মতে এই পর্বতে সবাই আহরণ করতে পাড়েন না। শুধুমাত্র পবিত্র আত্মার অধিকারী ব্যাক্তিরাই এই পর্বতে চড়তে পাড়েন।
পড়ুনঃ- ভারত সম্পর্কে অজানা তথ্য
১৯. আমরা জানি যে, আমরা আকাশ গঙ্গা গ্যালাক্সির অংশ। কিন্তু জানেন কি আমাদের পুড়ো সৌর-পরিবার এই গ্যালাক্সি প্রদক্ষিণ করছে। আর একবার প্রদক্ষিণ করতে সময় লাগে প্রায় ২৫ কোটি বছর। আর এটিকেই বলা হয়, ব্রহ্মাণ্ড বর্ষ।
২০. গ্রহদের মধ্যে বুধ, সূর্যের অনেক কাছে থাকলেও, এই গ্রহটি সৌরমণ্ডলের অধিক উষ্ম গ্রহ নয়। কারণ বুধের কোনো বায়ুমণ্ডল নেই। অথবা থাকলেও সেখানে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাসের উপস্থিতি নেই। যার কারণে তাপ ধরে রাখার ক্ষমতাও বুধের নেই। সেখানে দিনের বেলায় যতটাই গরম রাতের বেলায় ঠিক ততটাই ঠাণ্ডা। এখানে দিনের বেলায় তাপমাত্রা দাঁড়ায় প্রায় ৪৪৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। কিন্তু রাতের বেলায় এই তাপমাত্রা কমে দাঁড়ায় -১৭৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
২১. বুধের পড়েই রয়েছে শুক্র গ্রহ। এই গ্রহটিই হল সৌরমণ্ডলের সবথেকে উষ্ণ গ্রহ। এই গ্রহটি বেশ উজ্জ্বল। এই গ্রহটির তাপমাত্রা প্রায় ৪৩৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস। শুক্র গ্রহের আকার প্রায় পৃথিবীর মত। আর এই কারণেই এই গ্রহটিকে “পৃথিবীর বোন” বলা হয়। এই গ্রহটিতে রয়েছে প্রায় ১০০০ টির মত আগ্নেয়গিরি। আমাদের সৌরমণ্ডলের শুক্র গ্রহ এমন একটি গ্রহ যেটি অন্যান্য গ্রহ গুলির বিপরীত দিকে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। এখানে বলে রাখি যে, শুক্র গ্রহের কোনো উপগ্রহ নেই।
পড়ুনঃ- পৃথিবীর অজানা তথ্য।।পৃথিবীর রোচক তথ্য
সূর্যের অজানা রহস্য। অজানা সৌরজগতঃ-
১. সূর্যের কেন্দ্রে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৭০০ মিলিয়ন টন হাইড্রোজেন, নিউক্লিয় বিভাজনের ফলে হিলিয়াম গ্যাসে পরিণত হয়। আর এই বিভাজনের ফলেই সূর্য থেকে রশ্মি নির্গত হয়।
২. সূর্যের নিউক্লিয় বিভাজন ঘটে থাকে এর কেন্দ্রে। এটিই হল সূর্যের শক্তির আতুর ঘড়। সূর্যের কেন্দ্রে গঠিত হওয়া এই শক্তি কয়েক লক্ষ বছর ধরে সেখানেই ঘুরতে থাকে। তারপর এটি গ্রহদের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
৩. সূর্য থেকে ছুটে আসা প্রায় ৮০০ আরবের থেকেও বেশী নিউট্রন প্রতি সেকেন্ডে আমাদের শরীর ছুঁয়ে বেড়িয়ে যাচ্ছে।
৪. সূর্যের আকর্ষণ বল এতটাই তীব্র যে, প্রায় ৬ আরব বর্ষ দূরে অবস্থিত প্লুটো গ্রহও নিজের কক্ষে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে।
৫. পৃথিবীর থেকে সূর্যের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি প্রায় ২৭ গুন বেশী। অর্থাৎ পৃথিবীতে কোনো বস্তুর ওজন যদি ১ কিলোগ্রাম হয়, সূর্যে সেই বস্তুর ওজন দাঁড়াবে প্রায় ২৭ কিলোগ্রাম।
৬. আমাদের চোখে সূর্যই হল সবথেকে চকচক করতে থাকা নক্ষত্র। কিন্তু আমাদের ছায়াপথ আকাশ-গঙ্গাতে এমন প্রায় ৫% নক্ষত্র রয়েছে, যাদের উজ্জ্বলতা সূর্যের থেকেও অনেক বেশী।
৭. বিজ্ঞানীদের কথা অনুসারে, যদি একটি পেন্সিলের নচ এর মত ক্ষুদ্র অংশও সূর্য থেকে পৃথিবীর দিকে জ্বলন্ত অবস্থায় ছুটে আসে, তাহলে সেই খণ্ডটি পৃথিবীর ভূমি স্পর্শ করার প্রায় ১৪৫ কিলোমিটার দূরে থেকেই যে কেউ পুড়ে মারা যাবেন।
৮. বর্তমানে সূর্যতে উপস্থিত হাইড্রোজেন গ্যাস থেকে শক্তি উৎপন্ন হয়, কিন্তু যখন হাইড্রোজেন গ্যাস জ্বলে শেষ হয়ে যাবে, তখন হিলিয়াম গ্যাস জ্বলা শুরু হবে।
৯. যখন সূর্যের হিলিয়াম গ্যাস জ্বলা শুরু হবে, তখন সূর্যের আয়তন বাড়তে থাকবে। অর্থাৎ সূর্যের আয়তন বর্তমানের তুলনায় বাড়বে, যার ফলে এর আকর্ষণ বলও অনেকটাই বেড়ে যাবে। এই কারণে যে সমস্ত গ্রহ সূর্যের কাছে অবস্থিত, অর্থাৎ বুধ, শুক্র, পৃথিবী প্রভৃতি গ্রহ গুলিকে সূর্য গ্রাস করতে পাড়ে।
১০. যদি শুধুমাত্র সূর্য থেকে এক বিন্দু সমান অংশ এনে পৃথিবীতে রেখে দেওয়া যায়, তাহলে এটি পৃথিবী পৃষ্টের প্রায় ১৫০ কিলোমিটার নীচেও জ্বালিয়ে দিতে সক্ষম।
১১. আমাদের সৌরমণ্ডলের প্রায় ৯৯.৮৬% ওজন শুধুমাত্র সূর্যের একারই।
১২. সূর্য থেকে এক ঘণ্টায় যতটা শক্তি নির্গত হয়, তার পুরোটাই যদি সোলার-প্লেটে ধরে রাখা যায়, তাহলে পুড়ো পৃথিবীর প্রায় ১ বছরের বিদ্যুতের জোগান হয়ে যাবে।
১৩. সূর্যের পৃষ্ঠে যে পরমাণু বিভাজন হয়, তার প্রকোপ অনেকটা বর্তমান দিনের আধুনিক হাইড্রোজেন বোমা ফাটার মত হয়।
১৪. সূর্যের রশ্মি যদি শুধুমাত্র একদিন পৃথিবীতে না পৌছায় তাহলে, মাত্র কয়েক ঘণ্টায় পুড়ো পৃথিবী জমে বরফ হয়ে যাবে।
১৫. সূর্যের সবথেকে উপরের অংশটিকে বলা হয় ফোটোস্ফিয়ার, মধ্যভাগকে বলা হয় ক্রোমোস্ফিয়ার এবং তার পরের ভাগকে বলা হয় করোনা বা কোর।
আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যুক্ত হনঃ- CharpatraOfficial
ফেসবুকে আমাদের সাথে যুক্ত হনঃ- অবাক বিশ্ব আমাদের গ্রুপঃ- AMAZING FACT (অজানা তথ্য)
“অজানা পৃথিবী। পৃথিবীর অজানা তথ্য। অজানা সৌরজগত। সূর্যের অজানা রহস্য। সৌরজগতের অজানা তথ্য। new TOP 35+ UNKNOWN FACTS ABOUT EARTH SUN AND SOLAR SYSTEM BENGALI”
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।